বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

সম্পূর্ণ সূচি (বর্ষ ১ ।। সংখ্যা ৬) [এপ্রিল সংখ্যা]


 

মলয় রায়চৌধুরী-র কবিতা



ব্লাড লিরিক

অবন্তিকা, তোর খোঁজে মাঝরাতে বাড়ি সার্চ হল
এর মতো ওর মতো তার মতো কারো মতো নয়
যেন এমন যেন অমন যেন তেমন নয়
.
কী করেছি কবিতার জন্য আগ্নেয়গিরিতে নেমে ?
একি একি ! কী বেরোচ্ছে বাড়ি সার্চ করে
কবিতায় ? বাবার আলমারি ভেঙে ব্রোমাইড সেপিয়া খুকিরা
কবিতায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে মায়ের তোরঙ্গে ছেঁড়ে বিয়ের সুগন্ধি বেনারসি
কবিতায় সিজার লিস্টে শ্বাস নথি করা আছে
কবিতায় কী বেরোলো ? কী বেরোলো ? দেখান দেখান
কবিতায় ছি ছি ছি ছি, যুবতীর আধচাটা যুবা ! মরো তুমি মরো
কবিতায় সমুদ্রের নীলগোছা ঢেউ চিরে হাড়মাস চেবাচ্ছে হাঙর
কবিতায় পাকানো ক্ষুদ্রান্ত্র খুলে এবি নেগেটিভ সূর্য
কবিতায় অস্হিরতা ধরে রাখা পদচিহ্ণে দমবন্ধ গতি
কবিতায় লকআপে পেচ্ছাপে ভাসছে কচি বেশ্যাদেখা আলো
কবিতায় বোলতার কাঁটা পায়ে সরিষা ফুলের বীর্যরেণু
কবিতায় নুনে সাদা ফাটা মাঠে মেটেল ল্যাঙোটে ভুখা চাষি
কবিতায় লাশভূক শকুনের পচারক্ত কিংখাবি গলার পালকে
কবিতায় কুঁদুলে গুমোট ভিড়ে চটা-ওঠা ভ্যাপসা শতক
কবিতায় হাড়িকাঠে ধী-সত্তার কালো কালো মড়া চিৎকার
কবিতায় মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরলে না কেন
কবিতায় মুখে আগুন মুখে আগুন মুখে আগুন হোক
কবিতায় মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরো
কবিতায় এর মতো ওর মতো তার মতো কারো মতো নয়
কবিতায় যেন এমন যেন অমন যেন তেমন নয়
কবিতায় অবন্তিকা, তোর খোঁজে সার্চ হল, তোকে কই নিয়ে গেল না তো !

কাজল সেন-এর কবিতা

সুবর্ণরেখা

 

সুবর্ণরেখা নদীর সান্নিধ্যে আছে যারা

তারা হয়তো জানে অথবা জানে না

একদিন নদীর স্রোতে বয়ে যেত সোনা

এখনও কি যায় হয়তো বা যায়

আদার ব্যাপারী আমি

জাহাজের রাখি না কোনো খোঁজ

যখন প্লাবন আসে জলীয় অবয়বে

দেখি শুধু আমার ব্যক্তিগত মুখ

 

নদীর চট্টানে বসে কখনও দেখেছি আমি

আলো জলের কত আজনবি ছায়াছবি

হয়তো দেখেছে আমার উর্ধতন পিতৃপুরুষেরাও 

তারপর একদিন চলে গেছে তারা

নদী থেকে গেছে নদী থেকে যায়

স্মৃতিরা মলিন হয় জরাজীর্ণ হয়

তবুও কত যে স্মৃতি বাঁধা পড়ে থাকে

স্রোতের গভীরে আর ঘাটের কিনারায়

 

যে শহরে জন্ম আমার

তার পাশে বয়ে গেছে সুবর্ণরেখা

একদিন তার স্রোতে বয়ে যেত সোনা

আদার ব্যাপারী আমি 

সোনা খুঁজতে যাইনি কোনোদিন

নদীর জলের বুকে শুধু খুঁজে ফিরি 

আমার ব্যক্তিগত দিন  


 

রাজীব সিংহ-র কবিতা

 

বনলতা প্রিয়তমাসু


দূরে কি মেসবাড়ি,চিলেকোঠার ভাড়াটে কামরা, ক্ষয়াটে শহর!


ছাদের বিষণ্ণ আলসেয় অলস কাকেদের ওড়াউড়ি... নিচে দুপুরের রোদে

কিলবিল ট্রামপথ; এবড়ো- খেবড়ো পিচ, ঝোলা কাঁধে বইপাড়ামুখী দ্রুতগামী পড়ুয়ার দল...

এই অলস রোদভরা ছাদে পাইস-রেস্তোরাঁর ভাত নেভানো চুরুট আর কবিতার খাতা--

সকালে হঠাৎ মুখোমুখি মেয়েটির বোনের। আত্মজার হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছে... অবাক দুই চোখে

নাটোরের সেইসব পাখিদের নীড়


এক গন্তব্যে বেরোলেও সব পাখি শেষ পর্যন্ত ঘরে ফেরে না

কুয়াশার ঘন আড়ালে স্থির হয়ে যায় কোনও কোনও নদী

অনিশ্চিত জীবিকা যন্ত্রণায় কেউ কেউ ঘোরে শহর শহর

ভাড়াটে ঘরের কার্নিশে ম্লান ছায়া মরা জ্যোৎস্নার


অথচ মর্গের দম চাপা ভ্যাপসা গন্ধ কাঠের ট্রেতে শুইয়ে রাখে অসুখী দাম্পত্য

সারাদিন সোনালি আকাশে চক্রাকারে ঘোরে নির্বিকার চিল

ধূসর অ্যালবামে ক্রমশ স্পষ্টতর হয় কলোনির ভাঙা চাঁদ

এই ঘুমে ভাড়াটে ঘরের ভেতর হাওয়া আরো ঘন হয়ে এলে

বিপন্ন বিস্ময়ে বাকি থেকে যায় কিছু লেন-দেন

জীবনের নাগরিক সমুদ্র সফেন


সেই ছায়াপিণ্ড একা জেগে থাকেন রাত থেকে ভোর আপন মুদ্রাদোষই কবিকে ছায়াপিন্ডের থেকে আলাদা করে দেয় নিরন্তর

অর্থ চাই কীর্তি চাই স্বচ্ছলতা চাই... এই বোধ এতদিনে মাথার ভেতর জন্ম নেয় সুপরামর্শ হয়ে; ধানসিড়ি নদী পেরিয়ে

কাশবন নতুন শহর!

 

ভাড়াটে কামরা নিঃসঙ্গ অন্ধকারে সহসা ডুবে যায়...

সেদিনের বনলতা সেন হাতে তুলে নেয় ডায়েরির পাতা, ল্যাপটপ

তার ফোন বেজে যায়... ঘনঘন... মিসড কল...

কে ডাকে আট বছর পর এত রাতে, বনলতা সহসা চঞ্চল

মোবাইলের উজ্জল স্ক্রিনে ফুটে ওঠে দুইটি দগ্ধ লাইন

' জীবনানন্দ কলিং'--- ফেব্রুয়ারির মরা জ্যোৎস্নায়

সহসা ঝলসে ওঠে অক্টোবরে রক্তাক্ত ট্রামের লাইন

 


 


 


স্বপন রায়-এর কবিতা

 

বাড়ি          

 

বাড়ি এখন

বাড়ি তখনো একটাই

দুটো হলে দুরকম দুঃখও হতো

#

একদিন সুখ বড় হবে

এই বোল

এই আশা মুন্ডাদের গ্রাম পেরিয়ে

                       বাড়ি টাড়ি পেরিয়ে

                                        জলে

জলের কোন রঙ নেই

তবু জল-রং

বাড়ির অবশ্য ধরা-চাঁদ আছে

বিছানায় কাজ

সূঁচ থেকে নেয়া ফোঁটা ফোঁটা

                          মৃদঙ্গ 

ধা-ধা বাঁয়া

#

বাড়ি আর আলো

টুকটুকি থাকলেই নেভেনা