কামাল হোসেন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কামাল হোসেন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

কামাল হোসেন-এর কবিতা


অদৃশ্য বাসভূমি 

চারপাশে প্রতিদিন হত্যা ধর্ষণের খবর শুনতে

শুনতে আমরা নিশ্চয় বধির হয়ে যাচ্ছি, একই

সঙ্গে বোবা, মুখ থেকে কোনো শোক, দুঃখ

বা প্রতিবাদের শব্দ বেরিয়ে আসে না আজকাল।

আমরা মাঝে মাঝে বমি করে মাটিতে পুঁতে 

দিচ্ছি আশৈশব শিখে আসা বিবেকের পবিত্র

স্তোত্রগুচ্ছ, হৃদয়ের অলজ্জ অস্তিত্ব কিংবা আত্মার

মতো কোনো অদৃশ্য বাসভূমি।

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কামাল হোসেন-এর কবিতা

অন্ধকার-১১


কালো ধোঁয়ার ভিতরে পুড়তে থাকে সেই বিপন্ন নারীর

দেহ, সভ্যতার অগ্রগতির চিহ্ন নিয়ে জ্বলে পুড়ে

খাক হয় নারীর অস্তিত্বচিহ্ন, এরপর সব কিছু

মুছে যাবে, ওই নারীর কান্না, সম্ভ্রম অত্যাচারের 

সমস্ত সাক্ষ্য, বিচক্ষণ পেয়াদারা বেরিয়ে পড়বে আতসকাচ হাতে


কাকে বলে মানবিক সমবেদনা, কাকে বলে

ধামা চাপা পড়া গোয়ালের রাখাল।

কিছুই বুঝি না আমি এই বিধ্বস্ত বর্জ্যভরা 

শকুনের ভাগাড়ে, বড়ো নিষ্প্রভ এই অন্ধকার সময়

 

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

কামাল হোসেন-এর কবিতা

আসন


পাহাড়তলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রতিভাবান মানুষ

ঠিক খুঁজে বের করেন যুদ্ধক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া

পাটকিলে রঙের ঘোড়া, তারপর ছুটতে ছুটতে বিজয়ী

সেনাপতির সামনে পৌঁছে হাঁটু

মুড়ে বশ্যতা স্বীকার করেন, শৌখিন রুমাল দিয়ে

মুছে দেন প্রভুর আসন, তারপর ঘাড় নেড়ে নামগান

করতে করতে প্রার্থনা করেন, প্রভু আমার, একটি

সলিড আসনের ব্যবস্থা করো, দিনের পর দিন

এভাবে হাঁটু মুড়ে বসে থাকতে থাকতে কোমরে

ভারি যন্ত্রণা হচ্ছে

 

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

কামাল হোসেন-এর কবিতা

ভাঙা দুর্গের কাছে


একা একা ধ্বনিময় বারান্দায় মায়া বাড়িয়ে 

অনেকক্ষণ বসে থেকে অতীতকালের দিকে

আর এক-পা এগিয়ে গেলে তুমি


আঁকাবাঁকা পথ ধরে অনেকক্ষণ হেঁটে 

তারপর পৌঁছে যাও অজস্র বুনোফুলে ঢাকা

এক ভাঙা দুর্গের কাছে, যেখানে জমা আছে

আমাদের সকলের শৈশব, কৈশোর, প্রশ্রয়ের আস্তানা

 

রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

কামাল হোসেন-এর কবিতা

শিশু


ছোটো শিশু বিশাল সুটকেশ হাতে রাস্তা পার হচ্ছে,

চারপাশে চলন্ত গাড়ি, ট্রাফিক সিগন্যাল,

এখনো লাল আলো দেয়নি, তবু কেন অতটুকু

ছোটো শিশু একা একা বিশাল সুটকেশ হাতে


রাস্তার এপাশে অনেক দূরে আমি দাঁড়িয়ে

অকুল বিহ্বলতায় অসহায় বোধ করছি, আমার

দু-পা স্তব্ধ, আমি হাঁটতে ভুলে গেছি কতকাল,

রাস্তার দু-দিকে সরীসৃপের মতো ছোটাছুটি করছে

কত গাড়ি, তার মাঝখান দিয়ে এক পা এক পা

করে নির্বিকার হেঁটে যাচ্ছে রৌদ্রপোড়া ওই শিশু,

হাতে বিশাল সুটকেশ, সারাটা জীবন বুঝি 

এরকম একা একা ওকে রাস্তা পেরোতে হবে।

 

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কামাল হোসেন-এর কবিতা

ঘড়ি

 

সালার জং মিউজিয়ামের বিখ্যাত ঘড়িটির

সামনে উপস্থিত অসংখ্য দর্শক

চেয়ারে বসার জায়গা না পেয়ে

মাটিতেই বসে পড়েছেন অনেকে

 

সময়ের হৃৎপিণ্ডকে ছুঁয়ে আসা

ধূমায়িত সংগীত খানিক বাদেই

ছড়িয়ে দেবে অজস্র উপমা,

প্রতিশ্রুত গুঞ্জরিত অনন্তকালের বেদনা

 

শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

কামাল হোসেন-এর কবিতা

প্রতিমা

 

পাথরের প্রকান্ড প্রতিমার পায়ের কাছে এসে দাঁড়াল

দুটি শিশু, কিছুক্ষণ ছোটাছুটি করে খেলার পরে

ক্লান্ত হয়ে ছেলেটি বসে পড়ল প্রতিমার একটি

পায়ের উপর, মেয়েটি দ্বিধাহীনভাবে শুয়ে পড়ল

অন্য পায়ের উপরে, মেয়েটির হাতে একগোছা

লাল ফুল, প্রতিমার দৃষ্টি সংলাপহীন, আচ্ছাদনহীন,

অসহ ঢেউয়ের মতো কল্লোলিত দ্বিধা

 

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩

কামাল হোসেন-এর কবিতা

বেগবান দৌড়োনো

 

রাস্তার দুপাশ থেকে অসংখ্য ডালপালা পরস্পরকে

আলিঙ্গন করে নিঃস্বপ্ন আর্চের মতো টানেল তৈরি

করেছে, তার মধ্যে দিয়ে মাইলের পর মাইল গাড়িতে

চেপে ব্যাকুলভাবে আমরা দুজনে ছুটে চলেছি,

অনেকটা নেশার মতো, মন চাইছেএই বেগবান

দৌড়োনো যেন শেষ না হয়, ধুলোভরা মেঘ

 

বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩

কামাল হোসেন-এর কবিতা

সময়ের সাঁকো 

 

দীর্ঘ তিরিশ বছর পর হঠাৎ ফোন করে

পুরনো বন্ধু বলল : আমাকে মনে আছে তোর?

 

সময়ের সাঁকোর এপাশে এক বিশাল

সিঁড়ির নীচে দাঁড়িয়ে আমি বিষণ্ণ চোখে

দেখেছিলাম আকাশের ছুটন্ত উড়োজাহাজ

 রক্তলোভী ঈগলের বিবাদ, সূর্যের বিচ্ছুরিত কণা

 

আমার বুকের ভিতরের ঘরবাড়ি

পাষাণপুরীর মতো নির্জনতা খোঁজে,

চারপাশে ছড়িয়ে শৈশবের অমল কুসুমগন্ধ

  

 

 

সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

কামাল হোসেন-এর কবিতা

চেয়ার

 

বিশাল ছাদের উপরে একটা ফাঁকা চেয়ারআশেপাশে

কেউ নেইমাঝে মাঝে অনেকে আসে নিশ্চয়ইচেয়ারে

অলসভাবে বসে বসে তারা আকাশের মেঘ থেকে মানুষের

রক্তপাত দেখেবিলাসী সুগন্ধের মতো শরীরে মাখে

রক্তের মাধুরীকাউন্ট ড্রাকুলার মতো তীব্র আশ্লেষে

পান করে সেই প্রবল রক্তের বৃষ্টিপাত