কামরুল ইসলাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কামরুল ইসলাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কামরুল ইসলাম-এর কবিতা

আষাঢ়স্য হাহাকার

তোমার পুষ্পিত আঙ্গুল সেই তো কেটে গেল প্রথম আষাঢ়ে

আর আমরা ছোট খাল পাড়ি দিয়ে

ঢুকে পড়লাম মেঘেদের বাড়ি;

মেঘ-- সেই সাঁঝের ঝুঁটিতে বাঁধা

কবিতা, যেখানে আজও বেজে ওঠে

'জল পড়ে পাতা নড়ে'-র মতো

এক কিশোরী মুখ

 

উষ্ণ আবেগের খাঁচায় বন্দী তার চোখে

আষাঢ়ে গল্পের নায়কেরা যেন সব একিলিচ;

মেয়েটি ভিজে ভিজে দেখছে--

কদমফুলেরা কিভাবে লজ্জার ভেতরে

মাথা গুঁজে যেন কারো অপেক্ষায় আছে

আর মেয়েটির বুকের ধকধক বেয়ে

ছেলেটি বৃষ্টির ঝমঝম হয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে

হাওয়া ও মেঘের সাঁকো ঘনিয়ে আসা আঁধারে--

আষাঢ়স্য হাহাকার বুকে কেঁপে উঠছে সন্ধ্যা

মেয়েটি কদমফুল আর পাতাদের গান বুকে

বাড়ি ফেরার কথা মনে করে, তখন

বৃষ্টি  অন্ধকার ফুলে উঠছে হাওয়ায়... 

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

কামরুল ইসলাম-এর কবিতা

রবীন্দ্রনাথ

একটি কালো ছাতার নিচে একজন ভাষাশল্যবিদ

বৃষ্টির সুনসান ছেড়ে অফুরন্ত টর্সের আলোয়

একটি বাগানের দিকে এগোচ্ছেন একা--

ব্যাঙ ডাকছে পাশের নালায়সংগীতের রঙ নিয়ে

অন্ধকারের বাহাস ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে দূরে,

উজ্জ্বল উদ্ধারে নেমে আসছে সূর্যের বাড়ন্ত বুক

সেখানে মুখের দিকে মুখ আর অরণ্যের ডাকে

সৌভিক শান্ত অনাচারও পতঙ্গপাখায় মিশে গেছে

রাতের এরকম ফাঁদেই তীর্থের সম্ভ্রম, যেন

মেহগনির জায়মান মস্তিষ্কের অবিরাম ছকে

অনাহুত জলের ছন্দের মানচিত্র হয়েকিছুটা

আড়ালের স্বপ্নের মোড়কে বন্ধনহীন নৃত্যের

সরল আরশিতে চারপাশে জেগে উঠছে ঘাস--

উঠোনের দশকোণে যেন এক পরিণত সুশীল হাত

সাঁঝের অতিথি হয়ে জ্বেলে দেয় আলো

দলছুট তরঙ্গের খেলায় ভরে উঠছে তাবৎ আঙিনা 

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

কামরুল ইসলাম-এর কবিতা

মুখস্থ ধোঁয়ার ভেতরে

সেই মায়াবী গোলাপযা আমি ছুঁয়েছিলাম

অন্ধ পাহাড়ের ঢালে

সে আজ বিকেলের তন্দ্রা নিয়ে

রণকৌশলে শুয়ে আছে গাছের ছায়ায়-

শঙ্খ বাজেঅচিন গ্রামের পথে পথে

ছলনা-উজ্জ্বল মার্বেল গড়ে যায়

কারো গৃহহীন মুখের ছায়ায় চাঁদ ওঠে,

জন্মেছে আগাছার ছন্দ মাঠে মাঠে।

দিগভ্রান্ত স্মৃতিরা ভেসে যায় অতীতের ঘাটে

মায়াবী ডিঙিটা ঝুলে আছে পাকুড়ের ডালে

যেতে যেতে দেখি-- চিঠিপত্র উড়ছে সমুখে

রাজদুঃখ বুকেময়ূরাক্ষী চাঁদের আলোয়

ফেটে গেছে দিগন্ত

আর এক মুখস্থ ধোঁয়ার ভেতরে

ডুবে যাচ্ছে আমুণ্ড আমার চিরপোষা হরিতকি বন

 

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

কামরুল ইসলাম-এর কবিতা

গোপাল সাঁইয়ের কবিতা-২৫

 

একদিন ভাদু শাহ ফকির

ওই যে মধুর চাকঅমৃত উদাস

ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিলেন

ঘুম ঘুম চোখে,

চৈত্রের শেষ দিনে

চাঁদেলা রাতে,

সেই থেকে আমাদের গ্রামে

কেউ মধু খায় না আর,

মৌমাছিরাও

রানির কথা অগ্রাহ্য করে

ঘুরে বেড়ায় আগানে-বাগানে,

কেবল একটি পরিত্যক্ত বাড়ির

দেয়ালে কিছু ছবি দেখি –––

সেখানে এক মধুর নহর

সেখানে একটি মহাচাক

মধুতে মধুতে ডুবে আছে,

রানি যা নির্দেশ দিচ্ছেন

মৌমাছিরা তা পালন করে চলেছে

অক্ষরে অক্ষরেআর

এক রাখাল মৌমাছি

আমগাছের ডালে বসে

আড়বাঁশি বাজায়দূরে

নদীর পাড়েআস্তানায় বসে

ভাদু শাহ ফকির নিজেরই

রক্তের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা

একঝাঁক তরুণ মৌমাছির

ঘুম ঘুম কানে তুলে দিচ্ছেন

অমৃত মেঘের বাণী..."

মৃত্যুর ওপারে চরে বেড়ানো

দুধেল গাভীদের শৈশব –––

 

বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কামরুল ইসলাম-এর কবিতা

 

সারাবেলা ঘুঘু ডাকে চৌচির হৃদয়ে

 

কিছু কিছু স্মৃতি বিবেকের বাঁকে এসে দাঁড়ায়তখন

ঘাসপাতায় ভরে ওঠে মন

ঘুলঘুলি এড়িয়ে যায় জঙ্গল পেরুনো ভয়

 

রাতের অন্ধকার করাতের শব্দে চিরে গেলে

আমার সমস্ত দুপুর তোমাদের গ্রামের দিকে ছুটে যায়

শুধু তোমারই কান্নার দিকে সাঁতরায়  মন,

সারাবেলা ঘুঘু ডাকে চৌচির হৃদয়েযেন কোনো

বৈদিক হাঁসের জঠরে জন্মেছি আমি

জল থেকে জলে ভেসে বিদীর্ণ পরানে,

এসেছি তৃষ্ণায়, শ্রাবণের রাতে, তোমাদের গ্রামে...

 

এই সে পথযে আছে চিরদিন আড়ালেই

সন্ধ্যার খোঁপার ভেতরেযেখানে বাসি ফুল

দুকূল ছাপিয়ে জেগে ওঠে আদিম শৈশবে --

তুমি সেই ফুলের খোঁজে কতোদিন অমাবস্যার রাতে

নদীর জলে ভাসিয়েছ মন্ত্রপড়া সুতোআর

এঁকেছ সুপুরিবাগানের সাঁঝবেলা বাতাসের গহীন বুকে...

শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০২২

কামরুল ইসলাম-এর কবিতা

এসো বাড়ন্ত গভীরে


ধবধবে দুধের মতো সাদা বিড়ালের বাচ্চাদের

এখনও দেখতে পাই রসিক আয়নার গভীরে--

আমাদের কথোপকথনে হায়ানাদের শুভ্র বসন্ত,

দেখো, একদিন , পথ ভুলে আমিও বাড়ি ফিরবো

তোমার বারান্দায় জন্মদিনের ঘাস পড়ে আছে

ওই ঘাসের ডগায় কিংবদন্তির ফুল, দুলছে হৃদয়

এসো বাড়ন্ত গভীরে, পাথরের গুপ্ত জলে ভাসি

আর বলি-- ভালোবাসি মরণগাছের জীর্ণ ফুল!

যে রাজহাঁস আমার চোখের জলে ভেসে বেড়ায়

হাত বাড়িয়ে রক্তে আজো সন্ধ্যা নামায়, সেও কি

শুকনো পাতার সুদূর সাঁতার, দিগন্তের টান টান শোক,

দগ্ধ পিলসুজ?

বিদগ্ধ গণিতের পথে জন্মান্তর বাড়ি ফিরছে, তোমার

শালদুধে বেড়ালের ছায়া, জেগে আছো তো?