রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

ওবায়েদ আকাশ-এর কবিতা

আলোকময় আলোর প্রতিসরণ

একদিন সরল পুঁথির বর্ণনা ভেঙে যে শিশুটি

মায়ের বুকজুড়ে জায়গা নিয়েছিলএখন তার বয়স হাজার বছর

 

আমি তখন মাতৃত্বের শিরা উপশিরায় তুমুল রাজাধিরাজ

উত্তর থেকে পশ্চিমগ্রহ থেকে নক্ষত্রে সিংহ-সিংহাসন

কখনো নিজেই রাজা আমি নিজেই উল্লম্ফনক্রমশ

উচ্চারণ আমিএকক গর্জন

 

একদিন ঘুরে ঘুরে সাম্রাজ্য ভ্রমণে বেরিয়ে দেখি

মায়ের আর্তমুখের চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে প্রতিদিনের অভ্যস্ত পৃথিবী

সমস্ত অনুভব-দ্বিধায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পরভাষাপররোদপরসম্ভাষণ

 

দূরের সিংহাসন থেকে বেরিয়ে এসেছে সিংহ

মধ্যরাত্রিক অট্টহাসি থেকে বেরিয়ে এসেছে বিকৃত দাঁত

আর মায়ের নির্জ্ঞান-নির্ভাষ্য মুখ থেকে টেনে তোলা হচ্ছে

হাজার বছররের বসন্ত উচ্ছ্বাসপ্রশান্ত তৃণভাষ...

 

যখন আমার মায়ের গোঙানির ভেতর থেকে বর্ণমালার শোরগোল শুনে

থমকে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীযখন আমার বুকের ভেতর দিয়ে

এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছে জন্মান্ধ বুলেটপ্রতিটি প্রায়ান্ধ চিৎকার

তখন মাতৃত্বের শিরা-উপশিরা থেকে সিংহ-হুঙ্কারে বেরিয়ে পড়ে দেখি

ভেঙে দেয়া হয়েছে ১৪৪ ধারামিছিলে মিছিলে উন্মাতাল সমগ্র ঢাকা

আর রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে আমার লাশজিন্নাহর হিংসার্ত বুলেট

 

আর সেই থেকে আমার নাম দেয়া হলো

রফিকবরকতসালামজব্বারশফিউরসেই থেকে আমার সাদা সাদা

কাফনের সুঘ্রাণ থেকে বিহঙ্গ ডানায় উড়তে থাকল স্বর ও ব্যঞ্জন বর্ণমালা

 

সেই থেকে আমার নাম দেয়া হলো বাঙালির রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা

এখন আমি আলোকময় আলোর প্রতিসরণনির্দ্বিধায় উচ্চারিত বৈশ্বিক শিরোনাম

বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষার ক্যালেন্ডারে আমি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি

 

যখন চিৎকার করে পৃথিবী ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে


একদিন ঘুম ভেঙে মা’র ঘরে গিয়ে দেখি

কাঁচা মৃত্তিকার শোক আর গোলাপজলের ঘ্রাণ একাকার হয়ে

কেমন ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছেন

 

বাড়িভর্তি মানুষের দগদগে শোকের ওপর হামলে পড়ছে ডেটল

বাবার সংসারে প্রতিটি অপরিহার্যতার পিঠে

লাফিয়ে লাফিয়ে নামছে শূন্যতা

 

মাকে আমি এতোটা নির্দয় হতে কখনো দেখিনি

 

বাড়ির যে কোনো নিতান্ত প্রয়োজনে যেখানে বাতাসের আগে

উপস্থিত হতেন মাআজ তার জন্য এত এত হাহাকারের মধ্যেও

নিশ্চুপ কোথাও ঘাপটি মেরে আছেন!

 

একদিন শোকতাপ ভুলে সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে

চুপি চুপি মা’র ঘরে যাই

দেখি কচি কচি নতুন সংসারের পাতানতুন সলতের চেরাগ

আমাদের প্রয়োজনে প্রজ্বলিত করেছেন বাবা

 

আমি সন্তর্পণে পিছু হটে আসি

 

আজকাল মা’র ঘরে গিয়ে চিৎকার করে পৃথিবী ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে

 

কিন্তু বাবা ও সংসারের প্রয়োজনের কথা কী নিপুণ বর্ণনা করেন বাবা!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন