মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রন্তিদেব সরকার-এর ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী "ঢাকার ডায়েরি"

ঢাকার ডায়েরি


পর্যন্ত যতটুকু অভিজ্ঞতা হল তাতে একটা কথা বলতেপারি- ‘নেট-তথ্যের উপর সব সময় ভরসা করে কোন কাজ করতে গেলে সমূহ বিপদ হবার সম্ভাবনা। এই ট্রেনে বাংলাদেশ যাওয়া মানে, মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি এতটাই বিভ্রান্তিকর, তা হাতে-কলমে করতে গিয়ে টের পেলাম। ভাবা যায়না, একটি দেশের সরকারের পক্ষে একটি ওয়েবসাইটআপগ্রেডকরা হয়না। নেট- যা জেনে গেছি, তার একটাও মেলেনি। প্রথমতঃ কবে কবে ট্রেন যাওয়া-আসা করে তার তথ্যে ভুল, ওখানেমৈত্রী এক্সপ্রেস’-এর সর্বোচ্চ ভাড়া দেখানো আছে ১৪০০ টাকা, আর ফেয়ারলি প্লেসে গিয়ে দেখি ২১২০ টাকা ! আমরা ট্রেনের যাতায়াতের দিনগুলো দেখে স্থির করলাম যে শুক্রবার গিয়ে সোমবার ফিরব, কিন্তু টিকিট কাটতে গিয়ে সোমবার কোন ট্রেন নেই। এইরকম বিভ্রান্তিকর সব খবর। যা যা নতুন নিয়ম পাল্টেছেতা কয়েকটি হস্তলিপি-সম্বলিত কাগজে বুকিং কাউন্টারের দেয়ালে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ‘রিটার্ন’ জার্নির জন্য যে আলাদা একটি ফর্ম লাগবেতা কোত্থাও লেখা নেই। তাহলে সেই নিয়মটির কথা লোকে জানবে কি করে ? অথচ সাধারণভাবে ‘রেল-রিজার্ভেশন’ ফর্মে দুটো ভাগ থাকেউপরের ভাগে ‘অনওয়ার্ড’ জার্নি আর তলার ভাগে ‘রিটার্ন এইটাই তো জানি। কিন্তু এটা যে অন্যরকমতা তো রেল-কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। অন্যান্য নির্দেশাবলী সব দেয়ালে কীর্ণ থাকলেও এই ব্যাপারে কোনো আলোকপাত নেই আর এসব ব্যাপারে কারও কোনো হেলদোল আছে বলে মনে হলো না। বুকিংক্লার্কদের মধ্যেও বেশ একটা ঢিলেঢালা আবহাওয়া। যাই হোকতবু আজকে টিকিটের লাইন দিয়ে পরশুর রিজার্ভেশন পেয়ে যাওয়া এই ব্যাপারটা খুবই স্বস্তিরভারতীয় রেলের ক্ষেত্রে চমকপ্রদও বটে।

 

            বিকাল পাঁচটায় আমার গাড়িতে মিথিলেশ আর কাজল কে নিয়ে বেরোলাম বিদেশী মুদ্রার সন্ধানে। যা চেয়েছিলাম সেই পরিমাণ বাংলাদেশি টাকা পেয়ে গেলাম। ভারতীয় মুদ্রায় ৯০টাকার বিনিময়ে পেলাম ১০০ বাংলাদেশী টাকা। নেট খুলে দেখেছিলাম ১০০ ভারতীয় মুদ্রায় ১২১ বাংলাদেশী টাকা। সেসব অত চুলচেরা বিচার করে লাভ নেইব্যবসা-টা যখন ওদের তখন ওদের দর-টাই মেনে নিতে হবে। পাওয়া গেল হাতের কাছেএটাই তো অনেক। নাহলে অনেক হাঙ্গামা পোয়াতে হত।তাছাড়া গিয়েই তো লাগবে। রাস্তায়-ঘাটেহোটেলে-দোকানে সর্বত্র তো বাংলাদেশী টাকাতেই তো বিনিময় হবে। তাই সেই দিক দিয়ে নিশ্চিন্তি। যাক আমাদের পকেটবন্দী তো হয়েছে। তারপর আরো যদি প্রয়োজন হয়তখন কিছু একটা ব্যবস্থা তো হবেই।

 

            ভোর চারটেয় বেরোবার ব্যাপারে একটা ধন্দ ছিল। যদি কোনো কারণে ক্যাব না পাওয়া যায় তাহলে তো চিত্তির। সব মাঠে মারা যাবে। যদিও সকাল৭-১০মিঃ- ট্রেন কিন্তু সময় লাগে অনেকযা শুনেছি। শেষমেষঠিক হলপলুর গাড়িতে আমাদের ফ্রী-ল্যান্স-ড্রাইভার শিবেন-ভাই পৌঁছে দেবে। যেহেতু আমাদের লাগোয়া বাঁশদ্রোণী-অঞ্চলেই থাকে তাই ওর উপরেই ভরসা রাখলাম। এবং আমরা পরের দিন ভোর চারটেয় নিচে নেমে দেখিশিবেনভাই হাজির,বাকিরা কেউ নামেনি তখনও। যাইহোককিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই এসে পড়ল আর আমরাও সাড়ে চারটেয় স্টার্ট করে মোটামুটি ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হু হু করে এসে ঠিক পাঁচটায় কলকাতা স্টেশনের চত্বরে নেমে গ্রুপ ফটো তুলে খোঁজ নিতেই জানা গেল সোজা প্ল্যাটফর্মে ঢুকে ডানদিকে চলে যেতে নির্দেশ দিলেন ৪নং কাউন্টারের মালিক। বললেন যা কিছু পাশপোর্ট-ভিসা চেক এবং মালপত্তর স্ক্রীনিং সব ব্যবস্থা প্ল্যাটফর্মেই। দেখলাম ১নং প্ল্যাটফর্মে আমাদের আন্তর্জাতিক ট্রেনমৈত্রী-এক্সপ্রেসদাঁড়িয়ে। মনটা খুশিতে ভরে উঠল। তাহলে আমরা সত্যি সত্যি যাচ্ছি বাংলাদেশ। আর মাত্র কয়েক ঘন্টাই তো বাকি। সোৎসাহে চারমূর্তি দাঁড়িয়ে পড়লাম লাইনে। এক চশমা-পরিহিত বেঁটে শ্যামলা রেলকর্মী আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে ইমিগ্রেশন ফর্ম ধরিয়ে দিয়ে গেল। ওটা এই লাইনে দাঁড়িয়েই ফিল-আপ করে সই-সাবুদ করে টীম লীডারের হাতে সেই কাগজটি থাকতে হবে। তারপরের ধাপ সব লাগেজ, পার্স, মোবাইল সব সাইডের বেঞ্চে রেখে মেটাল ডিটেক্টরের মধ্য দিয়েঅগ্নি-পরীক্ষা তারপর আবার লাগেজ নিয়ে নাও যে যার। এরপর ইমিগ্রেশন দুই ভাগে। ডানদিকেদিশিআর বাঁদিকেবাংলাদিশি’-দের পালাক্রমে জিজ্ঞাসা। যেমন-‘ কি করা হয় ?’ ‘কোথায় যাচ্ছেন ?’ ‘কি পারপাস ?’ ‘ব্যক্তিগত কাজে না কোন অফিসিয়াল কাজে ?’ না  ট্যুরিস্ট ?’ ‘এই প্রথমবার ?’ কদ্দিনের প্রোগ্রাম ?’ ইত্যাদি গোছের প্রশ্নবাণ শেষ হলেই-‘ক্যামেরার দিকে তাকান’ –বলতে  বলতেই সেই বকের মতো যন্ত্রটিতে ছবি তোলা হয়ে গেলে পরের চেম্বারে আবারসিকিউরিটি চেকশেষ হলে তবেই ট্রেনে ওঠার অফিসিয়াল অনুমতি। আমরা লাগেজ টানতে টানতে খোশ মেজাজে এসে দাঁড়ালাম আমাদের কোচের সামনে এইচ-, কিন্তু তখনও খোলেনি বন্ধ দুয়ার। তখন ঘড়িতে -১৫ মিঃ। আমাদের হাতে এক ঘন্টা টাইম। তখন আরেক প্রস্থ ফটো-সেশন। মজা লাগছিল এই সফরে কোন উটকো লোকের স্থান নেই। পুরো প্ল্যাটফর্মে কড়া নিরাপত্তা। আমরা  এখন হাই-সিকিউরিটি জোনের বাসিন্দা। নো সেলসম্যান, নো হকার, নো চা-কফি-ওয়ালা। শেষেরটার জন্যই মন বড় কাঁদছিল। কোন ভোরে উঠে  সেই চা খেয়েছি ! উটকো লোকেদের ঢোকার অনুমতি দিবি না ঠিক আছে কিন্তু  রেল কেন যে একটা নিজস্ব চায়ের দোকান রাখেনি, কে জানে। এই সাত সকালে একটু চা দিয়ে গলা না  ভেজালে কি চলে ?


ক্রমশ...

 

1 টি মন্তব্য: