আশিস গোপাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
আশিস গোপাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

আশিস গোপাল-এর কবিতা

হারানো কথা

পথের ভুলে আবার এসেছি ফিরে মুসাফির হয়ে 

নির্জন সে সেতু আজও একাকী তবে।

নদী বয়ে চলে আজন্মের ব্যথা বুকে নিয়ে

শরতে মেঘ একে একে হারালে 

নক্ষত্র এঁকে যায় চোখে:

তখন নামে হেমন্তের সন্ধ্যা

শীতের নির্জনতা।

একে একে সব মানুষ ফিরে গেলে 

একা হয়ে পড়ে থাকে সেতু।

একে একে সব হারিয়ে যায়,

হারিয়ে যায় সে চায়ের দোকান,

শীতের আড্ডা, ' দোকানেরভিড়

হারিয়ে যায় অতীতের ব্যথা।

 

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আশিস গোপাল-এর কবিতা

চি রিও

মৃত্যু-বেদনা-ভয়, ছায়া ফেলেছিল বুকের উপর 
বলে যাওনি তবে যাওয়ার আগে একবারও।

কোন পুরাতন যুগ আঁধার—
বয়ে চলে ইন-ইয়াং এর সাথে?
শিশু হরিণের মত আবেগ:
সারাটা বেলা শস্য ক্ষেতে ফড়িংয়ের দৌড়
নাম না জানা কোনো অদূর ভবিষ্যতে অথবা 
অতীতের টানে শংদি রয়ে গেছে ঘরের কোণে।

প্রতিটি নতুন প্রজন্মের কাছে 
অজানা এক পুরোনো প্রজন্ম
ধীরে ধীরে শুকায় কবর;

তুমি একবার দাঁড়াও সেখানে
যেখানে বন্দিহীন এক মেঘ ছায়া ফেলে।
এখনো সময় বাকি, এখনো রাত বাকি, 
এখনো লিং লুনের বাঁশিতে ভরে আছে পূর্ণিমা।
একবার আমার মতো নিঃস্ব হয়ে
দাঁড়াও ওই ফুসাং-এর নীচে।

অন্ধ কোনো অশ্বিনী সমুদ্রে চলে ভেসে;
তবুও তুমি বলে গেলে না যাওয়ার আগে।
আঁধার কালো চুল মেলে
ফুরুসের মতো ঠোঁট নিয়ে 
চলে গেলে শংদির কাছে?

 

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

আশিস গোপাল-এর কবিতা

স্বপ্ন— কিছু অংশ 

মরু জমা চোখে দেখি বোলতার বাসা
সময় থেমে গেছে কাল রাত্রি থেকে!
ব্যাকুল হৃদয় নিয়ে বসে—
"জন্ম, মৃত্যু" — সে তো প্রকৃতিই জানে।
প্রকৃতি দিয়েছে যা, নিয়েছে: সে তারই দান...

উত্তাল ঢেউয়ে চেপে ফিরে আসে
হারানো এক প্রাণ:
সমুদ্র ক্রমে ফণা তুললে
অশ্ব বাঁধা তরী বয়ে নিয়ে আসে 
এক এক প্রাণ...

নিজেকেই দেখে বারবার 
সে নিজেকেই খোঁজে;
আলো আঁধারে ঘুরে বেড়ায় 
সে নিজেকে না জানে!
বিষাদ আঁধারে হাত বাড়ায় 
কেউ যেন ছুঁয়ে যায়
হাতে দিয়ে যায় জোনাকির দল...

অসম্পূর্ণ জন্মের মাঝে আমি
শুধু তোমাকেই পাই!
প্রত্যেক জন্ম হয়ে উঠে প্রাচীন গ্রন্থমালা;
ঝরা বসন্ত রাগে সমুদ্র স্রোত আঁকা চোখে
ক্লান্ত পাতা ঝরে যায় স্মৃতির আড়ালে।

 

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

আশিস গোপাল-এর কবিতা

এক ঈশ্বর

পর্ব: ২

আঁধার শুনেছি নির্জন রাতে, স্মৃতির―

চাদরের বুকে আরও স্মৃতি জমে। 

ছায়ায় ধ্বনিত হয় তার ফিরে যাওয়া

ঘুমন্ত কবরের বুকে ঈশ্বরের ছায়া।


দিনের সমস্ত আলো জোনাকি হলে

বন্ধ দরজার ফাঁকে দেখি "ঈশ্বর হারা"!

ঈশ্বর ঘুমিয়ে গিয়েছে হলুদ মাঠেতে

আমার ঈশ্বর তবু ওই বন্ধ ঘরে।

অরফিয়াসের বীণায় যেমন বাঁধা

থাকে তারা; আমার নক্ষত্র হয়েছে

শ্রাবণে হারা। হ্যাপেরিঅনের মতন 

মুখ তুলে থাকে, নিশিপদ্মের গন্ধ

কৃষ্ণের চুলেতে। যত যাই কাছে,

হারিয়ে ফেলি! বিষণ্ণ আঁধার 

সিঁড়িতে থাকে পড়ে। 

রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

এই সংখ্যার কবিঃ কবি আশিস গোপাল

 



কবি আশিস গোপাল

আশিস গোপাল (জন্ম : ১০ মে, ১৯৯৯) একুশ শতকের একের দশকের প্রতিশ্রুতিমান কবি চিত্রশিল্পী। বয়ঃসন্ধি পর্বে আশিসের কবিতা লেখার শুরু। সাহিত্যচর্চার পারিবারিক আবহাওয়া তার কবি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কিছুটা অনুকূল হয়েছে। আশিসের কবিতার সুর রোম্যান্টিক, যেখানে স্মৃতিকাতরতা, প্রেম বিষাদের অবিরল আনাগোনা। তবে বিদেশি ভাষা, বিশ্বসাহিত্য, চিত্রকলা, সঙ্গীত চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ তার কবিতার ভাব ভাষাকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে কবিতার কার্ডপাতার ভেলাএবং প্রথম কাব্যপুস্তিকাবৃষ্টির মাঝে তোর কাঠের চেয়ার’ (২০২২) এছাড়া জিজ্ঞাসা, সন্ধিৎসা সহ নানা ছোট পত্রিকাতেও তার কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। কলকাতার হেয়ার স্কুলের প্রাক্তনী আশিস গোপাল বর্তমানে সংস্কৃত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা সাহিত্যের স্নাতক স্তরের ছাত্র। শখ : গান শোনা এবং বাড়ির বাগানের নিত্য পরিচর্যা। 





রিভি


রিভি এক নদীর নাম।

কয়েকশো মাইল দূরে 

যেখানে কোনো মানুষ নেয়, 

যেখানে পৃথিবীর নিশ্বাস শোনা যায়,

যেখানে রাজ্য নেই:

সেখানেই রাজ্যহীন এক রাজা থাকে

সেখানেই চলে যেতে চাই আমি।


নিঃসঙ্গ নাবিকের মতন সে রাজাও নিঃসঙ্গ

কত সমুদ্র পেরিয়ে গেল

শিরায় তবু উত্তাল ঢেউ রয়ে গেল;

রিভির পাশে যে রাজা আজও আছে

 শুয়ে বেদনার স্বরলিপি লিখে

যা আলো দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি মানুষের কাছে;

জানলো না কেউ! বুঝলো না কেউ!

নক্ষত্রের আলোয় কেবল ব্যথা আলোকিত হয়।



না চাওয়ায় চাওয়া


রিভির বুক দিয়ে হেঁটে গেলে

বিকেলের ক্লান্ত রোদের আলো মেখে,

গন্ধহীন বসন্তে তখনও ব্যথার

বীজ ছড়িয়ে আটলাসের পাখায়।

নেবুলার গায়ে হাজারও স্মৃতির

বীজ রোজারির রসে মাখা:

এক টুকরো আলো এসেছিল কেবল।

নিজেরই অজান্তে কিছু চেয়েছিলাম ভুলে

সে চাওয়ার বুকে আজ মাছি উড়ে!

যে ক্ষত আমি ভুলেছিলাম এতদিন সবুজ চাঁদের আলো স্নিগ্ধ করে



একটা বন


পৃথিবীর সমস্ত মানুষের থেকে দূরে

একটা বন আছে:

কুয়াশার গাঢ় চাদর খুলে শীত

যখন হেঁটে যায় দূরে হলুদ ঘাসেদের ছেড়ে,

বাতাসে তখন বসন্তের গন্ধ ভাসে।

সারাটা বেলা বাতাসের ছোঁয়ায় 

পুকুরের জল কাঁপে, পাতা দোলে,

পাখিদের গানে নতুন পাতা জাগে।


পৃথিবীর সমস্ত ব্যথা পুকুরের

উষ্ণ স্রোতে বাতাসে মিশে যায়।

দুপুরের তির্যক রোদে পাখিরা ক্লান্ত হয়,

ফুলেদের ঠোঁট অবিশ্রান্ত হয়।

তার পর সমস্ত দিনের আলো ছায়া হয়ে যায়,

ঝিঁঝিঁর ডাকে সন্ধ্যা হয়

বাতাসে তখনও পাতা দোল খায়।



কেউ থাকেনি


কেউ থাকেনি,

পড়ন্ত বিকেলে সন্ধ্যার

 আভা লেগে ছিল কেবল,

ঝিমানো তারাদের সাথে

কেউ থাকেনি।

যারা বলেছিল,

পৃথিবী গোল

তাদের দেখা পাইনি আজও।

যারা বলেছিল:

গভীর সমুদ্র থেকে পলাশের বনে, রক্তে রাঙা রাতেও পাশে থাকবো’;

বলেছিল,

জীবন এক, মৃত্যু অনেক

তারা থাকেনি।

গ্লাস ভরা রাত্রিগুলি ধোঁয়ায় মিশে গেছে

তবুও তারা থাকেনি।



চৈত্রি


চোখ খুলো না

বাইরে এখন বাতাস বইছে,

কাঁচের গুঁড়ো উড়ে চলেছে : 

তাই রক্ত ঝরছে ব্রহ্ম কমলের ঠোঁটে।

অতীতের চোরাবালি গিলে চলেছে

অশ্বত্থ-এর শাখায় ঝোলা পিয়ালীর ব্যথা।

পৃথিবীর বুকে আমি শুয়েছিলাম 

গুলঞ্চের বনে।

একদিন জানালা খুলে দেখি

দূরের এক মন্দিরে বসে এক শালিক :  

নীহারিকায় ভরা চোখে তার অতীতের ছায়া

ভাঙা ডানার মাঝে লেগে আছে 

মাকড়শার জাল,

আর রক্ত ঝরছে,

বুকের পাঁজর ভেঙে, রক্ত ঝরছে!

ওগো চৈত্রি,

প্রতি রাতে নূপুর পায়ে, 

মাথা ভরাও কামিনীতে?



অপেক্ষা


দিগন্তের শেষ খুঁজতে গিয়ে

 হঠাৎ দেখতে পেলাম তাকে

কালো মেঘ জমা চোখে 

আলো মেখেছিল সে:

হেঁটেছিল চাঁদের খোঁজে।

জানার মাঝে নতুন করে জানার মত

পুরনো স্মৃতির গায়ে ব্যথা বাজে। 

ভোরের সাথে সাথে নক্ষত্রেরা হারিয়ে গেলে

বসে থাকি আর এক রাতের খোঁজে।