রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৫

সমরেন্দ্র বিশ্বাস-এর কবিতা

ভাসমান সিঁড়ি, হারাণো নেবুলা দিন

একটা সিঁড়ি আকাশের পথে!
তোমার হাত ধরে আমি, আমার হাত ধরে তুমি –
পথটা আকাশমুখী!
সিঁড়ির নিচে সমুদ্রের অথৈ ভয়, তীব্র হাঙরেরা –
সেদিন সিঁড়িটা কি আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছিল স্বর্গে?
স্বর্গটর্গের ঠিকানা জানি না, সেসব দিনে শুধু এটুকুই জানতাম
বাতাসে ঝোলানো কাঠের সিঁড়িগুলোয় পা রেখে রেখে
হাত ধরাধরি যেদিকে হাঁটছি, সেটাই নেবুলা নক্ষত্রের সিঁড়ি।
তুমি বলেছিলে – ‘নন্দনে শেষ পর্যন্ত যদি না পৌঁছাই, আফসোস নেই
এটুকুই জানবো এখন তোমার হাত আমার হাতে,
একটু পরেই আমরা ছুঁয়ে দেবো বিভ্রান্ত চাঁদ!’
                           
অনেক অনেক বছর পরে
একদিন যখন আমাদের বয়েস বেড়ে গেছে,
একজন অন্যজনকে কয়েক যুগ দেখি নি,
এমন একটা মেঘলা দিনে দূরবর্তী শহরের দুটো ব্যালকনিতে
আমরা দুজনেই দেখছি একটা দৃশ্য ---
হাওয়ায় হাওয়ায় সামনেই দুলছে
আকাশচুম্বী একটা কাঠের সিঁড়ি, কি আশ্চর্য,
সেই সিঁড়িপথটাই যৌবনে আমাদেরকে নিয়ে যেতো
কোনো এক অচেনা নেবুলায়,
অনন্ত নীহারিকা কিংবা নক্ষত্রমন্ডলীর কোনো এক গোলাপী আকর্ষণে!
 
আগামীতে তোমার সাথে আমার আর কক্ষনো দেখা হবে না!
তবু আমাদের সামনে এখনও পরিত্রাণহীন
একটা কম্পমান সিঁড়ি, ধাপ ধাপ – ভাসমান কাঠের,
একটা কম্পমান সিঁড়ি, ধাপ ধাপ – ভাসমান অন্ধকারের,
আর
আবেগময় হাতের মুঠোয় জড়ানো নীল নীল স্পর্শের উত্তাপ
আজও ডুকরে কেঁদে ওঠে বিকেলের আলোয় –
কেন আমরা একজন অন্যের নাম ধরে ডেকেছিলাম?
কেনই বা আকাশের ভাসমান সিঁড়িপথে,
হাতে হাত, নেবুলা নক্ষত্রের দিকে দুজনে হেঁটেছিলাম?
কেন? কেন? 

1 টি মন্তব্য: