রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৫

মানবেন্দ্রনাথ সাহা-র অনুবাদ কবিতা

অনামিকা


প্রতিটি পাতা, প্রতিটি ঝোঁপ 

মা, প্রেমচন্দের গল্পে 
এক হামিদ নামের লোক ছিল
দাদির চিমটেওয়ালা
এখানে যে এত মারামারি হয়ে গেল
কোথায় চলে গেল ওর চিমটা? 
সত্যি কি হামিদ বড় হয়ে গেল--
এত বড়,খুব-খুব বড়?
আমার চেয়েও লম্বা, নাকি আমার মতো?
ও কি দাদিকে বাঁচাতে পারবে?

আমি তো দেখেছি--
খুব বুড়ি মেয়েমানুষ 
হুড়োহুড়িতে দৌড়াতেও পারেনা!
মা,তুমি কখনো বুড়ি হয়ে যেও না! 
মা,হুড়োহুড়ি কাকে বলে!
ওতো শুধুই হৈচৈ পাকায়
কে জানে, আমি কখন  স্কুলে থাকব 
আর শুরু হয়ে যাবে দৌড়াদৌড়ি 
তাহলে কে তোমাকে বাঁচাবে? 
ওই দিন টিভিতে দেখলেনা --
দাঙ্গার শুরুতেই মেয়েদের কাপড় ফাড়া হলো
তারপর পেট 
বাচ্চাটার মাথা কাটা গেল হয়ত
পাথরে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে দেয়
যেমন করে তুমি একদিন বেল ভেঙেছিলে 
শরবত তৈরির জন্য! 

মুসলমান জিনিসটা কেমন মা?
সেই ' পঞ্চপরমেশ্বর' -এর জুম্মান মিয়া
ওর খালা,
হাকিম আঙ্কেল আর ওর সেবাইত 
'নিম কে পেড়' সিরিয়ালে ও 
টকমিষ্টি, চটপটি ভাষা বলত যে 
বেয়াদব, শায়েস্তা মানুষগুলো?
ডিমওয়ালা? দর্জি?  আর টাঙ্গাওয়ালা 
জাকির হুসেন আর তবলা,আর তাজমহল চা
শাহরুখ খান আর ওই মা যে--
ওই বুড়ো সরফরাজ 
যে নানির ঘরের ঠিক পিছনের দিকে
ছোট্ট জায়গায় দোকান দিয়েছিল
কোনোদিন বিক্রি না হওয়া সুগন্ধির শিশিগুলি 
কিন্তু সাজিয়ে বসে থাকত ও? 
আর কিছু বাচ্চা কাচ্চা আছে
এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে 
কিছু শুনেছি আমি, কিছু না শোনা থেকে গেল
শেষ যে কথা শুনেছি, হয়ত সে এখানেই ছিল--
দেখা গেছে মেয়ে আর ভাইকে 
ইতিহাস বইয়ের পাতায়
কোনো ছবিতে হয়ত 
আর বলছিল--
এই দেখো, কী ভালোই না ছিল হুমায়ুন 
মৃত্যুর জন্য কী চমৎকার জায়গায়  না বেছেছিল?
লাইব্রেরির সিঁড়ি থেকে পড়ল 
আর কী আনন্দেই মারা গেল!
পড়তে পড়তে ওর নেশা হয়ে গেছিল হয়ত। 
রাত তখন অর্ধেক পার হয়ে গেছে 
প্রচন্ড আর্দ্রতায় ঘুমহীন 
দূরে কোথাও কারোর ঘর থেকে অস্ফুটে ভেসে আসছিল ট্রানজিস্টর থেকে গান।
'পাত্তা পাত্তা, বুতা বুতা হাল হমারা জানে হ্যায়'
এখানকার প্রতিটি পাতা ও ঝোপ জানে আমার অবস্থা। 


[এই সময়ের হিন্দি ভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি অনামিকা। জন্ম ১৯৬১ সালের ১৭ আগস্ট, বিহারের মুজফফরপুরে। বিহার দিল্লি পড়াশোনার জায়গা। পেশায় হিন্দি ভাষা সাহিত্যের  অধ্যাপক দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে।সমকালীন সময়ের কবিরূপে তিনি সুপরিচিত জনপ্রিয়। নারীর ভুবন তাঁর কবিতায় প্রাণ পেয়েছে। তাদের বিষাদ,যন্ত্রণা, কষ্ট, বেঁচে থাকা কিংবা বিহারের দেহাতি মেয়েদের খুঁটিনাটি দিক তিনি তাঁর অভিজ্ঞতায় কবিতায় তুলে ধরেন।তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ' গলত পতে কী চিঠঠি ' ১৯৭৮ প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য কাব্যের মধ্যে আছে -- সময় কে শহর মে, বীজাক্ষর, অনুষ্টুপ, কবিতা মে আউরত প্রভৃতি। তাঁর কবিতা বিভিন্ন ভারতীয় বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সাহিত্যসেতু সহ নানা পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। ২০২০সালে ' উনকী গাথা ' কাব্যের জন্য অনামিকা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলায় তাঁর অনুবাদ সম্ভবত প্রথম। বাংলায় অনুবাদ করছেন বিশিষ্ট অনুবাদক মানবেন্দ্রনাথ সাহা

এখানে তাঁর একটি দীর্ঘ কবিতার অনুবাদ দেওয়া হলো।]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন