কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়
২১ ডিসেম্বর, ২০২১ নব্বই বছর পার করে চলে গেলেন পঞ্চাশের বিশিষ্ট কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়। বিদূষী কবিপত্নী বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর বার্ধক্যজনিত অসুখে কর্মক্ষমতা হারিয়েছিলেন কয়েকবছর আগেই; নতুন কিছু লিখতেও পারতেন না। তবু আদি কৃত্তিবাসের সম্পাদকদের মধ্যে কেবল তিনিই জীবিত ছিলেন। তাঁর প্রয়াণের ফলে পঞ্চাশের বাংলা কবিতার জগতে বেঁচে রইলেন কেবল অশীতিপর দুই কবি : সুধেন্দু মল্লিক ও দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোনার হরিণ, আহত ভ্রূবিলাস, না নিষাদ, অন্ধকার লেবুবন, সোনার পিত্তলমূর্তি ওই, ঘুমের বড়ির মতো চাঁদ
ইত্যাদি স্মরণীয় কাব্যের স্রষ্টা তিনি। লিখেছিলেন ‘সহবাস’, ‘আশ্রয়’ ইত্যাদি জনপ্রিয় উপন্যাস এবং একাধিক ছোটগল্প। অনুবাদ করেছেন অমিয় চক্রবর্তী, র্যাঁবো, ভেরলেন, সাঁ ঝন পের্স প্রমুখের কবিতা। পেয়েছিলেন বাংলার বাতায়ন, কথা এবং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। গদ্যগ্রন্থের মধ্যে আবার ইউরোপ, আমার আমেরিকা দর্শন, আলোয় কালোয় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। মূলত গদ্যকবিতার কবি তিনি, প্রেম-বিষাদ-বিদ্রুপ আর দিনানুদৈনিকের বাস্তব চিত্র নিয়ে তাঁর কবিতা আমাদের আজো নন্দিত করে। এখানে সদ্যপ্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর দু’টি স্মৃতিধার্য কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো :
অপরাধ
পাপ
বলে
কিছু
নেই,
অপরাধ
আছে
যা
কষ্টদায়ক।
আছে
পুণ্য
অর্থাৎ
আনন্দ।
পুণ্য
তো
করেছি
ঢের,
অপরাধ
দুটো-একটা।
দিন
গেলে
পুণ্যেরা
শুকোয়
বাসি
বকুলের
মতো।
অপরাধই
মাধবীলতার
মতো
বেড়ে
ওঠে
পিঠ
থেকে
কাঁধে
:
একদিন
ফুল
ফোটে
সে-লতায়
গন্ধে
তার
কোথাকার
পাপপুণ্য
সব
একাকার
হয়ে
যায়।
কেন
তুমি
কেন
তুমি
হঠাৎ
ক্ষমার
শিক্ষা
ভুলে
গেলে?
এত
ক্রোধ
ভালো
নয়,
নেহাত
নির্বোধ,
সে-ও
জানে।
কেন
তুমি
কণ্ঠ
থেকে
যজ্ঞ-উপবীত
ছিঁড়ে
ফেলে
ভাসালে
গঙ্গায়?
যা
কিছু
তোমার
পাশে
যায়
আসে
সবই
তার
তোমার
রচনা,
ইচ্ছাধীন?
তা
তো
নয়।
একা
তুমি
কতটুকু
পারো?
আছে
ধারে-কাছে
ঢের
আত্মীয়
প্রতিবেশী
সম্ভবত
পরার্থবিদ্বেষী,
হীনমন্য,
কিন্তু
তুমি
তাই
বলে
ক্রোধী
হবে,
আরো
ক্রোধী
হবে?
মানুষ
কী
অনন্য
বিষণ্ণ
জীব
কী
পরনির্ভর
তুমি
পূর্বেও
দেখেছো,
দেখো
নাই?
তবে
কেন
হঠাৎ
ক্ষমার
শিক্ষা
ভুলে
গেলে?
কেন
তুমি
কণ্ঠ
থেকে
যজ্ঞ-উপবীত
ছিঁড়ে
ফেলে
ভাসালে
গঙ্গায়?
[কবিতা-দু’টি
তাঁর
‘অন্ধকার
লেবুবন’
(১৯৭৪)
কাব্যের
অন্তর্গত
এবং
‘শ্রেষ্ঠ
কবিতা’তেও
সংকলিত]
(তথ্য ও চিত্রঋণঃ ঋতম্ মুখোপাধ্যায়)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন