সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

সম্পূর্ণ সূচি ১ (বর্ষ ৩ ।। সংখ্যা ২৬) [ডিসেম্বর সংখ্যা]


 

সম্পূর্ণ সূচি ২ (বর্ষ ৩ ।। সংখ্যা ২৬) [ডিসেম্বর সংখ্যা]


 

সম্পাদকের নিবেদন

 

সম্পাদকের নিবেদন

 

ভারতীয় সভ্যতার একজন উল্লেখযোগ্য নাম ঋষি কণাদ। কণাদের সময়কাল নিয়ে মতভেদ আছে। কারো কারো মতে খ্রিস্টপূর্ব সাত থেকে ছয় শতকের মানুষ ছিলেন কণাদ। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে তাঁর জীবনকাল খ্রিস্টপূর্ব ছয় থেকে পাঁচ শতক। নানা নামে কণাদ পরিচিত ছিলেন। কয়েকটি নাম যেমন কণাদ, কণভুক, কণচর, কণভক্ষ, কণব্রত ইত্যাদি। প্রতিটি নামেইকণশব্দটি যুক্ত আছে।কণ’-এর অর্থ হল খাদ্যশস্যের ছোট্ট কণিকা।কণ’-এর ক্ষুদ্রতার সাথেই জড়িয়ে আছে পরমাণুর চিন্তা। কণাদ বললেন পৃথ্বী, অপ, তেজস, বায়ু ––– এদের (যাদের বস্তুধর্ম আছে) ভাঙতে থাকলে যেখানে এসে পৌঁছবো আমরা, তার নাম পরমাণু। পরমাণুকে আর ভাঙা যায় না। এতো ছোট সে, যে তাকে মাপাও যায় না। একই রকম পরমাণুরা সব একসাথে যুক্ত হবে। এই যোগ দেবার ফলে একটা আকার তৈরি হবে, যা চোখে দেখা যাবে।

আবার গ্রীক সভ্যতায় পরমাণু ধারণার প্রবক্তা হিসেবে ডেমোক্রিটাস-এর কথাই বলা হয়। ডেমোক্রিটাসের সময়কাল হল খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ থেকে ৪৭০। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কণাদ এবং ডেমোক্রিটাসের পরমাণু ধারণায় হুবহু মিল দেখা যায়। তাঁদের ধারণা হল, কোন দৃশ্যমান বস্তুকে ভাঙতে থাকলে যেখানে পৌঁছবো আমরা তার নাম পরমাণু।

যে সময়ে জন্মেছিলেন কণাদ, তার প্রায় সোয়াশো বছর পর ডেমোক্রিটাসের জন্ম। পৃথিবীর দুই শ্রেষ্ঠ সভ্যতা ভারত গ্রীস- একই জ্ঞানের সৃজন পৃথক সময়কালে হয়েছে, তা হতেই পারে।

 

১৭৬৬ সালে সালে ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করেন জন ডালটন। ১৮০৮ সালে তিনি বই লিখলেন নিউ সিস্টেম অফ কেমিক্যাল ফিলোজফি তিনি এই বইয়ে লিখলেন, সব জিনিসের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার নাম পরমাণু। পরমাণু অবিভাজ্য।

পরমাণুর ধারণায় ডালটন যা বলেছেন, তা আধুনিক বিজ্ঞানের আলোয় পরীক্ষিত। কিন্তু প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের কণাদ বা ডেমোক্রিটাসের ভাবনার সাথে বিরোধ কিছু ছিল না। এরপর ক্রমশ অজস্র তথ্যের সংযোজন এবং সংশোধন হয়েছে পরমাণু-চর্চায়।

স্মরণীয় ঋষি কণাদ তাঁর পরমাণু-ভাবনা।

 

সকলে ভালো থাকুন। আন্তরিক শুভেচ্ছায় –––


রোশনি ইসলাম

সোনালি বেগম

স্মরণ ১ : কবি নাসের হোসেন-এর দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি


 

কবি শিল্পী নাসের হোসেন

 

জন্মঃ ..১৯৫৮, কলকাতা

মৃত্যুঃ .১২.২০২০, কলকাতা

 

শৈশব কৈশোরঃ বহরমপুরে। জ্যাঠামশাই প্রতিষ্ঠিত ক্লাবে কবিতালেখা, ছবি আঁকা ব্রতচারী চর্চা।

 

শিক্ষা এবং শিক্ষালয়ঃ বহরমপুরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাপীঠ। কৃষ্ণনাথ কলেজে বি.এস.সি. পাঠরত অবস্থায়দ্য লাস্ট পেজদ্বিভাষিক পত্রিকার সম্পাদনা। ১৯৭৪ সালে কৃষ্ণনাথ কলেজেই প্রথম যৌথ চিত্রপ্রদর্শনী।

 

প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনীঃ ১৯৮৪ এপ্রিল বিড়লা একাডেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার-এর         

                                  কনটেমপোরারি গ্যালারি-তে।

একক কাব্যগ্রন্থঃ ২৬টি। অপারেশন থিয়েটার। আলপিননামা। লাফ। প্রভৃতি...

                      -বুকঃ জিমন্যাশিয়াম ২০১৩

গদ্যরচনাঃ ১৯৭৫ থেকে কবিতা, চিত্র ভাস্কর্য বিষয়ে অজস্র গদ্য লিখেছেন।

অনুবাদকর্মঃ ১৯৭৫ থেকেই প্রচুর অনুবাদ করেছেন। আলিয়ঁস ফ্রাঁসে (ফরাসি), ম্যাক্সমুলার ভবন

                   (জার্মান) এবং সাহিত্য অকাদেমি আয়োজিত অনুবাদ ওয়ার্কশপে আমন্ত্রিত হয়ে    

                   অনুবাদ-কর্মে অংশগ্রহণ করেছেন।

সম্পাদনাঃকবিতাপাক্ষিক’-এর অন্যতম সম্পাদক।

                 চারবছরকবিতাপাক্ষিক’-এর প্রধান সম্পাদক।

                 ‘রৌরব’ (১৯৭৫-২০০৪), ‘উতল হাওয়া’, ‘সৃষ্টিকোণ’, ‘নিনিএবং অন্য কিছু পত্রিকার   

                 সম্পাদন-সহযোগী।

ছদ্মনামঃ অর্জুন মিশ্র। এবং আরো কিছু...

পুরস্কার/সম্মাননাঃ ১৯৯৮ অনন্য রায় পুরস্কার। ২০০৬ অশোক মহান্তী পুরস্কার। ২০০৭মনীষাপত্রিকার 

                            সম্মাননা। ২০০৮ সাল থেকে পাঁচ বছর সাহিত্য অকাদেমি (নিউ দিল্লি)- 

                            অ্যাডভাইসরি বোর্ডে কোর-কমিটির সদস্য কবি-ব্যক্তিত্ব। ২০১৩ বীরেন্দ্র পুরস্কার।   

                            আরো কিছু।



জাহাজ

 

কোথা দিয়ে কোথায় কী হয়ে গেল, জাহাজ চুরমার

সেই প্রচণ্ড ঝড়ে একটা কাঠের টুকরোর উপরে ভাসতে- ভাসতে

সিন্ধবাদ এসে পৌঁছল এক নতুন দেশে,সমুদ্রের তীরে

যখন সে পৌঁছেছিল তখন তার বিন্দুমাত্র জ্ঞান ছিল না

 

এক ধীবর তাকে তুলে নিয়ে চমৎকার গাছগাছালি

দিয়ে ঘেরা বিশাল পরিসর বাড়ির মধ্যে নিয়ে এল 

সেখানে সে এবং তার স্ত্রী পুত্র-কন্যারা যথেষ্ট

সেবা পরিষেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলল,সাত দিন

 

পরে যখন তার জ্ঞান ফিরলো, তখন সে বুঝতে পারলো

তারিখ অনুযায়ী সে প্রায় একমাস সমুদ্রের জলের বুকে

ভেসে বেড়িয়েছে, দুর্বল দেহ ক্রমে সবল হল, এইবার তাকে

বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে, জিজ্ঞাসা 'রে সে

 

বুঝতে পারলো এই দেশটির নাম সে বহুবার শুনেছে

কিন্তু এর আগে কখনো আসেনি, এখানকার রাজা

খুব খামখেয়ালি এবং নিষ্ঠুর, তবু সেও নিজে সিন্ধবাদ

ভুবনবিখ্যাত অভিযাত্রী, এবং একইসঙ্গে সে সওদাগর

 

তার সওদাগরি কেতা অনুযায়ী সে সেইদেশের রাজার

সঙ্গে দেখা করলো,রাজা তাকে প্রচুর উপঢৌকন দিয়ে

সম্মান জানালো, এবং তাকে অনুরোধ জানালো সে-দেশে

এবং পাশের দেশগুলোতে তার সওদাগরি ক্যারিশমা

 

দেখাতে, তারপর খুব পুরোনো একটা গান গাইতে- গাইতে

 নিজের দেশে ফিরলো, সঙ্গে তার কত যে ধনরত্ন আর

প্রত্ন বস্তুসামগ্রী, নিজের সমস্ত প্রাপ্তিসে উপুড় করে

দিল রাজাধিরাজ হারুনের সম্মুখে, হারুন তখন কাঁদছেন              

 


[অসুস্থ অবস্থায় ২৮ এপ্রিল ২০২০ কোঠারী মেডিকেল সেন্টারে থাকাকালীন আমন্ত্রিত কবিতাটি (নাম : 'জাহাজ') লেখেন কবি নাসের হোসেন। পরবর্তীতে 'দেশ' পত্রিকা অনলাইন সংস্করণে কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল।]