মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১

সম্পূর্ণ সূচি (বর্ষ ১ ।। সংখ্যা ৮) [জুন সংখ্যা]


 

কাজল সেন-এর কবিতা


বরের প্রত্যাশায় বরাসন

এপাড়ার মেয়েরা যখন বাজায় পাখোয়াজ

ওপাড়ার ছেলেরা তখন গায় ধুম ধাড়াক্কা গান 

মেলে না গো মেলে না কিছুতেই মেলে না

অথচ দিন শেষ হলেই উজিয়ে না্মে সন্ধ্যা

কলাবতী ফুল সাজে কলাবৌয়ের সাজে

সমবেত হয় এপাড়ার ওপাড়ার মানুষজন

উলুধ্বনির তখন যে কতশত ঢেউ

আর শাঁখের লম্বা চওড়া স্বরের বিস্তার

কলাবৌয়ের বিয়ে আজ গোধুলি সন্ধ্যায়

বরাসন আলো নিয়ে বসে থাকে বরের প্রত্যাশায়

 

অথবা এপাড়ার ছেলেরা যখন জাগে সারারাত

ওপাড়ার মেয়েরা তখন ঘুমের জানালায়

মেলে না মেলে না কিছুতেই মেলে না 

অথচ রাত্রি গড়িয়ে যায় রাতের অন্ধকারে

অন্ধকারও পথ খোঁজে রাতের আড়ালে

কলাবতী ফুল কলাবৌ সেজেছিল আজ

সমবেত মানুষের জমায়েতও ছিল বেশ ভালো

প্রতিশ্রুতিও ছিল কিছু এপাড়ায় ওপাড়ায়

লগ্নভ্রষ্টা হলো কি তবে আমাদের কলাবতী ফুল

বরাসন আলো নিয়ে বসে থাকে বরের প্রতীক্ষায়  

কামাল হোসেন-এর কবিতা



খেলা

অন্ধকার টানেলের ভিতরের

ক্ষতবিক্ষত আঙিনায়

সর্বনাশ ডুব সাঁতার দিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল

প্রাচীন ফসিলে আবৃত তিনমাত্রিক ডায়নোসর

অথবা নতজানু বিগ্রহের বিষণ্ণ প্রতিমূর্তি

 

অনেকটা রূপকথার মতো বিমুগ্ধ কালবেলায়

গ্যালাক্সির অন্য কোনো প্রান্তের

আরও কোনো নাজুক অতিথির অপুষ্ট প্রতিবিম্ব

গ্লানিকর জীবনের অপূর্ণ অনভিপ্রেত দীর্ঘশ্বাস

 

সমস্ত স্বপ্নদীপ্ত পৃথিবী চোখের ওপর

নাচতে নাচতে খেলা করে যাচ্ছে

অজস্র আলোর ঝলকানি--

অসংখ্য রঙের মাধুর্যলোকের তলায়

চুপচাপ স্থির শুয়ে আছি, শবদেহের মতো

অনড়, প্রাণহীন, অনিশ্চিত

হাইকেল হাশমী-র কবিতা


 তাড়া

কেউ একজন আমাকে বলে ছিল, তোমার কোন তাড়া নেই – তুমি কেন এতো ধীরস্থির বলো

তো? বুঝো না সময় তোমাকে পিছনে ফেলে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তুমি একজন মানুষ
যার কোন তাড়া নেই।

আমি তখন বুঝতে পারিনি এটা প্রশংসা না কি নিন্দা। সে আরো বললো - তোমার তো
অনেক কিছু করার আছে, টাকা উপার্জন করতে হবে, তুমি যে পেশায় আছো তার
সর্বউচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হতে হবে –  তোমাকে দৌড়াতে হবে। গন্তব্যে পৌঁছানোর
জন্য কাউকে ল্যাঙ মারতে হবে, কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে হবে, বন্ধুকে
পথ থেকে সড়াতে হবে, শত্রুর সাথে হাত মিলাতে হবে। দৌড়াতে হবে তা না হলে
অন্য কেউ পেশাগত সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাবে।

সত্যি কথা আমার কোন তাড়া ছিল না আর এখনো নেই। আমি সময়ের আগে ছুটতে চাইনি
বরং সময়ের হাত ধরে হাঁটতে চেয়ে ছিলাম আর তাই করেছি। আমি জানি সময় আমাকে
আমার গন্তব্যে নিয়ে যাবে, আমাকে পথভ্রষ্ট করবে না। আমি আমার পেশার
উচ্চশিখরে উঠতে চাইনি। আমি জানি উচ্চতা  নিঃশব্দে ঢাকা, ওখানে আবেগের নরম
মেঘ উড়ে না, ওখানে স্বচ্ছল অনুভূতির শীতল বাতাস নেই।

সেখানে নিজের গরিমার তাপে পুড়ে ইচ্ছেগুলো হয়ে যায় ছাই। নিজের আগুনে দগদ্ধ
বিবেকের শরীর সারাক্ষণ। নিজের অস্তিত্বকে সংকীর্ণ চিন্তার চিতায় দহন করা
প্রতিদিন। নিজের অসীম চাহিদার অগ্নিগিরির লাভায় পুড়ে যায় জীবনের সব
চাওয়া-পাওয়া।

আমার কোন তাড়া নাই, আমি জানি উচ্চশিখরে থাকা লোকজন বড় নিঃসঙ্গ, বড় একলা।

নীলাব্জ চক্রবর্তী-র কবিতা


যে কাঁচাপাকা কবিতাটি 

কাঠের টেবিলে

যে কাঁচাপাকা কবিতাটি

শুকোতে শুকোতে

ভুলে গেছে

নির্বাচিত চশমা পর্যন্ত

তোমার জামার রঙ ভাল দেখি

মাংস অক্ষরের ভেতর

কাগজের নীল অভ্যাস

ঈর্ষা অর্থে

এই পিউরিটান চলাচল হতে থাকে

অনেক পুরনো

বেহালাছড়ের যেমন ওঠানামা

একটা সাদাকালো গানের ইন্টারল্যুড বরাবর

কারখানার ক্রেন বরাবর

সাইন কার্ভে খুব পড়ে যাওয়া

একটা অর্ধোত্থিত দিন...

সুদীপ্ত  মাজি-র কবিতা



অসমাপ্ত গানের খাতা 

কত যে গানের টুকরো চুরি করেছিলে

 

জ্যোৎস্নার জাফরিমাখা কত 

                             মায়াবাতাসের ছোঁয়া 

অলিন্দের চোরাপথে চুপিসাড়ে লগ্ন রেখেছিলে

 

গাছপাথরের চক্রে বেশ কিছু রেখা বেড়ে গেছে

 

অচিরাচরিত কোনও হাওয়া এলে আজ  সন্ধ্যাবেলা:

সুগন্ধিত রেণু তার বাতাসে ছড়ায়

 

চুরি করা গানগুলি আজও এত জ্যান্ত,সাবলীল

গৌরাঙ্গ মোহান্ত-এর কবিতা


মিরাপ্রবণ আকাশে তরঙ্গ

যে টিস্যু পেপারে দীর্ঘ পথের উচ্ছ্বাস আঁকা হয়েছিলো তা এখন আরব সাগরের ওপর সবুজ চন্দ্রাতপ। সৈকতে বসে যারা মার্মেইডের গান শুনছিলো তারা পাহাড়ি ফুলের গন্ধে আবিষ্ট হয়ে পড়ে কেননা শিল্পীর নীল বসনের ভেতর অসংখ্য পাহাড় গেঁথে দিয়েছিলো পুষ্পকস্তুরী। পৃথ্বী থিয়েটারের কাছে কস্তুরীর উন্মাদী কণায় বাতাস কেঁপে উঠতে থাকলে সময়-অতিবাহন অনিবার্য হয়ে পড়ে। রাত নেমে আসবার আগে অকর্মণ্য পথচারীদের দ্রুত অতিক্রম করে একটি তরঙ্গ মিরাপ্রবণ আকাশে উড়ে যায়।



১১.০৫.২০২১ 

ফেরদৌসী বেগম বিউটি-র কবিতা


 আমি যখন মহান শহীদদের আত্মদানের কথা বলি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে ভাবছি,

দেশ মাতৃকার তরে লাখো শহীদের আত্মদানের কথা,

কতটুকু দিতে পেরেছি আমরা-

শীর্ষে এক বিচার সভায় বসে

আমরা সকল পাপাচারের কথা

নিজেকে নির্দোষ ভাববার কত ছলাকলা,

আশ্রয় নিতে থাকে মুখোশের আড়ালে।

অকস্মাৎ আবিষ্কার করি আমার প্রচ্ছায়া

কায়া থেকে বেড়িয়ে গিয়ে বিশ্বাস ঘাতকের মত

ছন্দ-তাল আবেগ উচ্ছ্বাসের থলে টাকে

একবার উপলদ্ধির আয়নার পেছনে

মেনি বিড়ালের মত কিসের জানি একটা

গোপন মতলব এঁটেছে আমার অজান্তে

আবার অজানা আশঙ্কায় আঁতকে উঠছি

কোন এক ভয়াবহতায়

তবে আর না সাড়ে সাত কোটি নয়

আঠার কোটির বলিষ্ঠ হাত একসাথে।

মাসুদার রহমান-এর কবিতা



জাহাজটি ডুবে গেছে

তলোয়ার নেই; আবার আছেও- গর্দান নামিয়ে ফেলবে। দুপুরবেলা ফলচাষি ঘেমেনেয়ে সবুজ ডাব নামিয়ে আনছে গাছ থেকে। সবুজপাতা ভরা নারকেল গাছের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে- সবুজশড়ি পড়ে তোমাকে নির্জন জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম

 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ জাহাজটি কোনদিন বন্দরে ভিড়েনি- ডুবে গেছে

সুবীর সরকার-এর কবিতা


রাস্তা

প্রায়শ বর্ষাকাল।মেয়েরা সব আংটি খুলে আস্যাইলামে ঢুকে পড়ছে।

পুরোন প্রবাদ বুকে নিয়ে আমাদের দীর্ঘ ঘুম।ওল্টানো নৌকোর পাশে 

সাপের খোলস।কাছিমের ডিম।ইদানিং খুব ভয়ের ভিতরে থাকি।

ঘামের নদীতে কাগজের ফুল।ঘুম কমে গেলে

আমাকে তাড়া করতে থাকে সাত সমুদ্রের জল।

অসম্ভব লাল ঠোঁট নিয়ে  নেমে আসি ব্যস্ত শহরের

                                                     রাস্তায়

নীলাদ্রি দেব-এর কবিতা


স্টেশনপাড়া

স্টেশনে এখন আর কোনও ট্রেন থামে না 

গলে যাওয়া বরফের মতো শীতল 

                                           ঘুমেরা স্থির 

চিঠি হারিয়ে গেছে, আমার পুরোনো বাড়ির ঠিকানা

একটা জানালা খোলা ছিল 

হাত বাড়ালে পায়রার পাখার শব্দ 

হঠাৎই ভেঙে গেল জল, কিংবা গ্লাসভর্তি মেঘ