কামরুন নাহার (সফেদ বিহঙ্গ) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কামরুন নাহার (সফেদ বিহঙ্গ) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২

কামরুন নাহার (সফেদ বিহঙ্গ)-এর কবিতা


চোরাবালি

ব্যস্ত সময় ক্যালেন্ডারের পাতায় যেন ঠিক ভেসে যায়।

পাতা ওল্টায় জীবন স্রোতের 

গহীন ধারায়।

বছর পেরোয় ল্যাম্পপোস্টের আলো কেবল লাল থেকে নীল।

রিক্সা থেকে ট্যাক্সি এলো জীবন ধারায়।

তুমি আমি রোজ বিকেলের গরম পুরি, এক কাপ চা-

বৃষ্টি ভেজার দুপুরগুলো

মিস করি খুব!

 

এখন আকাশ রংধনুহীন

ক্লান্ত বড়ো।

লাল ফিতে আর দুই বিনুনি নেই কোথাও!

 

হাওয়াই মিঠাই এখন যেন মস্ত বড়ো। 

এক মুখে তাই আর আঁটে না!

মিষ্টি দিয়ে তৈরী সে যে হাতের ঘড়ি

কটকটি আর আমের আচার। 

তাড়কাটায় আঁটকে থাকা কাঠের ফ্রেমের সেই লটারি 

শনপাপড়ি আর কোণ আইসক্রিম 

সেসব দিন তো হারিয়ে গেছে শৈশবেতেই। 

 

হারিয়ে গেছে সেই কবে যে চড়ুইভাতির আনন্দ।

মিস করি খুব!

 

এখন প্রায়ই রান্না করি চাইনিজ বা ইন্ডিয়ান। 

নিজেই হাসি, শাড়ি পড়ি, সেজেগুজে নিজেই তাকাই। 

লাল ফ্রেমের ওই আয়নাতে।

আয়নাটা ছোট্টবেলার যা এখনও পাল্টায়নি।

মানুষ হয়তো পাল্টে গেছি!

রোজ জীবনের কোলাহলে 

নিত্যনতুন পরিভাষায়।

 

আকাশ কিন্তু নীল এখনো

অমানিশা-পূর্নিমা হয়!

সাগরজলে এখনো ঢেউ ; আছড়ে পড়ে!

গাঙচিলেদের রং এখনো সাদাই আছে!

 

মনের আকাশ নীলচে কালো হয়ে যেন আঁতকে ওঠে।

ক্লান্ত হয়েও ভীষণভাবে গর্জে ওঠে। 

লালচে রোদের মিষ্টি আভায় রাঙিয়ে যেতে

একটু করে হেসে যেন হাতটি বাড়ায়।

 

জীবন স্রোতের চোরাবালি

কতো কিছুই যে হারিয়ে ফেলি

রোজ জীবনের ব্যস্ততাতে

কেউ জানে না!

 

কান্না ঝরুক চোখের পাতায়

গাল বেয়ে ঠোট নোনতা লালায়

আকাশ কাঁদুক বৃষ্টি ঝরুক

মনের আকাশ নির্মল হোক।

 

আসুক শ্রাবণ ঘন বরষা

কাঁঠালচাঁপায় ফুটুক হাসি 

ব্যাঙের ডাকে, ঝিঁঝির সুরে

এসো আমার হাতটি ধরে 

শৈশব যাই ঘুরে আসি।

ফিরে আসি নিজের মাঝেই

বারংবারে!

শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

কামরুন নাহার (সফেদ বিহঙ্গ)-এর কবিতা


অসামান্যা মেয়ে 

দেয়ালের আয়নায় লাল কালো টিপ ঝুলে আছে আজ বহুদিন। 

কাজলের কালি বোধহয় শুকালো।

আজ বহুদিন ঘরের বের হইনা

আজ বহুদিন আকাশ দেখি না।

 

আমি অসামান্যা, রূপসী, বেশ গুনী। লোকের কাছে আজীবন তাই জেনে এসেছি। 

 

আজ মনের সিন্দুক খুলে বসেছি 

আর বসতেই তার আয়নায় পড়লো নিজের চোখ।

 

হ্যা আমিই সেই মেয়ে যেকিনা ছিলো ভারি চঞ্চল, ছুটে বেড়িয়েছে পাড়াময়।

 

যার ছোটার গতির কাছে হার মেনে যেতো সবাই।

বয়সের সাথে সাথে জানা হলো

না আর ছুটতে নেই

এখন শান্ত হতে হবে।

 

রূপের বড়াই কিংবা সৌন্দর্যের প্রতি মোহ কোন কালেই যে খুব ছিলো এমন নয়।

 

কিন্তু নিজ সম্পর্কে না জানা মেয়েটিও একটি সময় জেনে যায়। 

রূপ বড়ো কাজের জিনিসই বটে। গুন কিছুবা কম হলেও হয়তো চলে যায়।

আর বুদ্ধি তা না থাকাই হয়তোবা মঙ্গল।

 

সমাজ ব্যবস্থা এখনো এতোটা উদার হতে পারেনি। 

যে একজন স্বাধীন, বুদ্ধিদীপ্ত নারীকে তার নিজ গুণে গ্রহণ করবে, তার নিজো মর্যাদায়। 

 

তাই এখানে এখনো প্রায়ই প্রয়োজন পড়ে যায় ভনিতার। কিছুটা লৌকিকতার।

 

হ্যা আমিই সেই অতি সাধারণের অসাধারণ অসামান্যা মেয়ে

যে স্বীকার করে নিচ্ছি।

হ্যা আমি সুবিধাভোগী।

এবং সুবিধা আমার অধিকার।

কেননা তা আমি নিজ গুণে অর্জন করে থাকি।

তা তুমি বা তোমরা কেউ আমাকে দাও না।

হয়তো আমারই মোহে অন্ধ হয়ে কিংবা কথার কৌশলে মুগ্ধ হয়ে, নতুবা রূপের মহিমায় নাজেহাল হয়ে আমাকে তা অর্পণ কর।

 

কেননা একজন বুদ্ধিদীপ্ত, স্বাধীন নারীকে গ্রহণ করার মানসিকতা এখনোও তোমাদের  গড়ে ওঠেনি।

 

হ্যা আমিই বলছি, আমি কবির কোন প্রচ্ছদের নায়িকা নই।

আমি একবিংশ শতাব্দীর সেই অসামান্যা মেয়ে

যেকিনা পদ্মফুল নয় শাপলা হয়ে জলে ভাসবে খুব সুন্দর সামান্যা হয়ে, নিজ গুণে।

প্রকৃতির এক অসাধারণ শিল্প হয়ে প্রতিভাত হবে সর্বাগ্রে। 

 

তা তুমি বা তোমরা গ্রহণ করো বা নাই বা করো।

কেননা অসামান্যারা একটা সময় জেনেই যায় তারা অসামান্যা, অসাধারণ।

রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১

কামরুন নাহার (সফেদ বিহঙ্গ)-এর কবিতা


সুবোধ 

সুবোধ

তুমি আসবে বলে দেয়াল লিখনগুলো 

আজ লাল রঙে সেজে উঠবে!

পথের পথিক কোন অজানা সুরে

হয়তো বা গেয়ে উঠবে!

 

পথের পাখিরা পথ ভুলে

যাবে ফিরে কোন নীড়ে

তোমার সুরে বিহ্বল হয়ে

সাথী হবে একা ল্যাম্পপোস্ট।

 

তুমি আসবে শুনে

পথের শিশুরা রাত জেগে বসে থাকবে।

রাতের আঁধার আলো করে

হাসি মুখে চেয়ে থাকবে। 

 

চায়ের দোকানী চুপচাপ দেখে

আলোকচ্ছ্বটার তরুণ আভা

তোমার স্নিগ্ধ কিশোর মন!

 

রাস্তার পাশে দাড়িয়ে রমনী

লাল টিপ পড়া, চকচকে শাড়ি 

আর কটকটে সাজে 

যেন তোমাকেই দেখে

অবাক চোখে

 

ট্রাফিক পুলিশ ঠাট্টার ছলে

চায়ের পেয়ালা সাধে।

 

তুমি আসবে শুনে রাতের আকাশে 

আজও কিছু তারা  জ্বলে।

কালো মেঘ যেন নিজ্ঝুম হয়ে

চুপচাপ চেয়ে থাকে।

 

কিছু চটুলতা, কিছু ভ্রান্তি

কিছু না পাওয়ার ভুল বেদনা

ম্লান করে দেয় বারেবার। 

 

উদগ্রীব মনে জাগে নিরাশা!

জাগে না আসার ভয়।

তুমি আসবে তো সুবোধ

ভুলে যাবে না তো হায়!

 

মনে যে আশা নব সূর্যের

নব ধারার, বেঁচে থাকার 

এক সুস্থ মানসিকতার।

 

সুবোধ তুমি আসবে তো ঠিক

এই ধরণীর পরে!

অপেক্ষারা তীর হয়ে ওঠে 

হৃদয় চিরে ক্ষতবিক্ষত করে

কেবল তোমারই অপেক্ষায়!