উমাপদ কর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
উমাপদ কর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

উমাপদ কর-এর কবিতা


শ্রাবণ-আষাঢ়-রাস্তা-মানুষ

শ্রাবণমেঘ বেলাকে অবেলা বানাই রে বেলাকরলে

       ভুল বোঝে পুকুরঘাটের মাছেরা

       রক্তে বেদনা মিশিয়ে কাঁদে ঘুঘু

স্বাস্থ্যবান দুপুর রোগে-শোকে অন্ধকার মাখে -সহায়ে

 

আষাঢ়ের যতটা আশা ছিল শুষেছে পীনপয়োধরা শ্রাবণ

       মানুষের মাথা কেটে পায়ে জল

       ঢালে মানুষেরই পোষা জনসেবক

জমানো পচুইয়ে চুবিয়ে রাখা হবে হাড়গোড় ভাদ্রগরমে

 

অলস সময়ের গায়ে এত কাঁচাঘুঁটে পর-পর দেয়াল-দেয়ালে

       ঠোক্কর খায় সাইকেলেচলা প্রজাপতি

       রাশি-রাশি গুমোট সরায় বেলচা

ঢাকাপড়া রাস্তাটা শরীরে জাগতে থাকে শ্রাবণে-শ্রাবণে

 

২০-০৭-২০২৩

রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

উমাপদ কর-এর কবিতা

আকাশ-বাতাস-গাছ-মানুষ


কথা বলে না গাছ, শরীর বেয়ে কান্না

       ফোঁটা-ফোঁটা দুধ মাটিতে

অরণ্যহাসপাতাল কোথায়, কেই-বা নিয়ে যাবে!

            

আকাশ একটু বেশিরকম চুপ ঘাতককুঠারক্রিয়ায়

       আষাঢ়-শ্রাবণ ভুরু কুঁচকে

যেন ধমকাবে বাতাসকে, সে কেন এমন বারুদমাখা!

 

বোবা বাতাস লালা ফেলছে অনবরত, গন্ধকঝাঁঝে

          পাতলা উদ্বেগ, ঘনশ্বাস

রিলে করে শব্দানুপ্রাস, হাহাকার, রক্তড্যালার দীর্ঘ-

 

কুকুর-বেড়াল, শূকর-খাটাশ, মানুষ সব

         এক ফরাসে, নীলে-লালে-গেরুয়া-সবুজে

হেঁসো-লাঠি-বারুদ-সুতলি-গুলি-বন্দুক বলেআয় আয়

 

পায়রাগুলো খোঁপ ছেড়ে কোথায় যে উড়ল!

         নিরুত্তাপ রক্ষীগুলো খোঁজে

দ্যাখে, জলার ধারে বুকফোঁপরা মালিকের ঘুনসিতে বসে

 

১৭-০৭-২০২৩

শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

উমাপদ কর-এর কবিতা


গড়পরতা
গোধূলিবেলা                 

এখানে বাসন মাজা হয়

জলের চুইয়ে পড়া

ভেজা-পা চাতালে ছাপ ফেলতে-ফেলতে

দশদিকে চলে যায়

 

এখানে লুডো খেলা হয়

বিছানার চাদরে বর্গ

মিকিমাউসেরা রেফারি হলেও

চোট্টামি ধরতে পারে না

চারের চালাক, মিচকিটা ভেতরেই রাখে

 

এখানে ত্রিকোণ প্রেমের বুনিয়াদি শিক্ষা

তে-কোনা পার্কের ভূমি ঘাস

পাথরের তিনটে চেয়ার

আসে সে আসে না

সে আসে চলে যায়

দুটো চেয়ার ফাঁকা থেকে যায়

 

হাতে ঘুরতে-ঘুরতে বাসনের পিএনপিসি

ফিসফিসিয়ে থেকে ঝনঝনিয়ে

হাতের ঝাঁকুনিতে গড়িয়ে চলা টুকুন চৌকোর

পুট

এক ঘর সামনে নিয়ে আসে হলুদ চাঁদ

 

বুকে জমানো পাথর সব পাথরেই ঢেলে দেওয়া

ঘষা লেগে ফুলকি

এক কোণ থেকে দুই-কোণের দূরত্ব সমান

তিনটে চেয়ার ঝগড়া করে ত্রিকোণ-পার্কের কোলে

হালকা হয়, পলকা হয়, চেষ্টা করে


০১-০১-২০২১

বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১

উমাপদ কর-এর কবিতা


শিরোনাম থাকতে হবে এমন কোনও কথা নেই

 

                                             

 

ফুল তুলতে কাঁটার ঘা। কাঁটার ক্ষত নিয়ে ফুল তোলা। পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এই দুটো বাক্য নিয়ে  ভাবতে থাকি।

 

ফুল কাঁটা সম্পর্কে থেকেও, দূরত্ব রাখে। হাত একটি চেনা বুঝদার মাধ্যম হয়ে এদের দূরত্ব ঘোচায়। আমাদের কোটের বুকে অর্ধেকটা বেরিয়ে থাকা ফুল হাতের আঁচড়ের দিকে কোনো খেয়ালই রাখে না। লোকের দিকে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকায়। ফুল নিজের মৃত্যুটাকে ্যালিশ করে আরো কিছুটা বেঁচে নেয়। ফুল কাঁটাকেও মনে রাখে না। তারই মৃত্যু ঠেকাতে যে নাকি হাতকে আঘাত করেছিল। হাত মনে রাখতে বাধ্য হয় কাঁটাকে, অনেকটা সময়, যতক্ষণ না মলম ক্ষতকে নির্মূল।

 

কাঁটাটা কখনো মরে। কখনো মরো-মরো বেঁচে থাকে। জন্মদাত্রী গাছটা তখনও বেঁচে যে! জোর আঘাত করলে হাতের মাস-রক্তের সঙ্গে সে স্বর্গে যায়। আর অল্প আঘাতে নিজের হুলটা খতম করে নির্জীব বেঁচে থাকে। ফুলের জন্য দুঃখটা তার মরে না। আমৃত্যু একটা কষ্টবোধ তাকে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। সবটাই অনুভব করে গাছ, কিন্তু বলে না কিছুই।

 

ফুলের পাপড়িগুলো খসে না-পড়া পর্যন্ত বুকের ফুল ফুলদানিতে বাস করে। আহ্লাদে তার ধরে না। যতদিন বাঁচে, আনন্দে বাঁচে। হাতের মাংসে জড়ানো কাঁটা আস্তাকুড়ে যায় কোনোরকম শোকসভা ছাড়া। গাছে অর্ধমৃত কাঁটা রিকেট হতে থাকে ঠিকমতো রসের যোগান না-পাওয়ায়। যতক্ষণ বা যতদিন বেঁচে থাকে, আনন্দে থাকতে পারে না।

 

দুজনেই নিজের কাজটা ঠিকঠাক সারে, এমনকি মধ্যমণি হাতটাও। তবু কেন যে ভাবতে ভাবতে আমি কাঁটার দিকেই ঝুঁকে পড়ি, ব্যাখ্যা করে বলতে পারব না।

 

(এখানে শুধুমাত্র সেই ফুলগাছের কথা ভাবা হয়েছে, যার কাঁটা আর ফুল দুটোই আছে, আর ফুলগুলো মোহিনী। নয়তো হাত কেন ব্যস্ত হয়ে উঠবে!)

 

১৬-০৯-২০২০