সাতকর্ণী ঘোষ সারঙ্গ সাহিত্য পত্রিকা, কলকাতার যিশু আন্তর্জাতিক কবিতা পত্রিকার সম্পাদক। সম্পাদক হাওড়া কবিতা উৎসবের। পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের এমনকি বিদেশের অনেক ছোটো পত্রিকা এবং সাহিত্য সংগঠনের সাথে বিভিন্ন পদে যুক্ত। কবিতা পাঠের আমন্ত্রণে দেশে বিদেশে সরকারি -বেসরকারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ১৯৯৮ সালে প্রকাশ হয়। ছোটোবেলা থেকে লিখলেও প্রথম কবিতা প্রকাশ ১৯৯০ সালে। যাবৎ মোট গ্রন্থ সংখ্যা ৫২ টি। নির্বাচিত কবিতা গ্রন্থ নিয়ে কবিতা বইয়ের সংখ্যা২১ টি। সম্পাদনা গ্রন্থ ১৪ টি। ইংরেজি কবিতা বই, ছোটোদের জন্য কবিতা ছড়া গ্রন্থ, গল্প, অন্যভাষায় অনুদিত কবিতা গ্রন্থ নিয়ে ১৭ টি। বিভিন্ন ছোটো পত্রিকা ও সাহিত্য সংগঠন থেকে দেশে বিদেশে কিছু সম্মান প্রাপ্তি।
একটি হাওয়া বাড়ি
সাদা ধবধবে বাড়িটির গায়ে
এখন ছায়াদের ছাপ পড়ছে
রোজ দেখি কত কত মানুষ
বাড়িটির ভিতর ঢুকে যায়
কিন্তু আশ্চর্য হই এই দেখে
কেউই আর বেরিয়ে আসে না
একদিন ওই বাড়িটির ভিতর
আমিও ঢুকে গেলাম
কোথাও কাউকেই দেখলাম না
তবে যারা ঢুকে ছিল তারা কোথায়
ছাদে উঠে এলাম নীচে তাকালাম
দেখি কত কত মানুষ বেরিয়ে যাচ্ছে
অথচ বাড়ির মধ্যে কাউকেই দেখলাম না
আমার কি চোখ খারাপ হয়ে গেল
এমন কেন দেখি আজকাল
এত সাদা বাড়ি এত ঝলমল বৈভব
এখন সব ছায়াদের দখলে
আমরাও ছায়া হয়ে যাচ্ছি
ঢুকছি আর বেরচ্ছি বদলে বদলে
রাত দীর্ঘ হলে ভয়ও লম্বা হয়ে যায়
বাইরে বৃষ্টি নামে --- প্রবল বৃষ্টি
ঘরে খিল এঁটে দিই
শব্দ আসে শব্দ ভাসে শব্দ হাসেও
ঘরে তখন একা এবং অনেকে
তবুও শব্দ আসে
জাগিয়ে রাখে সমস্ত রাত
রাতও জেগে থাকে ঠিক নিশাচর
পাশাপাশি সেও অস্ত্র শানায়
রাত দীর্ঘ হলে ভয়ও লম্বা হয়ে যায়
রাতের সব চরাচর চুপ চুপচাপ
ঘরে আমি এবং অনেকে
চুপ চুপচাপ
শুধু নিশ্বাসের শব্দে বোঝা যাচ্ছে
এখনও আছি ---- আছি মাত্র--- হায়!
রাত দীর্ঘ হলে ভয়ও লম্বা হয়ে যায়
যুদ্ধের কৌশল জানা নেই
জানতেও চাই না
পাণ্ডবরাও জানত না
কৃষ্ণ সহায় ছিল বলেই
কুরুক্ষেত্র হয়েছিল
পাশা খেলা চলেছিল
আজও পাশা চলে চালে
যুধিষ্ঠিররা এখনো নির্বাক শ্রোতা
আনাড়ি খেলোয়ার
অর্জুন পাখির চোখ দেখতে দেখতে
মাটিতে নেমে বসেছে
তির ছুটছে তির বিঁধছে
পাশার দান বদলে বদলে
খেলা বদলে বদলে
শ্রী বদলে যায় দ্রৌপদী সিংহাসনে
মন্ত্রী দূর্যোধন দুঃশাসন
ভীম চাষ করে নকুল শ্রমিক
সহদেবরা জনমজুর
কর্ণ দিশাহারা বীর দল বদলে যায়
কুন্তি আমাদের পাড়ার সেন্টার দিদিমনি
বদলে যায় সব বদলে যায় --- তবু
একটু আগুন বাঁচিয়ে রেখিছি
যদি তর্জনি তোলো যদি লাল চোখে তাকাও
আকাশে বারুদ উড়ছে.....
বৃষ্টি আমার প্রেমের প্রথম নাম
তবুও কেন আগুন ঝরে গায়
বর্ষা রাতে যুদ্ধে যাব কেন
ব্যাঙের ডাকে বর্ম খুলি আয়
বৃষ্টি আমার দ্বিতীয় প্রেমের নাম
সব ঋতুতেই ভেজার ইচ্ছে থাকে
বারুদ বারুদ গন্ধ নাকে এলে
অসময়ে জড়িয়ে ধরব কাকে
বৃষ্টি আমার তৃতীয় প্রেমের নাম
আগুন তুমি ধ্বংস করতে চাও
প্রদীপ হয়ে জ্বললে তুলসী তলে
বদলে বৃষ্টি আগুনের নাম নাও
আগুন আমার শেষের প্রেমের নাম
কিলবিল পোকা শবের ওপর বাস
মাটির নীচে ফসল ফলানো শোক
বৃষ্টির ঘরে আগুনের সহবাস
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন