শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

এই সংখ্যার কবি : কবি প্রণব চক্রবর্তী



কবি প্রণব চক্রবর্তী

জন্ম বৈশাখ ১৩৬৮। বিদ্যে কলায় স্নাতক। মৃত্যু আসেনি। কবিতাজন্ম আটের দশকের শুরুতেই। প্রথম কবিতাপুস্তক প্রকাশ "খোলা-- হাট 'রে খোলা" তারপর একে একে "একদা রাজগৃহে", "নিষিদ্ধ

প্যান্ডোরা", "সার্থকতা বিষয়ক শোকগাথা" দুটি কাব্য-নাটকের একটি সংকলন "নীল উঠোন" দুটি

উপন্যাস "গান্ধর্ব পুরাণ", "চিতা" দুটি নাটকের সংকলন "দ্বৈরথ" গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লেখায় অবাধ যাতায়াত। পেশা নানারকম। মাস্টারী, সাংবাদিকতা, ছাপাকর্মী ইত্যাদি। নিভৃতচারী কবি, এখনও দ্বিধাগ্রস্ত সমসময়ে তার কবিতার গ্রহণীয়তা আদৌ আছে কি নেই, তথাপি কবিতায় মগ্ন থাকা তার প্রিয় পছন্দ। ইংরিজী কবিতা লেখার মাধ্যমে বিশ্বকবিতার জগতে যাতায়াতের স্বপ্ন দেখলেও, ভাষার প্রতি ততটা দক্ষতা না থাকায়, আঁকাবাঁকা হাতেই হাজার দেড়েক ইংরিজী কবিতাও লিখে ফেলেছেন এই কবি। সেই সূত্রেই পড়া পরিচিতি ঘটেছে বিভিন্ন মহাদেশের প্রতিষ্ঠিত অপ্রতিষ্ঠিত সদ্যসাম্প্রতিক বেশ কিছু কবি কবিতার সঙ্গেও। আজ কুড়ি বছরের বেশি একটি লিটল ম্যাগাজিন "ইনটার‌্যাকশন ভাষা ভাবনার" নিজস্ব দায়িত্বে সম্পাদনা প্রকাশ করে চলেছেন নিয়মিত।




জরাসন্ধ


খোদাই করবার আগে 

খুদিত হয়ে গেছে যারা 

অস্পষ্ট সম্ভাষণ কিছু 

উচ্চারিত সহিংস বিনিয়োগ 

মধ্যরাতে ঢুকে পড়ে 

ঘুমসীমানার গন্ডী পেরিয়ে 

অতর্কিতে মনে হয় 

জাহাজটা প্রবল ঝড়ে 

এখনও ডোবেনি 

দুলছে কাঁপছে তবু 

ক্লান্ত নাবিক 

এখনও মাস্তুল ছুঁয়ে 

দাঁড়িয়ে খুঁজছে 

বহুদূর ঝড়ের ইন্ধন... 



সময় সত্যিই কম


ভয়াবহ দ্রুততায় 

আমরা খুলে যাচ্ছিলাম 

সমস্ত বাঁধন 

যাবৎ অর্জন করেছি 

বিভিন্ন চাওয়া পাওয়ার প্রয়োজনে 


আমরা ফেলে যাচ্ছি 

আমাদের স্থাবর অস্থাবর 

শিকড় মনীষা সব 

কারণ আমাদের সময় 

আণবিক উল্লম্ফনে প্রজ্জ্বলন প্রস্তুত 


আমরা জলের দিকে যাব 

কিম্বা মাটির নীচে 

সঠিক জানিনা 

সব ফেলে সব থেকে খুলে 

আমাদের দৌড়- ভবিতব্য 


ভয়াবহ দ্রুততায় 

আমরা খুলে ফেলছি সমস্ত বাঁধন



ধর্মাবতার


কিশোরী বুকের ফুলে 

এতটা ফুটেছে 

নিজেকে ধর্ষক বলে মনে হয় 

বিচারক রায় দাও

ফিরে এসে আমি ওর 

বুকদুটো নিয়ে 

পদ্য বানাবো!



ব্রহ্মপিড়ীতি


পাথরকে অবিরত অনুসরণ করতে করতে 

শিখে গেছি পাথর হবার কৌশল 

যে কোনও ঝড়ের মুখেও স্থির 

দাঁড়িয়ে দেখতে শিখেছি রাত্রি দিনের 

পরিপূরক বিভা মলিনতা 

মাঠকে আর মঞ্জিল বলে ভাবিনা এখনও 

ভাবিনা মানুষ একদিন ফসিল হয়ে যাবে বলে 

তাকে যত্নে ডেকে বসাতে হবে জলের ওপর 


এখন গান মানে প্রতিধ্বনি বানাতে পারি সার্থকভাবে

এখন গান থেকে শব্দ সব খুলে দিতে পারি 

পৃথক তরঙ্গে তাকে পাথর থেকে পাথর পেরিয়ে 

ছুঁড়ে দিই আকাশের দিকে 

এখন শিকড় নিয়ে দুর্ভাবনা একেবারে নেই 

শুধুই ভাবনায় কোনও ভূকম্পন 

পাথরও ছিটকে যায় পাথরের থেকে, গুঁড়ো হয় 

হয়তো নদীরও বুকে চূর্ণতায় ছড়ায় কাঁপন! 



কি হলো সাবালক হয়ে


একটা বৃষ্টিঘন কুয়াশার মধ্যে

ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে আমাদের 

বাউন্ডুলে কন্ঠস্বর 

শূন্যতানির্দিষ্ট নির্জনতায় আমরা 

হারিয়ে ফেলছি পারস্পরিক 

অস্তিত্ব সম্পর্কিত নিরন্তর কাটাকুটি 

নিরন্তর স্বাতন্ত্রসন্ধানী একমাত্র অহংকারটুকু

সম্বল করে ক্লান্ত পায়ে হেঁটে যেতে চাইছি 

ছড়িয়ে থাকা বারো উঠোনের 

কোলাহলমুখর ব্যস্তসীমানা 

যে হাত ধরেছি কারো রৌদ্রের দিনে 

আজ এই সান্ধ্যবর্ষায় মনে হয় 

হাত সেও একাকী প্রসারণের থেকে 

আর কোনো সম্ভাব্যতা ভ্রমণে শেখেনি 

যা থাকে চাপে অসহায়তায় শিকলে বন্দী 

বস্তুত আগুন ছোঁয়াতেই হলো 

আজ এই ভেজাভেজা জলছপ চৌকাঠ ছুঁয়ে 

অপার্থিব বলে তাকে এড়ানো যায় না

যে অবচেতনে ডুব দিতে চাও সন্ধ্যা সকাল 

তাকেই তো শব্দে বসালাম 

এইটুকু কথা হয়ে 

ঝুলে থাক কাপড়মেলা দড়ি হ্যাঙ্গারে  



দিব্যজ্ঞান


কেউ কেউ বলেন 

বাঁচতে না জানলে কবিতা লেখা যায় না-- 

সত্য মিথ্যে জানিনা 

তবে দুটোই জানি আমি বাঁচা কবিতা 

দুটোতেই চরম অসফল 

আপাতত তাই 

প্রতীক্ষায় আছি বায়বীয় হওয়ার 

হাওয়া বেয়ে চলে যাবো 

বাঁচা কবিতার সীমানা পেরিয়ে... !


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন