মারুফ আহমেদ নয়ন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মারুফ আহমেদ নয়ন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর কবিতা

পাহাড়ি নদীর গুহা

তোমার কথা ভুলে অরণ্য পথে দৌড়াচ্ছি। ঝড় বৃষ্টির দুপুর, বজ্রপাতের ঝলকানি। নিভে গেছে সূর্য কিরণ। ভূগর্ভস্থ মেঘদল উড়ছে আকাশে। এমন নিরালোকে ভীতসন্তস্ত্র হয়ে পড়েছি। ঢুকে পড়েছিলাম, পাহাড়ি নদীর গুহায়। সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি ঘরে। থরথর কাঁপছি। যেন দেখে ফেলেছি হিংস্র প্রাণীর চোয়াল।

মুছে ফেলেছি স্মৃতির আদ্যক্ষর। মঙ্গোলিয়ার যাযাবর বন্ধুদের সাথে পোষ মানানো শিখেছিলাম, সোনালী ডানার ঈগল। এরা আমাকে ধরে এনে দেবে শিকার। পাথরের উনুনে চাপাব, খরগোশের মাংস। আহার শেষে ঘুমিয়ে পড়বো, আলতাই পর্বতের পাদদেশে। এক ঘুমে কাটিয়ে দেবো, শত-সহস্র কাল। তুমি এসে ঘুম থেকে জাগাবে! কপালে রাখবে গাঢ় চুম্বন।

আমাকে টেনে নিয়ে যাবে হাং সাং ডুতে। পরিচয় করিয়ে দেবে অন্ধ সরীসৃপ, মাছ ও চিংড়ির সঙ্গে। বলবে, অন্ধকার মেখে নিভে গেছে দৃষ্টির প্রদীপ। ক্ষয়ে গেছে ত্বকের লাবণ্য। জন্মান্ধ বালক আমি, না বুঝি তোমার কূটচাল। নির্বোধের মতো বলি, যদি হই পাথুরে ভূমির চক্ষু, তুমি হয়ো তৈদুছড়া ঝর্ণাধারা। আমাকে করিও শীতলতম রাত।

 

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর কবিতা

তোমাকে পেয়ে গেলে

ঈশ্বর প্রদত্ত বরে, যদি পেয়ে যাই তোমাকে। কেমন হতো সবকিছু!  তুমি বহুমূল্যের শাড়ী, গহনা ও গোলাপের মুকুট পড়ে, হেঁটে যেতে সম্রাজ্ঞী, বিবাহ প্রাঙ্গণে। তোমাকে ঘিরে হাসি-উচ্ছ্বাস। উঠোনে পায়রার বাক-বাকুম। প্রাচীন চাঁদের পৃষ্ঠা হতে পাঠ করা হচ্ছে, শুভময় বাক্য, কবুল। তুমি উচ্চারণ করছো। যেন একটা দোলনচাঁপার বন মৌনতায় নত করেছে মাথা।

আর থিবস নগরের সেই দ্বাররক্ষী স্ফিংক্স খেয়ে ফেলেছে নিজেকে। হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে সমস্ত জটিল ধাঁধার গোলক। ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে সব। তুমি কি এমন ধাঁধা, সমাধান জানি না। শুধু ভ্রম প্রিয় সেই খরগোশ ছানার মতো আলোর বল দেখলে ছুটে যাই। ঘাস, লতা-পাতা আহার করি। প্রার্থনা করি, বাঁচিয়ে রাখুন, অজগরের চেরা জিহ্বা থেকে।

মূলত তা হলো মৃত্যুগুঞ্জন। মহাপ্লাবনের দিন শেষে, শরীর থেকে খসে পড়বে মাংস। পোকামাকড় স্পর্শ করবে না। আমি তোমার ভয়ে একটা ত্রিভুজাকৃতির পাথরের ভেতর লুকিয়ে পড়বো। আমাকে হত্যা করো না। জেনো, আমার ঈশ্বর তোমাকে ক্ষমা করবেন না। 

 

রবিবার, ১ মে, ২০২২

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর কবিতা

 

অগ্নিপাখির জীবনী

তোমার একাকিত্ব সহ্য হয় না। একটা কবুতরের মতো উড়ে এসে বসি ছায়ায়। গুপ্তচরের মতো হাওয়ার তরঙ্গে প্রেরণ করি, মঙ্গলময় বার্তা, সুখী হও। অথচ তোমার সুখ ভেঙ্গে পড়ে। যখন দেখেছো বিরহী আয়নায় নিজের মুখশ্রী, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়েছে। অদৃষ্টের দিকে তাকিয়ে থাকো তুমি, আমার প্রার্থনার সরল ভঙ্গিমা।

আমি অরণ্যে, পেখম তোলা একটা ময়ূরীর নৃত্যের ছন্দে হারিয়ে গিয়েছি। শুকনো পাতাদের মর্মর ধ্বনি পেরিয়ে গেছি। এক মায়াবিনী আমাকে প্রেমের নামে পাষাণ পাথর করে রেখেছে। সমস্ত জাগতিক অনুভবগুলো হয়ে গেছে শূন্য। এমন বিয়োগচিহ্নের মতো জীবন নিয়ে তোমাকে যায় না ভালবাসা। 

কাছে আসি। মনে হয়, যোজন যোজন দূরে চলে গিয়েছি। আগুনের উপর উড়তে থাকা অগ্নিপাখির মতো জীবন কাটাই। জানি, তোমাকে পাওয়া দুঃসাধ্য সাধনা। মেষপালকের ভাগ্যে জোটে না, দৌলতের পর্বত। বুঝি, এই স্বতন্ত্র খেলায়, তোমাকে হারিয়ে ফেলছি ক্রমশ।

শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর কবিতা


স্বপ্নের ভেতর রাজহাঁস

তোমাকে বর্ণনা করতে পারেনি আমার কবিতা। তুমি সৌন্দর্যের দেবীআমার অন্ধত্ব দূর করো।তোমাকে ভালবাসার শর্তে দু-কাঁধে পাহাড় বহন করছি।সন্দেহ পোষণ করো নাশরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়েছে মরণ ব্যাধি।দাঁড়িয়ে রয়েছিমনে হচ্ছে ঘুমিয়ে ছিলাম গুহায়তুমি কি পাঠিয়েছিলে ঝুড়ি ভরা ফলমূলকৃতজ্ঞতা জেনো।

 

আমার সমস্ত শব্দ জুড়ে তুমি।যেনো হন্তারকের স্মৃতির ভেতরে হেঁটে বেড়াচ্ছে একটা রাজহংসীএইসব গানের পাশে সন্ধ্যা নেমে এলে তোমার শরীরের সমান দূরত্বে পাখিদের বিরহ সংগীত  ছিলাম মেষের রাখালকেনো পড়ালে স্বর্ণের মুকুট।

 

এখন ভূতগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্নহত্যা করতে ইচ্ছে হয়।ধুতুরার বীজ  ফুলে কেনো তোমাকে চাই। গাছের ছাল-বাকল  পশু চামড়ায় লিখে রাখিআমার মৃত্যুর জন্যে একমাত্র তুমি দায়ীপ্রিয় বিষের খঞ্জর।

শনিবার, ১ মে, ২০২১

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর কবিতা


 বাতাসে শঙ্খের নিনাদ

তুমি নেই। দিঘিতে রাজহংসীরা সাঁতার কাটছে। মাথার উপর দুপুরের খাঁ খাঁ রোদ, বাতাসে শঙ্খের নিনাদ। তোমার কাছে যাবো, অথচ প্রতিটি প্রতিশ্রুতি মিথ্যা হয়ে গেছে। পথ ভরে গেছে ভাঁট ফুলে।

আমি পেরুতে গিয়ে কাঁটার ঝোপে পা দিয়ে ফেলেছি। তারপর থেকে শুয়ে আছি। আলস্যে, উঠে দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে না, ঢলে পড়ছি ছত্রিশ হাজার ফুট নিচে, সমুদ্রের তলপেটে। তুমি কি আমাকে ভালবাসবে ! দেখো, মস্তিষ্ক থেকে জোনাকি পোকারা বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। ফলে আমাকে একটা টিয়া পাখির সন্ধান করতে হবে, তাকে শিখাতে হবে বুলি। জানোই তো, একমাত্র পাখিরা জানে, কোন লতা-পাতায়, ফুলে-ফলে লুকানো আছে, হাজার বছর আয়ু। 

সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর কবিতা


তুমি প্রসন্ন হও

 

একটা মানুষ জন্ম পেয়ে তোমাকে ভালবাসলাম। তুমি আমার থেকে শত শত আলোকবর্ষ দূরে। তোমার কন্ঠস্বর চার্চের ঘন্টার মতো, দুলতে থাকে। একটা লাশবাহী এম্বুলেন্স তোমার দিকে যেতে গিয়ে শূন্যে মিলিয়ে যায়। তুমি স্বীকার  করো।

 

উপহার স্বরূপ একটা গোলাপের পাহাড় মাথায় করে নিয়ে আসছি। তোমাকে নিয়ে পাখিদের অভিযোগ, ফুলেদের তীব্র অভিমান, এবার তুমি অভিশপ্ত হবে। একটা সিংহ কেশর ফুলিয়ে হেঁটে আসছে আমার দিকে। তুমি তাকে নিষেধ করো, তার অন্ধ ছানারা পথ ভুলে যাচ্ছে।

 

আমি যেন মুহূর্তে তাদের খাদ্য হতে পারি। তুমি আমাকে কথা দাও, এই পৃথিবীর আশ্চর্য খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে তুমি কখনো আমাকে ভক্ষণ করতে চাইবে না।





 

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

মারুফ আহমেদ নয়ন


 

গোপন গানের এস্রাজ

 

আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে পুড়ে গেলো শরীর। কাফনে মুড়িয়ে দাও আমার দেহখানি, আমি যাত্রা করি শূন্যে স্কারলেট ম্যাকাও পাখিটির 

সেই জাদুকরি 

গানে আমাকে পুনরায় মুগ্ধ করো। যেন তোমার নামে উপকূলে নামছে সন্ধ্যা, আমি লাশকাটা ঘরে ডোমদের সাথে মৃতদেহ বিষয়ক 

আলোচনা করছি। 

মাথার উপরে মাছিরা উড়ছে।

 

স্মৃতিতে যতদূরে যাচ্ছি, কেবল তোমার নামে ঝরছে পাতারা, তোমার বিরহে ফুলেরাও কেমন মলিন, ঝুঁকে আছে মাটির দিকে। তোমাকে 

সবকিছু উজাড় করে 

ভালবাসতে গিয়ে দেখি, ক্রমশ ফতুর হয়ে যাচ্ছি। হাত বদলে তুমি অপরের হয়ে উঠছো, তোমার রূপে ফেটে পড়ছে হীরের খনি।

 

আমি পর্বতের ভাষা অনুবাদ করতে গিয়ে, প্রাণীদের ভাষা বুঝতে শিখিনি। পুড়ে যাওয়া বন্দর, আর ধ্বংস স্তুপের কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী

নিয়ে কতদূরে যাচ্ছি। 

তোমার ঘরের অন্ধকার বাচ্চাকে স্তন্যপানের মতো গোপনীয়তা। তুমি কি আমার হারিয়ে ফেলা স্মৃতি, গোপন গানের এস্রাজ।