একুশ বছর দিল্লিপ্রবাসী, জন্ম ও বেড়ে ওঠা বহরমপুর শহরে। কর্মসূত্রে কেন্দ্রীয় সরকারী আধিকারিক হলেও ধর্মসূত্রে ও মর্মসূত্রে পরিচয় কবি, একান্তভাবেই।
উনপঞ্চাশ বছর বয়সী কবি তাই কবিতাকেই জীবনদর্শন হিসেবে বিশ্বাস করেন।
নৃত্যনাট্য
এখানে বেঁধেছি যত নাচের নাটক মত ঘন
রঙিন শাড়ির ঘেরে ফুলে ফেঁপে ওঠা যত শ্বাস
মজুত আলোর রাশি, বাঁশিহারা পান্থস্বজনও
এখানে পাখিরা শেখে কথাকলি, নূপুরবিলাস।
তাধিনা বিধান যত, নিক্কনে আজও কানাকড়ি
রূপোর রেকাবি ভরা বিধাতা বা ধানের ঝলক
রূপকথালেখা পাতা জেনে গেছে নবসঞ্চারী
টায়রা, টিকলিসুধা, মানতাসা, ঝুমকো নোলক।
রোদের ঐক্যতানে ছিলাকাটা গানের নূপুর
দ্যুলোকে গ্রহের ফের বীতরাগ নাটিকার মত
মেঘের কেতাবে রাখা আদরের নাগরনূপুর
বহুব্রীহি আলোর সমাস, পাখিরাও যদি সম্মত।
আঙিনায় নাচের মহরা, বহুরূপ ধরে আসে তাল
মোহরে ভরেছে জনপদ, একা আমি ছন্দমাতাল।।
রূপকার
বিষাদ গড়িয়ে পড়ে নবধারাপাতে
ঝুটো শংসায় তোমাকে গড়েছি মানবী
রাত নেমে আসে কুয়াসার গিরিখাতে
দেয়াল ধুয়েছি, নীলরঙ, ডিসটেম্পার
নিমিলিত কাল, উৎসারণের রোহিণী
রূপকার যদি, ছিঁড়ে নিয়ে যাই পাঁচালি
শাপিত বিমান, গুঁড়োগুঁড়ো হয় ভূমিতে
মাদিগর্জনে কেঁপে কেঁপে ওঠে মেদিনী
চিটেগুড়ে ভেজে সঙ্কল্পের ধান্দা
ধান সরিষারা একাএকা নদীমাতৃক
সমকাল যদি বিছিয়েছে অববাহিকা
ঝুটোফুল দিয়ে মালা গেঁথে রাখে মালিনী
শিকলে বেধেছই মেঘরঙ দ্রোহলিঙ্গে
এখনও আমি মানবী গড়তে পারিনি!!
দেবযানী
টোপর পরেছে ঘাস। বছর। মাস
লুপ্তপদ। ঘুঙুরে ভরেছে সাজঘর
কাপড়ে ঢেকেছে ক্রিয়াপদ। হাড়মাস
দেবযানে শকুনের ভিড়। সম্বৎসর…
কিঙ্কিণী নারীদের ঢল। গন্ধমূষিক
সমতলে টিকে জ্বলে। প্রাতিকামি রোদ
ধিকিধিকি গাছের বাকল। জানালার শিক
তিহারের গাঢ় অঞ্চল। সুখের পারদ।
মেনেছে কুব্জা হীরামন। যত মালিনীরা
নূপুরে বেঁধেছে রথচাকা, নাকি ঘুম
হ্রদ নয়। দীঘি নয়, নদী উপশিরা
শ্বাপদেরা পুষেছে হাঙর। বাসনাকুসুম…
পল্লবে ছেঁচাপানমেধা। ঈশ্বরী যায়
কুসুমিত পাহাড়ে বা হাড়ে, দুব্বো গজায়।।
ধৃতরাষ্ট্র
কৌপীনে বেঁধে রাখা সান্দ্রতা
চতুর্দিকে লালকালো উৎসব
দামামায় ভাঙ চরস
বিজয়তিলকে কালো ভ্রমর বুঝি!
রাষ্ট্রের ঘরে ধূসর মালকোষ
রাষ্ট্রের ঘরে গণ্ডাকাটা ব্যাটাছেলে,
চোখের পট্টি খুলতে খুলতে ভেঙে যায় জল
কলস ভরে বছরবিউনী রানি…
ভেজা কৌপীন রাজ সিংহাসনে
শয্যাদৃশ্যে কোনও অন্ধত্ব নাই,
গান্ধারী নন,
অন্য কেউ জন্ম দিয়েছিল দুঃশলার।
প্রসব
দু’দাগ ওষুধ পায়নি বলে যে মেয়েটি শাপমন্যি করলো স্বাস্থ্যশিবিরের দিদিকে,
তার এখন ওপরদম। প্রসববেদনায় ছটফট করছে বারবারান্দায়। দুটি কুকুর
ভাদরের সাধ মেটাতে মেটাতে স্থির হয়ে গেছে, অবাক তাকিয়ে আছে
মেয়েটির দিকে।
মেয়েটির শাড়ি সরে গেল, নাড়ি সরে গেল, ভারি শলাকা এসে ঘাই মারলো
স্থলপদ্মের গর্ভকেশরে। দু’দাগ ওষুধের জন্য গালমন্দ করেছিল যে মেয়েটি,
সে এখন কাটা পাঁঠার মত ছটফট করে মরে। যন্ত্রণায় নীল হয়ে আসে
স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডটিও!
নীলপাড় স্বাস্থ্যশিবিরের বড়দিও। স্থাণুবৎ দাঁড়িয়ে। নাম লেখার বাদামী রেজিস্টার
যে কোথায় ফেলে এসেছেন, খেয়ালই করতে পারছেননা। শরীরজুড়ে শুধু শাপমন্যির
বিষ, নীলাভ। বিস্ময়ে দেখছেন, স্বাস্থ্যশিবিরে আছড়ে পড়ছে জলপ্রপাত, তিরবেগে
ছুটে যাচ্ছে মোহনার দিকে।।
অভিভাষণ
কবিতা লিখতে গেলে আওয়াজ হয় একটা
অনেকটা আর্তনাদের মত
অনেকটা অট্টহাসির মত
অনেকটা অভিভাষণের মত
যদি ঘুঙুর চাও, বলবো, সে একপ্রকার নৃত্য
যদি কলম চাও, বলবো, সে একপ্রকার কল্পনা
যদি পুতুল চাও, বলবো, সে একপ্রকার ঈশ্বর
কবিতা লিখতে গেলে একটা যৌথখামারে বসে
আতসকাচে ঝলসে নিতে হয় রাতের পৃথিবী।
ধরেই নাও জ্ঞান দিচ্ছি তোমাকে। আঘাতে
নুন ছিটিয়ে চেটে নিচ্ছি স্বপ্নে দেখা পাগলাচণ্ডী
ধরেই নাও, উল্কি ফুটিয়ে তুলছি গাঁদাল পাতারঘ্রাণে।
আসলে কবিতা লেখা একধরণের পারমাণবিক বিস্ফোরণ
শীৎকারের খুব কাছাকাছি
বমনের খুব কাছাকাছি
মন্ত্রোচ্চারণের খুব কাছাকাছি।।









দারুণ কবিতা। অভিভাষণ টা খুন মনে ধরেছে...
উত্তরমুছুনধন্যবাদ ভাই
মুছুন