দিকভ্রান্ত! প্রান্ত এক এক করে খসে যায়
মরীচিকা নিয়ে আঁধিঝড়ে স্বপ্নের স্খলন হয়
তখনই তোমার অবিশ্রান্ত ঝর্নাধারা
আমাদের জলধারা হয়ে ওঠে
আমাদের স্রোতস্বিনী হয়ে ওঠে
আমাদের কুলবতী হয়ে ওঠে
আমাদের অন্তঃশীলা হয়ে ওঠে
মরুপ্রান্তরের মরুজাত অবস্থা কাটানোর পর
ধূলোকণা দূর হয়ে যায়
ত্রসরেণু দূর হয়ে যায়
কাকচক্ষুর মতন নির্মল জলের দেখা পাই!
জলকাদা মাখা রাঙামাটি আরও রাঙা হয়ে ওঠে
অভয়অরণ্যের ভেতর--
রক্তকরবীর দেখা পাই
রক্তকমলের দেখা পাই
কৃষ্ণকলির দেখা পাই
কিংশুকের দেখা পাই
মৃণালিনীর দেখা পাই
সপ্তমুখী জবা ফুটে ওঠে
প্রসবন নিয়ে কাকলি-কুজনে মেতে ওঠে
পানকৌড়ি-নীলমণি-যাযাবর পাখি!
তার পাশে জেগে ওঠে সজীবতা
তার পাশে জেগে ওঠে নবীনতা
তার পাশে জেগে ওঠে প্রাণময়তা
তার নাম তুমি
তুমি আমাদের নিত্যকালের অখণ্ড মূলভূমি!
এ ভূমিতে তোমার বৈশাখ
এ ভূমিতে তোমার শরৎ
এ ভূমিতে তোমার হেমন্ত
এ ভূমিতে তোমার বসন্ত
এ ভূমিতে তোমার বর্ষাকাল
দূর করো যেন শস্যহানি ও আকাল-
সে কারণে শুধু তুমি রবি নও
আমাদের এক সূর্যঘড়ি!
কালজ্ঞান নিয়ে কখনো থাকি না স্থির
তোমারই বোধভাষ্যি নিয়ে বোধের অতলে নড়ি।
তোমারই সপ্তসুর থেকে সুরবোধ নিয়ে
সঙ্কোচ কাটিয়ে জড়তা কাটিয়ে
নিজেকে বাঁচানোর রক্ষাকবচ খুঁজে পাই--
রক্ষপুরী থেকে বের হয়ে
তমসার তাম্রশাসন থেকে বেঁচে উঠি
তানপুরা হাতে নিইঅন্ধকারের ঠাসবুনন থেকে বাঁচি
সপ্তসিন্ধুর উষ্ণজল ছুঁই
স্বপ্ন নিয়ে সপ্তলোকে যাই,
গলা ছেড়ে গাই গান--হই প্রসারিত
তোমার আকাশপ্রান্ত কী অবারিত!
তোমার অন্তরা থেকে আমার অন্তর জেগে ওঠে
আত্মতত্ত্ব খুঁজে পাই
খুঁজে পাই ঐকতান।
অন্তর্জগতের কপাট এক এক করে খুলে যায়
স্বভাবসৌন্দর্য নিয়ে কী তোমার শক্তি! কী তোমার গান!
তোমার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বাড়ে--
আমাদেরই মান
আমাদেরই মান।
আবদুর রাজ্জাক: মুগ্ধ । অনবদ্য।
উত্তরমুছুন