শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

মজিদ মাহমুদ-এর কবিতা

ধাত্রী-ক্লিনিকের জন্ম


পৃথিবীতে আসার রাস্তা পিচ্ছিল

নদীর পাড় থেকে শিশুরা যেভাবে পানিতে গড়িয়ে পড়ে

মাঝে মাঝে শামুকের আচড় লেগে পাছার নিচটা কেটে যায়

কিছুটা রক্তপাত হলেও শিশুদের কেউ থামাতে পারে না

শিশুদের দুর্দান্ত কৌতূহল ---

দাইমার হাতের স্পর্শেও তারা বিরক্ত হয়

তাদের পতন অনিবার্য

তবু নদীতে গড়িয়ে পড়া সন্তানদের

নিরাপত্তার কথা ভেবে মায়েরা কিছুটা উদ্বিগ্ন 

এসব ভয় উদ্বেগ থেকে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিকÑ

মাতৃসদন

গাইনি নার্সদের কাজ 

মা হবু বাবাদের ভয় আরো উসকে দেয়া

শিশুদের নদীতে গড়িয়ে পড়ার পথ

পানিবিহীন শুকিয়ে দেয়া

চিরাচরিত জলের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে

মরুভূমির মধ্য দিয়ে গঙ্গার ধারা প্রবাহিত করা

গঙ্গা কি তোমাদের মা নয়?


গাইনি নার্সদের জন্মের আগে মা কি তার সন্তানদের

একা ছেড়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছিল

একটু ভেবো দেখ, শিশুদের আসার চেয়ে

বৃদ্ধদের যাওয়া কি আরো অনিবার্য নয়

তাদের মা নেই

গড়িয়ে পড়ার মতো পিচ্ছিল কোনো পথ নেই

এমনকি সবাই ধরাধরি করে শুইয়ে না দিলে

শেষ পর্যন্ত কবরেও নামতে পারে না

তখন ভাবি কোথায় নার্স, কোথায় গাইনি

কবরের পাশে তো একটিও ক্লিনিক নেই!

অথচ সংখ্যা অনিবার্যতা শিশুদের চেয়ে ঢের

প্রয়োজন ছিল

 


কবরে শুইয়ে দেয়ার পর


এক সময় ভাবতাম মরে যাব বলে সবকিছু দ্রুত দেখে নিতে হবে

সময় ফুরিয়ে গেলে পারব না, ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হবে না

কি কষ্ট করেই না পাহাড়ে ওঠার কসরৎ করেছি

বোকার মতো হিমালয় শৃঙ্গেও উঠতে চেয়েছি

পোখরায় মহাদেবের কেভ, ডেভিস ফল, 

মেঘের মধ্য দিয়ে বিমানের লক্কর ঝক্কর উড়ে চলা

আর কিছুটা হলে তো পা হরকে জীবন কাবার

মানুষ সব সময় বড় কিছু দেখতে চায়

বড় পাহাড়, বড় সমুদ্র, এমনকি মরুভূমিও বড় হতে হবে

ক্ষুদ্র তো বড়কে ধারণ করতে পারে না...

সময় ফুরিয়ে যাবে বলে সন্তানকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া

ললনাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার জন্য তড়িঘড়ি করা

আর কবিতা লিখতে না পারলে ভীষণ মন খারাপ হওয়া

এসব তড়িঘড়ির কারণ হয়তো মানুষ খুব কম দিন বাঁচে

কিন্তু আজ কবরে শুইয়ে দেয়ার পর সব নিরর্থ মনে হচ্ছে

কারণ এখানে শুইয়ে সব দেখতে পাচ্ছি

আগে যা দেখা হয়নি সেগুলোও


প্রথম কয়দিন অবশ্য নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে

হাড় থেকে মাংস খসানো, একই সঙ্গে কোষগুলো বিচ্ছিন্ন করা 

এসব করার কারণ অনেকদিন মন খুলে হাসব বলে

হাড্ডির সঙ্গে মাংস না থাকায় সারা শরীর দিয়েই হাসতে পারছি

জীবিতরা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে সামান্যই হাসতে পারে


প্রথমে অনেক দিন হেসেছি বেঁচে থাকার বোকামির জন্য

সবকিছু দেখার তড়িঘড়ির জন্য

এখন হাসছি সব দেখার কি অফুরন্ত সময়!

জীবিতদের যদিও বড়কিছু দেখার প্রতি সর্বাধিক আগ্রহ

তবু তারা জানে না মৃত্যুর চেয়ে বড় কি ছিল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন