সুস্মিত হালদার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সুস্মিত হালদার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সুস্মিত হালদার-এর কবিতা

বিয়ে

 

কথায় বলে না কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন।

অপরিমেয় দারিদ্র দুঃখে ভরা রামবিলাসের

জীবনে রাম বিলাসের ছিটেফোঁটা জোটে নি।

বিহার থেকে পেটের দায়ে কলকাতা এসে

কাপড় ইস্ত্রী করে পেট চলে। চালু রাখে

আরও কয়েকটি পেট।

 

একটা পেটের অন্ন-সংস্থান কমবে ভেবে

পনের বছরের মেয়ে মুন্নির বিয়ের তোড়জোড়

শুরু করেছে রামবিলাস।

পাত্র সারাদিন ধুলো মেখে মুটের কাজ করে যেটুকু

পয়সা পায়, তাতেই ভরাসা করে দরিয়ায় ভাসিয়ে

দিতে চায় মেয়েকে সেই পরমাত্মার সঙ্গে।

 

মেয়ে মৎস্যকন্যা হয়ে ডুব দেয় গভীর জলে।

শান্ত জলে মুন্নি দেখে বিরাট আলোকোজ্জ্বল

প্রাসাদ। তাকে সাজানোর জন্য ব্যস্ত প্রাসাদ-রমণীরা।

গহনা অলঙ্কারের শেষ নেই। প্রহরে প্রহরে নতুন অঙ্গবিলাস।

সন্ধে হতেই অগণিত অথিতির আনাগোনা। মার্ক জুকারবার্গ, বিল গেটস

এসেছেন বিদেশ থেকে। বলিঊদের তিনখানউপস্থিত।

আছেন অমিতাভ বচ্চন, আরও বলিউড তারকারা।

আছেন দেশ বিদেশের বড় বড় বিজনেস টাইকুন।

বিদেশীদের কাছে কোলাবার বড়া পাও আর পনির বিরিয়ানি খুব ফেবারিট

হয়েছে। আর জামনগরের পেড়া।

সারাদিন পরে মুন্নি মৎস্যকন্যা জলের উপরে একবার ভেসে উঠতে চায়।

জলের উপরের বাতাস নেবে বলে।

কিন্তু সে উঠতে পারছে না।

তার সমস্ত দেহটা জালে পেঁচিয়ে গেছে এমনভাবে

যে বেরোনোর পথ নেই।  

 

রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

সুস্মিত হালদার-এর কবিতা

বেকার


বুকের ভিতর থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাস

তারই বাষ্পে ঘরময় ভেজা ভেজা। 

বিষন্নতার আর্দ্রতায় স্যাঁতস্যাঁতে উঠোন,

বিন্দু বিন্দু জল জমে পিচ্ছিল।

সে সমানে পা হড়কে পড়ছে।


ঘরবন্দী একা সে রোজ খবর কাগজ দেখে

আর টস করে

স্নাতকের মেডেলটা উপরে ছুঁড়ে দুহাতের

তালুতে লোফে।


বন্ধ দুতালু খুলে

আজ সে কি দেখতে পাবে সেই প্রতিচ্ছবি

মিঠে রোদ ছেয়ে গেছে উঠোনে আর সে

রোদে পিঠ দিয়ে বসে এক কাপ গরম চায়ে

চুমুক দিচ্ছে।  

 ১৯শে জুন, ২০২১

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সুস্মিত হালদার-এর কবিতা

তোরা ভাল থাক

পরিবার পাঁচ থেকে নেমে তিনজনে       

হৈ হল্লার বাড়ি নিশ্চুপ                     

নিমেষে শান্ত, নিস্তেজ প্রাণহীন।            

আজন্ম থাকা স্নেহের আঁচল ছেড়ে           

ভিন্ন শহরে কর্মসূত্রে                       

অথবা স্নাতক হয়ে আরো উঁচু পাঠে           

কনিষ্ঠ যারা বাড়ি ছেড়ে গেল দূরে           

তাদের দুঃখে কেঁদেছিল বাড়ি           

নীরবে নিথর হয়ে দেবতার ঘরে।         

 

এককালে কত বকাবকি কত রাগ         

মান অভিমান, কত মারধোর                 

স্মৃতির আবাস ছেড়ে দাঁড়িয়েছে দোরে       

বিদায়ের বেলা মনে হয় শুধু আজ           

এত যে শাসন, প্রয়োজন ছিল               

কি তার, আরও সোহাগে আদরে দিন        

কাটানো যেত না, বাহুডোরে বেঁধে রেখে?       

বেদনা ভরিয়ে যায় যে কাঁদিয়ে              

তোরা ভালো থাক - এই প্রার্থনা করি।    

 

শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

সুস্মিত হালদার-এর কবিতা

ব্যভিচারী

তুমি এলে গল্প করব।

সারাদিন কেমন করে কাটালাম –

তুমি এলে পিছন ফিরে দেখতে পারি।

আর তো সময় হয় না,

কয়েক ঘন্টার এইটুকুই অবকাশ,

তুমি এলে।

 

তুমি এলে এতটাই হাল্কা লাগে

এতটাই নিরুদ্বেগ

বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে

মনটা সুতো ছাড়া ঘুড়ির মতো উড়তে দি –

এ কথা সে কথা কত কথার জাল বুনে চলি,

তোমার সঙ্গে।

তুমি বিবাদ করো না, প্রশ্ন করো না

মন দিয়ে শুধু শোন

সাক্ষীগোপালের মতো।

 

তুমি আসো নিঃশব্দে,

অজ্ঞাতসারে।

কালো বোরখা পড়ে,

চুপিসারে।

নাকাবে মুখ ঢেকে,

অন্ধকারে।

যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা

কোনো এক মুঘল সম্রাজ্ঞীর অবৈধ প্রেমাভিসার।

তুমি পাশে থাকলে

হৃদয় খুঁড়ে আবিষ্কার করি নিজেকে

এই আবেগঘন একান্ত আপন সময়ে।

আমি বাঁচার অর্থ খুঁজে পাই।


তোমরা রোজ এসো,তবে আমি বাঁচব।  

 

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩

সুস্মিত হালদার-এর কবিতা

লাদাখ

যেন ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ- নিস্তল,অস্তিত্বে উদাসীন

পাদদেশে অবিরাম কলকল শব্দ,‘মারের’

ধ্যানভঙ্গ অভিপ্রায়। ওঠো, গহিন, সম্বিত পাও।

তবু সে নিশ্চল, স্থিত একভাবে, নির্বিকার ধ্যানী।

 

তার শুষ্ক গাত্রে নেই সবুজের মসৃণ প্রলেপ

কর্কশ হিমেল বাতাস তাকে করেছে ক্রমাগত

ক্ষত বিক্ষত। যেন হাতুড়ি আর ছেনির আঘাত

খোদাই করেছে তার চিত্র-বিচিত্র অনন্তরূপ।

 

সে অনন্তরূপ সুন্দর। বুদ্ধের মতো রাজসিক।

 

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

সুস্মিত হালদার-এর কবিতা

ছাড়া সে আর কিছু বোঝে না 

 

পোল্যান্ডের রিফিউজি ক্যাম্পের সদ্য হাঁটতে

শেখা শিশুটা বোঝে না

কেন মারিউপলে তীব্র বোমা বর্ষণ হচ্ছে।

বোঝে না ক্ষমতালোলুপ এক যুদ্ধবাজ দানবের

মাথার ঘিলুর বিকৃত রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ

সে বোঝে না

কেন এত লোক একসঙ্গে এক জায়গায়

সে বোঝে না

কেন দুধ খাওয়ার সময় মায়ের

হাসিমুখটা আর দেখতে পাচ্ছে না।

 

রাতের অন্ধকারে লেসার মিসাইলের তীব্র

আদান প্রদানের বদলে দেখেছিল এক স্নিগ্ধ

মোহময় সফেদ গোল ---- 

কানে শুনেছিল, আয় আয় চাঁদমামা খোকাকে টিপ

দিয়ে যা।

 

 সে বোঝে শুধু

মাটিতে জল দেয়, আদর করে

হাওয়া দেয়, আলো দেয়

এক বিশ্বস্ত পুরুষ আর এক মহিলা

 

ছাড়া সে আর কিছু বোঝে না।

যুদ্ধ ছাড়া সেও আর কিছু বোঝে না।