সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১

সম্পূর্ণ সূচি (বর্ষ ২ ।। সংখ্যা ১৩) [নভেম্বর সংখ্যা]







 

ঋতম্ মুখোপাধ্যায়-এর ধারাবাহিক গদ্য : "কবিতার বাতায়ন"


 সুভাষের গোর্কিসুভাষের হিক্‌মত : অনুবাদবীক্ষা 

·              ‘...we need poetry in one form or another. Everyone is fond of music and songs, and as far as I know you all like beautiful words and beautiful women. So how can one do without poetry? All culture has originated from it, and the work we are doing, dear comrades, has a poetry of its own.’ (ম্যাক্‌সিম গোর্কি)

·             কবিরা তো ভ্রষ্ট নন যে, তাঁরা মেঘের রাজ্যে পাখা মেলবার স্বপ্ন দেখবেন; কবিরা হলেন সমাজের একজন, - জীবনের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত, জীবনের তাঁরা সংগঠক।’ (নাজিম হিক্‌মত)

 


অনুবাদ আসলে পুনর্বিন্যাস। একটি শব্দের বদলে বিকল্প শব্দ এবং এক ভাষার অন্বয়ের বদলে ভিন্ন বা আধুনিক ভাষার নিজস্ব অন্বয়কে ব্যবহার করেএকটি টেক্সটের জন্মান্তর ঘটানোতেই অনুবাদের সার্থকতা। ভাব  রূপগত মূলানুগত্যকে যথাসাধ্য বজায় রেখেও এই নবজন্ম ঘটানোর কাজ করেন অনুবাদক। তাই স্রষ্টাকে যদি বলি প্রডিউসারঅনুবাদক তবে রিপ্রডিউসার। তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে সর্বদাই মূল ভাষা থেকে উদ্দিষ্ট ভাষায় পৌঁছনোর যে-প্রক্রিয়া চলেসেখানে অনুবাদকে দুই ভাষাতেই পারঙ্গম হতে হয়। কিন্তু সমস্যা হয় ভাষাজ্ঞানের ক্ষেত্রে। আমরা তো কেউই প্রায় বহুভাষাবিদ নইতবু বিশ্বসাহিত্যকে পড়তে আগ্রহী সকলেই। সেক্ষেত্রে নির্ভর করতে হয় আন্তর্জাতিক স্তরে কাজের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃতঅধুনা কম্পিউটার  ইন্টারনেটের মূল ভাষা ইংরাজির উপর। অনুবাদের ক্ষেত্রেও তাই মূল দেশি বা বিদেশি ভাষা না জেনেও ইংরাজি অনুবাদ নির্ভর করে দ্বিতীয় একটি অনূদিত পাঠ প্রস্তুত করা হয় প্রায়শই। উনিশ  বিশ শতকে এমন ঘটনা ঘটেছে সর্বত্রই। সাম্প্রতিক কালে দাবি উঠেছে ইংরেজিকে নির্ভর করে অনুবাদ বিশ্বাসযোগ্য নয়হয় ইংরিজতেই পড়ো অথবা মূল ভাষা জেনে তবেই তাকে মাতৃভাষাতে অনুবাদ করো। যারা তা করেন নাতারা পরিশ্রমবিমুখ এবং সেই তর্জমাগুলি গুরুত্বহীন। এই মত চরমপন্থী তাতে সন্দেহ নেই। কবে,কেকোন্‌ ভাষায় তুখোড় হবে এবং সে আবার ভালো অনুবাদকও হবেএতসব শর্ত চাপিয়ে দিলে অনুবাদ সাহিত্যের ক্ষতি বই লাভ হবে না গবেষণার ক্ষেত্রে মূল ভাষা জেনে তবেই অনুবাদচর্চা করা উচিত এই তাত্ত্বিক নিয়ম চালু হলেওসার্বিকভাবে ইংরেজিকে মাঝখানে রেখে অনুবাদের কাজ স্বদেশে  বিদেশে আজও জনপ্রিয়। একথা সবাই জানেনঅনুবাদ কখনো মূলের হুবহু প্রতিফলন নয়কিছু বিচ্যুতি অনিবার্য সেখানে। তাই তত্ত্ব যাই বলুক না কেনপ্রাঞ্জল অনুবাদই শেষপর্যন্ত পাঠকের মন জয় করতে পারে আজও। সে অনুবাদ মূল থেকে হলো অথবা লিংক ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে হলোএকথা মোটেই আমরা বিবেচনা করি না। আর এই গৌরচন্দ্রিকার প্রধান কারণ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৩যখন অনুবাদ করেছেন তিনি মূলত ইংরেজিকে উৎস ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নাজিম হিকমতসলঝনেৎসিনগোর্কিহাফেজ প্রমুখের রচনা অনুবাদ করতে গিয়ে মূল ভাষা তিনি ভালোভাবে শিখে অনুবাদ করার জন্য অপেক্ষা করেননি (তবে নিয়মিত রাশিয়া যেতেন  রুশ সাহিত্য চর্চাও করতেন বলে রুশ ভাষার সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় তাঁর ছিল)  পাঠককেও তথাকথিত ‘সেকেণ্ড হ্যান্ড’ অনুবাদের স্বাদ দিতে চেয়েছেন। একালের নব্য অনুবাদ-বিশেষজ্ঞর দল -নিয়ে যতই  বিতর্ক তুলুন না কেনঅনুবাদক সুভাষ পাঠকের দরবারে সাদরে গৃহীত হয়েছেন। আমরা যেন ভুলেই গেছি ‘জেলখানার চিঠি মতো অসামান্য কবিতা আসলে তুর্কি ভাষায় লেখা একজন বিদেশি কবির সৃষ্টি। অনুবাদক সুভাষই এখানে  অমর কবিতার নতুন স্রষ্টা হয়ে উঠেছেনদেখতে পাই আমরা। 

২।।

রুশ কথাসাহিত্যের ইতিহাসে ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩৬এক স্মরণীয় নাম। ‘মা’ উপন্যাসের জন্য তিনি জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করেছেন। প্রাক্‌-বিপ্লব  বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় গোর্কির রচনা সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ  মানবিক মহিমাকে উজ্জ্বল করেছিল। একাধারে বিপ্লবী চেতনা  রোম্যান্টিক কল্পনা নিয়ে তাঁর রচনায় কবিতার স্বাদ-গন্ধ পাওয়া যায়। মূলত কথাশিল্পী গোর্কি সারাজীবনে একটি কাব্যিক গদ্য লেখেনযেটিকে গদ্য কবিতা রূপে অনুবাদ করেছেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়  সিদ্ধেশ্বর সেন। বামপন্থায় বিশ্বাসী এই দুই কবির কলমে ঝড়ের পাখির গান তার স্বমহিমা নিয়েই বেজে উঠেছে। যদিও উৎস ভাষা এক্ষেত্রেও রাশিয়ান নয়ইংরেজি থেকেই এই অনুবাদ। এবার দেখা যাক মূল কবিতাটির প্রেক্ষাপট। ১৯০১ সালসেন্ট পিটার্সবুর্গ। আলেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভ ওরফে ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩৬ততদিনে লেখক হিসেবে রুশ জনমানসে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন গল্পকার হিসেবে। তলস্তয়  চেকভের পরেই উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর নাম। মানবতাবাদী এবং ছন্নছাড়া ভবঘুরেদের প্রতি সহানুভূতিশীল আগেও ছিলেনকিন্তু মার্ক্সীয় ভাবাদর্শে দীক্ষিত হওয়ার  এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অত্যাচারিতের হয়ে কথা বলার স্পর্ধাবিপ্লবের রক্তিম স্বপ্ন। এই সময়ে তিফ্‌লিসে শ্রমিকদের মিছিলেপতাকায় এপ্রিল মাস মুখরিত হয়ে উঠলো। শুধু রুজি রোজগারের জন্য এইসব আন্দোলন বা ধর্মঘট নয়বরং তাঁরা চাইছেন স্বেচ্ছাচারী শাসনের অবসান। পিটার্সবুর্গের কারাখানায় প্রতিবাদী শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের লড়াই হলো ভীষণপুরষদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ে অংশ দিলো মা-বোনেরাও। গোর্কি দেখলেন পিটার্সবুর্গে ছাত্রদের মিছিলে জারের পুলিশের চরম অত্যাচার। তিনি নিজেও ইতোমধ্যে সরকারের সন্দেহের খাতায়বিপ্লবীদের সমর্থক এই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাঁকে বন্দি করে রাখা যায়নি। কিন্তু এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর প্রতিবাদের আবহে তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন। লিখে ফেললেন ‘ঝড়ের পাখির গান’ (দ্য সং অফ দ্য স্ট্রর্মি পেট্রেল) গদ্যকবিতা নাকি কবিত্বময় গদ্যকাহিনি বলবো একে আমরাকেউ গোর্কির লেখা কবিতার তালিকায় একে স্থান দিয়েছেনকেউ বা গোর্কির নির্বাচিত গল্প-সংকলনভভুক্ত করেছেন এই রূপকাত্মক রচনাটিকে। তবে কবিত্বগুণের কথা ভেবে একে আমরা কবিতাই বলতে চাইতদুপরি মার্গারিট ওয়েটলিনলুদমিলা পুরগিনাজর্জ জেসার্নের ইংরেজি অনুবাদ এবং সুভাষ  সিদ্ধেশ্বরের চমৎকার বঙ্গানুবাদ এই গদ্যকবিতার মেজাজ অক্ষুণ্ণ রেখেছে বলেই মনে হয়। কবিতাটির শুরুতেই মেঘ-বিদ্যুৎ-ঝড় :

সমুদ্রের রুপালি তেপান্তর ঘিরে বিক্ষুব্ধ বায়ুমণ্ডলে ঘনায় ঝোড়ো

মেঘ। আর মেঘ আর সমুদ্রের মাঝখানে দৃপ্ত পথে-ঘাটে ওড়ে ঝোড়ো

পাখি যেন বিদ্যুতের কালো ঝলকানি।।  (ঝোড়ো পাখি গান : সুভাষ মুখোপাধ্যায়)

 

রুপোর পাতের মতো সমুদ্রের বুকের ওপর হাওয়া

এনে জড়ো করছে ঝড়ের মেঘআরমেঘ আর সমুদ্রের মাঝখানে,

গর্বোন্নতচক্কর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে সেই ঝড়ের পাখী যেন

                                                        আঁকাবাঁকা

এক তামস বিদ্যুৎচমক।                     (ঝড়ের পাখির গান : সিদ্ধেশ্বর সেন)

কখনও মেঘ ছুঁয়ে সে নেমে আসে সাগরের ঢেউয়ের চূড়ায়, তার পাঁজর ফাটানো ডাকে ঝড় নেমে আসার আমন্ত্রণ। সেই ডাক যেন আবেগে স্পন্দিত অগ্নিশিখা, ক্রোধদীপ্ত আর বিজয়-বৈজয়ন্তীর চিহ্নসূচক। এই সাহসিক উচ্চারণের পাশে গাঙচিলদের ভয়ার্তি, পেঙ্গুইনদের আত্মগোপনের ইচ্ছে নেহাতই অকিঞ্চিৎকর। গোর্কি যেন আসন্ন বিপ্লবের ভয়ে ভীত একশ্রেণির মানুষকে ইঙ্গিত করেছেন এখানে। কিন্তু সেই ঝড়ের পাখি নিঃসঙ্গ অথচ চির উন্নত শির। কবিতা যত এগিয়েছে তত তীব্র হয়েছে ঝড়ের উদ্দাম কলরব। সেই ঝড়ের মেঘের সঙ্গে চলে সমুদ্রের লড়াই। কিন্তু অকুতোভয় ঝড়ের পাখি : ‘যেন কালো দৈত্য এক, ঝঞ্ঝার, - সে / পাখী ঝড়ের, যেন অভিশাপ ছিটোয় নাকি হাসে / চিরন্তনী হাসি, নাকি চিরন্তনী কান্না ওর আসলে এই আনন্দাশ্রুর পিছনে রয়েছে চূড়ান্ত আশাবাদী এক মন। শেলিরওড টু দ্য ওয়েস্টউইন্ডকবিতায় আমরা শুনেছিলাম পশ্চিমীঝঞ্ঝার প্রতি তাঁর আহ্বান Make me thy lyre, even as the forest is : / What if my leaves are falling like its own!’ সেখানেও ঝড়ের মেঘ, উদ্দাম ঝঞ্ঝা আর ঝড়ের শেষে শীত পেরিয়ে বসন্তের প্রত্যাশা। বীজমন্ত্রের মতো হয়ে উঠেছে এই পঙ্‌ক্তিগুলি : Oh, lift me as a wave, a leaf, a cloud! / I fall upon the thorns of life! I bleed!’ কিংবাIf winter comes, can Spring be far behind?’  কিন্তু এই রোম্যান্টিক বিপ্লবী কবি শেলির উনিশ ১৮২০ সালে প্রকাশিত -কবিতার ভিতরে রাজনৈতিক নৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত থাকলেও গোর্কির ঝড়ের পাখির প্রতীকী উপস্থিতি এখানে নেই। শেলি এখানে কালের শিক্ষক হতে চেয়েছেন কিন্তু গোর্কি হয়ে উঠেছেন কালের কণ্ঠস্বর। সরাসরি বিপ্লবীদের মুখে মুখে ফিরেছে এই গান, বন্দেমাতরমের মতোই যেন। তাই এই প্রাজ্ঞ পাখির চেতনায় ঝড়-বিদ্যুতের রূপকল্প অসামান্য ব্যঞ্জনা পেয়ে যায়। মেঘের আড়ালে সূর্য যে ঢাকা পড়বে না সে জানে। গোর্কির এই কবিতা উপমার ভিতরেও ক্রোধের বিচ্ছুরণ : মেঘের গায়ে আহত বিদ্যুতের চমক, সাপের মতো মোচড়ানো বিদ্যুতের প্রতিভাস জলের অতলে ডুবে যায়, পাখি যেন দ্বিগুণ বিক্রমে বলে :

) এখুনি ঝড় উঠবে। ঝড় উঠতে দেরি নেই।

তবু সেই দুঃসাহসী ঝোড়ো পাখি বিদ্যুতের ভিড়ে, গর্জমান, উত্তাল

সমুদ্রের ওপর দিয়ে দৃপ্ত পাখসাটে উড়ে চলে। তার চিৎকারে পুলকিত

প্রতিধ্বনি ওঠে, চূড়ান্ত জয়ের ভবিষদ্‌বাণীর মতো

সমস্ত ভীষণতা নিয়ে ভেঙে পড়ুক, ঝড় ভেঙে পড়ুক।        (ভাষান্তর : সুভাষ মুখোপাধ্যায়)

 

) ঝড়! এখুনি উঠবে ঝড়,

ঝঞ্ঝাঝড়, ঝড়!

আর সেই পাখী, পরাক্রান্ত একা পাখী, মাথা-তোলা

ঝড়ের পাখী ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ায়, বিদ্যুত-চমকের মধ্যে ঘন

বজ্ররবে, গর্জমান, উত্তাল তরঙ্গরাশির মাথায়, ধ্বনিত-

                                                  প্রতিধ্বনিত

তার গর্বোদ্ধত ডাক, যেন বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী...

উঠুক, উঠুক ঝড়

প্রচণ্ড-প্রকোপে তার বিপুল তাণ্ডব।   (ভাষান্তর : সিদ্ধেশ্বর সেন)

সমগ্র কবিতাটি ক্রমশ চড়া সুরের হয়ে উঠেছে এবং শেষে ঝড় নেমে আসার মতোই ফেটে পড়েছে বিক্ষোভে, বিপ্লবে তোমাকে চাই বলে। -যেন সেই কবিতা, যার প্রেক্ষাপটে উত্তরজাতক সুভাষ মুখোপাধ্যায় লক্ষ করেছেন :

একটি কবিতা লেখা হবে। তার জন্যে

আগুনের নীল শিখার মত আকাশ

রাগে রী রী করে, সমুদ্র ডানা ঝাড়ে দুরন্ত ঝড়, মেঘের ধুম্র জটা

খুলে খুলে পড়ে, বজ্রের হাঁকে ডাকে

অরণ্যে সাড়া শিকড়ে শিকড়ে

পতনের ভয় মাথা খুঁড়ে মরে

বিদ্যুৎ ফিরে তাকায়,

সে আলোর তল্লাট জুড়ে

রক্তের লাল দর্পণে মুখ দেখে

ভস্মলোচন।

একটি কবিতা লেখা হয় তার জন্য।     (একটি কবিতার জন্যে  / অগ্নিকোণ : ১৯৪৮)

এই কবিতা লিখে, বিপ্লবীদের জন্য কপি করার যন্ত্র মিমিগ্রাফ নিঝনি তে নিয়ে এসে গোর্কি রাজদ্রোহের অপরাধে গ্রেপ্তার হলেন। ঝড়ের পাখির গান ততদিনে মুখে মুখে ফিরছে। প্রতিবাদের ঝড় উঠলো, তলস্তয় গোর্কির হয়ে কথা বললেন, মুক্তি পেলেন গোর্কি। কিন্তু নজরবন্দি হয়ে থাকতে হলো তাঁকে, দেওয়া হলো দূর গাঁয়ে নির্বাসন। যদিও তলস্তয়, লেনিন এবং অন্য অনেকের প্রতিবাদে তাঁর স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য সরকার তাঁকে ক্রিমিয়ায় কয়েক সপ্তাহ থাকবার অনুমতি দিলো। নিজের শহর নিঝ্‌নি নভ্‌গোরোদ থেকে ক্রিমিয়া যাবার দিন গোর্কি দেখলেন তাঁকে বিদায় জানাতে আসা জনগণের উচ্ছ্বাস আর মুহুর্মুহু শ্লোগান : ম্যাক্সিম গোর্কি জিন্দাবাদ, অত্যাচারের অবসান চাই। আছড়ে পড়া সেই জনতার উদ্দাম কলস্বরে তিনি নিজেই শুনতে পেলেন ঝড়ের পাখির গান, বুঝলেন ঝড় আসবেই।



৩।।

ইংরেজি অনুবাদ পাশে রাখলে আমরা দেখতে পাব, সিদ্ধেশ্বর যতখানি আবেগ-সন্দীপ্ত ততখানি নন সুভাষ। লুদ্‌মিলার ইংরেজি অনুবাদের শুরু শেষের দুটি অংশ এইরকম :

সূচনা :

Alongside the grey-haired plain

Wind is gathering the clouds.

Between clouds and the sea plain

There’s a proud petrel flying,

As a black flicker of lightning.

 

সমাপ্তি :

Gale! Soon it will be surely gale!

 

This is the brave petrel flying

Proudly among the lightnings,

Above the raring sea in anger;

This is the prophetic shout :

 

-Stronger be a coming gale.

তবে রাশিয়া থেকে প্রকাশিত গোর্কি গ্রন্থাবলীতে সংকলিত মার্গারেটের ইংরেজি অনুবাদে ঝড়ের প্রকোপ অধিকতর। এখানে একটি কাব্যিক গদ্যের মতো অনুবাদ করেছেন মার্গারেট, সুভাষ এই একই পদ্ধতিতে তাঁরঝোড়ো পাখির গাননির্মাণ করেছেন :

It’s the storm! The storm is breaking!

Still the valiant Stormy Petrel proudly wheels among the lightning, o’er the roaring, raging ocean, and his cry resounds exultant, like a prophesy of triumph –

Let it break in all its fury!  (1901) 

এছাড়াও সুভাষের অনুবাদে gulls are moaning’ হয়েছেগাঙচিলেরা ভয়ে বিলাপ করে’, সিদ্ধেশ্বর এখানেত্রাসে গুমরে কেঁদে ফিরছে সাগরচিলের দলএইরকম তর্জমা করেছেন। এছাড়া grebes’ সুভাষের অনুবাদে পানকৌড়ি হলেও সিদ্ধেশ্বর জল চাপড়ানো পাখি করেছেন। ইংরেজি অনুবাদের সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে দুটো ভাষান্তরই মূলানুগত মনে হয়, যদিও সুভাষকে অধিক সংহত লাগে। অনুবাদ করতে গিয়ে সিদ্ধেশ্বর একটু বেশি স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ করেছেন। ইংরেজিতে যা ছিল : ‘Sounds the flaming of his passion, of his anger, of his confidence in triumph’, সেখানে সুভাষের অনুবাদে তা হলো : ‘ধ্বনিত হয় জ্বালাময়ী তার আবেগ, তার প্রজ্জ্বলিত ক্রোধ, চূড়ান্ত বিজয়ে তার জ্বলন্ত বিশ্বাস।অথচ সিদ্ধেশ্বর একটু খেলিয়ে অনুবাদ করলেন : ‘সেই ডাক যেন তার আবেগের শিখা, যেন ক্রোধ, যেন বৈজয়ন্তী-ওড়ানোর অপ্রতিহত, অবিচল আশার ললাটিকা।গোর্কির মূল কবিতাটি আমরা পড়তে না পেলেও ইংরেজির মাধ্যমে এই দুটি বঙ্গানুবাদে তার বিস্ফোরক মেজাজ টের পাই, মূল ভাষায় অনুবাদকদের অজ্ঞতা এখানে অনুবাদের প্রসাদগুণকে নষ্ট করেনি, মূলের কাছাকাছিই হয়তো পৌঁছেছে।



৪।।

নাজিম হিক্‌মতের (Nazim Hikmet Ran : 1902-1963)  কবিতা অনুবাদ করে বিখ্যাত হয়েছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। মৌলিক কবিতা লিখতে লিখতেই স্বাদ বদলের জন্য তিনি এই তুরস্কজাত অথচ অধিকাংশ সময়ের রাশিয়া-প্রবাসী এই কবিকে বেছে নিয়েছিলেন অনুবাদের উদ্দেশ্য নিয়ে তাছাড়া স্বদেশে বারংবার নিষিদ্ধ হওয়া, জেলখাটারোম্যান্টিক কমিউনিস্টকবি হিক্‌মতের সঙ্গে তাঁর কবিমানসের সাদৃশ্যও পেয়েছিলেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতাসংগ্রহের প্রথম খণ্ডেই আমরা দেখি তাঁর অনূদিননাজিম হিক্‌মতের কবিতাঅনুবাদ-গ্রন্থটি সংকলিত হয়েছে। প্রকাশসাল অনুযায়ী এটি তাঁর চতুর্থ কাজ, কারণ পদাতিক (১৯৪০), অগ্নিকোণ (১৯৪৮), চিরকুট (১৯৫০) – এই কাব্যত্রয়ীর পর ১৯৫২সালে প্রকাশিত হয় এই বিখ্যাত অনুবাদটি। যদিও পরবর্তীকালে ১৯৭৯-তেনাজিম

হিক্‌মতের আরো কবিতা তিনি প্রকাশ করেন। এছাড়াও নিকোলে ভাপ্‌ৎসারভ, পাবলো নেরুদা, ওলঝাস সুলেমানভ, হাফিজ, চর্যাপদ, অমরুশতক ইত্যাদি কবিতা অনুবাদের কাজ তিনি করে গিয়েছেন। তবে বাঙালির কাছে হিকমতকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তাঁর বিশেষ গুরুত্ব স্বীকার করতেই হয় আমাদের। যে-কারণে দেশ পত্রিকারশতবর্ষে সুভাষ মুখোপাধ্যায়’ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) সংখ্যায় সত্তরের কবি-অধ্যাপক সুবোধ সরকারের লেখা দ্বিতীয় প্রচ্ছদকাহিনির শিরোনাম দেওয়া হয়ভারতীয় কবিতার নাজিম হিকমত সেখানে সুবোধ লিখেছেন :

সবচেয়ে বিস্ময়কর যে-ঘটনা, তা হল নাজিম হিকমতকে যখন অনুবাদ করছেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় তখন তিনি হয় নাজিম হিকমতকে সুভাষ মুখোপাধ্যায় করে ফেলেছেন, নয়তো নাজিম হিকমত সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে নাজিম হিকমত করে ফেলেছেন। আজ পর্যন্ত বাংলা কবিতায় এরকম ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটেনি। আমি যাকে অনুবাদ করছি সে- হয়ে উঠছে আমি। কোনো কবি এভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেননি, নিঃশেষিত করেননি। কোনও বিদেশি কবি হয়ে উঠতে পারেননি এতটা বাঙালি। বোদল্যের পারেননি, রাইনের মারিয়া রিলকে পারেননি। নাজিম হিক্‌মতের অনুবাদ থেকে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের নাম তুলে নিলে যা পড়ে থাকে তার নাম সুভাষ মুখোপাধ্যায়।’ (পৃ.৩০)

সুবোধ এখানে সুভাষের নিজের লেখা কবিতা আর হিক্‌মতের কবিতার অনুবাদ পাশাপাশি তুলে এনে দেখিয়েছেন কিভাবে দুই দেশের দুই ভিন্ন ভাষার কবি সুরে মেজাজে একাকার হয়ে যেতে পারেন। না, এর জন্য সুভাষকে তুর্কি ভাষা শিখতে হয়নি, ইংরেজিকে মাধ্যম করেই তিনি অনুবাদে এই অসাধ্য সাধন করেছেন, নিজের কবিতার মতোই বিখ্যাত করে গেছেন নাজিম হিক্‌মতকে।জেলখানার চিঠিযতখানি হিক্‌মতের, ততখানি সুভাষেরও কবিতা। এই পঙ্‌ক্তিগুলি আমাদের মনের গভীরে গিয়ে উত্তীর্ণ হয় :

আমি আছি মানুষের মাঝখানে, ভালবাসি আমি মানুষকে

ভালবাসি আন্দোলন,

ভালবাসি চিন্তা করতে,

আমার সংগ্রামকে আমি ভালবাসি

আমার সংগ্রামের অন্তস্তলে মানুষের আসনে তুমি আসীন

       প্রিয়তমা আমার, আমি তোমাকে ভালবাসি।  

এভাবেই বিক্ষোভে-বিপ্লবে ভালোবাসার কথা বলতে পারেন একজন খাঁটি কমিউনিস্ট। হিক্‌মত কিংবা সুভাষ মনেপ্রাণে মার্ক্সীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন, তাঁদের চিন্তাধারা তাই একসূত্রে মিলেছে। অনুরূপভাবে সুভাষের নিজের কবিতাতে শুনি,

যখন ভোঁ বাজতেই

মাথায় চটের ফেঁসো জড়ানো এক সমুদ্র

একটি রে ইস্তাহারের জন্যে

উত্তোলিত বাহুর তরঙ্গে তোমাকে ঢেকে দিল

যখন তোমাকে আর দেখা গেল না

তখনই

 

আশ্চর্য সুন্দর দেখাল তোমাকে।।  (সুন্দর)

 

প্রচলিত মাধুর্য নিয়ে সুন্দরের রূপ নয়, সুভাষের সুন্দর সংগ্রামী চেতনার আলোকে উজ্জ্বল হয়েছে, তাঁর প্রেমিকাকে তিনি মিছিলের মুখের ভিতরেই খুঁজে পান। এই মিছিলের মুখই তাঁর ভালোবাসার মুখ হয়ে ওঠে ক্রমশ। হিকমত অনুবাদের কিছুদিন পরেই লেখেনফুল ফুটুক’ (১৯৫২) কাব্য, যার স্মরণীয় পঙ্‌ক্তি : ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক / আজ বসন্ত।তাঁরফুল ফুটুক না ফুটুককবিতাতে সমালোচক তরুণ মুখোপাধ্যায় খুঁজে পান হিকমতের প্রত্যক্ষ প্রেরণা

হিকমত :

পাড়ার বেড়ালগুলো ভিড় করেছে কশাইয়ের দরজায়

চুলে সযত্নে পাতা কেটে তার বঊ ওপরতলায় দাঁড়িয়ে

জান্‌লার ঝন্‌কাঠে তার স্তনযুগ

         ঘনায়মান সন্ধ্যাকে সে দেখছে।  (বিকেলের হাওয়ায়)

সুভাষ :

লাল কালিতে ছাপা হল্‌দে চিঠির মত

আকাশটাকে মাথায় নিয়ে

-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে

রেলিঙে বুক চেপে রে

এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল –  (ফুল ফুটুক না ফুটুক)

হিকমতের কবিতার যে গীতল বিবৃতিধর্মিতা তা সুভাষের অনুবাদে যেমন ফোটে, তেমনই মৌলিক কবিতাতেও ছবি সুরসঞ্চারে হিক্‌মত তাঁর প্রেরণা হয়ে ওঠেন মাঝেমাঝেই। সুভাষের হিক্‌মত অনাড়ম্বর ভাষায় জীবনের জয়গাথা  রচনা করেন। 


৫।।

শঙ্খ ঘোষ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত সম্পাদিত প্রবাদপ্রতিম অনুবাদ কবিতা সংকলনসপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত’- অধিকাংশ কবিতাই ইংরেজি থেকে অনূদিত অর্থাৎ ইংরেজিই সেখানে উৎস ভাষা (Source Language) এই সংকলনে রুশ কবিতার পর্বে যেমন সুভাষ অনূদিত ম্যাক্‌সিম গোর্কিরঝোড়ো পাখির গানস্থান পেয়েছে, তেমনি প্রকীর্ণ লেখমালায় স্থান করে নিয়েছে নাজিম হিক্‌মতের দুটি কবিতা। কবিতা দুটির অনুবাদকও সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ১৯৫২-এর অনুবাদ সংকলন থেকেই বাছাই করা হয়েছে দুটি কবিতা : ‘রবিবারএবংশেখ বদরুদ্দিনের মহাকাব্য থেকেরবিবারঅনুবাদে সুভাষ কিভাবে ইংরাজি অনুবাদকে নিজের ভাষায় তুলে ধরেছেন তার নমুনা দেখা যেতে পারে :

ইংরেজি :

Who cares about the waves with which I yearn to roll

Or about strife of freedom or my wife right now.

The soil, the sun and me...

I feel joyful and how.  (Today is Sunday, অনুবাদক : Talat Sait Halman)

 

সুভাষের বঙ্গানুবাদ :

ঠিক এই মুহূর্তে কোনো অলস স্বপ্ন নয়

বধূ নয়, সংগ্রাম নয়, স্বাধীনতা নয়।

পৃথিবী, সূর্য আর আমি। ...

 

আমি আনন্দিত, আমি সুখী।

 

এখানে লক্ষ করা যায়, অনুবাদক এখানে বাংলা ভাষার স্বাভাবিক চলনকে মেনে কবিতাটি মূল ভাবকে ধরে রাখতে সক্ষম। আক্ষরিক অনুবাদ করেননি বলেইsoil’ মাটি বা ভূমি না হয়ে পৃথিবী হয়েছে কিংবাjoyful and how’-কে আনন্দিত এবং সুখী শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যামূলক তর্জমা করেছেন। আবার তাঁরজেলখানার চিঠিতে দেখি :

ইংরেজি অনুবাদ :

In the twilight of last morning

I will see my friends and you,

and I’ll go

to my grave

regretting nothing but an unfinished song.  (অনুবাদক : Randy Blasing and Mutlu Konuk)

 

বঙ্গানুবাদ :

অন্তিম ঊষার অস্ফুট আলোয়

আমি দেখব আমার বন্ধুদের, তোমাকে দেখব

আমার সঙ্গে কবরে যাবে

শুধু আমার

এক অসমাপ্ত গানের বেদনা।

এই অনুবাদক মূলানুগত হয়েও প্রাঞ্জল এবং সুভাষের নিজস্ব কাব্যভাষার প্রতিফলন এখানে আছে। যদিও উল্লিখিত অনুবাদগুলি হাল আমলের, সুভাষ সেই সময়ে সহজলভ্য ইংরাজি ফরাসি অনুবাদসংকলন হাতে নিয়েই এই কাজ করেছিলেন। আসলে সুভাষের এই অনুবাদ সংকলন পড়লে আমরা মাঝে মাঝেই ভুলে যায় এগুলো অনুবাদ কবিতা :

আমরা একটি আপেলের আধখানা

বাকি আধখানা আমাদের এই বিরাট পৃথিবী

আমরা একটি আপেলের আধখানা

বাকি আধখানা অগণিত মানুষ

তুমি একটি আপেলের আধখানা

বাকি আধখানা আমি

                তুমি আর আমি।   (তুমি আমি)

একটিই উপমা তথা বাকপ্রতিমাকে পুনরাবৃত্ত করে হিক্‌মত আমরা থেকে তুমি আমিতে এসে পৌঁছনএটা তাঁর রোম্যান্টিক মানসের ফসল বলা চলে। বাইশটি অনুবাদ কবিতাগুচ্ছে হিক্‌মতের কবিতাকে সুভাষ মুখোপাধ্যায় এতটাই বাঙালির করে তোলেন যেকিছু কিছু পঙ্‌ক্তি স্মৃতিধার্য মনে হয়। কয়েকটি দৃষ্টান্ত :

ওরা আমাদের গাইতে দেয় নারোবসন,

ঈগল গায়কনিগ্রো ভাই আমার,

আমরা আমাদের গান গাই ওরা চায় না।  (পল রোবসন-কে)

বিংশ শতাব্দীতে

          মানুষের শোকের আয়ু

          বড় জোর এক বছর।  (জেলখানার চিঠি)

আমার কাছে তোমরা শোনো এই খবর :

ভারতবর্ষ ভূখণ্ডে

শহর কলকাতায়

   একটি মানুষের গতিবিধি আজ রুদ্ধ

ওরা শিকল পড়িয়েছে এক অভিযাত্রী মানুষের পায়ে। (কলকাতার বাঁড়ুজ্জে)

আমরা আমাদের কল্‌কেয়

দা-কাটা তামাকের মত

পুড়িয়ে দিই প্রমিথিয়ুসের ডাক।

অগ্নিস্তম্ভের কাঁধে কাঁধ দিয়ে

রক্তিম দিগন্তে আমরা উন্মুখ হয়ে খুঁজি

অগ্নিময় চোখ।  (প্রমিথিয়ুসের ডাক)

আমার শতাব্দী প্রতি মুহুর্তে মরে গিয়ে আবার জন্ম নিচ্ছে

আমার শতাব্দীর অন্তিম দিনগুলো বড় সুন্দর হবে

আমার শতাব্দী সূর্যালোকে ঠিক্‌রে পড়বেআমার প্রিয়

                         ঠিক তোমার চোখের মত।।  (বিংশ শতাব্দী)

হিক্‌মত বিশ্বাস করতেনখাঁটি শিল্পের দর্পণে জীবন প্রতিফলিত হয় আর কবিতাকে হতে হবে জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ততাই কবিতার ভাষা গদ্য বা মুখের ভাষার থেকে ভিন্ন নয়। সুভাষের করা তাঁর কবিতার অনুবাদগুলি পড়লে আমরা এই বিশ্বাসের স্পষ্ট স্বাক্ষর খুঁজে পাই। সুভাষ মুখোপাধ্যায় হিক্‌মতের মতোই কথাগুলোকে পায়ের উপর দাঁড় করাতে চেয়েছিলেনলিখেছিলেন জীবনসমুত্থ সপ্রাণ কবিতাবলী :

আমাকে কেউ কবি বলুক

আমি চাই না।

কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত

যেন আমি হেঁটে যাই। (আমার কাজ)  

তাই একটা শতাব্দী শেষে যিনি পা চালিয়ে হেঁটে যাওয়ার কথা বলেন আর নতুন পৃথিবী সীমাহীন সুখ অজস্র ভালোবাসার স্বপ্ন দেখান; তিনি বাঙালির গোর্কি, তিনি বাঙালির হিক্‌মতআমাদের সুভাষ মুখোপাধ্যায়।।  

 

 

 

ঋণস্বীকার :

 

) সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাব্যসংগ্রহ। বিশ্ববাণী প্রকাশনী (দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৩৭৯)

সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত। শঙ্খ ঘোষ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত সম্পাদিত। দে পাবলিশিং (দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০১০)

) সুভাষ মুখোপাধ্যায় : ভুবনডাঙার বাউল তরুণ মুখোপাধ্যায়। সৃজন (জুলাই, ২০০৬)

) Collected Works in Ten Volumes (Vol. 1) / Maxim Gorky / Progress Publishers, Moscow

)  Translation : A very short introduction / Matthew Reynolds / Oxford  (2016)

) সাহিত্য অঙ্গন : সুভাষ মুখোপাধ্যায় সংখ্যা সম্পাদক : জয়গোপাল মণ্ডল (জুলাই ২০১৮)

) দেশ : শতবর্ষে সুভাষ মুখোপাধ্যায়। এবিপি হাউস (১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯)

) www.poemhunter.com ওয়েবসাইট।