মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মানবেন্দ্রনাথ সাহা-এর অনুবাদ কবিতা

অমিত খান্না

অমলতাস 

আমার সামনে এক ধ্বংসস্তূপ 
এটা একটা বড় বাড়ি ছিল হয়ত
তারও আগে ছিল একটা ঘর।

এখনও এই ঘরের কিছু চিহ্ন চোখে পড়ে
দুটো বাঁশের ওপর কাপড় মেলার দড়ি
উঠোনে শুকনো তুলসীগাছ। 
জানালায় সেঁটে থাকা খবরের কাগজের ছেঁড়া পাতা
ভাঙাচোরা এক শিল বাটা 
জংধরা একটা কুটনো ফেলার পাত্র।

বারান্দায় আরামচেয়ার,যার একটা পা গায়েব!
এই চেয়ারে বসে 
কে জানে কে খবরের কাগজ পড়ত? 

এই ঘর কি খুব সুখী ছিল?
এখানে কি হাসির কলরোল উঠত খুব?
এখানে কি সানাই বাজত কোনোদিন? 
এখানে কি কোনো মৃত্যু হয়েছিল? 

তখনই আমার নজর গিয়ে পড়েছিল
ধ্বংসস্তূপের এক কোণে লাগানো অমলতাস গাছের উপর।
হলুদ সুন্দর ফুলে লেপটে থাকা এই গাছ 
যেন হেসে উঠছে ভেঙে যাওয়া ঘরের ভিতর 
দেখো, ইঁটের এই অট্টালিকা ভেঙে তছনছ হয়েছে 
আর ছোটো এই গাছ কেমন দাঁড়িয়ে আছে। 

আমি বুঝতে পারছি 
কী ভাগ্যবতী এই অমলতাস গাছ
প্রকৃতি একে এমন এক কোণে ফুটিয়েছে
যখন এই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জায়গাটায় 
নতুন ইমারত গড়ে উঠবে 
আর বসত করতে এসে যাবে নতুন লোকেরা 
তারা এই গাছ কাটবে না। 


সকাল  হয়ে এলো 

মনখারাপ কোরো না। 
স্বপ্ন সকলের ভেঙে যায়
সময়ে অসময়ে কেউ না কেউ পড়ে  যায় 
জীবনের এই অনন্ত সফরে।
কখনো না কখনো ব্যর্থতা স্পর্শ করে সকলকে।

চোখের জল মুছে নাও
দূরে সরিয়ে রাখো ক্লান্তি 
ছিঁড়ে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে জড়ো করো
এগিয়ে চলো নতুন পথে
নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু হোক নতুন আশার আলোয়
আশা ভরা চোখ নিয়ে দেখো
সকাল হতে আর দেরি নেই। 

জীবনের সঞ্চয় এই নিরলস পথ চলা 
এক লক্ষ্য থেকে আরেক লক্ষ্যে ধাবমান জীবন
যে পথ হাঁটে নিরন্তর সে ঠিক পৌঁছে যায়।
দৃশ্যের কেবলই বদল হয়,খোঁজো চলার সঙ্গী 
দূরে পাহাড়ের উপর শুকনো ডালের মাঝে 
শোনো সবুজের নতুন সুর।
দেখ নতুন পোশাকে লেপটে আছে আগামীর দিনগুলো 
কেমন করে হাসছে 
তোমার ক্ষতও ভরে উঠছে 
তোমার পায়ের নীচের উত্তাপ 
তোমার নিঃশ্বাসে বেগের আবেগ 
সমস্ত ব্যর্থতাকে সরিয়ে দাও এক ঝটকায় 
বাড়িয়ে দাও নবীন হাত আকাশগঙ্গা পর্যন্ত 
আর ছিনিয়ে নাও নিজের ভাগের 
চাঁদ আর সমস্ত তারাদের।


[হিন্দি পপুলার সিনেমার সত্তর ও আশির দশকের এক জনপ্রিয় গীতিকার, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও কবি অমিত খান্না। তাঁর জন্ম ১৯৫১ সালের ১ মার্চ, দিল্লিতে।তাঁর লেখা'চলতে চলতে' ছবির 'চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখ না কভী আলবিদা ন কহনা 'গানটি মুখে মুখে ফেরে। মনপসন্দ,বাতো বাতো মেঁ, লুটমার,ভৈরবী, তেরী বাহোঁ মে প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির গীতিকার তিনি। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়'অনন্তরাগ' নামে কাব্য। সেখানে  কবিতা,দোহা,গজল,অসর,কতাত,আর হিন্দি সিনেমার গান সংকলিত হয়েছে। সেই কাব্যের দু'টি   হিন্দি কবিতার অনুবাদ এখানে রইল। মানবেন্দ্রনাথ সাহা তাঁর 'অনন্তরাগ'কাব্যটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন।]

1 টি মন্তব্য:

  1. দুটো কবিতাই খুব ভালো লাগলো।প্রথম কবিতাটি সমস্ত ভগ্নস্তুপের বিরুদ্ধে অমলতাস গাছটি যেন জীবনযুদ্ধের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর দ্বিতীয় কবিতাটিতে কেবল স্বপ্নভগ্ন নয়, বরং প্রবহমান জীবনে কথা সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে 'সকাল হয়ে এলো' কবিতাটিতে।

    উত্তরমুছুন