অসামান্যা মেয়ে
দেয়ালের আয়নায় লাল কালো টিপ ঝুলে আছে আজ বহুদিন।
কাজলের কালি বোধহয় শুকালো।
আজ বহুদিন ঘরের বের হইনা
আজ বহুদিন আকাশ দেখি না।
আমি অসামান্যা, রূপসী, বেশ গুনী। লোকের কাছে আজীবন তাই জেনে এসেছি।
আজ মনের সিন্দুক খুলে বসেছি
আর বসতেই তার আয়নায় পড়লো নিজের চোখ।
হ্যা আমিই সেই মেয়ে যেকিনা ছিলো ভারি চঞ্চল, ছুটে বেড়িয়েছে পাড়াময়।
যার ছোটার গতির কাছে হার মেনে যেতো সবাই।
বয়সের সাথে সাথে জানা হলো
না আর ছুটতে নেই
এখন শান্ত হতে হবে।
রূপের বড়াই কিংবা সৌন্দর্যের প্রতি মোহ কোন কালেই যে খুব ছিলো এমন নয়।
কিন্তু নিজ সম্পর্কে না জানা মেয়েটিও একটি সময় জেনে যায়।
রূপ বড়ো কাজের জিনিসই বটে। গুন কিছুবা কম হলেও হয়তো চলে যায়।
আর বুদ্ধি তা না থাকাই হয়তোবা মঙ্গল।
এ সমাজ ব্যবস্থা এখনো এতোটা উদার হতে পারেনি।
যে একজন স্বাধীন, বুদ্ধিদীপ্ত নারীকে তার নিজ গুণে গ্রহণ করবে, তার নিজো মর্যাদায়।
তাই এখানে এখনো প্রায়ই প্রয়োজন পড়ে যায় ভনিতার। কিছুটা লৌকিকতার।
হ্যা আমিই সেই অতি সাধারণের অসাধারণ অসামান্যা মেয়ে
যে স্বীকার করে নিচ্ছি।
হ্যা আমি সুবিধাভোগী।
এবং এ সুবিধা আমার অধিকার।
কেননা তা আমি নিজ গুণে অর্জন করে থাকি।
তা তুমি বা তোমরা কেউ আমাকে দাও না।
হয়তো আমারই মোহে অন্ধ হয়ে কিংবা কথার কৌশলে মুগ্ধ হয়ে, নতুবা রূপের মহিমায় নাজেহাল হয়ে আমাকে তা অর্পণ কর।
কেননা একজন বুদ্ধিদীপ্ত, স্বাধীন নারীকে গ্রহণ করার মানসিকতা এখনোও তোমাদের গড়ে ওঠেনি।
হ্যা আমিই বলছি, আমি কবির কোন প্রচ্ছদের নায়িকা নই।
আমি একবিংশ শতাব্দীর সেই অসামান্যা মেয়ে
যেকিনা পদ্মফুল নয় শাপলা হয়ে জলে ভাসবে খুব সুন্দর সামান্যা হয়ে, নিজ গুণে।
প্রকৃতির এক অসাধারণ শিল্প হয়ে প্রতিভাত হবে সর্বাগ্রে।
তা তুমি বা তোমরা গ্রহণ করো বা নাই বা করো।
কেননা অসামান্যারা একটা সময় জেনেই যায় তারা অসামান্যা, অসাধারণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন