রুদ্র কিংশুক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রুদ্র কিংশুক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

রুদ্র কিংশুক-এর কবিতা

লেবুফুল

কিছু কিছু সম্পর্ক আছে বড়োই মায়াবী। কস্তুরীর মতো সুগন্ধি। লেবুফুলের স্বপ্ন। তার অশ্রুত সুর বুকের ভেতর বাজে। রক্তমাংসের হাত তাকে ছুঁতে পারে না। স্বপ্ন দিয়ে প্রতিক্ষন তাকে ছুঁয়ে থাকা। এই স্বপ্ন সত্যের অধিক।

জগজ্জননী, তার সার্বিক কল্যাণ করুন। শাড়িতে পারিজাত সৌম্য। স্নিগ্ধ। টইটম্বুর দিঘি। উচ্চকিত নয়।  জিনস্- শার্টে পারিজাত পাহাড়ী ঝরনা। উচ্ছল। ঊর্মিময়। উথলে পড়ছে। চোখে লেগে থাকে। কামাতুর হৃদয়। যত ফুল রচনা করে, সবকিছু ব্যর্থ হয়, ফিরে আসে, গ্রহণ করোনি, তুমি।

তবু আশা একটিও ফুল একদিন আকাশকন্যার চুলে যদি শোভা পায়। ঊর্মিমালায় যদি ভরে ওঠে আশ্চর্য নদীনাম। স্বপ্নে বিভোর এই সামান্য কবিজন্ম।

হয়তো তুমি এখন কোন এক সুগন্ধি দ্বীপে কাঞ্চন-বর্ণের ওরিঅল। তোমার মাথায় সবুজ রঙের আকাশ। গালে ঝরে পড়ছে লালের উচ্ছ্বাস। ঠোঁটে সেই সংক্রামক জ্যোৎস্না। তুমি বিগলিত আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ছো বসন্তের বাতাসে।পৃথিবীর সব রং আজ তোমার। যেকোনো রং-এর পাশেই তুমি  উজ্জ্বল, অনন্যা। বাতাসে তোমার পৃথিবীর সুগন্ধ ভেসে আসে।

আমি সেই ছবির গভীর সমুদ্রে মগ্ন নাবিক। মৃত্যুলোক থেকে আমি উঠে আসা।  বহু বছর পর তোমার ছবির কাছে ফিরে আসবো, বলবো: ভালোবাসি,ভুলতে পারি, এমন সাহসী কিছুতেই পারি না হতে ...

শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০২২

রুদ্র কিংশুক-এর অনুবাদ কবিতা

বিরহান কেসকিন

পাতা

আমি ক্লান্ত ছিলাম...
মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমান আমার ঝাপসা শিকড়সহ

গ্রীষ্ম পেরিয়ে গেছে 
একটা মৃদু ভূকম্পনের শব্দ 
পাতা-ঝরা গাছের শিকড় থেকে।

আমি জন্ম দিয়েছিলাম তোমাকে ...
আমার অন্তর্গত ঝরনা থেকে, আমার তিক্ত প্রবাহ

আমি তোমাকে জন্ম দিয়েছিলাম, একটা স্বপ্নের জন্য

একটা ধার করা ঋতু থেকে।



ডুমুর

তুমি আমাকে হাসিয়েছিলে, গ্রীষ্ম, আমার স্বপ্ন

তোমার সঙ্গে ঘুমিয়েছিলাম, তোমার সঙ্গে জেগে উঠি

আমার ভেতরগুলো খু--- বড়ো, পৃথিবী

এঁটে যায়, তোমার পরেই।
আমার কাঁটাহীন, কোনহীন, প্রলম্বিত ভালোবাসা

আমার আত্মা গ্রীষ্মের পাতার মতো বিবর্ণ।

 


ডালিম-স্বপ্ন

ফুলের হ্রাসমান জলের জন্য জল,

গ্রীষ্মের দিকে আমরা যোগ করেছিলাম স্মৃতি,

পঙ্গপালের শব্দ এবং 

বৈকালিক সূর্যের নীচে,

আমরা অপেক্ষা করেছিলাম ডালিম পেকে ওঠার জন্য

আমরা অপেক্ষা করছিলামবিভিন্ন ঘরে 
যে আমাদের বেদনা শেষ হয়ে যাবে,
যে সেটা বদলে যাবে শিশুদের স্বপ্নের মতো ক্ষুদ্রতম ব্যথায়,
গ্রীষ্মের সঙ্গে আমরা যোগ করেছিলাম একটা মুক্তো-সম অর্থ

তুমি জানো,
জীবন ঝিমুনির মতো চলে,

একটা গ্রীষ্মের পাশে আরেকটাকে রেখে,
এখানে সময় বদলে যায় দীর্ঘ উত্তাপে 
অনুভূতির ভারেস্থবিরতায় 

আর গ্রীষ্মগুলো স্মৃতিতে...

যে কথোপকথনে আমরা আশ্রয় নিই তা কি যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে?
গাছের সৌন্দর্যবোধ কি থেমে যাবে,
ভালোবাসা কি যাবে তার শিকড়ে ?
হে আমার কাল্পনিক বন্ধু,
এই ভালোবাসা এখনো আমাদের কাছে ঋণী 
যে যন্ত্রণা আমরা আলাদা আলাদা ঘরে অনুভব করি তা শেষ হোক 
গ্রীষ্ম চলে যাক আর ডালিম পেকে উঠুক



​[​বিরহান কেসকিন (Birhan Keskin, 1963) আধুনিক প্রজন্মের তুর্কি কবিতায় বিশিষ্ট নাম। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সমাজতত্ত্ব বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছেন। তাঁর কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ:

Crazy Lyrics 1991
I May Return Unhappily 1994
Winter of Murder+ Two Letters 1996
Road 2006

বিষয় প্রকরণের সমন্বয়ে তাঁর কবিতা তুর্কি কবিতার নতুন অভিমুখটিকে চিহ্নিত করে। সমালোচকদের মতে তুর্কি ভাষায় তাঁর কবিতা বড়ো উপহার স্বরূপ।​]

বুধবার, ১ জুন, ২০২২

রুদ্র কিংশুক-এর অনুবাদ কবিতা


বেতুল তারিমান

বিদ্রোহী

আমি ছিলাম এক শিশু

যন্ত্রণার জন্য আমি জড়ো করলাম একটা হ্রদ/ আমার মা চাপে রেশম ফোটার

আমার বাবাও এলো, আমার স্বপ্নে আহত ঘোড়াগুলো

 

মা, আমাকে লুকাও তোমার স্বপ্নে

তোমার মুক্তোর ভেতর

জীবন এক পোশাক পচনশীল

আমার ভেতরে একটা ঘোড়া টগবগাচ্ছে/ যেন লাগামছাড়া

যেন সেইসব শিশু যাদের তুমি বড় করে তুলেছো

 

সংকীর্ণ পাহাড়ি পথের শীতলতা থেকে

পুরনো শহরের সোঁদা গন্ধ থেকে

আমি প্রেমে পড়েছি যেন আমি চব্বিশ

আমি হয়ে উঠলাম সময়ের এক অঙ্গার

হা ছি

আমার বাবা এলো

 

আমার মা তার আনন্দে আমাকে পরেছিল


উপচে-পড়া মদিরার আনন্দ গান


ভালোবাসা একদিন আসতে পারতো

ভালোবাসার দুঃখের আমিতো বাধ্য ছিলাম

ভালোবাসা পুরনো জিনিসের ফেরিওয়ালা

গানেরা দরজা খুলে রাখে 

আমার মাতাল গভীরতার কোন শেষ নেই 

আমাকে একটা গোলাপ ছুড়ে দাও

গান তো আমার কাছে ভালোবাসার অজুহাত মাত্র


বিষন্ন বিদায় গানের সহযাত্রী

আর ধুসর লাল দুই ঋতুর ভেতরে রাখা দুঃখ 

আমার ঈশ্বর, আমি শীতল হয়ে যাই

যদি রাস্তা আমার কাছে শেষ হয়


ভালবাসা একদিন চলে যেতে পারে 

তার ভূগোল কাঠের

সে ফেটে যেতে পারে বিস্মরণে 

তার বাড়ি তারই কাছে নিষিদ্ধ 

যে খেলা সে মৃত্যুর সাথে খেলে

তা এক লম্বা "গোলাপকুঁড়ি"


চাঁদ শিকারী


(অভিনেতা)


আমি উদ্বিগ্ন

আমার ঘাড় ঘর্মাক্ত, আমার কটিদেশ

আমার নিচে কাপড় পতপত ওড়ে

আমার ভেতরে বুড়িয়ে-যাওয়া মেয়ে

তার কীট-দংশিত আকাঙ্ক্ষা


কোন কোন সময় একটা গোলাপের

সুগন্ধ আমার ভেতরে খোলে

আমার জামার উপর হালকা বাতাস 

ভালবাসা যেন সেই জায়গা যেখানে সে জন্মায়

আমার ত্বক: পরিষ্কার জল, আমার ত্বক: ক্ষুধার্ত পাখি

তার মুখ গোলাপি, সরল , নিষ্পাপ 

​             ​বলাটা জরুরী


এমনকি যদি তারা আমাকে শিশু ভাবে

সেই স্থানে যেখান থেকে আমার আসা

এখন আমি বিদ্রোহী 

ভেঙে-যাওয়া ত্বক 

মঞ্চের পিছনে

​                আমি ডুবে গেলাম যখন আমি যুদ্ধ লড়াই করলাম




( দর্শক)


একটা রাস্তা সর্বদায় হাসে

একটা বাড়ি খোঁজে একটা বন্ধু 

দুঃখ-কাতর এবং বিষণ্ণ 

কেউ একজন নীরব দলিত

বলে এক জায়গার কথা যেখানে জল হয়েছিল রক্তাক্ত


যেখানে আমি তাকাই একটা আয়না 

আমার ছেঁড়াখোঁড়া ভেতরের মধ্যে

কতজন নারী, জন্মোত্তর

এক বেদনা আমার ভেতর গভীর 

যখন আমি তাকাই আমার আয়না হোক আমার আনন্দ 

আমি বললাম 

পাহাড় আমার জন্য আশা করুক

ভালোবাসা আমার জন্য আশা করুক




(আয়না)


রাতের ভেতরে ফেলে-রাখা কেউ বন্ধ বাক্সের মতো/ সময়ের ভয়ঙ্কর গর্জন 

হিমশীতল করছে দেয়ালগুলো


​ ​যেন ক্রোধে 

​  ​জলে ছোঁড়া একটা পাথর

​     আমি জানতাম কীভাবে তার দুঃখ

মাপতে হয়

 

[বেতুল তারিমান (Betül Tariman, 1962) নতুন তুর্কি কবিতায় একজন বিশিষ্ট নাম। আনকারা Hacettepe University- তে তিনি ইতিহাসের পাঠ নিয়েছেন। তুর্কি কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্য পুরস্কার Necatigil Prize (2004) আন্তালিয়ার বাসিন্দা এই কবি।