সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়-এর দীর্ঘ কবিতা

 

 হৃদয় রেখে যাও

এই নাও আমার চোখ যে তোমায় প্রথম দেখেছিল,
এই নাও আমার হাত যে  প্রথম স্পর্শ করেছিল,
এই নাও আমার ঠোঁট,যা তোমার গালে চুমু দাগ রেখেছিল, 
এই নাও আমার কাঁধ যেখানে মাথা এলিয়ে 
ঝরা পাতার মতো শুয়েছিলে, এই নাও আমার আঙুল, 
যে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে হেঁটেছ অনেকটা পথ, 
এই নাও আমার পা, যে পা তোমার পায়ে পা মিলিয়ে 
দুর্গম দিন হেলায় পেরিয়ে এসেছে, বিশ্বাসের টুকরোগুলো নিও, 
না হলে যে অদানে অব্রাহ্মনে যাবে, সেই নিঃশ্বাসও নিয়ে যাও
যা আমাদের যৌথ অনুভব ও অভিমানের মাঝে
বিসমিল্লাহ খাঁর সানাই বাদন হতে দ্বিধা করেনি,
আর অভ্রকুচির মতো ঝকঝকে হাসির ঝরণাগুলি
নাও,এই নাও প্রতিশ্রুতি ভাঙা বিষণ্ণ শ্রাবণের কাক ভেজা 
বিকেলটুকুও নাও,আমাদের সমস্ত চমৎকার ফুঁড়ে উঠে আসা 
মহাজাগতিক অভিমান নিয়ে যাও,তোমার শরীরের
ত্বকাশ্রিত বকুল গন্ধটুকু নাও, আমার দামাল বাউণ্ডুলে স্বভাবের বাউলপনা
ইচ্ছে হলে নাও,যা তোমার শরীরময় উলকি হয়ে
আছে, আর আমার সমগ্রের ভিতর থাকা তোমার
সমগ্রের লাভাস্রোতটুকুও নিয়ে যাও।

এই নাও আমার প্রতিদিনের অপেক্ষার শিল্পিত রূপ, 
যা কেবল হাত ঘড়ির ঠাট্টায় মেশা,
নাও আমার উৎকণ্ঠার জাদুবিদ্যা জানা জাদুদণ্ড,
যা করতে করতে তোমাকে আঁকতে হত বারবার,
এই নাও রোমিও জুলিয়েট উপন্যাসের বই, আলাপ
বাঁক নেবার দিনে তোমার দেওয়া প্রথম স্মারক,
নাও লেটারস ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার আর 
এই বইয়ের ভাঁজে শুকিয়ে যাওয়া মৃত গোলাপের 
লাশ,এই নাও আমার হাসির ফসিল,যা অনেক 
স্মৃতি-প্লাবনের পলির পলেস্তারায় রচিত,নাও দুঃখ, যা 
প্রকাশ করতে না পারার অযুত কষ্ট বইতে বইতে 
আমি ক্লান্ত,এই নাও কান্না,যদিও আমি নিজে না কেঁদে 
কাউকে কাঁদাইনি কোনদিন,তোমাকেও কাঁদাব না,
এই নাও নির্জনতা, যার অন্তঃসলিলা আমাদের চেনে, 
নাও রোদ্দুর, যার প্রথম স্পর্শ তোমার মুখে আবির
ঢেলে দেয়, এই নাও গোধুলি যার গায়ে
আমাদের পারফিউমের গন্ধ ম ম করছে,
এই নাও রাত্রি, যা আমাকে দুরন্ত দুঃসাহসী ও তোমাকে
ভীত করেছিল প্রথম চকিতে,এই নাও চন্দ্র শোভিত মধ্য যাম, 
যার নিরবচ্ছিন্ন নিরাভরণ ইশারায় আমি শরীর সর্বস্বতার
খেলা শিখেছি তোমার রচিত ব্যাসার্ধ জোড়া বিদ্যুল্লতায়। 

সব সব নিয়ে যাও। শুধু তোমার হৃদয় রেখে যাও। 
সে যে আমার আত্মায় লীন,
তার চোখে চোখ রেখে আমাকে লিখতে হবে
সম্পর্কের করুণ এপিটাফ।
এই দুঃসহ কর্মজীবনটুকু আমার জন্য রেখে দিয়ে
তুমি বিহ্বলতাগুলোকে গোলাপ বানিয়ে সন্ধ্যামেঘে
উড়নি উড়িয়ে ফিরে যাও।
পিছুটান নেই। পিছুডাক নেই। বাঁধন ছেঁড়ার দিন।
তোমার ক্ষণিকের স্থিতি বাঙময় হয়ে রইল শুধু,
এই বিমূর্ত শিল্পটুকু থাক। যা একান্ত আমার।

শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা


 চৈতন্য হোক

চোখের ভিতর তখনও মোহ, বালিশ মাথায় শুয়ে,
বৃষ্টির শিশু ফোঁটা সবে ঝরতে শুরু করেছে,
গোটানো আস্তিন থেকে অশ্রাব্যকুশ্রাব্য ঝেরে ফেলে আখের গোছানোর লোভে কারা যেন বিষ্ঠা ঘাটছে !

হে মহাগুরু! আমাদের চক্ষুষ্মান করো।
আমি খেয়ালই করিনি আমার জবা গাছের ডালে
মায়ের শ্রীচরণের জবা! কি অপরূপ যে লাগছে !
কথা তাদের বলা আর না বলা দুইই সমান--
কি বল ঠাকুর !

মোহান্ধ মানুষের হেলদোল নেই, তাইই হয় গো।
যারা ভাঙে, তারা কি গড়ার কৌশল জানে !
সর্বনাশের সর্বগ্রাসী রূপ ফুটে ওঠে তাদের চোখে
পাপীদের অনুতাপ যে মাদারির-জাগলারি--ক্ষণিকের!
হীনমন্য দম্ভের ঠমক থাকে তাদের সৃষ্টিতে,যা বিনষ্টির বীজ বপন করে,ফষ্টিনষ্টিতে মাতিয়ে রাখে,
নীল ট্রাপিজে দুলতে থাকে কোমরবন্ধ হলুদ সংসার!

অকাল শ্রাবণ ধোয়া এই ধবধবে পবিত্র সকালে
হে ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ ! তুমি আর একবার

শোনাও তোমার বীজ মন্ত্র -"তোদের চৈতন্য হোক!"

বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধায়-এর কবিতা

 

দোল পরিক্রমা

মরা ডালে প্রথম সূর্য, চাঁদের মতো আটকে, প্রান্তজনের সখা যে পাখি, তার ডানারআলপনাতে
ধন্য হয়ে উঠছে হাওয়ার পিঠ। ফাগুনের ফাগুয়ায়
অস্ফুটে বেজে চলেছে কোমল ধৈবত...
রুকস্যাকের চেন টানতে টানতে প্রহর হেসে উঠল,
ওয়েটারদের জুলজুলে চোখে প্রাপ্তির নেশা,
শেষ গন্তব্যের শকট, মর্কট ঘোড়ার মতো হাজির।

এই কে আছো ! যাবো না বলে দাও।
ছুটির পরিক্রমা বাড়িয়ে নেবো। তুমি পাশে থেকো।

মরা ডালে লটকে থাকা চাঁদ,আমার শৈশব
বুকে আকড়ে দিব্বি বেতাল সেজেছে! আমি পিঠ
খুঁজে খুঁজে সারা। আমি বেতালের পিঠে চেপে
পেরিয়ে যেতে চাই সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়,
যাত্রাপথ রাঙিয়ে রঙিন করে দিও !

মরা ডালে ক্ষণস্থায়ী অস্ত চন্দ্র-
সূর্যের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে আবির ইশারা ,
নিবিড় স্তব্ধতা ভেঙে দু'একটা সুগন্ধি ফুল
কুঁড়ির পরাধীনতা ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে,
আর নূপুরের মতো ঝরছে শিশির ঝরোকা
আজ আবার হৃদরঙে রাঙাবো তোমায়
তুমি পাশে থেকো।