সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

এই সংখ্যার কবিঃ কবি ফটিক চৌধুরী

 



​কবি ফটিক চৌধুরী

জন্ম : ২০ জানুয়ারি, ১৯৫৩

জন্মস্থান : বিহারের সাঁওতাল পরগণা। অধুনা ঝাড়খণ্ড

কলেজ : হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ, বীরভূম

                         

               কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাগত

যোগ্যতা  : বিজ্ঞান আইনে স্নাতক

চাকরি। : স্বাস্থ্য দফতর, রাজ্য সরকার

অবসরের পর : কলকাতা হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য। বর্তমানে ট্যাক্স কনসালটেন্ট

পছন্দ : কবিতা। এবং কবিতা। ছড়া অণুগল্প লিখতে ভালবাসেন। হিন্দি থেকে অনুবাদ করেন। কলকাতা ট্রানস্লেটরস্ ফোরামের সঙ্গে যুক্ত। ৫০ বছর কলকাতার নাগরিক।

            সত্তরের দশকে লেখালেখি শুরু। কলকাতার সত্তরের দশকের "সাপ্তাহিক প্রতিশ্রুতি" সঙ্গে যুক্ত পত্রিকার অন্যতম সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। আশির দশকের মাঝামাঝিতে লেখালেখিতে বিরতি। আবার বন্ধুদের অনুরোধে কামব্যাক। 

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : সাতটি

) নির্মেদ আলোর বারান্দা ( মন্দাক্রান্তা পুরস্কার,২০২১) ) নির্ঘুম রাতের ইশারা ) নিবিড় দাঁড়িয়ে থাকে ) অমিত মুগ্ধতার কাছে ) অনেকদিন দুঃখিত হইনি ) Parallel rides ) অন্য মনে সজীবতা 



জীবন সংগীত

 

সরু ​আলপথ দিয়ে পৌঁছে যাই গ্রামে

পাশে থাক সবুজ ধানখেতের দোলা

মাটির গন্ধে যেখানে দিব্য সন্ধ্যা নামে

বিশুদ্ধ হাওয়ায় মন হয় উতলা।

 

গ্রাম শহরকে একসূত্রে বাঁধো যদি

মন্দির মসজিদ গির্জা ধরুক হাত

বয়ে যাবে ভালবাসার সুস্নাত নদী

কেটে যাবে জীবনের সব অন্তর্ঘাত।

 

মানুষের জীবন অন্তঃসলিলা নদী

বয়ে চলে নিরুদ্বেগ অবিরাম টানে

বয়ে চলে জীবনের মরণ অবধি

এইভাবে খুঁজে যাই জীবনের মানে।

 

বোধোদয় হয় কোনটা হিত-অহিত

মাটি-গন্ধে খুঁজে পাই জীবন সংগীত।



একটি দিন

 

আমার জন্য একটি দিন রেখো কাছে

আমার একটি সন্ধ্যা হোক বিরচিত

তুমি সেইসব যদি ফেলে এসো পাছে

আমাকে এজন্য হতে হবে বিচলিত?

 

কোনকিছু প্রত্যাশার মধ্যে থাকে সুখ

সুখ তো নিজেই নিজেকে রাখে গোপন

মানুষ আসলে জন্মাবধি সর্বভুক

বরং সুখ-চারা করে যাক রোপণ।

 

দিনান্তে আমরা পাই যে গোধূলি আলো

এই আলোর জন্যই তো সম্মুখে আসা

তুমি যদি সন্ধ্যার প্রদীপখানি জ্বালো

দিনের নাম দেব আমি ভালবাসা।

 

একটি দিন রেখো শুধু আমার জন্য

ভালবাসার সুখে হোক না তা অনন্য!


ভরসা

 

কার ওপর ভরসা করব আমরা 

কার ওপরই বা ভরসা করে থাকি

বয়স বাড়লে কুঁচকে যায় চামড়া

বয়স ? তবু বয়সেই ভরসা রাখি।

 

সুদিন সুজন ছেড়ে চলে যায় দূর

এক সময় থাকে অনেক প্রতিশ্রুতি

অনেক কথা অনেক আলাপ সুর

পরে মনেহয় জীবন তো তুচ্ছ অতি।

 

জীবন কখনোই নয় সরলরেখা

জীবন জীবনের মতই চলে যায়

কেউ কি করেছে কারও জন্য অপেক্ষা

সামনে সময়ই দাঁড়িয়ে, নিরুপায়।

 

তবে ভরসা কিসের? সামনে মহাকাল

দাঁড়িয়ে, বিছিয়ে রাখে এক অন্তর্জাল।



ভোর

 

পাখির ঠোঁটে নামল অপৃর্ব সকাল

তার আগে লাবণ্য ছড়িয়েছে আকাশ

প্রকৃতি এভাবে কি ছড়ায় মায়াজাল?

খবর যদি রাখত পুবের বাতাস!

 

কজন আর দেখেছে শান্ত স্নিগ্ধ ভোর

কজন দেখে ভোরের সেই স্বর্ণরেণু!

কজন দেখে সেই স্বপ্নের মায়াডোর

সকালে গোঠে রাখাল নিয়ে যায় ধেনু।

 

আকাশ চালনা করে বিশ্ব সংসার

আকাশকে তাই উদার হতেই হয়

সে যদি নিয়ে নেয় সব কিছুর ভার

থাকতে পারে না আর কোন সংশয়।

 

সুপ্রসন্ন ভোর দিয়ে শুরু হোক দিন

প্রতিটি ভোরের কাছে রেখে যাব ঋণ।



চেনা

 

চেনা চারপাশ অচেনা লাগছে কেন

কাছের লোকেরা কিভাবে হল দূরের

শোনা যায় হ্রেস্বাধ্বনি আর অশ্বখুরের

অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটে চলেছে যেন।

 

সকলের সামনে কুয়াশার দেয়াল

যেন হেমন্তের দিনগুলি এল ফিরে

এই সময় নিজেকেই রাখো খেয়াল

চারিদিকে ভাইরাস রয়েছে যেঘিরে।

 

নিজেকে চিনি না অন্যকে চিনি কি করে?

চেনা এখন অচেনা শব্দে রূপান্তর

অচেনা ঢুকে গেছে প্রতিটি চেনা ঘরে

ঘর নয় যেন এটা যন্তরমন্তর।

 

খ্যাপা খুঁজে ফেরে আজ পরশপাথর

চেনা বন্ধুগুলোই হারাই অতঃপর।


ব্যতিক্রম

 

নির্মেঘ আকাশ দেখি জানলা থেকেই

দেখা যায় ভালো দ্বিতীয় হুগলি সেতু

মন ভালো হয় তবু এসব দেখেই

হাসপাতালেই শুয়ে রয়েছি যেহেতু।

 

মনখারাপের বেশ​ ​কিছু উপজীব্য 

রয়েছে এখানে, উপেক্ষা করছি সব

মনকে প্রবোধ দিই রয়েছি তো দিব্য

আছে প্রিয়​ ​কিছু ব্যক্তিগত অনুভব।

 

রাজা ধর, চিকিৎসক, নাকি ভগবান

মানুষ হয়ে জন্মে এভাবেও তো পারে

প্রেরণা এঁরা সবাইকে জুগিয়ে যান 

প্রতিটি রোগীকে বেঁধে রাখে ফুলহারে।

 

নিরাশজীবনে যতই ছড়াক বিভ্রম

এসব চিকিৎসক এখনো ব্যতিক্রম।


যাপন

 

জীবনে একটি চেয়েছিলাম যাপন

নিবিড় হয়ে কেটে যাবে সুষ্ঠু নিষ্ঠায়

কতবারই করতে চেয়েছি আপন

ভরাতে পারেনি তাকে সাদা পৃষ্ঠায়।

 

একটি অমল জীবন চাইতে পারি

একটু প্রমিত সুস্থ সুখের আশায়

যদি জীবনে কখনো এমনই হারি

পুষিয়ে দেব ঠিক নিজ ভালবাসায়।

 

কাটিয়ে দিচ্ছি সময় এক ছাঁচে ফেলে

যাপনে আছে কিছু ভালো লাগা ঘোর

কাটিয়ে দিতে চাই উদ্দাম হেসে খেলে

জীবনে আসে একটি শান্ত স্নিগ্ধ ভোর।

 

যাপনে বেজে ওঠে ভোরের সানাই

জীবন মানে দীপ্তি আলোক রোশনাই।



আশায় আশায়

 

এই যে এলোমেলো হাওয়া চারদিকে

এই যে আলুথালু জীবন সংশয়

গাঢ় থেকে জীবনের রং হয় ফিকে

এইভাবে অকারণ শক্তি- অপচয়।

 

অথচ জীবন মানে বয়ে চলা নদী

ভাসিয়ে দেয় নদীর উর্বর দুটি পাড়

এইভাবে সমানে চলতে থাকে যদি

জীবন হয়ে ওঠে দুর্বল অসাড়।

 

সুবাতাস কি আর বইবে কোনদিন

ফিরে আসবে আবার সেই সুদিন

নাকি জীবন নদী হবে জীর্ণ ক্ষীণ

কার কাছে রেখে যাব পরবর্তী ঋণ!

 

জীবনে কেউ দিয়ে যায় কিছু ঝাঁকি

আশায় আশায় নদীতীরে বসে থাকি। 

 



 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন