তূয়া নূর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
তূয়া নূর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

তূয়া নূর-এর অনুবাদ কবিতা


মেরী ওলিভারের


রাজহাঁস


 তুমিও কি দেখেছো সারা রাত ধরে আঁধারে ঢাকা নদীতে ভেসে যেতে?

দেখেছো সকালে উঠে আসতে রূপালি বাতাসে

 এক ভরা বাহু সাদার প্রস্ফুটন

রেশম এবং লিনেনের এক নিখুঁত কারুকাজ হেলে আছে যেখানে মিলেছে দুটো ডানা

 একটা বরফ জমাট নদী তীর, পাড়ে লিলি ফুল,

 তার কালো চঞ্চু দিয়ে যেন কামড়ে ধরছে বাতাস?

তুমি কি শুনেছো এই বাঁশি শিস দেবার শব্দ

 একটা তীক্ষ্ণ আঁধারের সঙ্গীত - যেন বৃষ্টি ছুঁড়ে দিচ্ছে প্রস্তর গাছের উপর  ঠিক জলপ্রপাতের মতো

 আঁধারের শরীরের স্তর কেটে কেটে পড়ছে

 সব শেষে তুমি কি দেখেছিলে মেঘের নীচে ---

 সাদা ক্রসের কিছু প্রবাহিত আকাশ জুড়ে,

 তার পা কালো পাতার মত?

তার ডানা গুলো নদীর বুকে প্রসারিত চিকমিক করা আলোর মতো?

 অনুভব করেছো তোমার ভেতরে সব কিছু কীভাবে সমস্ত কিছুর সাথে সম্পর্কিত?

 শেষমেশ তুমিও কি বুঝেছ কিসের জন্য এই সৌন্দর্যের পসরা বিছানো?

আর তুমি কি ঘটিয়েছো কোন পরিবর্তন তোমার জীবনে?



সহজ চারটা রহস্য

শস্যবীজ কেমন অনুভব করে
যখন সবেমাত্র শুরু গমের দানা হবার?

কেমন অনুভূতি হয় একটা বিড়ালপাখির
যখন নীল ডিম খোলস ভেঙে ছোট্ট বিড়ালপাখির ছানা হয়,
হয়তো মধ্য গ্রীষ্মের রাতের আগে এবং ধুমধাম ছাড়া?

কোন ভাবনা ভাবে সাগরের কচ্ছপ যখন পা দিয়ে বালি টেনে ঢেকে রাখে ডিম,
তারপর ফেলে রেখে যায় পৃথিবীর কাছে?
সে কি কখনো জানতে পারে তার অর্জনের কথা?

এবং যখন নীল সারস তার দীর্ঘ বুকের পালক চঞ্চু দিয়ে খোঁচায়,
সেখান থেকে একটা পালক খসে পড়ে যেতে দেখে,
সে কি জানে আমি এই পালক খুঁজে পাব?  
দেখবে কী সে আমি ধরে আছি হাতে যখন সে ডানা মেলে দেয়
নিঃশব্দে নম্রভাবে যেমন সে উঠে এসে ভাসে জলে?

আর অন্য যে কোন দিনে
কাজল কালো জল আর পাতায় ঢাকা পুকুরের পাড়ে, কোন নাম সেই পুকুরের,
নাম রাখা না হলে হয় না তার নাম।

আমরা আর কি করতে পারি যখন রহস্যগুলো সহসা দাঁড়ায় সামনে এসে
আর আশা করি ঝুড়ি থেকে দ্রুত শব্দগুলো তুলে এনে করা হবে তাদের প্রশংসা,
সারস, সাগরের কচ্ছপ, বিড়ালপাখি, শস্যবীজ
হাঁটু গেড়ে বসে আছে অন্ধকার পৃথিবীতে,
যার শরীর উন্মোচিত হচ্ছে একটা সোনালি জগতে?


[কবিতা এবং গদ্যে প্রভাবশালী কবি  লেখক মেরি অলিভার। কবি মেরী ওলিভার  দৃশ্যের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করতেন। তিনি খুঁজতেন বিষয় বস্তুর ভেতর রহস্য। জীব জগতের বৈচিত্র্য অভিন্নতার গভীর উপলব্ধি পারঙ্গমতার সাথে তুলে ধরেছেন তিনি কবিতায়।মেরি অলিভার পুলিৎজার পুরস্কার জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী কবি। তার বইয়ের মধ্যে রয়েছে নতুন এবং নির্বাচিত কবিতা: ভলিউম ওয়ান, হোয়াই আই ওয়েক আর্লি, আউলস অ্যান্ড আদার ফ্যান্টাসিস, ড্রিম ওয়ার্ক, হোয়াইট পাইন, ওয়েস্ট উইন্ড এবং ব্লু আইরিস।  আছে ব্লু পাশ্চারস,  রুলস ফর দ্য ড্যান্স এবং উইন্টার আওয়ারস সহ গদ্যের পাঁচটি বই। কবি মেরী অলিভারের জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ ওহাইও অঙ্গরাজ্যের মেপল হাইটসে। তিনি মারা যান ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে।]

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তূয়া নূর-এর অনুবাদ কবিতা


মার্গারেট অ্যাটউড 


আমার সন্তানেরা

আমার সন্তানেরা, তোমরা কি বেড়ে উঠবে পানিবিহীন পৃথিবীতে?
সেখানে কি থাকবে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, কোথায় তুমি?
সেখানে থাকবে কি তারাফুল?
নিদেনপক্ষে ঝিনুক।
হয়তোবা ঝিনুক নয়।

আমরা জানি সেখানে থাকবে ঢেউ
জীবনের জন্য খুব বেশী প্রয়োজন নেই এ সবের।
একটু মৃদুমন্দ বাতাস, একটা  ঝড়, একটা ঘূর্ণিঝড়।
লহরী সেই সাথে।
পাথর।
পাথর প্রশান্তিদায়ক।

 যতক্ষণ ধুলোবালি আছে সূর্যাস্ত থাকবে।
 সেখানে ধুলোবালি থাকবে।

আমার সন্তানেরা, তোমরা কি বেড়ে উঠবে সংগীতহীন এক পৃথিবীতে?
পাইন গাছ আর শ্যাওলা থাকবে না যেখানে?

তোমাদের জীবনটাকে কাটিয়ে দেবে গুহাতে,
একটা আবদ্ধ গুহা অক্সিজেনের লাইনে যুক্ত,
যতক্ষণ না বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে?
তোমার দৃষ্টি কি বিহ্বল হবে সূর্যহীন মাছের ডিমসাদা চোখের মতো?
কিসের জন্য তোমার প্রাণ আকুল হবে সেখানে?

আমার সন্তানেরা, তোমার কি বেড়ে উঠবে বরফহীন এক পৃথিবীতে?
যেখানে ইঁদুর থাকবে না, শৈবাল থাকবে না?

 আমার সন্তানেরা, তোমরা কি বড় হবে?
যদি কোন শূন্যতা না থাকতো

ভেবে দেখো
যদি কোন শূন্যতা না থাকতো জীবনের কোন অর্থ হতো না।
 
সমস্ত ইলেকট্রন, তাবৎ কণারা
 পাশাপাশি মিশে আছে একটি চিলেকঠায় ফেলে রাখা জিনিষের মত
অথবা বর্জ্য পেষার যন্ত্রের আবর্জনার মতো
চাপে এক সাথে মিশে পরিণত হচ্ছে সমতল ঘন আকৃতির খণ্ডে
 সুতরাং সেখান তাই প্লাজমা ছাড়া আর কিছুই নেই:
 না তুমি না আমি।

 আমি শূন্যতার প্রশংসা করি
 খালি ঘর, তাদের ধূলিকণা,
 শূন্য দৃষ্টি, জানালা দিয়ে দেখা আকাশের মতো নীল।
 মোটেলের বাইরে ‘ঘর খালি’ শব্দটা জ্বলছে  ও নিভছে
 একটা নিয়ন সাইনের তীর নির্দেশ দিক,
যে পথ দিয়ে যেতে হবে সামনের বিরক্তিকর ডেস্কে
যেখানে চাবি ঝুলছে বাদামী চামড়ার চাবির আঁকারের চাবি রাখার জায়গায়,
এই সেই চাবি যা শূন্য ঘর খুলে দেয়
 
 এখানে দাগ কাটা লিনোলিয়ামের মেঝে ঝাপসা চোখের মতো পাণ্ডুর-বর্ণ
 তার ফুলেল কৌচ এবং ভাঁজ ভাঙ্গা কুশন
ঝুলচাদরের বিছানা, ধোয়া ও ছত্রাক পড়া গন্ধ
 আর তোতলানো রেডিও
 এখানে একটা ছাইদানি আছে
 সত্তর বছর আগের

সেই ঘরটি আমার জন্য এতদিন স্থির ছিল:
 একটা শূন্যতা একটি গহ্বর একটা শুনশান নীরবতা
 যার আছে একটা না শোনা গল্প
 প্রস্তুত আমার সামনে মেলে ধরার।
 
চল দেখি সেখানে কি কাহিনী আছে!


হারানো


অসংখ্য বোনেরা নিখোঁজ হয়েছে

অসংখ্য নিখোঁজ হওয়া বোন


বছরের পর বছর, হাজার বছর ধরে

অসংখ্য জনকে ঠেলে দিয়েছে


অকালে রাতের গভীরে পুরুষেরা

যারা ভাবে এটা তাদের অধিকার


রাগ এবং ঘৃণা
ঈর্ষা ও ভয়

অসংখ্য বোনকে হত্যা করা হয়েছে
 বছরের পর বছর, হাজার বছর ধরে

হত্যা করে ভীতু পুরুষেরা ভীতসন্ত্রস্ত
যিনি লম্বা হতে চেয়েছিলেন

 বছরের পর বছর, হাজার বছর ধরে
 অসংখ্য বোনেরা নিখোঁজ

অসংখ্য চোখের কান্নার জল...




রাগ

রাগ হলো লাল
ফিনকি দেয়া রক্তের রং

সে ছিলো রাগে ভরা
যে পুরুষকে সে ভালবাসতে চেয়েছিলো

তুমি দরোজা খুললে
মৃত্যু সেখানে সটান দাঁড়িয়ে ছিলো

লাল মৃত্যু, লাল রাগ
রাগ তোমার প্রতি

এতো দিন বেঁচে থাকা
ভয়ে বিধ্বস্ত না হয়ে

জিগ্যেস করলে তুমি, কি চাও?
লাল ছিলো তার উত্তর।



পাখির প্রাণ

পাখিরা যদি পেতো মানুষের প্রাণ
তবে তুমি কোন পাখি হতে?
বসন্তের কোন পাখি—যাচ্ছ আনন্দের গান গেয়ে?
না অনেক উঁচুতে ওড়া কোন পাখি?

তুমি কি গোধূলি বেলার পাখি হতে
চাঁদটাকে দেখছো
আর গান গেয়ে যাচ্ছো একা, নির্জন,
গেয়ে যাচ্ছ — এ এক অকাল মৃত্যু?

তুমি কি এক পেঁচা হতে,

নরম পালকের শিকারি?
শিকার করছো তুমি, অবিরাম শিকার করছো
তোমার হত্যাকারীর প্রাণ?

আমি জানি তুমি পাখি নও,
আমি জানি তুমি উড়ে চলে গেছো অনেক দূরে,
এখানে থেকে অনেক দূরে।
আমি যে চাই আশেপাশে কোথাও তোমাকে…



[কানাডার সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে মার্গারেট অ্যাটউড অন্যতম। তাঁর জন্ম ১৯৩৯ সালে ১৮ নভেম্বর। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজিতে বিএ ও হার্ভার্ডের যাডক্লিফ কলেজ থেকে এম ডিগ্রী নেন। তিনি ঔপন্যাসিক, সমালোচক ও অধ্যাপক।  তিনি সময়ের সমস্যা গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন এবং উপন্যাসে তুলে এনেছেন।  নারীবাদী ও প্রকৃতিবাদী কবি হিসাবে তিনি সমধিক জনপ্রিয়। তাঁর কবিতার সংকলন ১৬টা, নয়টা ছোটগল্প, ও ১৪টা ছোটগল্পের সংকলন আছে। ননফিকশন লিখেছেন ১০ টা। তিনি তাঁর উপন্যাস The Blind Assassin (২০০০) এর জন্য সম্মানীয় বুকার পুরস্কার পান। বর্তমানে মার্গারেট অ্যাটউডের বাস টরেন্টোতে।]


শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

তূয়া নূর-এর কবিতা

ভাঙে

নদীর স্রোতে পাড় ভাঙে
ঢেউয়ের শব্দ শরীরের শিরশির করা ভয় জাগায়
পানিতে আধাডোবা খাট, মানুষ, সাপ ও গবাদি পশু এক সাথে বাস। 
ঘর ভাঙে, উঠোন ভাঙে। ভাঙে গোলা, গোয়াল ও রান্নাঘর। 
ভাঙে আম জাম কাঁঠালের বাগান ঝুপঝাপ শব্দে।
নদী যেন সব গিলে খায়। 

ঘরহারা মানুষ আশা ছাড়ে না
প্রতিদিন নদী পাড়ে এসে দেখে,
ছানি পড়া চোখে গোল চশমা,
কোথাও চর জাগলো কী না নদীর বুক চিরে, 
বালি চিকমিক, কচি ঘন সবুজ ঘাস, কাশবন। 
প্রবাদবাক্যের মতো শুনে এসেছে আজন্ম— নদী একূল ভাঙে, অন্যকূল গড়ে। 

মানুষ ভাঙে। 
হাত পা হাড়ের মতো ভাঙে মানুষের মন। 
ঝুপঝাপ করে ভেঙে পড়ে নদীতে। 
সেই নদীর তল নেই,
খলবল শব্দ নেই মহাজগতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত,
ভাঙা মন থিতিয়ে গ্লাসের তলায় জমে না পলিমাটি
হয় না আনকোরা চর বা দ্বীপ
বা খালি চোখে না দেখা দূর আকাশে গ্রহ বা উপগ্রহ বা কোন তারকারাজি।