রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

রজতকান্তি সিংহচৌধুরী-র কবিতা

নাই বা ডাকো রইব তোমার দ্বারে

গোরুর গাড়িতে চলেছেন কবি। কাছেই সুরুল গ্রাম থেকে শান্তিনিকেতনের পথে। দিনটা ২৬ শে ভাদ্র, সন ১৩২১। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ। এমন সময় ধরা দিল গানটি : 'নাই বা ডাকো রইব তোমার দ্বারে'...। 'পূজা' পর্যায়ে 'বিরহ' উপপর্যায়ের আবাসিক। 'গীতালি' বইয়ের এ গানটির স্বরলিপিকার শান্তিনিকেতনের সবার 'বিবিদি' ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী কিংবা  কবির 'সকল গানের ভাণ্ডারী' দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর নন। এমনকি কবির অন্ত্য পর্যায়ের গানের স্বরলিপির রসায়ন যাঁর হাত ছুঁয়ে, সেই শৈলজারঞ্জনও নন, তিনি তখনও শান্তিনিকেতনে অনাগত।  এর স্বরলিপিকার সুরেন্দ্রনাথ কর, আরো নানা কাজের মধ্যে কলাভবনের অধ্যক্ষরূপেই যাঁকে আমরা জানি।

    গোরুর গাড়ির চলার ছন্দে তিন মাত্রার চালে চলেছে গান। রাঙা ধুলোর তিলক মাখতে মাখতে একশো বছর পেরিয়ে এল। রাগটি তিলক কামোদ। শরতের পথে কমনীয় ধুলোর আস্তর। বসতে ইচ্ছে হয়,
         
          বসব তোমার পথের ধুলোর 'পরে
         এড়িয়ে আমায় চলবে কেমন করে--

    নীল আকাশে নিরঞ্জন সাদা মেঘ। পথের পাশের ধানখেতে সবুজ ধানের চারাগুলো ফনফনিয়ে বাড়ছে, অজানার পায়ের চিহ্ন বুকে তাদের,  

         রইব তোমার ফসলখেতের কাছে
         যেথায় তোমার পায়ের চিহ্ন আছে

    আপনা-আপনি বুঝি গভীর উপবাসে থাকবার সাধ হয়। যে-অন্ন আপনি আসে তার আশায়। 

    লুকিয়ে প্রদীপ জ্বালা হবে যেখানে,  সেখানে বসে থাকেন কবি, অন্ধকারে। 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন