জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা

তারাশঙ্কর

তোমার চরিত্রগুলো জীবন থেকে উঠে আসে
তোমার নিতাইচরণ পঙ্খী করালী বা বনওয়ারী
ঠাকুরঝি বসন পাখি সুচাঁদ সুবাসী নসুবালা 
সব চেনা মানুষ।কথাশিল্পে সঠিক অনুপাতে তুমি
যা মিশিয়েছো তা কাব্যকথা ছাড়া আর কী ?
লালমাটির রুক্ষ বুকে কত রস মেখেছে তোমার কলম
জলসাঘরে জমে আছে সাবেক সংস্কার, হাঁসুলী বাঁকে
খেলে কাস্তের দিনলিপি, গণদেবতার ভাষা,
অগ্রদানীর অসহায় পিতৃত্ব,বেদেনির কথাচিত্র,
ঝুমুরবালাদের অনিবার্য যন্ত্রণা মুগ্ধবিস্ময়ে
থম করে রাখে।বড়ো চেনা রাইকমল, আরোগ্য নিকেতন,
মঞ্জরী অপেরা বা নিশিপদ্ম...
বিপুল সৃষ্টির কাছে আনত হই।
তুমি এনেছো মহত্ব, পরম্পরা, অসহায় প্রেম ও পরিবর্তন 
তোমার নিতাই কবিয়াল জন্মায় ডাকাতের ঘরে।
চমৎকার গান বাঁধে, গায়।মাটির মানুষেরা
ঠাকুরঝি
রাজা বসন যাবতীয় প্রেম ও বঞ্চনা নিয়ে হারিয়ে যায়।
ধরতে ধরতেও তাদের ধরা যায় কই!
ঝরাপাতার মতো প্রেম ছেড়ে উড়ে যায় রঙ্গিলা ঝুমুরে
বসনের কাছে রাখে মননের খেদ
চটুল আখ্যানে বাঁচে রাতের প্রহর, প্রথম রিপু ঠেলে
কখনো গেয়ে ওঠে, 'কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে
কান্দ কেনে ? ' অথবা জীবন এত ছোটো কেনে? 
সব হারানো মন কেঁদে ওঠে তোমার কলমে
ওগো শিল্পী তোমার নিপুণ তুলিতে আঁকা ছবি
অনন্যসুন্দর কালোত্তীর্ণ অমর। অমর তোমারই মতো
প্রণম্য কথাশিল্পী তারাশঙ্কর।

 

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা

যুদ্ধ  

সবলের ছেলে বললো, যুদ্ধ কী মা?
যুদ্ধ মানে রক্ত, যুদ্ধ মানে আগুন,মৃত্যু।
যুদ্ধ কেন মা? -- ছেলেটি আবার বলে
মা বলেন,কী জানি? তবে শুনেছি যুদ্ধ হতেই হয়
নইলে ওরা নাকি সব কেড়ে নেবে।
যুদ্ধে কী হয় মা?
তা জানি না,শুনেছি তা ছাড়া বাঁচা যাবে না
শক্তি যার আছে সেই শত্রুরা সব নিয়ে যাবে।

দুর্বলের ছেলে বললো, যুদ্ধ কেন মা?
মা বলেন কী জানি? 
আমাদের যে কিছুই নেই, শুধু অভাব,শুধু
অসুখ আর কান্না তবু...
যুদ্ধ কী মা?
সবকিছু ভেঙে দেওয়া,কেড়ে নেওয়া বা পুড়িয়ে দেওয়া আর অত্যাচার।
যুদ্ধ তবে কেন হবে ?
তা জানি না তো !
তবু যুদ্ধ নাকি হতেই হয়, নইলে মরে যেতে হয়।

দুটি শিশুই জানতে চায়,আমাদের কী লাভ?
দুটি মা উত্তর দেন,লাভ হয় না কিছুই,কিন্তু
শুনেছি লড়াই চাই-ই চাই
নইলে বাঁচা যায় না।
শিশুর সরল চোখে বিহ্বলতা, সেখানে লেখা,
আমরা যুদ্ধ চাই না,খেলতে চাই,খেতে যাই
আর গান গাইতে চাই।

 

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা

ছায়া

দূর পথ হেঁটে যাই একা।
বুঝি,সঙ্গে কেউ হাঁটে কিন্তু দেখতে পাই না
এপাশ ওপাশ পিছন.... ভৌতিক শূন্যতা
একা মানুষ আধ-সমকোণে সূর্য ঢলে যায়
দুটো ছায়া হাঁটে।
চৈনিক মুখের মতো বা জঙ্গলের পথের মতো
অবিকল এক
আলাদা করা যায় না।
ছোটো কাপে চা লম্বা টান, ঠোঁট নয়
শুধু দুটো তৃপ্তির শব্দটান।

কথা বলি একা।কে যেন উত্তর দেয়।
আমার চেয়ে ভালো,বেশ মাপা গোছালো
শব্দের ফিতে মাপা উচ্চারণ
অগ্নীশ্বর টোন খুব চেনা তবু সংশয় -- কে?
হাঁটে,বলে,গান গায় অথচ সুর ভোলে না
সে-কি গুরু কবির 'জীবন দেবতা'
নাকি প্রিয়বন্ধু,প্রতিরূপ!

চিৎকার করি কে? কে?
চৌদিক চুপ।
পাখিরা ফিরে যায় বিশ্রাম ঘরে
বেদনার লূতিকাজাল হেমন্তের ধানখেত টানে
ফড়িংসন্ধানী বালকের মুখ ভাসে কুয়াশায়
কথা বলি একা।ঝিঁঝির তানপুরা বাজে।
ছায়ার আলাপে বুঝি সে আমার ছলনাপুরুষ।
 

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

কবিতা : জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

অসম্পৃক্ত  

নিয়মের গল্প ভুলে সূর্য এক রাগি যুবক,
কর্তব্যে অটল ওঠা-ডোবা দাহন ত্রাস
নির্জলা মেঘের পাখি উড়ে যায় চোখের আড়ালে 
দু-একটি ঝরাপাতা,ফুল শুকোনো জীর্ণ আষাঢ়
জলের রূপকথাগুলি চা-পাতার দীর্ঘশ্বাস
হাওয়ার আগুনে পুড়ে কখন জ্যৈষ্ঠ ফিরেছিল
সে এক মরু-দুর্যোগ কাশেরা অসহায় ঝোড়ো বক
খরার মস্তানি ছলনার সুর সেধে পার হয় কত যে প্রহর
গাণিতিক বোধে হঠাৎ নিম্নচাপ ঝড়ে
আমাদের মালভূমি ম্যানগ্রোভ দ্বীপ হয়ে যায়
ইস্পাত-রং মেঘে কে লিখেছে কালিদাস লিপি?
বিরহী যক্ষ আর গবাক্ষে কালো দুটি প্রিয়াচোখ
দুলে ওঠা কাশবনে হিলহিল হাওয়ার মসলিন

শিউলি শালুকের কানাকানি ঠেলে
আগমনি গান বাজে উৎসব ঋতু
মেঘ আর বৃষ্টির অনবদ্য ধ্রুপদ বন্দিশ মেখে
মায়াদিন ছায়ারাত মাত
ঘরোয়া মেঘেরা ওই ফলভারে নীচু,চাঁদ ওঠে
শিশিরের ঘাম জমে শরতের মাঠে......


 

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর ঝুরোগল্প

বন্ধু 

--  বসুন ম্যাম। কাগজে কিছু দেখতে দেখতে না তাকিয়েই বললেন মিস।
-- আপনার ছেলেটি স্লো-লার্নার,একটু স্পেশাল কেয়ার নেওয়া -- বলেই তাকালেন আর চমকে
একেবারে উঠে দাঁড়ালেন মিস।
ম্যামও তখন দাঁড়িয়ে গ্যাছেন।
-- তুই ! তুই বাবুর ক্লাস টিচার?
-- আর তুই শান্তর মা?
দুজনে দুজনের হাত চেপে ধরেছেন।
দুজনে সংসার করতে চলে যাওয়ার পর কিছুদিন যোগাযোগ ছিল,তারপর বিচ্ছিন্ন।সাদামাঠা
এই গল্পে একজন দাদা ছিলেন যিনি দুজনকেই পছন্দ করতেন,ভালোবাসা জাতীয় কিছু
অনুভূতিও হয়তো ছিল,তবে তা টানাটানির ত্রিকোণ তৈরি করেনি।
অদ্ভুত একটা মিল দুজনের জীবনে ঘটে,দুজনেই পতিদের হারিয়েছেন।স্বাতীর বর
ছিলেন সরকারি কর্মচারী, তাই ডায়েড -ইন- হারনেস গ্রাউন্ডে অফিসে চাকরি পেয়েছেন
স্বাতী,আর শিখার বর ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন,কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সব কেমন বদলে যায়,তিনি এখন
বেসরকারি এই স্কুলে অল্প বেতনের শিক্ষিকা।সন্তান নেই,একা ছোটো একটা কম ভাড়ার ঘরে থাকেন।
টিফিন টাইমে দুজনে মুখোমুখি,পাশে শান্ত চাউমিন খাচ্ছে,ওঁরা চা।
স্বাতীর দরকার একজন দরদি শিক্ষিকা আর শিখার একটা পারিবারিক পরিবেশ।
দুজনেরই প্রয়োজন কোনো বিশ্বস্ত বন্ধু।কেরানির চাকরিতে ছেলেকে সময় দেওয়া সম্ভব নয়।
অফিসের একজন স্টাফ স্ল্যাং ইউজ করে স্বাতীকে উত্যক্ত করতে চেষ্টা করেন।
মনের কথা বলার একজন সঙ্গী তো চাই,দুজনেরই।
চার হাত আবার এক হয়,
নির্ভরতার বন্ধন স্পষ্ট।


 

শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা

ডানার আগুন বুকে

(শ্রদ্ধাস্মরণ : কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক)

খুঁজে নেওয়া এক দীর্ঘযাত্রা
যাত্রা আর পরিযান কেমন মিশে যায়


গল্পটায় কত রক্তপাত তারপর দৃশ্যত কাঁটাতার ঘন হয়ে ওঠে
পাখি আর প্রজাপতি বাতাস বা মেঘ কোনো কাঁটাতার মানে না
কেবল মানুষ পোড়ে স্মৃতির আগুনে জড়িয়ে অজস্র বাধা
ঝরাপাতার মন্থর আগুন বড়ো আগ্রাসী চারিদিকে ঘিরে আসে
আধখোলা মুখে অঙ্গার ক্ষয় করে যা লেখো সেও তো স্মৃতিদাহ
জল বা সবুজ নদীর জীবন পলি,কাদা অথবা রূঢ়মাটি
গল্পগুলোর ফাঁকফোকর কমে আসে যত অপূর্ণতা
ভরে ওঠে সময়ের প্রলেপে,তবু থাক অলাত-অক্ষরে লেখা
জীবনের দিনলিপিগুলি দলিল হয়ে থাক আগুনের পাখি

    

 

শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা

তিনটি অণুকবিতা

.
জননী
  

আশ্রয়ের উষ্ণতা প্রত্যাশাহীন অন্ধকার
একমুখী নিঃস্বতার আনন্দে ক্লিশে স্লোগানটিকে
গ্যাসবেলুনে উড়িয়ে অমরত্ব নাও।


.
আশ্রয়
  

মিথ্যে বলা মুখ মুখোশ ৯০ ডিগ্রি ঘুরুক
প্রকৃত অবলম্ব তোমার বুকে মুখ রাখি
সর্বংসহ মাটি কলঙ্কের ভার বহ নির্দোষ
প্রতিবাদী নও তাই  সর্বাঙ্গে আঘাত নিয়ে
বেশ আছো পরিপাটি।



.   

কবন্ধ 

কতদিন মুখহীন দেহহীন সংখ্যা মাত্র
ফাঁপা অবয়ব পুতুলের নড়াচড়া
মাথাটাথা ছিল কবে? মনে নেই।
শব্দ ছিল? প্রতিবাদ! সত্য-মিথ্যা
নীতিবোধ বিবেকদহন!

 

শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা


 বিরহবর্ষায়

এক একটি শ্রাবণের বুকে অপার তৃষ্ণা

ব্যথাতুর চেয়েছে আশ্বাস শান্তির অমিয় বুক

সুরের বিস্তার দাদুরিনিনাদে আদিম উল্লাস

ধুলোট ভাঙা হট্টগোলে নামগান

ঘুম না ভাঙার গল্প আরবরাতের জিন।

 

মজানদীর আক্ষেপে ভাসে খরডাঙা ধু ধু

সেদিনও তার যৌবনঘূর্ণি ছিলো সহস্রপাক

নৌকোর লগিটি গ্যাছে বেহুলা ভাসানে 

শুকনো বুকের শোকে বৈধব্য শুষে নেয়

যা কিছু তরল লগিবাজ মাঝি শোনে ভাতঘুম

দোতারায় সিলেটি ধামাইল রাধারমণ ঘাট

ভরা যমুনার কোলে বর্ষা অভিসার 

মেঘের ছলনাচোখে ভুল গর্ভের অলীক ইশারা। 

 

কৃষ্ণকথার মেঘে গোচারণ ভাসে

মাটির কলশে কুবোডাক ডুবসাঁতার

সে গ্রামে বন্ধুর বাড়ি মনকেমনের ঢেউ

আসবে বলে আশার ছত্রাক জেগে মাঠময়। 

বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা


আগ্রাসন 

জলচর জানে না মরাবালি কতটা খাদক পিপাসা এক বাঁচার প্রত্যাশা
প্রিয় গ্রামের বুকে লেখা নাম অথবা সেই গ্রাম নাম বিস্ফোরকে মুছে দেওয়া হবে
বস্তুত বদলে যায় মুখ মানুষ আশ্রিত আর দখলদারের সংজ্ঞাও বদল হয়?
ইতিহাসের মাত্রাহীন বিকৃতি আর ভাঙচুর খেলা কথাগুলো ভুল লিখে রাখে
ফুল ফুল শিশুমুখে রক্ত আর আতঙ্কের দাগ মানবতা ছিঁড়ে খায় গিলোটিন।

মাটির শিকড় গেলে তীব্র খাদক ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদল অধিকারহীন হতাশ্বাস
বেদনার মরুরাতে ঈশ্বর খোঁজে.....
প্রার্থনাগুলো মরাফুল নীরস বালুবেলায় মাখে তাপ ওয়েস্ট ব্যাংক গাজা
স্বপ্নের ফিলিস্তিন মুছে যাবে ?
ইতিহাসের পাপ আর ভাঙাচোরার আগুনে পুড়ে যাই।

পরিকল্পনা সূত্র ছিড়ে দেয় আগত ভক্ষক কূটবুদ্ধি ছলক বিভেদাস্ত্র শাণায়....
দুর্বল হননের নরমেধ জমে ওঠে।
শ্রেণিভেদ তত্ত্বের দুর্লঙ্ঘ্য সীমায় মাথা কুটে সব মানবতা চূর্ণ হয়ে যায়।
নিরস্ত্র বধে তারা খুব সাবলীল না যুদ্ধনীতি না আত্মগ্লানি
সেইসব হননের পাপ কি তোমাকেও ছোঁয় না হে সুখী মানুষ ?
নির্বিঘ্ন সুখ খুঁজে ফেরো সন্তানের ভাবীসুখ সাজাও বাগানে.....
ওইদিকে তোমারই স্বজাতি স্বজন পোড়া বারুদ আর রকেটহানায় কাতরায়
ওই গণহত্যা তোমাকে পোড়ায় না !

উত্তরাধিকারের সুখ বড়ো উপভোগ্য কেন তবে ওদের জোটে না !