শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

ঊর্মিলা চক্রবর্তী-র দীর্ঘ কবিতা

আমি মেরি ম্যাগডালেন       

 

প্রিয়শিষ্যানা শয্যাসঙ্গিনীনা কি বিবাহিতা স্ত্রী?

সম্পদে স্বাধীন, ব্রতে পুণ্যময়ী না কি বারাঙ্গনা?

এই প্রশ্নের ঘুরণচাকিতে ঘুরছে

জগআজ দুটি হাজার বছর

 

প্রশ্নের চোখে চোখ রাখতার গভীরে প্রশ্ন ঝোলাও

কুঁয়োর ভিতরে বালতি যেমন,

সে টেনে তুলবে একটাই ধাঁধা,

যে ধাঁধার সামনে স্থাণু পৃথিবীর চলাচল,

যেখানে থই পায় না মানবমনন--

নারীশরীর

 

আশৈশব পাঠ ছিল ঈভের অপরাধকাহিনি

সময় ক্রমশঃ ধমনীতে ভরে দিলে রক্তস্বাদ,

বেলা বাড়বার সঙ্গে স্পষ্টতর হলে পুরুষের মুখের অক্ষর,

মাকে জিজ্ঞাসা করেছি যৌবনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে,

আদমের দোষ কেন কম?

তাড়াতাড়ি মুখে আঙুল চাপা দেন মা,

ইহুদীসমাজে এমন মেয়ে নিয়ে তিনি কী যে করেন!

 

রক্তলাল চুনি বুকে দোলে প্রথম

দেখার দিন। সে আমার গোপন সম্পদ।

পরমসত্তার পায়ে আনন্দসত্তার নিবেদনধূপগন্ধ

ছেয়ে গেল শরীরের অনুতে অনুতে।

 

ওরা শুধু দেখেছিল নারী। ইতিহাস সাক্ষী আছে

এলানো চুলের রাশে ঢেকেছিল

পরিত্রাতা পুরুষের পা দুটি,

মহামূল্য সুগন্ধি লেপনে চর্চিত পুণ্য শরীর

ঈশ্বরপুত্রের পরম শিষ্যের চোখেও

বিসদৃশ ঠেকেছিল দুটি নিবেদিতপ্রাণ মানুষের

প্রাণে প্রাণে বিনিময়

দৃষ্টিপথে বাধা তুচ্ছ, তবু ক্রূর, শুধু এক রমণীশরীর;

রোদের মতোন স্বচ্ছ দুচোখ

কুয়াশার পর্দা তুলে প্রাণের প্রত্যন্তবীক্ষণে

কি বা দ্যুতি দেখেছিল, কোন বা মানবিক সত্যের প্রকাশ,

সে খবর অবান্তর বলে উপেক্ষিত

 

য়েহুয়ার সাচ্চা বান্দা গ্যালিলির সূর্য নিষ্ঠুর

অগ্নিবৃষ্টি করেছিল তাঁরই রোষের মতো,

মরুভূমি কৃপণের মতো কুনকে মেপে ঢেলেছে

বর্ষাধারা ছায়ার প্রত্যাশা শুধু তাঁর কাছে,

চলমান মহীরূহ, অচঞ্চল শান্তি, প্রেম, ক্ষমা,

তার কাছে হারিয়েছি নিজেকে নতুন করে পেতে।

চারদেয়ালের নিশ্চিন্ত আশ্রয় থেকে নিজেকে

উপড়ে ফেলে এক নারী পথে নেমেছিল।

কোন আকর্ষণে সম্পন্ন সুখের জীবন ফেলে

দিন নেইরাত নেই নির্মম আকাশের নীচে

চামড়া পুড়িয়ে, পাথরে কাঁকড়ে রক্ত ঝরিয়ে

একমাত্র ভিখিরির ধন তাঁর বাণী ছেঁড়া ঝুলি

বুকে বেঁধে তাঁর সেবা একমাত্র ব্রত মেনে

কোন ধন খুঁজে ফিরেছিল নির্দয় প্রান্তরে,

একথা কি কেউ ভেবেছিল? সযত্নলালিত নারী,

তার পক্ষে সহজ কি ছিল পথ?

 

তাই বুঝি চরিত্রহনন। পুরুষের ঈর্ষা

অনায়াসে নারীর প্রতিষ্ঠা যেন তার অঙ্গবাস

টেনে খুলে সমাজের রীতি-বিধানের কাঠগড়ায়

বিবস্ত্র দাঁড় করিয়ে দিলে একা নারী

কত অসহায়। ইতিহাস ওরা লিখেছিল,

যুগ যুগ সাক্ষী দেয় আমি বারাঙ্গনা।

এ নিয়ে বচসা নেই, শুধু এটুকুই বলি,

প্রভু আমার ওষ্ঠ স্পর্শ করেছেন ওষ্ঠ দিয়ে,

পূর্ণ মানুষের কানায় কানায় ভরা ভালবাসা

উপছে পড়েছিল শরীরের পাত্র ভরে, অমৃত

উথলে গেছে ব্যাপ্ত করে জীবনমরণ

ওরা শুধু জ্বলে গিয়েছিল সাপের ছোবলে।

 

এগারোটি পুরুষের সম্মিলিত বিরোধের নিরেট দেয়ালে

মাথা ঠুকে কতটা বিধ্বস্ত হতে পারে নারী?

তবু প্রভু নতুন জীবনে ফিরে মৃত্যুর গুহায়

আমা্কেই ধন্য করেছেন পুণ্য দর্শনের আশীর্বাদে

 

ঈর্ষাদগ্ধ অন্তরের ধোঁয়া-কালি ছেবড়ে গেছে

ইতিহাসের পাতায়

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন