পোকাসাম্রাজ্য
বীভৎসদের অনুসরণ করতে করতে আরও বীভৎসের
জন্ম হয়। কোথায় রাখবে বালিশ বিছানা
উলের পোশাক আর নয়ন চঞ্চল। বীভৎসরা এসে খেলা করবে
বেহুলার চারপাশে। কোথায় রাখবে
অনুকূল শ্বাস-প্রশ্বাস পরমেশ্বর মায়াগুণ
মাথার ওপরে কল্পতরু বাতাস
নিজেই কমিয়ে আনছে তন্ত্রসাধনা।
এসো ভাই, আপাতত বিড়িগুলো নিভিয়ে মিছিলে গিয়ে দাঁড়াই।
এসো ভাই, রোদে শুকোতে দেওয়া বিউলি ডালের বড়িতে
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের স্তর পড়ে গেছে কিনা জিজ্ঞাসা করি
ভৌত বিজ্ঞানের কাছে।
বীভৎসের জন্ম যেকোনো মাসে হতে পারে, কোনো
অন্তঃসারশূন্যতায়, আগমনী অথবা সজল বিজয়ায়।
বীভৎসরা কি কেবলমাত্র
সরোজ দত্তকে ধরে নিয়ে যাবে?
রামপ্রসাদকেও ধরে নিয়ে যেতে পারে।
হয়তো আমরা কেউ গঙ্গায় সাঁতার কাটতে চলে যাবো
এমত দৃশ্য দেখে।
ঘোড়ার পিঠে চড়ে চলে যাবো জীবাত্মা
থেকে পরমাত্মায়।
এমত আনন্দের কথা ভাবতে নেই চন্দ্রা।
যাত্রাকালে হয়তো মাথায় পতপত করবে
স্বরূপশক্তি হ্লাদিনী শ্রীরাধে।
বীভৎস চশমা ছাড়াই সেইসব দেখবে, উমাকে দেখবে আর
লক্ষ্য রাখবে কারা কারা গোবিন্দদাসের
পদাবলী গাইতে চেয়েছে।
যখন চার অংকের ক্ষুদ্রতম এবং বৃহত্তম সংখ্যা নিয়ে মজা করবো
কিংবা ধরো অঙ্কিতা যেভাবে বাসরঘরে
স্বামীকে বলেছিল স্তম্ভচিত্র অঙ্কন করো, ঠিক সেই মুহূর্তে
সুতীব্র সংঘাতে অনেকানেক উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।
আমরাও রাতের আকাশে নক্ষত্র গুনতে গুনতে
অঙ্কিতার অভিজ্ঞতার মতো এক বামনের মুখোমুখি
হয়ে যেতে পারি। আমরা ভয় পাবো না কারণ
রণহুংকারের কথা আমরা তো
অনেক জেনেছি জলদস্যুদের কাহিনি পড়তে পড়তে।
এই সেই বামন যে মিশরের নীলনদে আর সবরমতি
আশ্রমেও ঘুরে বেড়ায় ভয়ঙ্করভাবে নিজের মূর্তি বদল ক'রে।
হাতিগুম্ফা শিলালিপির দিকে যখন তুমি একদৃষ্টিতে
তাকিয়েছিলে, কিংবা ধরো ভীমবেটকার
সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাঠ করছিলে মগ্ন চৈতন্যে,
তোমার ঘাড়ের ওপর ঠান্ডা একটা হাত
থেকে প্রাচীনতম রক্তপ্রবাহ বয়ে চলেছে।
শাসকেরা যেসব পরম উত্তম বর্ণমালা দেখায়
ক্ষমতায় আসার আগে,
ভূমিকম্পের অনিশ্চয়তা বিষয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়।
ক্ষমতায় আসার আগে শাসকেরা তৎকালীন প্রতিটি ধর্ষণ
কাণ্ডের বিচারে কোনো শূন্যস্থান রাখতে চায়নি।
অথচ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিদিন
বিদ্যালয় থেকে পবিত্রস্থান পর্যন্ত সর্বত্র
একের পর এক শতাব্দীকে ধর্ষণ ক'রে
গলার নালী কেটে দেওয়া কতো সহজ শাসকের প্রদত্ত মাত্রায়।
বীভৎস দাঁড়িয়ে থেকে শীতল রক্তগঙ্গা পরিচালনা করে।
শাসক সমস্ত দেখেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবে না
জনতার অনুকূলে।
কচুরি পানার মতো গজিয়ে ওঠা
বুদ্ধিজীবীরা সাংবাদিক সম্মেলনে
বলে দেবেন, এসব ছোটখাটো সামাজিক ব্যাপার।
এই জটিলতা কোনোভাবেই সমাধানযোগ্য নয়।
সহজ মা'র গান শুনতে শুনতে দেখি
হঠাৎ আমার কলার ধরে কেউ টান দিচ্ছে।
চিৎকার ক'রে উঠি, কে ভাই ওলাউটো,
গান শোনা মাটি ক'রে দিলে।
কে ভাই অস্ত্র হাতে সীমান্ত পেরিয়ে এসে
আমাদের চাষের জমিতে পেচ্ছাপ করে গেলে।
কে ভাই জংধরা যন্ত্রপাতির হাড়গোড়
শহরের জলাশয়ে ছুঁড়ে দিয়ে গেলে রাতের অন্ধকারে !
বসন্ত এসেছে বলে দু'চার খানা নতুন পোশাক বিক্রি হলেও
ওষুধের দোকানে ভিড় ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
প্রত্যেকের বয়স বাড়বে সেটা স্বাভাবিক
হলেও হঠাৎ কারও মৃত্যু ঘটে যাবে
এটা কিছুতেই মানা যায় না।
বীভৎসের কথা ভাবতে ভাবতে তুমি ভুল ক'রে
বহুবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলবে সেটাও কিছুতেই মানা যায় না।
দেখো, চৈত্র মাস শেষ হয়ে বৈশাখ
পড়ে গেলেও আমগাছে
এখনো মুকুল আসেনি।
আমরা যে সারারাত ধরে দিনের পর দিন
অভয়ার ধর্ষণের প্রতিবাদ করলাম,
গির্জা মন্দির মসজিদের জোয়ারে
তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
দেখো, পুলিশগুলো দাঁত কেলিয়ে হাসছে
নারীদের মিছিল দেখে। মনে হয়, বীভৎস কোনো
ভুতপ্রেতের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে শহরের
প্রতিটি যানবাহন আর ভৌতিক ড্রাইভার।
পুলিশের কানে কানে ফিসফিস ক'রে মিছিলের মাঝখানে
ঢুকে পড়ছে চলন্ত বাস।
আমাদের ইড়াগুলো কাঁদে রাস্তায় বসে
আমাদের পিঙ্গলাদের পেছনে ধাওয়া
করে ব্রডগেজ সন্ত্রাসবাদী।
সুষুম্নাগুলো পাল তুলে নৌকোযাত্রা শেষে দুর্গন্ধময়
রেস্তোরাঁর সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে।
দাও আলো হে কার্পাস তুলোর গাছ
দাও আলো হে ঠাকুরঘরের সন্ন্যাসী
দাও আলো হে নিপুণ বংশীবাদক।
আমাদের জামাপ্যান্ট থেকে কিছুতেই
হাসপাতালের গন্ধ দূর হচ্ছে না।
ফুলকপির ক্ষেত খামারে
পোকাসাম্রাজ্য দেখে এসেছি ভোরবেলা
রাতের আলোগুলো তখনো না নিভিয়ে
সিকিউরিটি গার্ড ঘুমিয়ে পড়েছে।
সিকিউরিটি গার্ডের ডিনার টেবিলে
গতকাল যারা হামলা করেছিল
তাদের পোশাকে লেখা ছিল
হাই হিটলার হাই গোয়েবেলস।
আলো নিভিয়ে জানলা দিয়ে দেখেছি।
দেখেছি পুলিশের গাড়ি এসে বিষযুক্ত
অসংখ্য মদের গ্লাস ঝুড়ি ভর্তি ক'রে
তুলে রাখলো অদ্ভুত কালো বাক্সে।
যেন কিছুই দেখিনি এমন ভান ক'রে পড়তে লাগলাম
বিদ্যাপতির প্রার্থনা পদ।
তবু আমি জানলা বন্ধ না ক'রে গোপনে দেখে নিলাম
পুলিশের সঙ্গে কালো পোশাক পরা কিছু লোক
ফিসফিস কথা বলে চলে গেল।
বুঝলাম, সুড়ঙ্গের ভিতরকার আকৃতি সাজাতে
ফয়সালা হয়ে গেল গোপন গতিপথে।
আপাতত কোনো জলাশয় দেখতে পাচ্ছি না নিকটে।
দেখতে পাচ্ছি না কোনো নিভৃত চায়ের দোকান।
আকাশে যতগুলো ঘুড়ি উড়ছিল, প্রত্যেক ঘুড়িকে গুলি ক'রে
নামিয়ে আনা হয়েছে মাটিতে এবং
ঘুড়ির সুতোকে অনুসরণ ক'রে গ্যাস চেম্বারের পরিচালকেরা
পৌঁছে গেছে শৈশব বিধৌত মানুষদের ঠিকানায়।
অন্ধকারের আক্রমণ থেকে মানুষকে
বাঁচানোর জন্য যতো জন পাহারাদার
ছিল বিভিন্ন পোস্টে, তাদেরকে ট্রান্সফার ক'রে
দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর আদিমতম সমুদ্রে।
রাজাকার বলছে, তার হিসাব মতো
জলপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ করা হবে।
রাজাকার বলছে, অঙ্কন পদ্ধতিতে
নারী যেন চিরকাল দাসী বৃত্তিতে নিয়োজিত থাকে।
যোগফল ভাগফল সবকিছুতে উচ্চ ফলনশীল পোকামাকড়
মিশিয়ে দিতে চাইছে রাজাকার ও তার বীভৎস
যৌন মানচিত্র।
বাতিঘরে রাখা ছিল যতো কীটনাশক,
আমাদের ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পে রাখা
ছিল যতো থার্মোমিটার,
আমাদের সমর মাস্টারের কোচিং
সেন্টারে রাখা যতো ফুলের কেয়ারি,
সর্বত্র ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত গ্যাসে ভরে গেছে।
পাল্টে গেছে রচনারীতি ফোবিয়ার
বিভিন্ন রূপ আঁকতে আঁকতে।
পাল্টে গেছে নতুন শতাব্দীর বাঙালির
আচার আচরণ।
পাল্টাবে সত্য সবকিছু, কিন্তু তাতে
ধর্ষকামের গন্ধ লেগেছে গভীর।
প্রয়াতকে সামনে রেখে অশ্রুবিসর্জনের
ভেতরে এতো এতো নাটকীয়তা লেগেছে।
কিন্নরদল কি পারবে না আমাদের যাপন সংগীতকে
তুচ্ছতম ক'রে দেওয়া থেকে কোনোভাবে আটকাতে।
কলকাতা কোনোদিন এতো অভ্যস্ত
ছিল না ঘুমের ট্যাবলেটে।
প্রতি সপ্তাহে ঘুমের ট্যাবলেটের ব্রান্ড চেঞ্জ ক'রে ক'রে
কলকাতা এখন সাইক্রিয়াটিক সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।
বীভৎসের ইতিহাসে কতো অস্থিরতা
কতো ঘোলাজল স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে
কলকাতা খুব ভালো ক'রে জেনেও
বামপন্থীদের আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছে না আর।
আমরা অগ্রজ কবিদের নিয়মিত
প্রয়াণের খবর পেয়ে দেহ সৎকার হবার
আগেই ঘোষণা ক'রে দিচ্ছি স্মরণসভা।
কবিদের স্মরণসভা যেন কবিতা উৎসবে পরিণত হয়ে গেছে।
ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স
আসছে ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে নিয়ে আসছে
ভাইরাস। সঙ্গে নিয়ে আসছে দূষিত রক্ত।
নিয়ে আসছে হাড়হিম গুঞ্জন।
আমাদের আত্মত্যাগের ভেতরে
শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছে বীভৎস
বামপন্থা আর বীভৎস ডানপন্থা।
যে পাখিগুলো সামান্য আশ্রয়ের জন্য
আসে, তাদেরকে তিরবিদ্ধ করেছি।
বীভৎস গণতন্ত্র এসে এক সামান্য
বৃদ্ধার দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘর
দখল ক'রে গেল।
তারপরেও নির্লজ্জ গণতন্ত্রের জন্য
পার্লার থেকে চুল কালো ক'রে
আমরা মিছিলে মিছিলে পালন করেছি মানববন্ধন।
এসেছে বসন্ত, কী হবে আর আমার
এসেছে পলাশ ফুল, কী হবে তোমার
কতো তিরবিদ্ধ পাখির মৃতদেহ ভাসছে হ্রদের জলে।
কিশোরীকে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ক'রে
ফেলে গেছে সন্ত্রাসবাদী।
কার কাছে যাবো আমি, বুদ্ধের কাছে
নাকি শ্রীচৈতন্যের কাছে এ বেদনা জানাতে।
আমার ঘরে লেনিনের ছবি মাও সেতুং-এর ছবি আবিষ্ট হয়েছে
মাকড়সার জালে। কেউ আর কোনো দায়িত্ব নিতে চাইছে না
গভীরতর অমঙ্গলের কারণে।
কোনো ট্যাবলেট বা সিরাপে অথবা কোনো বিপ্লবী দর্শনে
এমত ব্যাধি আরও বেশি সংক্রামক হয়ে পড়ছে।
শুধু সংখ্যায় বা কিলোমিটারে নির্ভর না ক'রে
খুলে বসে পড়ি অনাদিমঙ্গল।
স্নেহময়ী মাতৃভূমি আমার পরবর্তী
বীভৎসের পথ রোধ করো যাতে হরিকে
পুনঃপুনঃ ঝর্নাধারায় দেখে যেতে পারি।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন