রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

এই সংখ্যার কবিঃ কবি আশিস গোপাল

 



কবি আশিস গোপাল

আশিস গোপাল (জন্ম : ১০ মে, ১৯৯৯) একুশ শতকের একের দশকের প্রতিশ্রুতিমান কবি চিত্রশিল্পী। বয়ঃসন্ধি পর্বে আশিসের কবিতা লেখার শুরু। সাহিত্যচর্চার পারিবারিক আবহাওয়া তার কবি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কিছুটা অনুকূল হয়েছে। আশিসের কবিতার সুর রোম্যান্টিক, যেখানে স্মৃতিকাতরতা, প্রেম বিষাদের অবিরল আনাগোনা। তবে বিদেশি ভাষা, বিশ্বসাহিত্য, চিত্রকলা, সঙ্গীত চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ তার কবিতার ভাব ভাষাকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে কবিতার কার্ডপাতার ভেলাএবং প্রথম কাব্যপুস্তিকাবৃষ্টির মাঝে তোর কাঠের চেয়ার’ (২০২২) এছাড়া জিজ্ঞাসা, সন্ধিৎসা সহ নানা ছোট পত্রিকাতেও তার কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। কলকাতার হেয়ার স্কুলের প্রাক্তনী আশিস গোপাল বর্তমানে সংস্কৃত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা সাহিত্যের স্নাতক স্তরের ছাত্র। শখ : গান শোনা এবং বাড়ির বাগানের নিত্য পরিচর্যা। 





রিভি


রিভি এক নদীর নাম।

কয়েকশো মাইল দূরে 

যেখানে কোনো মানুষ নেয়, 

যেখানে পৃথিবীর নিশ্বাস শোনা যায়,

যেখানে রাজ্য নেই:

সেখানেই রাজ্যহীন এক রাজা থাকে

সেখানেই চলে যেতে চাই আমি।


নিঃসঙ্গ নাবিকের মতন সে রাজাও নিঃসঙ্গ

কত সমুদ্র পেরিয়ে গেল

শিরায় তবু উত্তাল ঢেউ রয়ে গেল;

রিভির পাশে যে রাজা আজও আছে

 শুয়ে বেদনার স্বরলিপি লিখে

যা আলো দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি মানুষের কাছে;

জানলো না কেউ! বুঝলো না কেউ!

নক্ষত্রের আলোয় কেবল ব্যথা আলোকিত হয়।



না চাওয়ায় চাওয়া


রিভির বুক দিয়ে হেঁটে গেলে

বিকেলের ক্লান্ত রোদের আলো মেখে,

গন্ধহীন বসন্তে তখনও ব্যথার

বীজ ছড়িয়ে আটলাসের পাখায়।

নেবুলার গায়ে হাজারও স্মৃতির

বীজ রোজারির রসে মাখা:

এক টুকরো আলো এসেছিল কেবল।

নিজেরই অজান্তে কিছু চেয়েছিলাম ভুলে

সে চাওয়ার বুকে আজ মাছি উড়ে!

যে ক্ষত আমি ভুলেছিলাম এতদিন সবুজ চাঁদের আলো স্নিগ্ধ করে



একটা বন


পৃথিবীর সমস্ত মানুষের থেকে দূরে

একটা বন আছে:

কুয়াশার গাঢ় চাদর খুলে শীত

যখন হেঁটে যায় দূরে হলুদ ঘাসেদের ছেড়ে,

বাতাসে তখন বসন্তের গন্ধ ভাসে।

সারাটা বেলা বাতাসের ছোঁয়ায় 

পুকুরের জল কাঁপে, পাতা দোলে,

পাখিদের গানে নতুন পাতা জাগে।


পৃথিবীর সমস্ত ব্যথা পুকুরের

উষ্ণ স্রোতে বাতাসে মিশে যায়।

দুপুরের তির্যক রোদে পাখিরা ক্লান্ত হয়,

ফুলেদের ঠোঁট অবিশ্রান্ত হয়।

তার পর সমস্ত দিনের আলো ছায়া হয়ে যায়,

ঝিঁঝিঁর ডাকে সন্ধ্যা হয়

বাতাসে তখনও পাতা দোল খায়।



কেউ থাকেনি


কেউ থাকেনি,

পড়ন্ত বিকেলে সন্ধ্যার

 আভা লেগে ছিল কেবল,

ঝিমানো তারাদের সাথে

কেউ থাকেনি।

যারা বলেছিল,

পৃথিবী গোল

তাদের দেখা পাইনি আজও।

যারা বলেছিল:

গভীর সমুদ্র থেকে পলাশের বনে, রক্তে রাঙা রাতেও পাশে থাকবো’;

বলেছিল,

জীবন এক, মৃত্যু অনেক

তারা থাকেনি।

গ্লাস ভরা রাত্রিগুলি ধোঁয়ায় মিশে গেছে

তবুও তারা থাকেনি।



চৈত্রি


চোখ খুলো না

বাইরে এখন বাতাস বইছে,

কাঁচের গুঁড়ো উড়ে চলেছে : 

তাই রক্ত ঝরছে ব্রহ্ম কমলের ঠোঁটে।

অতীতের চোরাবালি গিলে চলেছে

অশ্বত্থ-এর শাখায় ঝোলা পিয়ালীর ব্যথা।

পৃথিবীর বুকে আমি শুয়েছিলাম 

গুলঞ্চের বনে।

একদিন জানালা খুলে দেখি

দূরের এক মন্দিরে বসে এক শালিক :  

নীহারিকায় ভরা চোখে তার অতীতের ছায়া

ভাঙা ডানার মাঝে লেগে আছে 

মাকড়শার জাল,

আর রক্ত ঝরছে,

বুকের পাঁজর ভেঙে, রক্ত ঝরছে!

ওগো চৈত্রি,

প্রতি রাতে নূপুর পায়ে, 

মাথা ভরাও কামিনীতে?



অপেক্ষা


দিগন্তের শেষ খুঁজতে গিয়ে

 হঠাৎ দেখতে পেলাম তাকে

কালো মেঘ জমা চোখে 

আলো মেখেছিল সে:

হেঁটেছিল চাঁদের খোঁজে।

জানার মাঝে নতুন করে জানার মত

পুরনো স্মৃতির গায়ে ব্যথা বাজে। 

ভোরের সাথে সাথে নক্ষত্রেরা হারিয়ে গেলে

বসে থাকি আর এক রাতের খোঁজে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন