সন্নিহিত রাত্রির গলিপথে কিছু ছেঁড়া তার। এই তো অভিজ্ঞান।
ভোরসময়ের আল ধরে শিশুসূর্য খেলাসাথী, যাত্রাপথে দিশারি নতুন আলোর মোহগান। মেতে উঠেছিল মন। দীঘল সময়পথ পার হতে চোরকাঁটা, বাবলাকাঁটা, কাঠপিঁপড়ে, ইঁদুর। পরিণত রোদের ভ্রূকুটিকুটিল দৃষ্টিবিষে চামড়া ঝলসে যায়, পা কেটে ফেটে রক্ত। অসমান রাস্তা ঢেকে কুচিপাথরে পাহারা, চোখা দাঁত, নখে ছিঁড়ে যায় পায়ের পাতা। ফণিমনসার ঝোপ রোমান সৈন্যের মতো আকাশপানে তুলে রাখে অস্ত্রসম্ভার। বেঁধাই তাদের পবিত্র কর্তব্য। কঠিনের অভ্যর্থনা জীবনের ব্রত, তাই হেরে যাই, ফেটে যাই, ক্ষতমুখে রক্ত ঝরে। কাঁকড়ে, কাঁটায় রক্তে লেখা হয় সংগ্রামের ঘোর ইতিহাস। পায়ে্র পাতায় যুদ্ধক্ষত শুকনো পলাশ।
ঘৃণায় বাঁকিও না ঠোঁট। সময়ক্ষত বয়েই পথ চলা।
পথের বাঁকে নতুনের উৎসব। চড়াগ্রামে কলকাকলি গায়ে বেঁধে যেন ভারি বৃষ্টির তোড়। চড়া রোদ্দুরের পথে পাড়ি জমিয়েছে ওরা। অনিশ্চয় বেঁধেনি পায়ের পাতা, দাগ লাগেনি আজও রক্তের আলতায়। ওদের দেখে স্মৃতি বড় উচাটন হয়। পর্দা ওঠে, ওঠে, ওঠে না। মনে পড়ে, পড়ে না। মনে হয় সবই কী ভুল ছিল? এমন দিনের ছবি কেন দোলে আয়নাঘরে?
হুড়মুড় করে এসে যায় অচেনা দিনের ঢেউ, ভাসিয়ে নেয় যা কিছু পুরোনো।
নতুন জীবনস্রোতে ঠিকরে যায় মধ্যাহ্নসূর্যের আলো, ধাঁধা লাগে চোখে। অসম্ভব আশার বুলেট ট্রেন ছোটে মনের গোপনে। নতুনের স্রোতজলে ধুয়ে নেব সময়ের ক্ষতমুখ, ঘাসের গালিচায় পা ডুবিয়ে মুছে নেব পথশ্র্ম, টাটানো চামড়ায় হালকা মলম দেবে মরমী বাতাস। এইটুকু চাওয়ার দিকে নতুন সময় অব্যর্থ নিশানায় দুচোখের নিষ্ঠুর পিস্তল থেকে ঔদাসীন্য ছুঁড়ে দিলে নিথর পড়ে থাকে বিভ্রান্ত আশার শব।
ছেঁড়া হৃদয়ের তার কেনই বা গান বাঁধে আজও তাকে নিয়ে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন