মানবেন্দ্রনাথ সাহা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মানবেন্দ্রনাথ সাহা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

মানবেন্দ্রনাথ সাহা-র অনুবাদ কবিতা


গুলজার


এই হাসপাতালে

এই হাসপাতালে... 

সবকিছু আছে, নামকরা কুশলী ডাক্তারও আছে

শ্বাস নেবার যন্ত্রের সাহায্যে চলতেও পারছি 

আর বোতল ভর্তি রক্তও এখানে পাওয়া যায় 

'লিভার' মেলে সঠিক দামে।

চোখ বদলে নেবার  জন্য, চক্ষু ব্যঙ্কও আছে।


আমি 'হার্ট বাইপাস' করতে যাচ্ছি হে খোদা 

ডাক্তার নীতিন এই কাজে এক্সপার্ট... 

এমন কঠিন সময়ে তোমার দরকার নেই কিন্তু 

যদি সময় হয়, তো এসো, পাশে বোসো

কোনো কথা বলবে!!




তোমার সঙ্গে যখন কথা হয় না


কোনোদিন যখন তোমার সঙ্গে কথা হয় না 'প্রিয়'

এমন চুপচাপ কেটে যায় সুনসান এই দিন 

একটা সোজা লম্বা বড় রাস্তার ওপর যেন

সাথ সাথ চলতে থাকা, অভিমানী কোনো বন্ধু 

মুখ ফুলিয়ে, নারাজ, মৌন, উদাস।


আর যখন মিলন ঘটেহাসিতে গড়িয়ে পড়ে অভিমানী দিন।

কাতুকুতু দিয়ে আমাকে বলে,'বলো , কেমন আছো বন্ধু!'



এ্যালকোহলিক 


যতক্ষণ ভরা থাকে বোতল

ওর ভিতর খলবল করতে থাকে ঝড় 

ওকে খালি করো তবেই পরিষ্কার,পরিপাটি দেখতে লাগবে

প্রতিটি বোতলের তলানিতে দেখ জমে আছে কতই না শান্তি 

এসো না, একে খালি করি!



প্রতিবারই বলে যায় মেয়েটি


প্রতিবারই বলে যায় মেয়েটি... এয়ার হোস্টেস 

প্লেনের উপরে, জলে যদি নেমে পড়তে হয় 

সিটের নীচে জ্যাকেট আছে 

দুটো নল মুখে নিয়ে, তারপর ফুলিয়ে 

ফ্লাইটে যদি অক্সিজেন কম হয়ে যায় 

মাস্ক আছে,আপনা থেকেই পরবে,নাকের ওপর রেখে... 


আগুন লাগলে চারটি দরজা আছে, মধ্যেখানে দুটো করে, পিছনে দুটো, আর... 


প্রতিবারই এই ভয় পেয়ে বসে

যদি এমন হয় তো

কত কঠিন হয়ে যাবে মরা


[গুলজার এক বর্ণময় প্রতিভার অধিকারী। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার,গীতিকার, গল্পকার এবং কবি। তাঁর প্রকৃত নাম সম্পূরণ সিং কালরা। জন্ম ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ আগস্ট। অধুনা পাকিস্তানের পঞ্জাবের দিনা-তে। হিন্দি, উর্দু, পঞ্জাবি,ব্রজ ভাষায় তিনি কবিতা, গীত অন্যান্য সাহিত্য রচনা করেছেন। গুলজার কবিতা লেখেন মূলত উর্দু, হিন্দি পঞ্জাবিতে।তাঁর প্রধান কাব্যগুলির মধ্যে অন্যতম 'চাঁদ পোখরাজ কা', 'রাত পশমিনে কি', এবং ' পন্দের পা়ঁচ পঁচাত্তর ' হিন্দিতে লেখা তা়ঁর অভিনব আঙ্গিকের কবিতা সংকলন হলো 'ত্রিবেণী'।এখানে তাঁর ' পাজী নজমে ' কাব্যের কয়েকটি কবিতার অনুবাদ রইল। অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট অনুবাদক মানবেন্দ্রনাথ সাহা।]


মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মানবেন্দ্রনাথ সাহা-এর অনুবাদ কবিতা

অমিত খান্না

অমলতাস 

আমার সামনে এক ধ্বংসস্তূপ 
এটা একটা বড় বাড়ি ছিল হয়ত
তারও আগে ছিল একটা ঘর।

এখনও এই ঘরের কিছু চিহ্ন চোখে পড়ে
দুটো বাঁশের ওপর কাপড় মেলার দড়ি
উঠোনে শুকনো তুলসীগাছ। 
জানালায় সেঁটে থাকা খবরের কাগজের ছেঁড়া পাতা
ভাঙাচোরা এক শিল বাটা 
জংধরা একটা কুটনো ফেলার পাত্র।

বারান্দায় আরামচেয়ার,যার একটা পা গায়েব!
এই চেয়ারে বসে 
কে জানে কে খবরের কাগজ পড়ত? 

এই ঘর কি খুব সুখী ছিল?
এখানে কি হাসির কলরোল উঠত খুব?
এখানে কি সানাই বাজত কোনোদিন? 
এখানে কি কোনো মৃত্যু হয়েছিল? 

তখনই আমার নজর গিয়ে পড়েছিল
ধ্বংসস্তূপের এক কোণে লাগানো অমলতাস গাছের উপর।
হলুদ সুন্দর ফুলে লেপটে থাকা এই গাছ 
যেন হেসে উঠছে ভেঙে যাওয়া ঘরের ভিতর 
দেখো, ইঁটের এই অট্টালিকা ভেঙে তছনছ হয়েছে 
আর ছোটো এই গাছ কেমন দাঁড়িয়ে আছে। 

আমি বুঝতে পারছি 
কী ভাগ্যবতী এই অমলতাস গাছ
প্রকৃতি একে এমন এক কোণে ফুটিয়েছে
যখন এই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জায়গাটায় 
নতুন ইমারত গড়ে উঠবে 
আর বসত করতে এসে যাবে নতুন লোকেরা 
তারা এই গাছ কাটবে না। 


সকাল  হয়ে এলো 

মনখারাপ কোরো না। 
স্বপ্ন সকলের ভেঙে যায়
সময়ে অসময়ে কেউ না কেউ পড়ে  যায় 
জীবনের এই অনন্ত সফরে।
কখনো না কখনো ব্যর্থতা স্পর্শ করে সকলকে।

চোখের জল মুছে নাও
দূরে সরিয়ে রাখো ক্লান্তি 
ছিঁড়ে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে জড়ো করো
এগিয়ে চলো নতুন পথে
নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু হোক নতুন আশার আলোয়
আশা ভরা চোখ নিয়ে দেখো
সকাল হতে আর দেরি নেই। 

জীবনের সঞ্চয় এই নিরলস পথ চলা 
এক লক্ষ্য থেকে আরেক লক্ষ্যে ধাবমান জীবন
যে পথ হাঁটে নিরন্তর সে ঠিক পৌঁছে যায়।
দৃশ্যের কেবলই বদল হয়,খোঁজো চলার সঙ্গী 
দূরে পাহাড়ের উপর শুকনো ডালের মাঝে 
শোনো সবুজের নতুন সুর।
দেখ নতুন পোশাকে লেপটে আছে আগামীর দিনগুলো 
কেমন করে হাসছে 
তোমার ক্ষতও ভরে উঠছে 
তোমার পায়ের নীচের উত্তাপ 
তোমার নিঃশ্বাসে বেগের আবেগ 
সমস্ত ব্যর্থতাকে সরিয়ে দাও এক ঝটকায় 
বাড়িয়ে দাও নবীন হাত আকাশগঙ্গা পর্যন্ত 
আর ছিনিয়ে নাও নিজের ভাগের 
চাঁদ আর সমস্ত তারাদের।


[হিন্দি পপুলার সিনেমার সত্তর ও আশির দশকের এক জনপ্রিয় গীতিকার, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও কবি অমিত খান্না। তাঁর জন্ম ১৯৫১ সালের ১ মার্চ, দিল্লিতে।তাঁর লেখা'চলতে চলতে' ছবির 'চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখ না কভী আলবিদা ন কহনা 'গানটি মুখে মুখে ফেরে। মনপসন্দ,বাতো বাতো মেঁ, লুটমার,ভৈরবী, তেরী বাহোঁ মে প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির গীতিকার তিনি। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়'অনন্তরাগ' নামে কাব্য। সেখানে  কবিতা,দোহা,গজল,অসর,কতাত,আর হিন্দি সিনেমার গান সংকলিত হয়েছে। সেই কাব্যের দু'টি   হিন্দি কবিতার অনুবাদ এখানে রইল। মানবেন্দ্রনাথ সাহা তাঁর 'অনন্তরাগ'কাব্যটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন।]