শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২

সম্পূর্ণ সূচি ১ (বর্ষ ২ ।। সংখ্যা ১৫) [জানুয়ারি সংখ্যা]


 

সম্পূর্ণ সূচি ২ (বর্ষ ২ ।। সংখ্যা ১৫) [জানুয়ারি সংখ্যা]


 

সম্পাদকের নিবেদন


 

স্মরণঃ কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়-কে শ্রদ্ধাঞ্জলি

 



কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়
২১ ডিসেম্বর২০২১ নব্বই বছর পার করে চলে গেলেন পঞ্চাশের বিশিষ্ট কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়। বিদূষী কবিপত্নী বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর বার্ধক্যজনিত অসুখে কর্মক্ষমতা হারিয়েছিলেন কয়েকবছর আগেইনতুন কিছু লিখতেও পারতেন না। তবু আদি কৃত্তিবাসের সম্পাদকদের মধ্যে কেবল তিনিই জীবিত ছিলেন। তাঁর প্রয়াণের ফলে পঞ্চাশের বাংলা কবিতার জগতে বেঁচে রইলেন কেবল অশীতিপর দুই কবি : সুধেন্দু মল্লিক  দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোনার হরিণআহত ভ্রূবিলাসনা নিষাদঅন্ধকার লেবুবনসোনার পিত্তলমূর্তি ওইঘুমের বড়ির মতো চাঁদ 
ইত্যাদি স্মরণীয় কাব্যের স্রষ্টা তিনি। লিখেছিলেন ‘সহবাস’, ‘আশ্রয়’ ইত্যাদি জনপ্রিয় উপন্যাস এবং একাধিক ছোটগল্প। অনুবাদ করেছেন অমিয় চক্রবর্তীর‍্যাঁবোভেরলেনসাঁ ঝন পের্স প্রমুখের কবিতা। পেয়েছিলেন বাংলার বাতায়নকথা এবং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। গদ্যগ্রন্থের মধ্যে আবার ইউরোপআমার আমেরিকা দর্শনআলোয় কালোয় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। মূলত গদ্যকবিতার কবি তিনিপ্রেম-বিষাদ-বিদ্রুপ আর দিনানুদৈনিকের বাস্তব চিত্র নিয়ে তাঁর কবিতা আমাদের আজো নন্দিত করে। এখানে সদ্যপ্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর দুটি স্মৃতিধার্য কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো :  
  

অপরাধ

 

পাপ বলে কিছু নেই, অপরাধ আছে

যা কষ্টদায়ক।

আছে পুণ্য অর্থাৎ আনন্দ।

পুণ্য তো করেছি ঢের,

অপরাধ দুটো-একটা।

 

দিন গেলে পুণ্যেরা শুকোয়

বাসি বকুলের মতো।

অপরাধই

মাধবীলতার মতো বেড়ে ওঠে

পিঠ থেকে কাঁধে :

একদিন ফুল ফোটে সে-লতায়

গন্ধে তার

কোথাকার পাপপুণ্য সব একাকার হয়ে যায়।



কেন তুমি

 

কেন তুমি হঠাৎ ক্ষমার শিক্ষা ভুলে গেলে?

এত ক্রোধ

ভালো নয়, নেহাত নির্বোধ, সে- জানে।

কেন তুমি কণ্ঠ থেকে যজ্ঞ-উপবীত ছিঁড়ে ফেলে

ভাসালে গঙ্গায়?

 

যা কিছু তোমার পাশে যায় আসে

সবই তার তোমার রচনা, ইচ্ছাধীন?

তা তো নয়।

একা তুমি কতটুকু পারো?

আছে ধারে-কাছে ঢের আত্মীয় প্রতিবেশী

সম্ভবত পরার্থবিদ্বেষী, হীনমন্য, কিন্তু তুমি তাই বলে

ক্রোধী হবে, আরো ক্রোধী হবে?

মানুষ কী অনন্য বিষণ্ণ জীব

কী পরনির্ভর

তুমি পূর্বেও দেখেছো, দেখো নাই?

 

তবে কেন হঠাৎ ক্ষমার শিক্ষা ভুলে গেলে?

কেন তুমি কণ্ঠ থেকে যজ্ঞ-উপবীত ছিঁড়ে ফেলে

ভাসালে গঙ্গায়?

 

 

          [কবিতা-দুটি তাঁরঅন্ধকার লেবুবন’ (১৯৭৪) কাব্যের অন্তর্গত এবংশ্রেষ্ঠ কবিতাতেও সংকলিত]

 






(তথ্য ও চিত্রঋণঃ ঋতম্‌ মুখোপাধ্যায়)






ঋতম্ মুখোপাধ্যায়-এর ধারাবাহিক গদ্য : "কবিতার বাতায়ন"

 

পার্থিব মুখে জ্যোতির আস্বাদ


প্রাক্‌কথন

পয়লা জানুয়ারি ২০২২ তিনি শতবর্ষে পা দিলেন। রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরী (১৯২২-২০০৯), স্বভাবত স্বতন্ত্র কবি, অনুজ কবিদের কারো কারো মতে তিনি কবিদের কবি। শব্দচয়নে খুঁতখুঁতে এই কবির কবিতা অচলিত শব্দের বিচিত্র ইশারায় উজ্জ্বল (তিরশ্চীন = উভয় পার্শ্বে দৃষ্টিপাত, অবডীন = অবরোহনকারী, খণ্ডবিয়নী = দিব্য হাত পাখা, হিমধামা = চাঁদ ইত্যাদি) ঈশ্বর, নিসর্গ, প্রেম তাঁর কবিতার কেন্দ্রীয় বিষয়। বেদ-উপনিষদ-পুরাণ এবং তন্ত্র তাঁর কবিতায় অনুষঙ্গ হয়েছে, যদিও প্রকাশভঙ্গি একান্তই রমেন্দ্রকুমারীয়। পেশায় সরকারি কলেজের ইংরাজির অধ্যাপক সুপণ্ডিত রমেন্দ্রকুমার ছিলেন অকৃতদার। নইহাটির বাসভবনে বোনেদের সঙ্গে থাকতেন। কবিতা-চর্চাই ছিল ধ্যান-জ্ঞান। মানুষ হিসেবে ছিলেন উদার বন্ধুবৎসল।  -লেখাটি তাঁর ঈশ্বর-ভাবনা নিয়ে এক অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন।

 

 

 

 

বিস্মিত চোখের সামনে খুলে গেলো অন্য এক লোক

যেখানে পার্থিব মুখ জ্যোতির আস্বাদে অনশ্বর ;

গাছ পাখি কুঁজো লোক সব-কিছু অম্লান সুন্দর,

বিশুদ্ধ আনন্দ এক ; যেন কোনো মৃত কোঁচবক

সে-আশ্চর্য গানে উড়ে গেলোহলদে পঞ্জিকার

যৌন ইন্ধনের গল্পে চিহ্ন নেই যার।

                                    (প্রেম প্রকৃতি শিল্প /  ‘আরশি নগর’)

 

অলঙ্কৃত শব্দের মায়াজাল বিছিয়ে এভাবেই তাঁর অনশ্বর কবিতার ভুবন গড়ে তুলেছিলেন কবি রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরী। উনিশশো বাইশ থেকে দু-হাজার নয়এই সাতাশিবছরের জীবনসীমায় চল্লিশের মেধাবী এই কবি বাচনমুদ্রা, শব্দ-ব্যবহার আর বোধের স্বাতন্ত্র্যে অনুপম ব্যক্তিত্ব। যদিও একথা সহজ সত্য, প্রেম-প্রকৃতি-মানুষ এই নিয়েই আর পাঁচজন পূর্বসূরীর মতোই তাঁর কবিতার চংক্রমণ, শিল্পিত বিকাশ। ভারতীয় বিরহের কবি  রূপে নিজেকে চিহ্নিত করেছেন তিনি, যে বিরহের কেন্দ্রে আছে নারী :

 

ঈশ্বর, মোটর, কিংবা বিউগল, কিছুই পারে না তবু দিতে,

যদি-না সমস্ত চেষ্টা শান্ত হয় একটি নারীতে।            (একটি শীতল নারী : একটি অস্থির পুরুষ)

 

কিংবা বলেন,

 

আমি, সগর্ব-বিস্ময়ে নতজানু, পৌরাণিক বীরদের মতো

করজোড়ে স্তব করি।

 

                            সবুজ পোশাকে

যে-মেয়েটি এইমাত্র গেলো, ছন্দে তাকে

কে দুলিয়ে দিলো? তারপর সমস্ত শরীর তার

দ্যুতি বিকিরণ করে, নান্দনিক, সম্পূর্ণ স্বাধীন,

কারো নয় - এমন কি  ঈশ্বরেরও নয়।    (ঈশ্বরের নয়)

 

 

প্রেমিকা আর প্রকৃতি একসুরে বাঁধা পড়তে চায়, কিন্তু পারে না ; কারণ কবি চান সশরীর আবির্ভাব। তবু ঊরুতে সাইক্লোন তুলে উড়ে যাওয়া  নারী শেষাবধি অবিস্মরণীয় মরীচিকা হয়ে থাকে। তাহলে কী পান রমেন্দ্রকুমার কবিতার কাছে ?  নিরাকার ব্রহ্ম কিংবা ঈশ্বর তাঁর কবিতায় অপরিহার্য শর্তের মতো মিশে থাকে ভারতীয় ঐতিহ্যকে স্বীকরণ করেন ; পুরাণ, মঙ্গলকাব্য, তন্ত্র, দর্শন, ধ্রুপদী সাহিত্য-কে তিনি একসূত্রে গাঁথেন। জানান,

 

রাজটীকা আছে,

তবু রাজা বলে মানতে চাও না!

আমি রানীভাবা মেয়েদের ভালোবাসা চাই,

আমি দেবীরূপা মেয়েটির

দুটি হাত ধরে প্রেম ভিক্ষা করি।             ( এই স্ফীত নীল শিরা )

 

কবিতার শিশুটির মতো তিনিও যেন ভাবতে থাকেন :

 

ঈশ্বর, না ছবির পাখিকে ?

রিনু বলে : মা, পটের মউর।

ঈশ্বরকে নম।

প্রেমিক তরুণ গান বাঁধে :

পুঁতির মউরি চুর লে,

কী-নিয়ে বাঁচবো ?

আমি তিনবার চোখ বুজে জানি :

ফোটোর নাচুনি ঢেকে দিলে,

আসল পাখিটি পর্দায়

ঠিক ঢাকা পড়ে ; লাস্য করে না।   (পুঁতির মউরি)

পার্থিব পটের মউর  আর অপার্থিব আসল পাখি - মাঝখানে দুলতে থাকে এই উচ্চারণ। বাউল গানের অচিন পাখি- স্মৃতি জীবিত হয়।

 

।। ।।

 

বৌদ্ধ দর্শনের মূল কথা দুঃখের কারণ নির্দেশ তার সমাধান এই দর্শন নাস্তিক অর্থাৎ বেদের অপৌরুষেয়তায় তাদের বিশ্বাস নেই, এঁরা নৈরাত্ম্যবাদী কিন্তু জন্মান্তরে বিশ্বাসী। তথাকথিত মহিমান্বিত ঈশ্বর না থাকলেও বৌদ্ধ ধর্ম বোধিলাভ করা বুদ্ধদেব-কেই ঈশ্বরপ্রতিম ভাবে। বুদ্ধদেব নিজেকে কৃষকও ভাবতেন অন্যদিকে নিরীশ্বরবাদী সাংখ্য দর্শন দ্বৈতবাদী, তাদের বিশ্বাস প্রকৃতি পুরুষের মিলনে যে জগৎ পরিণাম ঘটছে তা স্বতঃপরিণাম এই প্রকৃতিই আদি কারণ, তার নিজের কোনো কারণ নেই। নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির সঙ্গে আত্মা বা পুরুষের মিলনে সৃষ্টির সূচনা হয়।  সাংখ্য ঈশ্বর স্বীকার না করলেও মুক্তি-তে বিশ্বাস করে রমেন্দ্রকুমারের কবিতায় এই দুই নিরীশ্বর দর্শন যেমন মিলেছে, তেমনি আছে পরমব্রহ্মকে স্বীকার করে নেওয়া উপনিষদ তার আনন্দবাদ।  রবীন্দ্রোত্তর এই কবি বিশ্বাস করতে চান মাটিই ঈশ্বরী ,তাই নির্বাণ কাম্য নয় তাঁর :

 

সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি।

সন্ন্যাসী মশায়,

মস্তক মুণ্ডিত, হলুদ কাপড়,

আমার ঈশ্বর

সে কি ত্রিপিটক ? মাটিই আমার

বুদ্ধ, কালী, আরাধ্যা সুন্দরী,

আমি রাতদিন তারই ধ্যান করি।             (প্যাগোডার সম্মুখে কৃষক)

 

প্রকৃতি আর নারীর সান্নিধ্য- দুয়ের ভারসাম্য রচিত হতে থাকে তাঁর কবিতায়। চর্যাপদের সহজিয়া বৌদ্ধদের দেহসাধনা থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রতিরসোচ্ছল মানবজীবন-কে দামী কোহিনূর  বলে মনে হয় তাঁর, লেখেন :

 

ওঁরা জ্ঞান এবং গুরু, মহীয়সী, মন্দিরের গায়ে দেখুন, বা

কোলে বসিয়ে পড়ুন : যা মৃত্যু, আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি।       (চৌষট্টি পাপড়ির পদ্ম)

 

আমরা জানি অদ্বৈতবেদান্তবাদী শঙ্করাচার্যকেও নারীর কাছে রতিকলা শিক্ষা নিয়ে নিজের জ্ঞান সম্পূর্ণ করতে হয়েছিল। আবার রাধাতত্ত্ব -এর একালের গবেষক জানেন, শ্রীকৃষ্ণ নয় রাধাই কৃষ্ণের দেহসাধনার গুরু। অবচেতনের যৌনাবেগ, যাকে ফ্রয়েডের ভাষায় এরোস্‌  থ্যানাটস্‌  বলা হয়, রমেন্দ্রকুমারের কবিতার দুই গোপন বিন্দু। তাই আমি কবিতায় চিন্ময় বেরাল  মিশকালো ব্রেসিয়ারের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে, সোনার বেরাল  হয়ে কবিকে সঙ্গ দেয় আর দিব্য সহস্র ছটায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। দেহচেতনাকে ঊর্ধ্বায়িত করেন কবি তাঁর কবিতার কথক প্রৌঢ় দেখেন অপূর্ব মিথুন আলিঙ্গনবদ্ধ প্রেমে  , বলেন,

                  ...দেবদূত মর্তে, নেমে,

জিনরিকশা হাতে টানেবোঝ তুমি, কেন?

একটি পাখি দেখতে খুব তিলফুল ছিলো,

সে- শূন্যে উড়ে যেতেমঠে গিয়ে গেরুয়া পরিনি।

আজও, পড়ন্ত রোদেও, হৃদয়ের টানে আমি বুঁদ হতে পারি।

যুবা, তুমি পারো ? শুধু শেষটা শোনো : ধৈর্য আর স্বপ্ন

                             বুকে কষ্ট এঁকে রাখা,

সংক্ষেপে, যা ধরে থাকে, ধর্ম, আজ ক্রমশ উচ্ছেদ

কুড়ালের তীক্ষ্ণ ঘায়ে অরণ্যের মতো।                         (ক্রমশ উচ্ছেদ)

 

শোণিতে এক গোপন যন্ত্রণা লালন করেন কবি ; সে কী প্রেমের অপূর্ণতার নাকি আজীবন কৌমার্যের অথবা উত্তরাধিকারহীন হয়ে একদিন নিরুৎসব চলে যাওয়া ? এসবই মিলেমিশে লিখিয়ে নিয়েছিল হয়তো সেই বিখ্যাত, অধুনা বহুচর্চিত, এপিটাফ :

 

১৯২২- জন্ম। শুক্লা তিথি। রেখে গিয়েছেন

শুধু কয়েকটি কবিতাতারাই সন্তান ;

তারাই আগুন দেবে মুখে। আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই ?

সামান্যইএকজন বন্ধুর প্রীতি, দুজন বান্ধবী।           (জীবনচরিত)

 

কিংবা  তর্পণ  কবিতায় দেবী সরস্বতীর কাছে কিসের প্রার্থনা ?

 

আরো তেজ দাও,

নির্বংশ কোরো না।

        নাও ফুল,

        নাও মৎস্য

আমার ভিটেয়

কুলে বাতি দিতে

অন্তত একজনও কেউ, পিতা,

        তেজী বংশধর

                থাক।                   (সরস্বতী : স্তব)

 

নিভৃতচারী কবির নিবিড় বেদনার স্থানটিকে একমুহূর্তের জন্য যেন ছুঁতে পারি আমরা।

।। ।।

 

আজ বেশিরভাগ মানুষের কাছে ঈথরের মতোই ঈশ্বর এক কাল্পনিক সত্তা মাত্র। সে তুচ্ছ পার্থিব সংবাদ নিয়ে চঞ্চল।

তাঁর  ব্রহ্ম পুঁতির মউরি  কাব্যসঙ্কলনের মুখবন্ধে এভাবেই আধুনিক মানসে ঈশ্বরের স্থানাঙ্ক চিহ্নিত করেছেন কবি। তাঁর  ব্রহ্ম কবিতায় যে দিব্য মজা - কথা বলেন তিনি তাও পার্থিব জীবনের দিকেই মুখ ফেরানো। তাই জীবনে জ্ঞানত কোনো পাপ যিনি করেননি, তার উদ্দেশে ব্রহ্মের নির্দেশফুসমন্তর, আজ থেকে লম্পট হয়ে যা আসলে পরিবর্তিত সময়ে দু-দুটি মহাযুদ্ধের উত্তাপ সামলে ভারতীয় ঈশ্বরের মুখশ্রীও বদলে যায়। জন্মসূত্রে হিন্দু-ব্রাহ্মণ কবি নিজেকে পুতুলপুজুরি  বলেও  অনুভব করেন :

 

ভগবান বদলে যাচ্ছে। আমিও কি বদলাচ্ছি না ?

নাকি ভগবান যথাস্থানে সে, আমিই পতনশীল শুধু ?

সমাজ পাতালগামী, নদীর আবর্তে ড়ে কবি

সত্যশ্রীর পতাকাটা প্রাণপণে তুলে ধরতে চেষ্টা করছে,

যদিও সে রক্তমাংসে ভীষণ দুর্বল,

ঘুষি খেয়ে উলটে পড়ে, আর কান্না পেলে

কবিতাই লেখে শুধু, কিন্তু ভেতরে-ভেতরে ঠিক

সটান আঙুল, অগ্নিরেখ, সে নয় বায়ুশকুন,

যা একটুতে নেচে ওঠে, নড়ে যায় প্রকীর্ণ হাওয়ায়

শোনো, আমরা কেউই গোল্লায় যাবো না,

                        ঈশ্বর সম্পূর্ণ নন,

ভুল করে চলেছেন কত যুগযুগান্তর, তবু

ট্যারাব্যাকা বালা তাঁর পারেন নি এখনো গোল করতে।

যতদিন না চিন্ময় বাগানে বসে গান গায় চিন্ময় মানুষ,

ভারত-ভ্রমণে যায় একসঙ্গে জ্যোতির্ময় বাঘ হরিণ,

চিন্ময় নারকেল গাছে উড়ে আসে চিন্ময় গৃধিনী।

সার বেঁধে চলে যায় গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে

                          তেজোময় লক্ষ পিঁপড়ে,

পুকুর ঝল্‌সিয়ে ওঠে এঁকেবেঁকে চিন্ময় ডুণ্ডুভ

ততদিন আমাদেরই মতো তিনি ক্রমশ সুন্দর।          (এক গোষ্ঠীর পাঁচজন কবি)

 

এক মানবিক তথা আধুনিক দৃষ্টিকোণ এই কবিতার উৎস সেইসঙ্গে জ্যোতির্ময় বাঘ হরিণ আমাদের সাধক-কবি নিশিকান্তর বিখাত কবিতা  হিরণ্ময় সিংহ মর্ত্যের হরিণ -কে মনে করায়, জীবাত্মা মানবাত্মার রূপক ছিল সেই কবিতাটি। রমেন্দ্রকুমার মনে করতেন :

...একজন হিন্দু বেশভূষায়আচার-আচরণে যতই পাশ্চাত্য হোক না কেনকিংবা একসময়ে যতই নাস্তিকবা জীবনের গভীরতম রহস্য সম্পর্কে উদাসীনঈশ্বর এবং ভারতীয় ঐতিহ্য – অন্তত শেষজীবনে – তার কাছে অপ্রতিরোধ্য।

তাঁর ভারতীয় সূর্যাস্ত কবিতায় এইসব কথাই তিনি বলতে চেয়েছেন। মঙ্গল আর অমঙ্গলবোধের দোটানায় কবির ভূমিকা তাই ঈশ্বরের অদ্ভুত লীলায় অংশগ্রহণ করা। সমাজের অংশ কবিও এক ট্র্যাজিক নায়ক।  বংশপরম্পরায় পাপ-পুণ্যের উত্তরাধিকার বহন করে তাঁর কাজ হলো,

...মরীয়া আনন্দ নয়আত্মবিলোপও নয়। ঈশ্বরের জুড়ি হয়ে বসে রস আস্বাদন। এই বোধ থাকলে পাপ  অমঙ্গলের করাল মুখও যেন আত্মসমর্পণে বা কৌতুকে নির্মল হয়ে ওঠে।

 

।। ।।

 

নিজেকে পুরোহিত  বলে ঘোষণা করেছিলেন তাঁর পূর্বসূরী কবি জীবনানন্দ দাশ :

 

একবার কথা য়ে দেশ আর দিকের দেবতা

বোবা হয়ে পড়ে থাকে – ভুলে যায় কথা !

যে আগুন উঠেছিল তাদের চোখের তলে জ্বলে

নিভে যায় – ডুবে যায় – তারা যায় স্খলে !

নতুন আকাঙ্ক্ষা আসে – লে  আসে নতুন সময়, -

পুরানো সে নক্ষত্রের দিন শেষ হয়,

নতুনেরা আসিতেছে লে ! –

আমার বুকের থেকে তবুও কি পড়িয়াছে স্খলে

কোনো এক মানুষীর তরে

যেই প্রেম জ্বালায়েছি পুরোহিত হয়ে তার বুকের উপরে !             (নির্জন স্বাক্ষর / ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’)

 

মৃত নক্ষত্র যেন পুরোনো সময়ের নির্জন স্বাক্ষরঝরে যাওয়া প্রেম পুরোহিত হয়ে কবি সেই হৃদয়ের পুজোয় প্রেমিকার আরাধনা করেনপ্রেমের দীপ জ্বালেন। নশ্বর জীবনে অনশ্বর প্রেমের জন্য তাঁর স্বপ্ন জেগে থাকে। উত্তরজাতক রমেন্দ্রকুমার লিখেছেন পুরোহিতদর্পণ  পোড়াজল  কাব্য। যে কাব্যে ধর্ম থেকে মার্কসীয় দর্শন তাঁর চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। ভারতীয় পাপের দর্শনকে এখানে তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন। ভারতীয় দার্শনিক বা সাধকের মতো কোনো নির্বাণ বা মুক্তি তাঁর কাম্য নয়কবি হয়ে তিনি কোনো মুক্তির নিদানও দিতে চান না।  অন্যত্র পিশাচ  কবিতায় রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টান্ত টেনে এনে বোঝাতে চেয়েছিলেনশিল্প  অবিমিশ্র সাংসারিক সুখের মধ্য থেকে নির্বাচন করে নিতে বললে রবীন্দ্রনাথ বেছে নিতেন স্বার্থপরপিশাচ শিল্প-কেই।  অতএব অক্ষরব্রহ্মই কবির আশ্রয়স্থলপ্রকাশের একতম পন্থা।  আর নান্দনিকতাই তাঁর ধর্মযে নান্দনিক দ্যুতিতে একটি নারী ঈশ্বরেরও পরাধীন হয়ে থাকে নাতাঁর চোখে। এই সেক্যুলার  বিশ্বেও রমেন্দ্রকুমার  কবিতায় ঐশীপ্রেরণার কথা বলেন পাশাপাশি অনুশীলন,অনুকূল বন্ধুজন  সৌভাগ্যকে মূল্য দেন। এক সম্পূর্ণ জ্যোতিশ্চক্রে বলয়িত হয়ে তাঁর দোষে-গুণে ভরা মানবজীবন আমাদের কবিতা শোনায় :

শাস্ত্র মানিনি,

সাঁই, ক্ষমস্ব।      

চিত্তে বাক্যে হস্তযুগে পদযুগে উদরে শিশ্নে যাহা কিছু স্মৃত উক্ত কৃত

সমস্ত অর্পণ ব্রহ্মে স্বাহা।                           (পুরোহিত দর্পণ)

 

সেক্যুলার এজ’(২০০৭) নামের সাম্প্রতিক গ্রন্থে চার্লস টেলর এমনই এক ধর্মনিরপেক্ষ আধ্যাত্মিকতার কথা বলেন,

 

We should find the centre of our spiritual lives beyond the code, deeper than the code, in networks of living concern, which are not be sacrificed to the code, which must even from time to time subvert it. The message comes out of a certain theology, but it could be heard with profit by everybody.           (Page.743 : A Secular Age)

 

এই নৈতিক বা সামাজিক বিধি বিরহিত আধ্যাত্মিকতার অপর নাম আধুনিকতা। তা রমেন্দ্রকুমারেরও আধুনিকতা। যে আধুনিকতা আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গে কাম-এর  মিলনবিন্দুটিকে পুনর্বার অনুসন্ধানে উৎসুক :

 

And one needs both today in order to explore again the profound interpenetration of eros and the spiritual life. The terribly fraught area in Western Christendom, where the sexual meets the spiritual, urgently awaits the discovery of new paths to God.                (Page – 767 : Ibid)

 

ভারতীয় ধর্ম ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও এই চিন্তন গ্রহণযোগ্য - যা রমেন্দ্রকুমারের কবিতা পাঠের সূত্রে আমাদের ভাবিত করে।

 

।। ।।

 

রমেন্দ্রকুমার অনুজ কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের কবিতাংশে খুঁজেছিলেন দিব্যতা আশ্রয় :

 

বিপরীতে অন্য এক কবি

কত স্বাভাবিক বলতে পারেন :

মাঝে-মাঝে স্পষ্ট করে বলা দরকার

ঈশ্বর আছেন’ –

এমন দিব্যতাময় পংক্তি সমসময়ের কে লিখতে পেরেছে?

এমন অকুতোভয় উচ্চারণ একালের কোহিনূর হীরা :

যুগের বাতাসে আজ তিনিও ভাঙছেন, বালা তুবড়ে যাচ্ছে,

তবে আমরা কার কাছে যাবো?            (অন্য এক কবি / ‘অলংকৃত তীর’)

 তাঁর নিষিদ্ধ কোজাগরী  কাব্যের পান্থ  কবিতায় এই উচ্চারণ ছিল অলোকরঞ্জনের, যে অলোকরঞ্জন  যৌবনবাউল - বন্ধুরা বিদ্রূপ করে  বলেই ঈশ্বরে বিশ্বাস  রেখেছিলেন, সেখানে রমেন্দ্রকুমার বলতেন :

ঈশ্বর যদি কুণ্ডল ছুঁড়ে মারে

বন্ধুরা থাকে  - ঝোড়ো হাহাকারে দেবে

একরাত্রির আশ্রয় অন্তত।     (বন্ধুরা)

 

সেই তিনিও যুগের ঝোড়ো হাওয়ায় দিশাহীন হয়ে হাহাকার করেন। কারণ জীবন সায়াহ্নে এসে অলোকরঞ্জনও লিখে ফেলেছেন এমন পঙ্‌ক্তি :

 

ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা হল

সাঁইত্রিশ বছর পরে, তাঁর

বেশ ঝরে গেছে প্রোফাইল,

শুধু কিছু আকাশের নীল

ছুঁয়ে আছে মুখের বিষুব।

 

আজ তিনি অকৃতার্থতার

প্রতিমূর্তি, তবু তাঁর ইমেজ

আমারই বজায় রাখবার

দায়িত্ব, যেহেতু একদিন

তাঁকে লিখে নিয়ে গেছি খুব।   (ইমেজ / ‘ওষ্ঠে ভাসে প্রহত চুম্বন২০০৬)

 

চমকিত হতে হয়, সহধর্মিণী ট্রুডবার্টা দাশগুপ্তের মৃত্যুবেদনাকীর্ণ এই কাব্যটি কবি রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরীকেই উৎসর্গ করেছেন তিনি ! রমেন্দ্রকুমারের বিশ্বাসের জগৎ ভারতীয়। তিনি বেদনার বিষয়ে ফেনিয়ে বলার বিরোধী, তিনি কবিতার গভীরে চান নৈঃশব্দ্য। ঈষৎ কৌতুক মেখে কবির কলম মশাল হয়ে আমাদের চমক দিয়ে যায়, ঈশ্বরের মতো আলোছায়া খেলা করে সূর্যাস্তের পর। আসলে বাস্তব আর আধ্যাত্মিক আয়তনের মধ্যবিন্দুতে বাস করা মানুষের জন্য রমেন্দ্রকুমারের কবিতা নিরাশামণ্ডিত হয় না শেষাবধি :

 

ঢেউ যদি সত্য, তবে শব্দ ভাব নাট ছবি সরকারের জাদু

জল লোহা গ্যাস মাটি তেশূন্য এই শরীর শশকবিষাণ

কিছুই অলীক নয় ; একই সঙ্গে ঘরের কপাট খুলে

                          বন্ধ করতে পারেন হিরণ্য,

- সত্য। চতুর্দিকে ঢেউ, আমি মরে যাই, অবিশ্রান্ত ঢেউ !   (বেনেবউ পুঁতির মউর ডাকিনী / ‘ব্রহ্ম পুঁতির মউরি’)

 

সত্য- ঈশ্বর সেই চৈতন্য-সাগরের ঢেউয়ে কবি ভেসে চলেন। কবির দৈহিক মৃত্যু ঘটে। তবু বাস্তবের মাটি ছুঁয়ে তাঁর কবিতারা মঙ্গল-অমঙ্গলের ভারতীয় আবহে আলোকস্তম্ভ হয়ে জেগে থাকে,দীক্ষিত বাঙালি পাঠকের দিক্‌-নির্দেশিকা রূপে।  

 


অনুকথন

 

৮৭ বছর বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রমেন্দ্রকুমারের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে প্রকাশ পায় একাধিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা (জীবৎকালে বেরিয়েছিল সংকেত, মৃত্যুর পর কবিতা প্রতিমাসে, কবিতীর্থ, সাহিত্যসেতু ইত্যাদি) এবং তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি বই হয়ে বেরোয় কবিতীর্থ থেকেই, নাম : মাতৃকাবর্ণেরা, এস। রমেন্দ্রকুমার কবিদের কবি হলেও তাঁর মৃত্যুসংবাদ জনপ্রিয় কবিদের মতো প্রথম পাতার খবর হয়নি। তবু তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন, কবিতা এবং সমালোচনাগ্রন্থ প্রকাশ পায় ক্রমশ। বর্তমানে তাঁর কবিতাসমগ্র দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছেন সী বুক এজেন্সি থেকে। আর পয়লা জানুয়ারি ২০২২ চুঁচুড়া শহর থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে প্রবীর রায়চৌধুরী সম্পাদিত সংকেত পত্রিকার রমেন্দ্রকুমার সংখ্যার (১৯৯৮) পুরনো কিছু লেখার সঙ্গে নতুন কিছু লেখা যুক্ত হয়েআরশি নগরের কবি’, প্রকাশকএবং অধ্যায় এখানে ২০০৯ সালে তাঁকে নিয়ে লেখা তিনটি এলিজির অংশবিশেষ উদ্ধার করা হলো :

 

) এমনই একজন ব্রহ্মচারী

মারা গেলেন আজ, যদিও নারী

তাঁর বিষয় ছিল, দুনিয়াদারি

 

ছিল না তাঁর ধাতে, পৌরুষেয়

একাকী সাধনায় ভোরের দিকে

চলে গেলেন তিনি নির্নিমিখে।  (এখন সভ্যতা হাসপাতাল, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত)

 

) যিনি অহরহ কবিতায় চাঁদ নিয়ে লোফালুফি খেলতেন

যিনি পথে-ঘাটে বেডরুমে খুঁজে বেড়াতেন গুহ্যমন্ত্র

যিনি সব নারীকেই ভাবতেন দুর্মূল্য কোহিনূর

যিনি শব্দ-চাষে যখন তখন তুলে আনতেন ব্রহ্মবীজ

দ্যাখো দ্যাখোসেই রমেন্দ্রকুমারের নাভি কেমন

ভেসে যাচ্ছে হুগ্‌লি নদীর জলে...   (রমেন্দ্রকুমারের নাভি, শীতল চৌধুরী)

 

) হিম জিভে থেমে আছে

               সব অলীক শব্দসম্ভার

স্পন্দহীন বুকে শুধু ক্ষোভ, অভিমান

যেন মৃত মৌমাছি;

কেবল সান্ত্বনা আছে :

শুধু কয়েকটি কবিতা

তারাই সন্তান, তারাই আগুন দেবে মুখে   (কবির মৃত্যু, তরুণ মুখোপাধ্যায়)


গ্রন্থঋণ :

 

) আচার্যচৌধুরী, রমেন্দ্রকুমার / ব্রহ্ম পুঁতির মউরি / প্রথম সংস্করণ, জানুয়ারি ১৯৮৫ / মহাপৃথিবী : হাওড়া।

) সেনাপতি, উমা / দর্শন অভিধান / এপ্রিল ২০০৭ / বাকপ্রতিমা : মেদিনীপুর।

) ঝা, শক্তিনাথ / অন্য এক রাধা / প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ২০০৭ / মাইন্ডস্কেপ : মনফকিরা , হাওড়া

) স্টর, অ্যান্টনি / ফ্রয়েড : ভেরি শর্ট ইন্ট্রোডাক্‌শন্‌ / প্রথম ভারতীয় সংস্করণ ২০০৭ / অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস : নিউ দিল্লি

) টেলর, চার্লস / সেক্যুলার এজ / ২০০৭ / হাভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস : আমেরিকা।

) সরকার, সোমব্রত / কবির সঙ্গে : ‘আমি ভারতীয় বিরহের কবি’ / রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরীর সাক্ষাৎকার / কবিসম্মেলন / নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০০৭।

) কবি রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরী / তরুণ মুখোপাধ্যায় / সহযাত্রী /  ২০০৯

) সাহিত্যসেতু : রমেন্দ্রকুমার স্মরণ সংখ্যা ২০০৯

) আমার রমেন্দ্রকুমার / শীতল চৌধুরী / সারঙ্গ / ২০১৯

১০) প্রণীত অগ্নি কাকে বলে তুমি জানো? / বয়েসের ছাপ মুছে ফেলি বল্কলে / ওষ্ঠে ভাসে প্রহত চুম্বন (অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের এই তিন কাব্য)