ফটিক চৌধুরী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ফটিক চৌধুরী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

ফটিক চৌধুরী-র অনুবাদ কবিতা

মঙ্গলেশ দবরাল
 

প্রেম  

সে কোনও অনেক বড় মীর ছিল  
যে বলেছিল প্রেম এক ভারী পাথর  
তোর মতো দুর্বল কীভাবে সেটা তুলবি!
আমি ভেবেছিলাম  
এটাকে তুলব টুকরো টুকরো করে 
কিন্তু তখন সেটা কি আর প্রেম থাকবে?
সেটা হয়ে  যাবে এক হত্যাকাণ্ড।



বাইরে 

আমি দরজা বন্ধ করি
আর কবিতা লিখতে বসি
বাইরে হাওয়া বইছিল  
মৃদু আলো ছিল  
বৃষ্টির মধ্যে একটা সাইকেল দাঁড়িয়ে ছিল  
একটা ছেলে বাড়ি ফিরছিল  
আমি কবিতা লিখলাম  
যেখানে হাওয়া ছিল না, ছেলেটি ছিল না  
দরজা ছিল না।  


[কবি পরিচিতি : জন্ম ১৬ মে, ১৯৪৮, তিহরি গঢ়বাল, উত্তরাখণ্ড। হিন্দি ভাষার একজন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক। 'জনসত্তা', 'হিন্দি পেট্রিয়ট', 'পূর্বাভাস' প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। "হম যো দেখতে হ্যাঁয়" কাব্যগ্রন্থটি ২০০০ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পায়। এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে কয়েকটি : "পহাড় পর লালটেন", "ঘর করা রাস্তা", "কবি কা অকেলাপন"। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর মাত্র ৭২ বছর বয়সে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়]

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

অপেক্ষা 

তুমি রেললাইন বরাবর হাঁটো 
দেরি হলেও পৌঁছে যাবে গন্তব্যে
যেখানে তোমার জন্য একটি স্টেশন 
অপেক্ষা করছে।
তুমি পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটো 
অনেক উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ
পথে অনেক বিপদ অপেক্ষা করছে,
স্টেশন নয়।

 

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ফটিক চৌধুরী-র অনুবাদ কবিতা


মঙ্গলেশ দবরাল

মায়ের নমস্কার

যখন মায়ের যথেষ্ট বয়স
তখন সে সকল অতিথিদের 
নমস্কার করতে শুরু করে।
যেন সে একটি শিশু 
আর বাকিরা তার থেকে বড়।
প্রত্যেককে সে বলে :
বসো, কিছু খাও।
অধিকাংশ লোক তাকে খুশি করার জন্য 
খাবার  কিছু জিনিস নিয়ে তার পাশে 
কিছুক্ষণ বসে যায় 
মা খুশি হয়ে তাদের দেখে 
এবং যাবার সময়ও তাদের নমস্কার করে
যদিও তার এ বয়সে এসব জরুরি ছিল না 
সে ভূমিকেও নমস্কার করত
কখনও একা একাই।
অবশেষে যখন মৃত্যু এল 
তো সে তাকেও নমস্কার করল
এবং যেন নিজের জীবনটা তার হাতে
তুলে দিয়ে সে বলে :
বসো, কিছু খাও।


[ কবি পরিচিতি : জন্ম ১৬ মে, ১৯৪৮, তিহরি গঢ়বাল, উত্তরাখণ্ড। হিন্দি ভাষার একজন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক। 'জনসত্তা', 'হিন্দি পেট্রিয়ট', 'পূর্বাভাস' প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। "হম যো দেখতে হ্যাঁয়" কাব্যগ্রন্থটি ২০০০ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পায়। এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে কয়েকটি : "পহাড় পর লালটেন", "ঘর করা রাস্তা", "কবি কা অকেলাপন"। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর মাত্র ৭২ বছর বয়সে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়]

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

দোহাই

না দাও সাড়া, নিজেকে কর সমর্পণ 

অনেক সাধনা করেছি রচনা যত

পথে যেতে যেতে এসব করি অর্জন

সেসব দিনগুলো কি হয়েছে বিনত?


অনেক বর্ণমালা সাজানো কবিতায়

অনেক অক্ষর তো রেখেছি সুরক্ষিত

হৃদয়ে রেখেছি সঙ্গোপনে ছবি তাই

যাতে তুমি কখনও হবে না বিচলিত।


তোমার অমিত লাবণ্য তো স্বর্গাদপি

তোমার হৃদয় আরও বেশি বিহ্বল

প্রতি মুহূর্ত তোমার নাম যদি জপি

ভালোবাসা পরিয়ে দেয় বদ্ধ শৃঙ্খল।


দোহাই তোমার, সাড়া দিও যেন ডাকে

পূর্ব নির্ধারিত? সব যদি ঠিক থাকে! 

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা


ফুলের নিভৃতে তোমার বসবাস


খুব বেশি খ্যাতি পেলে তার স্তুতিগান
শুনতে শুনতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠি
অভ্যাস একটা প্রক্রিয়া, ছাঁচে ফেলে দিলেই হয়।
গোলাপের কাঁটা থাকলেও তার রং রূপ গন্ধে
তাকে করে ফেলি উপহারযোগ্য
আলোর নিচে থাকে অন্ধকার, 
তখন অন্ধকার নয়, আলোই হয়ে ওঠে আরাধ্য।
তোমাকে যতবার বলেছি মঞ্চে এসে বসো
তুমি কেন থাকবে দর্শকাসনে
তোমার তো কিছু বলার আছে, বলার থাকে
সবাই শুনুক তোমার কথা 
কথার মধ্যে এক মায়াবী ঘ্রাণ থাকে
ঘ্রাণের মুগ্ধতা নেশার মতো আহরণ করি সবাই 
তুমি নিজেই অর্জন করেছ ফুলের মতো জীবন
যার সুরভি ছড়িয়ে যায় চারদিক।

জানি, ফুলের নিভৃত হৃদয়ে তোমার বসবাস। 

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

পৌষের হাওয়া

বড় এলোমেলো এই যে পৌষের হাওয়া
উত্তরে বইলে শীতের কাঁপন
দক্ষিণে বইলে দেখা যায় 
               অস্বস্তিকর, অ্যান্টিক্লাইমেটিক
কখনও রুক্ষশুষ্ক কখনও নাতিশীতোষ্ণ।

পাকা ধানের মতো সোনালি রোদ্দুর
            ঢেলে দেয় নরম উষ্ণতার লাবণ্য
পুষ্যা নক্ষত্রে সূর্য খুঁজে নেয়
                                     নিজের অবস্থান
তারপরই তো পেলব রোদ্দুরের স্পর্শ  ও
         প্রলেপ জমতে থাকে শীতার্ত ত্বকে।

ক্রিসমাস ট্রি পিকনিক পর্যটনপ্রিয়তার
পাশাপাশি পৌষের হাওয়ায় তখনও যেন
                   ভেসে আসে নবান্নের সুবাস।

 

রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

পীড়িত দিন

পীড়িত দিনগুলো পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে
                                   ভালো থাকি কি আমরা?
পাশের বাড়ি অশান্তির আগুন জ্বললে
                                তার আঁচ লাগে আমাদের
তবে কি খোঁজ করবো কখন আসবে পৌষমাস?
চারিদিকে লাল পিঁপড়েদের সারি দেখতে পাই
                    তারা কি পেয়েছে কোনও মৃত্যুগন্ধ?

আষাঢ়ে বৃষ্টি নামলে সব গন্ধ মুছে যায়
                              কৃষক নেমে যায় কৃষিকাজে
বর্ষণ ও কর্ষণেই তো ফলবতী হয় বসুন্ধরা।
এইভাবে পীড়িত দিন পিছু হটতে হটতে
                                দূরে কোথাও মিলিয়ে যায়।
সবুজের সমারোহে সজীব হয়ে ওঠে জীবনপ্রবাহ।

 

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

শ্রাবণ আসবে বলে

আকাশটা আজ ছবির মতো
                       কত রঙের মেঘের আনাগোনা
সূর্যও একবার আড়াল থেকে উঁকি মেরে গেল,
মেঘও দেখিয়ে গেল কিছু রঙিন ম্যাজিক।
আষাঢ় শেষ হয়ে আসে
           শ্রাবণ সেই সব মেঘে
                                    জল ভরে দেবে এবার।

আজ সকালে দুটো ফিঙে
                দোল খেয়ে গেল ক্যাবেলের তারে
হয়তো তারা এসেছিল বৃষ্টির খোঁজে।
অথচ লাল পিঁপড়ের সারি দেখলাম সিঁড়ির পাশে
শ্রাবণ এলেই  পিঁপড়েদের শুরু হয় বাসাবদল।
কিছু পাখিও শ্রাবণের নামে ঘুরে বেড়ায়
                                     আকাশে মেঘের ভেতর
আমি তাদের শ্রাবণপাখি বলেই ডাকি।

আমি আজ শুধু বসে আছি শ্রাবণ আসবে বলে।

 

শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

যতটা সুখে থাকার কথা

যতটা সুখে থাকার কথা
                                 ততোটা সুখে নেই কেউ
তবুও কেউ কেউ ঠিক সুখে থাকতে জানে
ভাঙাসুখ ভাঙাদুঃখ তারা জোড়া দিতে জানে।
একটি পাখি ঠোঁটে বয়ে নিয়ে যায় যে সুখ
                আহার তুলে দেয় ছা-পাখির ঠোঁটে
চারিদিক মুখরিত তখন পাখিদের কলতানে।

কপালে দুঃখ নিয়ে যাদের জন্ম
                                    তারা সুখী হয় সহজেই
আকাঙ্ক্ষার ছোট ছোট ঘরেই তো তাদের বাস।
যতটা সুখে থাকার কথা
                    কেউ কেউ পেয়ে যায় বেশি
কখনও অন্যপথে, কখনও দেখিয়ে পেশি
চারিদিকের সবটুকু কালো, করে ফেলে গ্রাস।

আমি পেতে চাই ততোটাই সুখ
যতটা আমার সুখে থাকার কথা।


 

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

ভালোবাসা

একদিন ডেকে নিয়ে যায় সন্ধ্যাতারা
একদিন ডেকে নিয়ে যায় সূর্যোদয়
আমি তো তখন নিজেই আত্মহারা
আমি তো তখন নিজেই অকুতোভয়।

একদিন তুমি ডেকেছিলে পথপ্রান্তে
একদিন তুমি ডেকেছিলে ভরসায়
তোমাকে ভালবাসি সেকথা কি জানতে
তোমাকে ভালবাসি সঘন বরষায়!

ভালবাসা ডানা মেলেছিল অগোচরে
ভালবাসা ভুল বুঝেছিল অবিশ্বাসে
ভালবাসা যদি নিজেকেই মেলে ধরে
ভালবাসা নতজানু নিজস্ব অভ্যাসে।

জীবন নিখাদ সোনা নয় পরিপাটি
তুমি ছাড়া আমি হয়ে যাই একলাটি।


 

বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

শরীর-আয়না

শরীরকে ভাবিনি কোনওদিন মন্দির

                                  কিংবা মসজিদ গির্জা
বরং শরীরের মধ্যে যে একটা মন আছে
সেই মনই টেনে নিয়ে যায় অভিন্ন শরীরটিকে
সেই-ই তো চালিকাশক্তি।

অথচ দ্যাখো মন খারাপ হলে
                                      আকাশে মেঘ করে
যতক্ষণ না বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে
ততক্ষণ শরীরও সায় দেয় না।
শরীরের যে ভাষা তারও পাঠ নেওয়া চায়
অক্ষর বর্ণমালা সাজানো আছে থরে থরে
             তাকে ঢেকে রাখি পোশাকের বল্কলে
গাছ যেভাবে ঢেকে রাখে তার ইতিহাস।

শরীরকে মন্দির ভাবিনি কোনওদিন
                                  মসজিদ কিংবা গির্জা
মনের সব প্রতিচ্ছবিই ভেসে ওঠে
                                           শরীর-আয়নায়।

 

সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

প্রকৃতি নাড়িয়ে দিয়ে যায়

তুমি যেটাকে জীর্ণশীর্ণ ঝরনা ভাবছ
আসলে সেটা ছিল নদী, সরস্বতী নদী
পৃথিবীর বয়স ভারী হয়ে আসছে
চারিদিকে মলিনতা টের পাচ্ছ
অন্যদিকে ঝাঁ চকচকে রাস্তা
প্রতিটি কমপ্লেক্স এশিয়ান পেন্টসের বিজ্ঞাপন
এইযে বৈষম্য প্রকৃতি ও প্রকট আধুনিকতার
তার মাঝখানে তুমি দ্বিধা দ্বন্দ্বে জর্জরিত।

ঋতুদের নিয়ে তুমি কাটাছেঁড়া কর
আর গুলিয়ে ফেল হেমন্ত ও শীত
ইলেকট্রিক বিল দেখে তুমি ধাতস্থ হও
পর্যটনে যাবে বলে ছুটছ কুন্ডু স্পেশালে
শীতে না পেয়ে গ্রীষ্মের বুকিং
জম্মু কাশ্মীর কিংবা হিমাচল
ছোটবেলার প্রকৃতি তোমাকে নাড়িয়ে দেয়
শীর্ণ সরস্বতী নদী দেখে তোমার মনখারাপ হয়।

তুমি প্রিয় পর্যটনের জন্য চঞ্চল হয়ে ওঠো।

 

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

কবিতা : ফটিক চৌধুরী

হেমন্তের বিকেল


আমার পাশে শুয়ে আছে অস্তগামী বিকেল
কেউ বুঝি পেতে রেখেছে হেমন্তের স্নিগ্ধ বিছানা
কোথা থেকে যেন ভেসে আসে শিশিরের গন্ধ
ধানের শিষের দুধ জমাট বেঁধে পেয়েছে পূর্ণতা।

উদাস আকাশ থেকেই বুঝি সন্ধ্যা নামবে এবার
শরতের ভাসমান মেঘে যেসব কারুকার্য ছিল
পাততাড়ি গুটিয়েছে হৈমন্তিক গোধূলি বিকেলে
ঘাসের সবুজ টের পেয়ে তার অপ্রসন্ন মালিন্য।

মৌসুমী বায়ু নির্বাসন নিয়েছে কোনও এক ভোরে
ওরা খবর দিতে চলে গেছে পরিযায়ী পাখিদের
তাদেরই ডানায় তো চুপিচুপি চলে আসে শীত
এইসব খোঁজ রাখে হেমন্তের প্রতিটি বিকেল।

 

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

হাসপাতাল সিরিজ : এক

ভোরে ঘুম ভেঙে যেত।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে চায়ের জন্য অপেক্ষা
চায়ের পর ব্রেকফাস্টের জন্য অপেক্ষা
কোভিড ওয়ার্ডে ভিজিটরের প্রবেশ নিষেধ
শেষ অপেক্ষাটি ভিজিটিং ডক্টরের জন্য
যিনি এসে বেডে বসে কুশল জিজ্ঞেস করার পর
হাত ধরে বলতেন : চলুন করিডোরে হেঁটে আসি।
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে ক্রমশ সুস্থ করে তুললেন
চিকিৎসক আদায় করে নিলেন ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।

জোরে হাঁটতে গেলে এখনও হাঁপ ধরে
কোভিড কিছু ক্ষত রেখে গেছে ফুসফুসে
যেভাবে কারও কিছু কথা ক্ষত রেখে যায় মনে।
সময় শেষ কথা বলবে, জানি
দুঃখ শোক সময়ই ভুলিয়ে দেয়
শুধু ভোলা যাবে না তাঁর কথা, যে চিকিৎসক
শেষদিনে চুলে বিলি কেটে দুপুরের ঘুম ভাঙিয়ে
বলে যান : ঘুমোন, ঠিক হয়ে যাবেন, ভালো থাকবেন।

 

বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ফটিক চৌধুরী-র কবিতা

ছুঁয়ে দেখ


ছুঁয়ে দেখ। শরীরের এই চোরাস্রোত

বয়ে যাচ্ছে নিরন্তর। জলও শব্দহীন।

জলের ভিতরে অনেক ক্ষত বিদ্যমান

বসন্ত বাতাসে খুলে যায় দখিন দুয়ার

শিরাউপশিরায় বয়ে চলে শোনিতধারা

সারা শরীরেই চোরাস্রোত। ছুঁয়ে দেখ।

 

রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে উষ্ণ হয় স্নায়ু

ওই দেখ ছোট ডিঙি বয়ে যায় জলে।

তারও তো কিছু বোধ্য ভাষা আছে

সে ঠিক জানে চোরাস্রোতের টান।

আমি কুশলী মাঝি। ছোট এই ডিঙি

জোয়ারে ভাসাব। তুমি সাথে থেকো।

 

আমার শরীরে চোরাস্রোত। ছুঁয়ে দেখ।

 

সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

এই সংখ্যার কবিঃ কবি ফটিক চৌধুরী

 



​কবি ফটিক চৌধুরী

জন্ম : ২০ জানুয়ারি, ১৯৫৩

জন্মস্থান : বিহারের সাঁওতাল পরগণা। অধুনা ঝাড়খণ্ড

কলেজ : হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ, বীরভূম

                         

               কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাগত

যোগ্যতা  : বিজ্ঞান আইনে স্নাতক

চাকরি। : স্বাস্থ্য দফতর, রাজ্য সরকার

অবসরের পর : কলকাতা হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য। বর্তমানে ট্যাক্স কনসালটেন্ট

পছন্দ : কবিতা। এবং কবিতা। ছড়া অণুগল্প লিখতে ভালবাসেন। হিন্দি থেকে অনুবাদ করেন। কলকাতা ট্রানস্লেটরস্ ফোরামের সঙ্গে যুক্ত। ৫০ বছর কলকাতার নাগরিক।

            সত্তরের দশকে লেখালেখি শুরু। কলকাতার সত্তরের দশকের "সাপ্তাহিক প্রতিশ্রুতি" সঙ্গে যুক্ত পত্রিকার অন্যতম সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। আশির দশকের মাঝামাঝিতে লেখালেখিতে বিরতি। আবার বন্ধুদের অনুরোধে কামব্যাক। 

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : সাতটি

) নির্মেদ আলোর বারান্দা ( মন্দাক্রান্তা পুরস্কার,২০২১) ) নির্ঘুম রাতের ইশারা ) নিবিড় দাঁড়িয়ে থাকে ) অমিত মুগ্ধতার কাছে ) অনেকদিন দুঃখিত হইনি ) Parallel rides ) অন্য মনে সজীবতা 



জীবন সংগীত

 

সরু ​আলপথ দিয়ে পৌঁছে যাই গ্রামে

পাশে থাক সবুজ ধানখেতের দোলা

মাটির গন্ধে যেখানে দিব্য সন্ধ্যা নামে

বিশুদ্ধ হাওয়ায় মন হয় উতলা।

 

গ্রাম শহরকে একসূত্রে বাঁধো যদি

মন্দির মসজিদ গির্জা ধরুক হাত

বয়ে যাবে ভালবাসার সুস্নাত নদী

কেটে যাবে জীবনের সব অন্তর্ঘাত।

 

মানুষের জীবন অন্তঃসলিলা নদী

বয়ে চলে নিরুদ্বেগ অবিরাম টানে

বয়ে চলে জীবনের মরণ অবধি

এইভাবে খুঁজে যাই জীবনের মানে।

 

বোধোদয় হয় কোনটা হিত-অহিত

মাটি-গন্ধে খুঁজে পাই জীবন সংগীত।



একটি দিন

 

আমার জন্য একটি দিন রেখো কাছে

আমার একটি সন্ধ্যা হোক বিরচিত

তুমি সেইসব যদি ফেলে এসো পাছে

আমাকে এজন্য হতে হবে বিচলিত?

 

কোনকিছু প্রত্যাশার মধ্যে থাকে সুখ

সুখ তো নিজেই নিজেকে রাখে গোপন

মানুষ আসলে জন্মাবধি সর্বভুক

বরং সুখ-চারা করে যাক রোপণ।

 

দিনান্তে আমরা পাই যে গোধূলি আলো

এই আলোর জন্যই তো সম্মুখে আসা

তুমি যদি সন্ধ্যার প্রদীপখানি জ্বালো

দিনের নাম দেব আমি ভালবাসা।

 

একটি দিন রেখো শুধু আমার জন্য

ভালবাসার সুখে হোক না তা অনন্য!


ভরসা

 

কার ওপর ভরসা করব আমরা 

কার ওপরই বা ভরসা করে থাকি

বয়স বাড়লে কুঁচকে যায় চামড়া

বয়স ? তবু বয়সেই ভরসা রাখি।

 

সুদিন সুজন ছেড়ে চলে যায় দূর

এক সময় থাকে অনেক প্রতিশ্রুতি

অনেক কথা অনেক আলাপ সুর

পরে মনেহয় জীবন তো তুচ্ছ অতি।

 

জীবন কখনোই নয় সরলরেখা

জীবন জীবনের মতই চলে যায়

কেউ কি করেছে কারও জন্য অপেক্ষা

সামনে সময়ই দাঁড়িয়ে, নিরুপায়।

 

তবে ভরসা কিসের? সামনে মহাকাল

দাঁড়িয়ে, বিছিয়ে রাখে এক অন্তর্জাল।



ভোর

 

পাখির ঠোঁটে নামল অপৃর্ব সকাল

তার আগে লাবণ্য ছড়িয়েছে আকাশ

প্রকৃতি এভাবে কি ছড়ায় মায়াজাল?

খবর যদি রাখত পুবের বাতাস!

 

কজন আর দেখেছে শান্ত স্নিগ্ধ ভোর

কজন দেখে ভোরের সেই স্বর্ণরেণু!

কজন দেখে সেই স্বপ্নের মায়াডোর

সকালে গোঠে রাখাল নিয়ে যায় ধেনু।

 

আকাশ চালনা করে বিশ্ব সংসার

আকাশকে তাই উদার হতেই হয়

সে যদি নিয়ে নেয় সব কিছুর ভার

থাকতে পারে না আর কোন সংশয়।

 

সুপ্রসন্ন ভোর দিয়ে শুরু হোক দিন

প্রতিটি ভোরের কাছে রেখে যাব ঋণ।



চেনা

 

চেনা চারপাশ অচেনা লাগছে কেন

কাছের লোকেরা কিভাবে হল দূরের

শোনা যায় হ্রেস্বাধ্বনি আর অশ্বখুরের

অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটে চলেছে যেন।

 

সকলের সামনে কুয়াশার দেয়াল

যেন হেমন্তের দিনগুলি এল ফিরে

এই সময় নিজেকেই রাখো খেয়াল

চারিদিকে ভাইরাস রয়েছে যেঘিরে।

 

নিজেকে চিনি না অন্যকে চিনি কি করে?

চেনা এখন অচেনা শব্দে রূপান্তর

অচেনা ঢুকে গেছে প্রতিটি চেনা ঘরে

ঘর নয় যেন এটা যন্তরমন্তর।

 

খ্যাপা খুঁজে ফেরে আজ পরশপাথর

চেনা বন্ধুগুলোই হারাই অতঃপর।


ব্যতিক্রম

 

নির্মেঘ আকাশ দেখি জানলা থেকেই

দেখা যায় ভালো দ্বিতীয় হুগলি সেতু

মন ভালো হয় তবু এসব দেখেই

হাসপাতালেই শুয়ে রয়েছি যেহেতু।

 

মনখারাপের বেশ​ ​কিছু উপজীব্য 

রয়েছে এখানে, উপেক্ষা করছি সব

মনকে প্রবোধ দিই রয়েছি তো দিব্য

আছে প্রিয়​ ​কিছু ব্যক্তিগত অনুভব।

 

রাজা ধর, চিকিৎসক, নাকি ভগবান

মানুষ হয়ে জন্মে এভাবেও তো পারে

প্রেরণা এঁরা সবাইকে জুগিয়ে যান 

প্রতিটি রোগীকে বেঁধে রাখে ফুলহারে।

 

নিরাশজীবনে যতই ছড়াক বিভ্রম

এসব চিকিৎসক এখনো ব্যতিক্রম।


যাপন

 

জীবনে একটি চেয়েছিলাম যাপন

নিবিড় হয়ে কেটে যাবে সুষ্ঠু নিষ্ঠায়

কতবারই করতে চেয়েছি আপন

ভরাতে পারেনি তাকে সাদা পৃষ্ঠায়।

 

একটি অমল জীবন চাইতে পারি

একটু প্রমিত সুস্থ সুখের আশায়

যদি জীবনে কখনো এমনই হারি

পুষিয়ে দেব ঠিক নিজ ভালবাসায়।

 

কাটিয়ে দিচ্ছি সময় এক ছাঁচে ফেলে

যাপনে আছে কিছু ভালো লাগা ঘোর

কাটিয়ে দিতে চাই উদ্দাম হেসে খেলে

জীবনে আসে একটি শান্ত স্নিগ্ধ ভোর।

 

যাপনে বেজে ওঠে ভোরের সানাই

জীবন মানে দীপ্তি আলোক রোশনাই।



আশায় আশায়

 

এই যে এলোমেলো হাওয়া চারদিকে

এই যে আলুথালু জীবন সংশয়

গাঢ় থেকে জীবনের রং হয় ফিকে

এইভাবে অকারণ শক্তি- অপচয়।

 

অথচ জীবন মানে বয়ে চলা নদী

ভাসিয়ে দেয় নদীর উর্বর দুটি পাড়

এইভাবে সমানে চলতে থাকে যদি

জীবন হয়ে ওঠে দুর্বল অসাড়।

 

সুবাতাস কি আর বইবে কোনদিন

ফিরে আসবে আবার সেই সুদিন

নাকি জীবন নদী হবে জীর্ণ ক্ষীণ

কার কাছে রেখে যাব পরবর্তী ঋণ!

 

জীবনে কেউ দিয়ে যায় কিছু ঝাঁকি

আশায় আশায় নদীতীরে বসে থাকি।