বন্ধন পাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বন্ধন পাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বন্ধন পাল-এর কবিতা

অধোবদনের দেহে

সব যুদ্ধ জয় করা যায় না, নির্বোধ!
দেখিস না ঊর্মিমালা তটে এসে নিষ্ফল আক্রোশে
ফিরে যায় অহর্নিশ বিপ্লবী সলিলে;

এমন সমুদ্রজলে স্নান শেষে তটে এঁকে যাওয়া
প্রতিটি পদচিহ্নে গভীর অন্তর্দাহ,জ্বলে ওঠা জ্বালা—
অধোবদনের দেহে জমে থাকা শর্তহীন আত্মসমর্পণ,
প্রতিটি ভুলের নীচে গাঢ় লাল কালিদাগ দিয়ে
প্রবল অনুশাসন, রক্তচক্ষু চলেছে দেখিয়ে।

চোখের নীচে বয়স জমে কুঁচকে দিয়েছে চর্মের ঋজুতা
পান ক'রে লাবণ্য নির্যাস; সমুত্থিত মুখ্য রূপান্তরে—
পণ্ডিচেরির মাটিতে অবশেষে আশ্রম নির্মাণ করলেন
বোমা মামলায় মূল অভিযুক্ত বিপ্লবী শ্রী অরবিন্দ ঘোষ!

চোখের বিশুদ্ধ দৃষ্টি দিয়ে দ্যাখ,বুদ্ধু কোথাকার!
কোথাকার জল গিয়ে গড়িয়ে পড়ছে কোন স্থানে,
জলের বিভিন্ন রং— এককাল গিয়ে ত্রিকালের উপকূলে
বহু রূপে মিশে অতিক্রম করে গেছে ব্যতিক্রমী বিপত্তিকে।

তবুও তো নির্বুদ্ধিতা নিজের‌ই অনতিক্রম্য বর্ষীয়ান অনড় পর্বত,
যেন জেগে ওঠে মস্তিষ্কের কোষ থেকে কোষান্তরে,
সকল ত্রুটির মধ্যে একা বেঁচে থাকার স্পৃহায়
বন্ধ হয়ে আসে সীমাহীন উদ্যম ও উন্মাদনার অন্বয়।

 

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

বন্ধন পাল-এর কবিতা


জালের ধর্ম

সে-দূর সুদূর‌ই থাকে, প্রেমের বোধের নিষ্ঠা ভাবায় নিকট,
আতস কাচের ধর্ম নীচকে ওপরে তুলে চোখকে দেখানো;
ধর্মান্ধ স্বভাব, কিন্তু কেন্দ্রিত সূর্যরশ্মিতে পোড়ায় অধীর
নীচস্থ মনকে গুণগত কার্যক্রমে!
নিকটে উত্থিত-রূপ নিষ্ঠার ধর্মকে বোধে বাঁধে।

যার কোন‌ও স্থান আজ নির্ধারিত নয়
'দূরে-কাছে' শব্দগুলি তার কাছে চির-অবান্তর—
দু'টি নিষ্ক্রিয় মৌলের যোজ্যতাবিহীন সম্পর্কের
আশা-প্রত্যাশা হারানো মৃতবৎ পাশাপাশি থাকা;
প্রাপ্তবয়স্ক হাসির গোপন শব্দের ভারে কেঁপে ওঠে ঠোঁট।

বিভ্রান্তিতে বেড়ে ওঠা বিচিত্র বিলাপে
ভাসছে জীবন যেন দিগ্‌ভ্রান্ত মাছ-ধরা ডিঙি;
সমুদ্রের বুক থেকে জাল টানে ব্যতিব্যস্ত জেলে
তটে জড়ো করা জালে ছটফট করে মরে মাছ
বাঁচা ও মরার মাঝে দুর্ভাগ্যের দূরত্বকে টেনে তোলে জাল।


 

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

বন্ধন পাল-এর কবিতা

আত্মস্থ ভালবাসা

...চিনতাম,
        ভুলতে চেয়েছি— তাই স্বীকার করিনি এতদিন,
        তা বলে কি ভুলের খনিতে
        স্তরীভূত কয়লাকে আগুন বাঁচিয়ে থাকা শীতল কঠিন
        নিরীহ জ্বালানি করে রেখে দেব চিরসমাধিতে?

... রাখতাম,
        না-পেরে আগুনরঙা তোমার চোখের চাহনিকে
        অগ্রাহ্য করতে,আর সেই
        বিপদ সংকেত দেখে মুখ ফিরিয়ে মাটির দিকে
        দৃষ্টিক্ষেপ মহাপাপ; ভালো সব বলে দেওয়াতেই।

...বলতাম,
        তবে-যে সূর্যের অগ্নি দূর থেকে ঝরিয়ে উত্তাপ
        কাছের শশী-শরীর ছুঁয়ে
        নরম স্নেহ মাখানো স্নিগ্ধস্নানে সমাধিকে ধুয়ে
        দেয় দেখে,কয়লায় ঘন হয়ে থাকি চুপচাপ।

অনন্ত প্রেমের জন্যে কে আর বেঁচে থেকেছে আশায় আশায়
কোথাও পরিতৃপ্তিতে পুড়ে গেছে কয়লার রং—
ছাইরঙা অভিজ্ঞতা অনাদ্যন্ত ঈশ্বর স্বয়ং
অধরা অতল,তবু অন্তস্থ সন্ধান আত্মস্থ ভালবাসায়।

 

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বন্ধন পাল-এর কবিতা

ভয় ও ভয়ঙ্কর

শীতের দুপুরে বসে রোদের উত্তাপে পিঠ দিয়ে
একটু যেন আরাম,স্বস্তি;
উত্তাপেও চোরা-ভয় থাকে? আবেশের দুর্বলতা
ঘনালে ভয়ার্ত বুকে হরিণ ছটফটিয়ে ওঠে;
দাবানলের ভয়, কিংবা খাদ্য-ঘাসের অনটন,
বাইরে উত্তাপ ও ভিতরে উদরাগ্নি— যুগপৎ।

আমাদের ঘর আছে আশ্রয়ের ছাদটুকু নেই
শরীরে কৌলিন্য আছে,আত্মদর্শী আবরণ নেই
চিৎকারে আছে তীক্ষ্ণতা, নেই বাক‌্যবাহী সম্মোহন
আছে ক্রোধাগ্নির শিখা, শুদ্ধিতপ্ত স্বর্ণচিত্ত নেই।

মানুষ হতে চেয়েও আমরা হরিণ হয়ে যাই...

অমন হরিণ দেখে বাঘ হয়ে জেগে ওঠে ঘুমোনো পশুরা
গলার হারে ঝোলানো বাঘনখ বুকময় ঘষ্‌টাতে থাকে।
ঘরহীন অসহায় ছাদহীন আশ্রয়ে চেষ্টা করে বাঁচতে
দেহের কৌলিন্য ভুলে বহিরঙ্গের পোষাকে নির্ভরতা চায়,
তীব্র হুঙ্কার দিয়ে হিংস্র শিকারী করে ফেলে সম্মোহিত
ক্রোধাগ্নি জ্বলার আগে সম্ভ্রম হারানো মনে ঝড়ের আভাস।

গভীর অরণ্যমনে মানুষ কুড়িয়ে পায় স্বগোত্রীয় হাড়...

 

শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

বন্ধন পাল-এর কবিতা

শিস-সঙ্কেত

এখন আর আমি সর্বত্র সভায় যাই না।
মুখ নয়, বুকের ভেতরে যতটুকু টান বুঝি—
বুঝি, যে মনন জ্ঞান সহমরণে যাবে আমার,
তাদের আহ্বানে সাড়া দিই।
দোয়েলের শিস দিয়ে ভোর ডাকে পাঁচিলের
                                                 ওই পাশ থেকে,
পা-টিপে এগিয়ে যাই— ভাবতে ভাবতে
সে-ডাকে পাঠানো যে-সঙ্কেত 
ঠিক ক'পা গেলে পাঁচিলের ধারে তার দেখা 
পেতে পারি, গণনায় কাল্পনিক পদক্ষেপ মাপি।

এতদিন পথের যে ধুলোবালি মেখে গেছি চলে
অক্লেশে সে সব ফেলে যাব রাস্তার ওপরে,
কলুষিত করে যাওয়া তমো-র বর্জ্যকে
তমসায় রেখে যেতে হয়।
দোয়েল তো ডেকে চলে বুকের খাঁচারও কারাগারে 
শুধুই ভোরবেলা যখন স্তব্ধতায় শ্বাস ও নিঃশ্বাসে 
সে শিসের প্রতিধ্বনি হয়—
তখন জাগর দিন অর্থহীন ধোঁয়াশার ঘুমন্ত শরীরে
নাম লেখে ভৈরবীর বন্দিশ শুনিয়ে।

 

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩

বন্ধন পাল-এর কবিতা

বিস্মৃতি

লেখা লেখা খেলা
খেলেছি দীর্ঘসময়, সেই স্থানে আবার যাবার 
পথ ভুলে গেছি ;
স্মরণে নেই অতীত পদক্ষেপের শব্দ 
এখন বৃষ্টি শুধু— প্রত্যাশার কূলভাঙা বাড়াবাড়ি বারি
প্লাবনে প্লাবনে মুছে দিয়ে যায় ফেলে আসা দাগ।

ফুল-সুবাসে মাতানো হাওয়া,
রঙে ভাসানো আকাশ,মাটির ধূসর গভীরতা
কলমের কালি হয়ে খাতার পাতায় হেঁটে যেত 
এইটুকু শুধু মনে আছে, ভুলে গেছি সে পথের দিশা।

দিনের আকাশে কত চেষ্টা করি, তারা খুঁজে দেখি,
দৃষ্টির ব্যর্থতা— সে বন্দি হয়ে গেছে রোদের গরাদে;
বন্ধ চোখে অন্ধকারে বিন্দু বিন্দু তারার প্রকাশে
কবিতার চোখ যেন ঘুম ভেঙে জাগে।
অবাধ উচ্ছ্বাসে তাকে ছোঁব বলে চোখ খুলতেই
আলোর সাম্রাজ্যে দৃষ্টি অন্ধ হয়ে যায়!

সে পথ হারিয়ে যায় তখনই
অগম্য প্রান্তর শেষে অচেনার অরণ্যের দিকে।

 

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

বন্ধন পাল-এর কবিতা

অসাধারণের মুখ


আনন্দের দিনগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে যেন দীর্ঘদেহী 

                                                   বাতিস্তম্ভ  হয়ে,

রাত হলে নিজেদের আলো দিয়ে পরিচয় দেয়

সে আলোতে নামহীন গোত্রহীন নিজস্ব ভালোর স্মৃতিটুকু

ঝলমল করে।

বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব যত

পার্থিব সুকৃতি দিয়ে নক্ষত্র হয়েছে,

নক্ষত্রে উজ্জ্বল শুধু নামজাদা অনন্যের মুখ!

 

অনন্যের‌ও ভালোলাগা আনন্দে আচ্ছন্ন কিছু

                                                 অবকাশ থাকে

উল্লম্ব উল্লাসস্নাত বাতিস্তম্ভে জ্যোতির জঠরে;

ব্যক্তিটি যখন যায় নির্জন রাতের আলোকিত রাস্তা দিয়ে

তখন সে ব্যক্তিগত, মজ্জাগত মঞ্জিমায় দিয়েছে অঞ্জলি

অন্তরের গৃহদেবতাকে,আনমনে হাঁটতে হাঁটতে।

 

সমগ্র বিশ্বের চোখ সুকৃতীর সুকৃতিতে অশেষ মুগ্ধতা

লক্ষ করে, নক্ষত্রের আলোককম্পনে 

নক্ষত্র নিভে গেলেও অগাধ আলোকবর্ষ দূরত্ব পেরিয়ে 

                                                           নেমে আসে

অম্লানের মৌলিকতা

সাধারণ আলো দিয়ে অসাধারণত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।

শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২

বন্ধন পাল-এর কবিতা

শূন্যতা শুধু


সে অন্ধকার তোমার ওপর পড়েনি

সে আলোকণা তোমার ওপর পড়েনি

শুধুই শূন্যতা পড়েছিলবয়ে যাওয়া বাতাসের মতো।

পড়েছিল,পড়ে থাকেনি; বিস্তৃত 'তে 'তে

দীর্ঘদেহী এক স্রোতস্বতী

যেরকম স্রোতে ভেঙে গ্রাস করে ফেলে নির্জীবতা

তেমনই প্রবহমান তুমি।

চিত্রিত নানান রং বুকচাপা শূন্যতার তলদেশ থেকে 

বুদ্বুদে ছড়িয়ে গিয়েছিল,

মন যাকে নিরুদ্দিষ্ট দেখতেই ব্যগ্র হয়েছিল

হৃদয় সে শূন্যতাকে রেখেছিল আগলে দু'হাতে।

 

যেখানে আভাস আছে,আর কোন‌ওকিছু বেঁচে নেই

সেখানে হারিয়ে তবু সব নিয়ন্ত্রণ

বিস্তৃতির বন্যা আছে,আর আছে ভারাক্রান্ত বোধ

বয়ে যাওয়া বাতাসের স্রোতে।

 

থমথমে শোকাবহ নিশ্চুপ দিনের

রিক্ত কেন্দ্রবিন্দু থেকে তোমাকে তরঙ্গ টেনে আনে 

বালিকীর্ণ নির্দয় সৈকতে;যেন অস্থিরতা ঘেঁষা 

স্থিরতার বিষন্নতা

বিষাদের অস্থিরতা মেঘ হয়ে দূরে ভেসে গেছে

 

আর কোন‌ও অন্ধকার তোমার ভেতরে ঝরেনি

আর কোন‌ও আলোকণা তোমার ভেতরে ঝরেনি

 

শূন্যতা শুধু... শূন্যতা শুধু...  অকূলদিগন্ত ছেয়ে ছিল।

 

বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১

বন্ধন পাল-এর কবিতা

শূন্যতার মুক্তি

ছুঁচের চোখের মধ্যে বিভিন্ন রঙের সুতো হয়ে 

আমার দৃষ্টির যাওয়া আসা,

তারপর কাপড়ের বুকে ফুটে ফুটে

ফুটিয়ে তুলি কবিতা, কবিতার মতো ফুল-পাতা,

তার পাশে পাখি হয়ে বসে থাকি পাথর-স্থবির,

প্রাচীন কবির আশা ছুটে যায়,মাথা কুটে ফেরে

ছুঁচ ফোটাবার ব্যথা যেতে হয় সয়ে।

 

ঘুড়ির সুতোর টান অন্যের আঙুলে বাঁধা দেখে

অঙ্গুলিহেলনে চলা দাস্যভাবে সহাস্য নাচন

অক্লেশে বন্ধ করেছি, দিগন্তে অসীম হতে চেয়ে 

বিপজ্জনক হয়েছি,ঝড়ের সান্নিধ্যে গেছি, প্রেমে অপ্রেমে

ভেঙেছি,ভেঙে দিয়েছি সর্বস্বান্ত সাত্ত্বিক প্রত্যয়ে

এমন অনুশাসন,সর্বস্তরে ছেয়ে আমি থেমে নেই আজ

ব্যথার শোক জড়ানো শূন্যতার মুক্তি চাই কবিতায় অসীমকে রেখে।

 

রিক্ত শূন্যগর্ভ চিত্ত শোকের চাদর দিয়ে অনস্তিত্ব শরীরের স্মৃতি

আপ্রাণ চেষ্টায় ঢাকে, খোঁজে অবলম্বনের পথ,

কাছের মানুষ মরীচিকা 'লে মনে হয় মরুভূমি বুঝি মরূদ্যান!

নশ্বরের দারিদ্রকে অশেষ কোরো না ; অনিঃশেষ অনন্তের হাতে

তোমার দেহকণাকে লীন হতে দাও

আনন্দের রথ তুমি জুড়ে দাও চৈতন্যের অম্লান চাকাতে

সহনশীলতা ঘষে মোছা যাবে পোড়া দাগ ক্লান্ত প্রকৃতির।

 

শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

বন্ধন পাল-এর কবিতা


 অপবাদ

প্রতিশোধ নিতে চায় ধরাশায়ী অবিন্যস্ত

প্রতিবেশী মানুষের দল 

নিন্দার প্রবণতাকে বাধা দিয়ে থামিয়েছে 

অন্তঃস্থ নির্বাক মনোবল

তাছাড়া উপায় নেই ; ধ্বংসকারী তীব্র জেদে

উজাড় হয়েও যেতে পারে 

-পাড়া -পাড়া,আর,মনের মহল্লাগুলি

মিথ্যাজাত বোধে, নির্বিচারে।

 

প্রতিরোধ খুঁজে খুঁজে হয়রান অস্থিরতা

একাকী অবসাদের ঘোরে 

খানিক দূরত্ব খোঁজেদূরত্বের অভিকর্ষ

বলের বিরুদ্ধে যাওয়া জোরে,

শত শত জতুগৃহ! কেন যে গড়তে দাও

এও কি ধ্বংসের নির্দেশনা?

বিভক্ত চেতনা জুড়ে ঝরছে হলুদ পাতা

বেছে ফেলে দাও আবর্জনা।

 

প্রান্তিক স্টেশনে এসে বিকল হ‌ওয়া এঞ্জিন

আশ্রয় পেলেও, বিপর্যয়ে

স্থবির চাকার কাছে বিপুল বিস্তৃত ক্রোধ 

পাল্টে যায় ব্যথায় বিস্ময়ে;

এমন কত শৃঙ্খলে পদে পদে বাঁধা পড়ে 

অসহ্য আঘাত অবসাদ,

সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজে ঢেকে যায় 

দু-বাহুতে লিপ্ত অপবাদ।