তমোজিৎ সাহা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
তমোজিৎ সাহা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

তমোজিৎ সাহা-র অনুবাদ কবিতা


অজ্ঞেয়


ইচ্ছাপত্র

আমার বুকের উপর 

বাতাস লিখে যায় 

মিহি রেখায় 

নিজের ইচ্ছাপত্র 

আবার দমকা হাওয়া এসে 

ইচ্ছাপত্র উড়িয়ে  

অন্য কোথাও নিয়ে চলে যায়।


পাগলা হাওয়া! ইচ্ছাপত্র করার আগে 

হলফনামা দিতে হয়

যিনি ইচ্ছাপত্র করছেন 

তাঁর জ্ঞান চেতনা সবকিছু যথাযথ আছে

এবং এরজন্য তুমি 

কাকে সাক্ষী পাবে 

আমাকে ছাড়া?


আমার সাক্ষ্য কি

তোমার ইচ্ছাপত্রের চেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে?


[অজ্ঞেয় ( ১৯১১-১৯৮৭ ) নামে সুপরিচিত হিন্দি সাহিত্যের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বের নাম সচ্চিদানন্দ হীরানন্দ বাৎসায়ন। হিন্দি ছাড়াও সংস্কৃত, ফারসি, ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা সাহিত্যের শিক্ষা লাভ করেছেন। বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন সাহিত্যিক অজ্ঞেয় হিন্দি সাহিত্যে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক হিসাবে অমর হয়ে আছেন। সাহিত্যকৃতির স্বীকৃতিস্বরূপ সাহিত্য অকাদেমি এবং জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।]



মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তমোজিৎ সাহা-র অনুবাদ কবিতা

প্রেমচন্দ গান্ধী

একটি সরল বাক্য
একটি সরল বাক্যের হাত ধরে
না জানি কত গহীন কত কঠিন পথে চলে যাই
ভাষার দুরূহ পাকদণ্ডীর উপর হেঁটে হেঁটে 
একটি সরল বাক্যের কাছে পৌঁছোই, 
বড় বিপজ্জনক এই সময়ে
যখন স্পষ্ট করে কিছু বলা 
মানেই বিপদের ঝুঁকি নেওয়া 
প্রতিটি কথার হাজারো অর্থ হয়
কোনও কিছুই অরাজনৈতিক নয়, 
আমি মানুষের হৃদয়ের গভীরতম 
রাজনৈতিক কথা বলি, 
আমি তোমায় ভালোবাসি
আমি একটি সহজ-সরল বাক্য লিখি।

[রাজস্হানের সমকালীন সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি প্রেমচন্দ গান্ধীর জন্ম হয় ২৬ মার্চ, ১৯৬৭ সালে জয়পুরে। রাজস্হানী এবং হিন্দিতে সাহিত্যচর্চা করেন। কবিতার পাশাপাশি অনুবাদ, প্রবন্ধ, নাটকও লিখেছেন। সমকালীন সাহিত্য সংস্কৃতি সামাজিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। কাব্যচর্চার জন্য লাভ করেছেন একাধিক পুরস্কার।]


 

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

তমোজিৎ সাহা-র অনুবাদ কবিতা


 সনন্ত তাঁতি


বন্দুক নিয়ে এসো না

তুমি বন্দুক নিয়ে এসো না। গোপনে বোমাও নিয়ে এসো না।
যদি আসতে চাও হৃদয়ের ভিতরে আরও বড় একটি হৃদয় নিয়ে এসো।

তুমি বন্দুক নিয়ে এসো না। স্টেনগানও আনবে না লুকিয়ে।

যদি আসতে চাও বুকে সাহস নিয়ে এসো। শোকদগ্ধ সময়কে বদলে দাও
ভালোবাসার অনাবিল আনন্দের উষ্ণতায়।


[সনন্ত তাঁতি হলেন আধুনিক অসমিয়া কবিতার অন্যতম প্রধান স্হপতি। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর আসামের বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জের কালীনগর চা-বাগানের ওড়িয়া চা-শ্রমিক পরিবারে। পড়াশোনার শুরু বাংলা মাধ্যমে। কাব্যচর্চা করেছেন অসমিয়া ভাষায়। আসামের বামপন্হী প্রগতিশীল আন্দোলনে যুক্ত থাকার ফলে তাঁর কবিতায় পাওয়া যায় মাটি ও মানুষের জয়গান। 'কাইলৈর দিনটো আমার হব' কাব্যগ্রন্হের জন্য ২০১৮ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। এছাড়া পেয়েছেন দলিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, আসাম উপত্যকা সাহিত্য পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার। কবি সনন্ত তাঁতি ২৫ নভেম্বর ২০২১ সালে প্রয়াত হয়েছেন।]

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

তমোজিৎ সাহা-র অনুবাদ কবিতা

 হব্বা খাতুন

একাকী দেবদারুর গান

যে দেদীপ্যমান----- আপনি কি তাকে দেখেছেন?
ওকে দেখুন!
ওর খোঁজে
অবিরাম ধারার মতো আমি বয়ে চলেছি
একটি অশান্ত নদী
সুদূর অরণ্যে
একাকী নির্জনে দেবদারুর মতো দাঁড়িয়ে আছি আমি
যতক্ষণ পর্যন্ত সে দৃশ্যমান নয়
আমার কাঠুরিয়া
যে আসে কাঠ কাটতে
তার আগুনকে আমার বড় ভয়
যখন সে আমার কাঠে আগুন ধরায়
আমি ছাই হবার জন্য জ্বলে উঠি
যেন আঙুরের সুরা! 


[কাশ্মীরের কিংবদন্তি গীতিকবি হব্বা খাতুন (১৫৫৪-১৬০৯ ) কাশ্মীরের কোকিল নামে অমর হয়ে আছেন। তিনি ছিলেন কাশ্মীরের সুলতান ইউসুফ শাহ চক-এর স্ত্রী। সম্রাট আকবর ইউসুফ শাহকে গদিচ্যুত করে কাশ্মীর দখল করেন এবং সুলতানকে বিহারে বন্দি করে রাখেন। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। বিরহিণী স্ত্রী হব্বা খাতুন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কাশ্মীরেই স্বামীর অপেক্ষা করে গীতিকবিতা রচনা করতে থাকেন। হব্বা খাতুনের কবিতা আজও কাশ্মীরের মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।]

রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

তমোজিৎ সাহা-র অনুবাদ কবিতা

রবীন্দ্র সরকার



বৃদ্ধাশ্রমের তিনজন বৃদ্ধ


আকাশখানি যখন রঙিন হয়

বৃদ্ধাশ্রমের তিনজন বৃদ্ধ

নদীতীরে এসে বসে

নিজেদের প্রতিবিম্বের দিকে তাকায়

ভাঙাচোরা মুখগুলিতে ইতিহাসের কতই না ভাঁজ

সময়ের আঁকিবুঁকি, ক্ষতচিহ্নগুলো

আজও দীপ্তিমান, ভিতরে

অহরহ রক্তপাত।


সূর্যোদয় হলে পুবের বাতাস বলে

লেকের জলে জলতরঙ্গ বাজে

সন্তান-সন্ততির ছবিগুলো

একে একে ভেসে ওঠে

একটা দীর্ঘ দুঃখের দীর্ঘনিঃশ্বাস পাকা পাতাগুলোকে

উড়িয়ে নিয়ে যায়

পাশের অন্ধ কুঠুরির দিকে।


সূর্যাস্তের সময় তিনজন বৃদ্ধ

বসে থাকে কারও প্রতীক্ষায়

খামে ভরা গোধূলির চিঠিখানা

কোনওদিনই আসে না, অন্ধকারে

হাতড়ে বেড়ায় অন্তরে

দূরে যমকুলি পাখি একটা ডাকে

বৃদ্ধাশ্রমের তিনজন বৃদ্ধের

ভাঙাচোরা মুখগুলো মাটিতে পড়ে থাকে।


[আধুনিক অসমিয়া সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্র সরকার ১৯৪১ সালের আগস্ট আসামের গুয়াহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। অতি সম্প্রতি গত সেপ্টেম্বর ২০২৩- ৮২ বছর বয়সে তিনি কলকাতায় প্রয়াত হন। 'সত্তরর পদাতিক' কবি রবীন্দ্র সরকার 'ধূলিয়রি ভরির সাঁচ' কাব্যগ্রন্হের জন্য ২০১৩ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন। অসমিয়ার সঙ্গে তিনি বাংলায়ও কাব্যচর্চা করেছেন। এই দুই ভাষায় রচিত তাঁর গ্রন্হের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। অনুবাদক এবং প্রাবন্ধিক হিসাবেও তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। কবি হিসাবে তিনি ছিলেন সমাজ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ‌।] 

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

তমোজিৎ সাহা-র অনুবাদ কবিতা

নন্দ ভারদ্বাজ

একটি আত্মীয় অনুরোধ

কফিঘরের ঠাণ্ডা বিতর্কে
নিজেকে হারানোর চেয়ে ভালো
ঘরে অসুস্থ স্ত্রীর পাশে বসো,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে 
অগোছালো চুলগুলোকে সামলে নাও –––
                              নিজেকে বুঝে নাও,
ক্লান্ত-বিধ্বস্ত প্রতিবেশীকে মজার গল্প শোনাও
বাচ্চাদের সঙ্গে সাপ-সিঁড়ি খেলো –––
জেতো বা হারো চনমনে থাকো
বলার অর্থ হল
নিজেকে এমনি এমনি ব্যর্থ
                     মেরে ফেল না

স্বাদবদলের জন্য 
আবহাওয়ার ওপর কথা বলা
জরুরি নয়
ছারখার করা শূন্যতা শুধু বইয়েই নয়
চারপাশের মন-মস্তিষ্কেও 
নিজের ছাপ রেখে গেছে।

জানালার পাট খোলো
আর তাজা হাওয়া নিয়ে
কোলাহলের মধ্যে 
সেই শব্দকে চিনে নাও
যার মধ্যে হৃদস্পন্দন আছে।

চোখ ভরে দেখো সেই ফেঁসে যাওয়া বস্তিকে
উত্তেজনায় ব্যর্থ চিৎকার করো না,
ভালো হবে –––
যদি চরস আর উনুনের 
ধোঁয়ার মধ্যে পার্থক্য করতে শেখ!

 প্রতিবার

প্রতিবার
শব্দ ঠোঁটে এসে ফিরে যায়
কতটা নির্জীব এবং অর্থহীন হয়ে ওঠে
আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক
যেন শীতল মৌন জমাট বাঁধতে থাকে
আমাদের শ্বাসনালীতে
আর প্রাণহীন মনে হতে থাকে
              চোখের পুতলিগুলো।

কতটা উদাস এবং 
আনমনা হয়ে যাও তুমি হঠাৎ
কতটা ভাবশূন্য নিজের একান্তে,

আমরা যখনই আঙিনা থেকে কথা শুরু করেছি
কোনও কিছুকে ধাক্কা লেগে ভাঙার হাত থেকে
                 আটকানো যায়নি
তুমিও জানতে পারলে না নিজের হারিয়ে যাওয়ার কারণ
আমিও জানলাম না নিজের ব্যর্থতার আঁধার!

তোমাকে সুখী দেখার বাসনায়
আমি দিনরাত ওই জঙ্গলেই লড়াই করে গেছি
আর তুমি উদাস মনে ঘরে থেকেছ সবসময়
চলমান সময়ের সঙ্গে 
তোমার প্রশ্ন আর অভিযোগ বাড়তে লাগল
আর আমি হারাতে লাগলাম প্রতিবার
আমার শব্দের সামর্থের প্রতি বিশ্বাস!


[রাজস্থানের প্রসিদ্ধ কবি নন্দ ভারদ্বাজ-এর জন্ম ১৯৪৮ সালের আগস্ট। ষাটের দশকের কবি। কর্মজীবনে ছিলেন দূরদর্শন কেন্দ্র জয়পুরের জ্যেষ্ঠ পরিচালক। হিন্দি রাজস্থানী ভাষার অন্যতম প্রধান কবি, গল্পকার, সমালোচক অনুবাদক নন্দ ভারদ্বাজ ২০০৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা এবং লেখকদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ২০১৫ সালে তিনি এই পুরস্কার নগদ অর্থসহ ফিরিয়ে দেন।]

শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

তমোজিৎ সাহা-র অনুবাদ কবিতা

সনন্ত তাঁতি

আজ রাত অথবা আগামীকাল থেকে

ওরা আমার ঘরের দরজা ভেঙে দিল। ওরা
আমার বাড়ির প্রবেশপথে খাল কেটে দিল।
ওরা পানীয় জলের থেকে আমার মুখখানা
দূরে সরিয়ে রাখল।
ওরা আমার দু'হাতে হ্যান্ডক্যাফ বেঁধে আমার
সন্তানকে স্পর্শ করা থেকে আমাকে বিরত করল।
ওরা আমার মা'কে হত্যা করল। ওরা আমার 
স্ত্রীকে ধর্ষণ করল
এবং আমাকে সারাজীবনের জন্য অন্ধ করে দিল।
আমি দাঁড়িয়ে আছি সময়ের বুকে আর মাঝে মাঝে চিৎকার
করে উঠি যন্ত্রণায়।
আমি দাঁড়িয়ে আছি অন্ধকারে আর মাঝে মাঝে চিৎকার
করে উঠি প্রতিবাদে।
আমি দাঁড়িয়ে আছি আর সমূহ আশাকে যুদ্ধাস্ত্র করে গড়ে
তুলছি আক্রমণের পথ। 
প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা আমাকে সহায়তা করার জন্য
কোনও একটি শোভাযাত্রায় পদাতিক হয়ে উঠুন
আর আমাকে অন্ধত্ব থেকে মুক্তি দিন।
আমি জানি অত্যাচারের বিকল্প এখন প্রতিবাদ।আমি জানি
অত্যাচারের বিকল্প এখন সংঘর্ষ।
আমি জানি মানুষের শরীরে ইচ্ছাশক্তির জন্ম হয়
প্রতিবাদ করার জন্য।
আমি জানি মানুষের হৃদয়ে ইচ্ছাশক্তির জন্ম হয়
প্রতিবাদ করার জন্য।
আমি জানি মানুষের ইচ্ছাশক্তিতে জীবনের অনুবাদ হয়
বাইরে ভিতরে।
প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা উঠে দাঁড়ান এবং আমাকে
মুক্ত করে দিন
অন্ধত্ব এবং দুঃসহ যন্ত্রণার থেকে আজ রাত অথবা
আগামীকাল থেকে।


[সনন্ত তাঁতি হলেন আধুনিক অসমিয়া কবিতার অন্যতম প্রধান স্হপতি। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর আসামের বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জের কালীনগর চা-বাগানের ওড়িয়া চা-শ্রমিক পরিবারে। পড়াশোনার শুরু বাংলা মাধ্যমে। কাব্যচর্চা করেছেন অসমিয়া ভাষায়। আসামের বামপন্হী প্রগতিশীল আন্দোলনে যুক্ত থাকার ফলে তাঁর কবিতায় পাওয়া যায় মাটি ও মানুষের জয়গান। 'কাইলৈর দিনটো আমার হব' কাব্যগ্রন্হের জন্য ২০১৮ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। এছাড়া পেয়েছেন দলিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, আসাম উপত্যকা সাহিত্য পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার। কবি সনন্ত তাঁতি ২৫ নভেম্বর ২০২১ সালে প্রয়াত হয়েছেন।]