সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সুধাংশুরঞ্জন সাহা-র অনুবাদ কবিতা

সিমাস হিনি


স্ত্রীর গল্প

ঝোপঝাড়ের আড়ালে একটা লাইনেন কাপড়ের উপর বীজ ছড়িয়ে দিয়ে শেষ করেছিলাম আমার কাজ।
গুঞ্জন : মুগুর এবং বড় বেল্টের সাহায্যে সজোরে ঘুরিয়ে অচল করে দেয়া হয় সেই মেসিন,
শুধু অসমর্পিত কিছু খড় ঝুলছিল মুখে।
এটা এতোই নিথর ছিল যে, আমি তার বুটের আওয়াজ পাচ্ছিলাম কুড়ি গজ দূরের শস্য কাটা মাঠের অবশিষ্ট খড়ের খড় খড় শব্দে।

সে নিচে বসে বলল,এইসব লোকের জন্য আমার কোনো তাড়া নেই।
হাতভর্তি ঘাস শূন্যে ছুড়ে বলল, দেখো কী সুন্দর দেখাচ্ছে।
ঘাসের উপর পাতা সাদা কাপড়ের দিকে মাথা ঝোঁকালো সে।
আমি ঘোষণা করে দিলাম, 
একজন নারীই পারে এই জমির নকশা আঁকতে।
যদিও আমাদের মতো ছেলেদের সামান্য  দাবিও নেই এক টুকরো কাপড়ের।
সে চোখ টিপে টিপে আমাকে দেখছিল,
যখন আমি একটা কাপ গড়িয়ে দিয়েছিলাম।
এবং তার পছন্দের মোটা পাউরুটিতে মাখন লাগাচ্ছিলাম।
আদতে আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে
ঢের ভালো শস্য মাড়াই হচ্ছিল।
ওখান থেকে বেরিয়ে এসে ভাবি, 
এটা খুবই পরিচ্ছন্ন সুন্দর বীজ।
এই পরিদর্শন সবসময় চালিয়ে যেতে হবে।
এমনকি যখন আমি জানি না কী করতে হবে, তখনও।

আমি হাত ঢুকিয়ে দিই আধাভর্তি ব্যাগে,
হুক ঢুকিয়ে পরীক্ষা করি প্রতি পর্যায়ে।
এটা খুবই কঠিন কাজ।
অগুনতি উদাসীন ব্যাগ ফাঁক করে দেখা,
যা সংকীর্ণ ঢালু পথে চলে যায় স্টিলের ড্রামে,
আর কাঁটাগুলো থেমে যায় মাটির বাঁকে।
বল্লমই পারে হারানো এই যুদ্ধক্ষেত্রকে চিহ্নিত করতে।
আমি এই দুইয়ের মাঝে হেঁটে যাই
মাঠের অবশিষ্ট খোঁচা খোঁচা খড়ের উপর দিয়ে।

চুপচাপ ধূমপানে মগ্ন হয়ে তারা শুয়ে থাকে 
তাদের নিজেদের খড়ির রিং ও গাদের মধ্যে।
তাদের স্বগতোক্তি,এখানে কি কিছুই নেই!
ওরা এতোটাই গর্বিত যে, ওরাই যেন জমি।
মাড়াই এবং বীজ বোনার জন্য এটাই যথেষ্ট।
আমি আসব আর সে আমাকে দেখাবে।এটাই সব।
সুতরাং আমি আর এই কাজের মধ্যে নেই।
কাপ জড়ো করে,কাপড় গুছিয়ে চলে আসি।
কিন্তু তারা বিরামহীনভাবে তাদের কাজ করে যায়, 
দ্বিধাহীন, আন্তরিক, কৃতজ্ঞচিত্তে,
গাছের ছায়ায় বসে।


[কবি সিমাস হিনি (Seamus Heaney)-র জন্ম উত্তর আয়ারল্যান্ডে । ১৯৩৯ সালে। তিনি একজন আইরিশ কবি। প্রথম জীবনে ফ্রীলান্স লেখালেখি ও প্রচারের কাজে যুক্ত ছিলেন, পরে অধ্যাপনা । বহু পুরস্কারে সম্মানিত। কবিতার জন্য পেয়েছেন Whit bread book of the year award ১৯৮৭ এবং ১৯৯৬ সালে। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ১৯৯৫ সালে। তাঁর লেখায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ন্যায়বিচার। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে -- Death of a Naturalist(1966), Wintering out(1972), The Haw Lantern (1987) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নোবেলজয়ী এই কবি ২০১৩ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এখানে তাঁর New Selected Poems থেকে একটি কবিতা The wife's Tale এর বাংলা অনুবাদ করেছি।] 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন