মেঘ অদিতি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মেঘ অদিতি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মেঘ অদিতি-র কবিতা

এক সন্ধ্যায়

এক সন্ধ্যায় আলো থমকায়

পুব আসমান ধীরে লাল হয়

কূট মেঘদল হানে বিদ্যুৎ

পীত পোখরাজ লেবু গাছটায়

রাত বুলবুল ডানা ঝাপটায়

দূর প্রান্তর ক্রমে ম্লান হয়

নীল পুষ্পের ফিকে সৌরভ

সব প্রাণহীন মুছে গৌরব

ভুল ভ্রান্তির ভরা দুর্দিন

পথ শুনশান কী যে বিভ্রম

 

এই সন্ধ্যায় ভরা বর্ষায়

চোখ থমকায় মরা গাছটায়

পুব আসমান হানে বিদ্যুৎ

এক হার্মাদ হাতে খঞ্জর

দেয় চিৎকার কী যে অদ্ভুত

হৃদস্পন্দন বাড়ে শঙ্কায়

স্থির মনটায় কী যে হয় হায়

ওই নির্দয় বুঝি  নেয় প্রাণ

হাড় মজ্জায় ঘিরে সঙ্কট

বয় চারদিক গোলাবর্ষণ

 

এই পদ্যের ডানা উড্ডীন

ভাব চঞ্চল চোখে দূরবীন

পথ বন্ধুর হাতে গাণ্ডীব

চল পার্থের ঢঙে পাণ্ডব

শরসন্ধান যেন পণ তার

তাই উদগ্রীব সে যে দিনমান

এই বর্ষায় কে সে হররোজ

গায় কোন সুর বোঝা দায় খুব

কোন তন্দ্রার ঘোরে জানলায়

ছায়া পড়তেই বুকে ধরফর

 

সেই হার্মাদ ফেলে খঞ্জর

দেয় ডাক তার মধু সন্ধির

গান মুক্তির গেয়ে উত্তাল

প্রেম সঞ্চার করে আত্মায়

মন চঞ্চল হাসি প্রাঞ্জল

স্থির বন্ধন ঝরাবৃষ্টির

দেয় চুম্বন অনাসৃষ্টির

ফের উচ্ছ্বাস ভাঙে শৃঙ্খল

বয় চারধার বায়ু নির্মল 

প্রেম স্বর্গের চির সুন্দর

 

বুধবার, ১ জুন, ২০২২

মেঘ অদিতি-র ঝুরোগল্প

একটি দীর্ঘ কাহিনী

পথচলতি মানুষের জটলা ক্রমেই বাড়ছে। আর উন্মাদটা খিকখিক হাসছে। হেসেই চলেছে। মাঝেমাঝে গলা তুলে কাউকে ডাকার ভঙ্গিতে সুশীল সুশীল বলে চীৎকার করছে। কোথা থেকে দুটো কালো কুকুরও জুটেছে তার সাথে। সুশীল বলে আরেকবার গলা তুলতেই দুটো কুকুরই তার শতচ্ছিন্ন পোশাক ধরে টানাটানি শুরু করল। তাকে উদ্ধারের বদলে দর্শনার্থীর ভিড়ে কেউকেউ সে দৃশ্যধারণ করতে তুলে ধরল তাদের মোবাইল ক্যামেরা।

মুখোমুখি দুটো দ্বিতল বাড়ির বন্ধ জানলা হঠাৎই  তখন খুলে গেল।

নে, ঘেউ এবার ভুতোকে শায়েস্তা করবে। এবার কী করবি? পারলে ঠেকা দেখি!’ ঝাঁজালো গলায় বলে উঠল দখিনা জানলার প্রথমা। 

উত্তর দিকের জানলায় দাঁড়ানো দ্বিতীয়া তার উত্তর করল না। বরং সেই উন্মাদকে ঘিরে দুই সারমেয়র টানাটানি আর মানুষের জটলা দেখে তার সারা শরীর স্থবির হয়ে পড়ল। দুই বাড়ির মাঝ দিয়ে যে সরু রাস্তা চলে গেছে, তারই মাঝ বরাবর মস্ত পাকুড় গাছের ছায়া্ যেখানটায় পড়ে সেখানেই এই উন্মাদ দিনরাত বসে থাকে। ভুতোও তো তাকে চেনে। কিন্তু আজ কেন সে হামলে পড়ল লোকটার ওপর সে বুঝে পেল না। একবার ভুতোকে গলা তুলে ডাকতে চাইল। কিন্তু শরীরের মতই তার মনও অসাড় হয়ে পড়েছে। যা ঘটছে ঘটুক, আমার কী করার আছে ভেবে সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল।

জানলায় ভেসে ওঠা প্রথমা দ্বিতীয়ার মুখের সাদৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দুজনেরই চোখের মণি কটা, চুল কালচে বাদামী। প্রথমার চুলের গোছা দীর্ঘ বলে তা জানলার বাইরে সর্পিল ভঙ্গিতে যেন হঠাৎ থেমে গেছে। অন্যজনের ঘাড় অবধি ছাঁটা চুলে এলোমেলো ছড়িয়ে যাচ্ছে রোদের ঢেউ। প্রথমা বিরক্তি চাপতে গিয়ে দ্বিতীয়ার থেকে চোখ সরিয়ে রাস্তায় তাকাল। এবং মুহূর্তে সেও চমকে উঠল। সর্বনাশ! পাগলটাকে আক্রমণ করে বসেছে ঘেউ। ঘেউকে তো সে পাঠিয়েছিল ভুতোকে শায়েস্তা করতে। ঘেউ কিনা তেড়ে গেল সেই পাগলের দিকে! ঘেউকে সে ফিরে আসার কথা বলতে চাইল কিন্তু ঘেউ ততক্ষণে উন্মাদটার জামা ফালাফালা করে ফেলেছে।

ঘটনাটা তেমন কিছুই নয়। পথেঘাটে এমন কতই ঘটে তবে কিনা উন্মাদকে ঘিরে প্রথমা দ্বিতীয়া উভয়েরই মনে পুরনো ক্ষত আছে কি না। সেই উন্মাদ যে ছিল সুদর্শন, একইসাথে দীর্ঘকায়। সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় বড্ড মানাত যাকে। সে কারণেই তো লোকে তাকে সুশীল সমাজভুক্ত করেছিল। আর মুখোমুখি জানলায় যারা দাঁড়িয়ে, সম্পর্কে তারা দুই সহোদরা। দুজনেই চেয়েছিল একে জীবনসঙ্গী করতে। প্রথমা ভাবে, উফ, কী ভুলটাই না করেছিল সে। দ্বিতীয়ার মনে তখন বয়ে চলেছে গতজন্মের বিরহগাঁথা। অতঃপর দুজনে এক্সাথেই ভাবলো, দখলের প্রবণতা মানুষকে বড্ড হিংস্র করে তোলে। সেই হিংস্রতাকে জিইয়ে রেখে তারাও কবে যেন দুটো বাড়ির জানলা বন্ধ করে দিয়েছিল.. আর সেইসব টানাপোড়েনের মধ্যে সেই সুদর্শন পুরুষটি পরিণত হয়েছিল বদ্ধ উন্মাদে।

দুটো বাড়ির জানলা এখন আবার বন্ধ।

রাস্তায় ছড়িয়ে আছে ছেঁড়া পোশাকের টুকরো-টাকরা এবং ভুতো-ঘেউয়ের ফেলে যাওয়া ছায়া।

 

রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১

মেঘ অদিতি-র ঝুরোগল্প


মানুষের মুখ

শীতের ক্ষণস্থায়ী বিকেল তখন সন্ধ্যার সাথে জায়গাবদল করছে। কিছু দূরে নীলরঙা পাহাড়। সন্ধের ম্লান আলোয় তারা দ্রুত ঝাপসা হতে চাইছে। শীতের এক ঝকঝকে দিনের শেষবেলায় সেখানেই ওদের দেখা হয়ে গেল। ওরা মানে দুটি গান যাদেরকে শুনতে প্রায় একইরকম। একথা জানবার পর থেকেই প্রথম দ্বিতীয়কে অনেকদিন ধরে অনুসন্ধান করছে। ওরা হাঁটছে সমুদ্রতীর ধরে। সরুচোখে দ্বিতীয়কে অনেকক্ষণ ধরে দেখে প্রথম। দেখতে দেখতে ঘাড় ফিরিয়ে দ্বিতীয়কে বলল, শেষ অবধি দেখা হলো তাহলে! বলেই কর্তৃত্বের সুরে বলল, এসো, এগোনো যাক। 

দ্বিতীয় মৃদু হাসে। হাওয়ায় ওর চুল এলোমেলো। নোনা হাওয়ার দখলদারির হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছে দ্বিতীয়। পা ফেলছে এলোমেলো। পোশাক আলুথালু। প্রথম লক্ষ্য করল, দ্বিতীয়কে সে নিজের মতই যতটা গোছানো ভেবেছিল আসলে সে ততটা নয়। ভ্রূ কুঁচকে ঘুরে দাঁড়ায় সে। সরাসরি দ্বিতীয়র উদ্দেশ্যে বলে, তোমাকে সবাই আমার কপি বলে কেন

সমুদ্রের ঢেউগুলো পরপর আছড়ে পড়ে। আবার তারা ফিরেও যায়। সাংঘর্ষিক এক প্রশ্ন যা ঢেউ আছড়ে পড়ার মতই। অথচ দ্বিতীয়র হেলদোল নেই। সে কেবল ঢেউয়ের ওঠানামা দেখে। তারপর ফের এলোমেলো পা ফেলে। প্রথম এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে। উত্তর কর, কেন তোমাকে আমার মত দেখতে?

এবার মৃদু হাসে দ্বিতীয়। গুনগুন করে, কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন দিয়ে যাও.. 

-    এটা প্রশ্নের উত্তর নয়!

-    কেন? আপনি আমাকে তুমি করে কেন বলছেন?

-    যদি বলি আমি সে, যার রাগ আর সুর নিয়ে তুমি তৈরি

-    ওহ বুঝেছি, কেন আমায় তুমি বলছেন। আপনি আগে জন্মেছেন। আমি কিছুটা পরে। আমরা একই রকম এরকম মনে হচ্ছে আপনার। কিন্তু কেন?

-    আমার একার প্রশ্ন নয়। কথা যারা গান শোনে তাদেরও।

-    একটা প্রশ্ন।সময় গতি অনাপেক্ষিক; মানে বলতে চাইছি সময় অপরিবর্তনীয়তাহলে আপনি আগে জন্মালেন কী করে!

-    বাহ! কথা ঘোরাচ্ছো! তুমি আমার শরীরকে ভিত বানিয়ে ঘরবাড়ি বানাওনি?

-    যদি বানাইও, অসুবিধে? এমন কত তো হয়েছে! স্বয়ং ..

-    থামো! উদাহরণ দেবে না। আমার কথাগুলোও তো উল্টেপাল্টে তোমারই শরীরে ভীড় করে আছে। কী ব্যাখ্যা তার?

-    যা আমরা নিজের বলে ভাবি সেসব কি সত্যি হয় সবসময়? নাকি সমস্তই আপেক্ষিকতা? সত্তাটুকুই আসল। যা আপনারও আছে। আমারও। তাহলে?

যুক্তি শুনে প্রথমের খুব রাগ হল প্রথমে। পরক্ষণেই ভাবনার দিকবদল হল। বদলে যাওয়া পৃথিবী তো সুরহীন। একাকিত্বের। এই পৃথিবী অচেনাও। অন্তহীন যন্ত্রণার এসময়ে অন্তত একটা গান যদি আমার মত হয়, হোক না.. 

ভাবতে ভাবতে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে প্রথম। তারপর বালিতে আঙৃল বুলিয়ে কিছু একটা আঁকতে চেষ্টা করে। সমুদ্র এখন খুব শান্ত। 

অল্প দূরের অন্ধকারে দ্বিতীয়ও বসে। সে একটা ঝিনুক কুড়িয়ে পেয়েছে। আপনমনে তাই দিয়ে ছবি আঁকছে। 

আশ্চর্য এই, হুবুহু তারা একই ছবি আঁকছে। বিষণ্ণ মানুষের মুখ….