সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

তমোজিৎ সাহা-র অনুবাদ কবিতা

নন্দ ভারদ্বাজ

একটি আত্মীয় অনুরোধ

কফিঘরের ঠাণ্ডা বিতর্কে
নিজেকে হারানোর চেয়ে ভালো
ঘরে অসুস্থ স্ত্রীর পাশে বসো,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে 
অগোছালো চুলগুলোকে সামলে নাও –––
                              নিজেকে বুঝে নাও,
ক্লান্ত-বিধ্বস্ত প্রতিবেশীকে মজার গল্প শোনাও
বাচ্চাদের সঙ্গে সাপ-সিঁড়ি খেলো –––
জেতো বা হারো চনমনে থাকো
বলার অর্থ হল
নিজেকে এমনি এমনি ব্যর্থ
                     মেরে ফেল না

স্বাদবদলের জন্য 
আবহাওয়ার ওপর কথা বলা
জরুরি নয়
ছারখার করা শূন্যতা শুধু বইয়েই নয়
চারপাশের মন-মস্তিষ্কেও 
নিজের ছাপ রেখে গেছে।

জানালার পাট খোলো
আর তাজা হাওয়া নিয়ে
কোলাহলের মধ্যে 
সেই শব্দকে চিনে নাও
যার মধ্যে হৃদস্পন্দন আছে।

চোখ ভরে দেখো সেই ফেঁসে যাওয়া বস্তিকে
উত্তেজনায় ব্যর্থ চিৎকার করো না,
ভালো হবে –––
যদি চরস আর উনুনের 
ধোঁয়ার মধ্যে পার্থক্য করতে শেখ!

 প্রতিবার

প্রতিবার
শব্দ ঠোঁটে এসে ফিরে যায়
কতটা নির্জীব এবং অর্থহীন হয়ে ওঠে
আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক
যেন শীতল মৌন জমাট বাঁধতে থাকে
আমাদের শ্বাসনালীতে
আর প্রাণহীন মনে হতে থাকে
              চোখের পুতলিগুলো।

কতটা উদাস এবং 
আনমনা হয়ে যাও তুমি হঠাৎ
কতটা ভাবশূন্য নিজের একান্তে,

আমরা যখনই আঙিনা থেকে কথা শুরু করেছি
কোনও কিছুকে ধাক্কা লেগে ভাঙার হাত থেকে
                 আটকানো যায়নি
তুমিও জানতে পারলে না নিজের হারিয়ে যাওয়ার কারণ
আমিও জানলাম না নিজের ব্যর্থতার আঁধার!

তোমাকে সুখী দেখার বাসনায়
আমি দিনরাত ওই জঙ্গলেই লড়াই করে গেছি
আর তুমি উদাস মনে ঘরে থেকেছ সবসময়
চলমান সময়ের সঙ্গে 
তোমার প্রশ্ন আর অভিযোগ বাড়তে লাগল
আর আমি হারাতে লাগলাম প্রতিবার
আমার শব্দের সামর্থের প্রতি বিশ্বাস!


[রাজস্থানের প্রসিদ্ধ কবি নন্দ ভারদ্বাজ-এর জন্ম ১৯৪৮ সালের আগস্ট। ষাটের দশকের কবি। কর্মজীবনে ছিলেন দূরদর্শন কেন্দ্র জয়পুরের জ্যেষ্ঠ পরিচালক। হিন্দি রাজস্থানী ভাষার অন্যতম প্রধান কবি, গল্পকার, সমালোচক অনুবাদক নন্দ ভারদ্বাজ ২০০৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা এবং লেখকদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ২০১৫ সালে তিনি এই পুরস্কার নগদ অর্থসহ ফিরিয়ে দেন।]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন