শনিবার, ১ মে, ২০২১

কবি শঙ্খ ঘোষ-এর প্রয়াণে আমরা শোকাহত। কবি-কে আমাদের প্রণাম।


 

সম্পূর্ণ সূচি (বর্ষ ১ ।। সংখ্যা ৭) [মে সংখ্যা]


 

রেজাউদ্দিন স্টালিন-এর কবিতা


আত্মার আগুন

তোমার জীবনের সমস্ত বিষয় যদি

কবিতার উপজীব্য করি

আমার  সামান্য জীবনে 

যেটুকু কালির সঞ্চয়

তা দিয়ে দীর্ঘসূত্রী কাহিনীর সমাপ্তি হবে না- আর পৃথিবীতে সময় দুর্মূল্য

কত তুমিতো জানোই

 

সেই বৃদ্ধ মায়ের কথা ভাবো

তিনি সময়কে অতিক্রম করেছেন

অনেক আগেই

সারাদিন প্রার্থনার পাটিতে তোমার

কল্যাণ ছাড়া কিছুই চান না

এতোদূর নগরের অবাক পাথরে

তার আত্মার আগুন কোনোদিন ধ্বনিত হবে না

তবু সে বিলাপ শুনে কেঁদে ওঠে

ঝাড়বাতি   রেস্তোরা নগরভবন

হয়তো তুমিও কাঁদো তোমার গোপনে

আর তোমার স্বার্থপর বন্ধু আমি

জানি না কি করে ক্ষুদ্র কবিতার হাতে

তুলে দেবো বিশাল জীবন

 

আমাদের গলায় আত্মহত্যার দড়ি

টান টান বাঁধা

মাথার উপর ঘন হচ্ছে আনবিক মেঘ

মৃত্যুর ঢেউ এসে কেড়ে নিচ্ছে গ্রাম

যদি পারো এসে দেখো

এশিয়ার সবকটি ঘরে সন্ত্রাস নিত্যপণ্য

জীবনের এইসব টুকরো টুকরো ছবি

কবিতার কঠিন কোলাজ

ভালোবাসি বলে হৃদয়ের ক্ষতে ছিটাবো না নুনের চিৎকার

তবু সত্যের শাসন অমান্য করতে গিয়ে হাত কাঁপছে -ঠোঁট 

কাজল সেন-এর কবিতা


মন্দ বিদিশায়

আমার মন্দলাগায় ছিল না কারও কোনো অভিমান

ছিল না কারও কোনো পরিচর্যার আশ্বাস

যতটুকু যা ছিল ব্যস্ততা অলসতা

সে সবটুকুই ছিল আমার নিজস্ব বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস

 

অন্যরা যারা ছিল নিয়মরক্ষায়

অনিবার্যতার তদারকিতে ব্যক্তিগত শয্যায়

একটা চাঁদ ছিল তখন চাঁদের ভেতর

অনেক তারারা ছিল তারার ভেতর

ভালোলাগার অন্বেষণে ভালোবাসা ছিল প্রশস্ত রাস্তায়

আমি মন্দলাগার বিষণ্ণতায় ছিলাম আমার মন্দবাসায়

 

কিছুটা পথ এভাবেই হয়তো হেঁটে যাওয়া যায়

অনেকটা পথ এভাবেই সম্ভবত পেরিয়ে যাওয়া যায়

গন্তব্য কারও থাকে ছোট অথবা বড় হ্রস্ব অথবা দীর্ঘ

অহেতুক দ্যুতি আর অনর্থক জ্যোতি

যতটা যাবার অথবা যতটা যাওয়া যায়

তারপর কখন যেন পথ বেঁকে যায়

আমি আরও আরও নিমগ্ন হই মন্দবাসায়

দিশা হারাই আমি মন্দ বিদিশায়

কামাল হোসেন-এর কবিতা


 নোয়ার নৌকা

পাইনবৃক্ষগুলির দীর্ঘ শরীরে বৃষ্টি ঝরে

যাচ্ছিল তীব্র বেগে, রাত্রির অন্ধকারে কিছু

দেখা যায় না, অনুভবে মনে হয়, এই 

উপত্যকা ভেসে যাচ্ছে প্রচন্ড জলস্রোতে

 

পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট কাঠের কেবিন,

বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেছে, টিভি চলছে না

মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই, পরিপূর্ণ

বিচ্ছিন্নতার মধ্যে, অন্ধকারে দু-জনে

পরিপূর্ণ নির্জনতায় নোয়ার নৌকা বানানোর

পরিকল্পনা করছি, এই মহাপ্লাবন তো শেষ কথা নয়

ওবায়েদ আকাশ-এর কবিতা


 যাত্রা, ক্রমশ

বাইসাইকেলের টুংটাং আমার মর্মে


আজকাল যতোক্ষণ ঘুমিয়ে থাকি
ততোক্ষণ জেগে থাকি মহার্ঘ শৈশবের প্রহরায়

একবার নদীদের লতানো হাত, একবার হালটের স্নেহার্দ্র গ্রীবা
আর একবার প্রগাঢ় সবুজের কেশাগ্র ধরে
নিঃশব্দ ঘুমের অভিনয় করি--

এভাবে অকস্মাৎ সত্যিকারের ঘুম নেমে এলে
বাইসাইকেলের টুংটাং দিয়ে মাতিয়ে তুলি নিমগ্ন বাড়ি

কখনো রেললাইনের ওপর, প্রায়শ বড় রাস্তার মাঝ বরাবর
আবার হঠাৎ শহরমুখী পাকা রাস্তায়
বাইসাইকেলের মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে যাপন করি আরণ্যক কৈশোর

এইভাবে প্রতিদিন আমার ধবল বাড়িটা কেঁপে কেঁপে উঠে
বিপুল জলে নিক্ষিপ্ত পাথরের মতো গভীরতর ঘুমে লীন হয়ে যায়...

তখন জলের গহ্বরে ফলিমাছের ধবধবে লেজে
প্রথম স্বাক্ষর শিখি নিজের নাম, এবং ক্রমশ রক্তাক্ত হই
বোয়ালের ঘাঁই, শিংমাছের শানানো কাঁটায়...

আমার জলজ জীবন গড়াতে গড়াতে নিঃসীম সমুদ্র ছুঁয়ে
ভেসে ওঠে এক মহানগরের প্রত্ন পোড়া ইটে

বাইসাইকেলের টুংটাং আমার মর্মে
তা আজ প্রবল সিন্ধু নিরবচ্ছিন্ন ইট-পাথরের পাঁজর বিদীর্ণ করে

আর কোনো ঝঙ্কার তোলে না