রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৫

মাসুদুল হক-এর দীর্ঘ কবিতা


কাঠের কফিন

১.
একদিন আমি শঙ্খপাণির কাছে যাব
মোমে গলা সমুদ্রের ধ্বনিমাখা 
তার চোখ; 
ধূসর অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে... 
প্রদীপের আলো তার মৃত ত্বকে 
প্রত্নতাত্ত্বিক স্বপ্ন ফুটিয়ে তোলে। 

কাছাকাছি সমতল দেশে
যেখানে তারা তাকে খুঁড়ে বের করেছে;
শীতের বীজ তার শেষ উষ্ণতা
জাগিয়ে রেখেছিল স্বপ্নচারীর 
কবোষ্ণ ঠোঁটে

আসলে প্রাকৃত মুখ নগ্ন
এলোমেলো দীর্ঘ দীঘল চুল 
মাটির মাদুলি আর কোমরবন্ধ
নিয়ে মহাকাশ বিমর্ষ... 

আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব
দেবীর কাছে।

সমকাল  প্রতিভার আঁচলে
বস্ত্র টেনে 
তাকে সাজিয়ে রাখবে 
যুগের মন্দিরে 
সাধুর রক্ষিত দেহের কাছে

বিগত বাতাসের তরঙ্গে
মধু ও রেণুর সংযোগ 
নিয়ে উড়ে আসবে মৌমাছি 
যখন তার কলঙ্কিত মুখ
 বিশ্রাম নেবে মৌচাকে।

২.
আমি পরনিন্দার ঝুঁকি নিতে পারি

লোকে যেভাবে যাদুবিদ্যার জল 
ছিটিয়ে পবিত্র করে তোলে 
কাঠের কফিন 

আমি সেখানে মৃত স্বরলিপি 
ঘেটে 
আমাদের পবিত্র ভূমি এবং প্রার্থনার
 অঙ্কুরিত বীজ 
জ্যোৎস্নামাঠে খুঁজে পাব 

যখন বিক্ষিপ্ত, অতর্কিত
স্লোগানে ভেসে উঠবে 
পোড়া মাংসের গন্ধ;
মজুত করা লাশ
নিজেদের মুখ দেখবে 
ক্ষেত-খামারে লুকিয়ে 
রাখা প্রহসনের আয়নাঘরে 

কারো ত্বক এবং কারো দাঁত
পাহাড় থেকে হারিয়ে যাওয়া 
পাথরের গায়ে মিশে যাবে 
উত্তপ্ত পিচের কালো আঠায় 

দখলবাজ প্রশাসন 
তার নাম দেবে 
বদলে যাওয়া উন্নয়ন 
স্বৈরাচারের লাইন বরাবর।

৩.
আসলে দেবীর দুঃখের গভীরে 
থাকে কিছু কান্নার স্বাধীনতা
সে ভক্তির পিঠে চেপে 
ধর্মের নামতায় উৎসে ফেরার 
অংক মেলায়

মহাকালের ইশারাকে 
আঙুলের মুদ্রা 
জনতার চোখে ছড়িয়ে দেয় 
আর লাল টুকটুকে জিহ্বা 
 নীরব, খুব অসহায়!

জিহ্বার ভাষা আমাদের 
জানা নেই 
শুধু মিথ্যাবাদী মেয়েটির 
বেশি কথায় 
শঙ্খপাণি দেশটাকে 
তুলে দেয় শূন্যবাদী পেঁচার কাছে 

আর কিছুই থাকে না 
ভাতঘুমে 
ফোটে না সন্ধ্যামালতী
আমরা তখন কাঠের কফিনে
মৃত্যুর ভেতর ঘুমের স্বপ্ন দেখি 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন