এক নির্বাসিত মানুষের চিঠি
আমি তোমার নাম আমার ঘড়ির ব্যান্ডে
আঙুলের নখ দিয়ে লিখেছি।
আমি কোথায় তুমি জানো--আমার কাছে মুক্তো বসানো হ্যান্ডেলের ছুরি নেই।(,এরা আমাকে কোনো ধারালো জিনিস দেয়না)। দেখতে পাইনা সে গাছ যার মাথা মেঘে ঢেকে আছে..গাছ উঠোনে হতেই পারে কিন্তু আমাকে মাথার উপরে আকাশ দেখতে দেয়া হয়না।
আরও কত লোক এখানে আছে
তাও আমি জানিনা..আমি একা সবার থেকে দূরে.. তারা ও আমার থেকে দূরে।কারো সাথে কথা বলা বারণ তাই আমি নিজের সাথে কথা বলি।কিন্তু সেটা খুব বিরক্তিকর প্রিয়তমা.!
আমি গান গাই, কিন্তু জানো সে দুর্বল স্বর আমাকে এমন ভাবে স্পর্শ করে যে মন ভেঙে যায়... ঠিক যেন সেই পুরনো গল্পের দুঃখী অনাথ ছেলেটির মতো.. যে নগ্নপায়ে তুষারপাতে হারিয়ে যায়।
আমার হৃদয় ভেজা নীল চোখে এবং হাল্কা লাল ভেজা নাক নিয়ে তোমার বাহুতে নিশ্চিন্তে শুতে চাই...না এটা উন্মাদনা আনেনা!
এই মুহুর্তে আমি এত দুর্বল... এত স্বার্থপর।
আমার অবস্থা শারীরিক ও মানসিক ভাবে
ব্যাখ্যা করা যাবে।.. অথবা এটা এরকম...
এই শূন্য জানালা..এই মাটির কলসি.. এই চার দেয়াল..যা আমাকে মাসের পর মাস অন্য মানুষের আওয়াজ থেকে দূরে রেখেছে।
আজ রবিবার
আজ রবিবার ––– প্রথমবার ওরা আমাকে
বাইরে নিয়ে এলো.. সূর্যালোকে। এবং জীবনে
প্রথম বার আমি ভয়ার্ত হয়ে দেখলাম
আকাশটা কত দূরে কত নীল আর..
ক--ত বিস্তৃত! ––– আমি সেখানে স্থির ও
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর শ্রদ্ধাপূর্ণ ভক্তি নিয়ে সাদা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে
মাটিতে বসে রইলাম...!
এই মুহুর্তে কে ভাবে...আমি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত
কী ভীষণ চাওয়ার ঢেউয়ে আমি আবর্তিত!
অথবা আমার মুক্তি ও প্রিয়তমা স্ত্রী!
নাহ...
আহা! এই মাটি এই সূর্য আর আমি!
এই মুহুর্তে যে চরম আনন্দে ডুবে আছি!
[নাজিম হিকমত ––– (১৯০২--১৯৬৩) তিনি
টার্কির প্রথম আধুনিক কবি। তার সমাজতান্ত্রিক মতামত সীমানা ছাড়িয়ে চলে গিয়েছিল এবং বিংশ শতাব্দীর একজন মহানতম কবি হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার পরিচিতি হয়। পঞ্চাশ টিরও বেশি ভাষায় অনুদিত হয় হিকমতের কবিতা। কিন্তু তার নিজের দেশেই প্রতিবন্ধিত হন তিনি এবং অজ্ঞাতবাসে থাকেন ও মস্কো চলে যান। ১৯২৪
সালে টার্কিশ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশে ফেরেন
কিন্তু বামপন্থী কাগজে কাজ করার জন্য গ্রেফতার হন এবং তার ১৫ বছর কারাদণ্ড হবে জানতে পেরে কোনোক্রমে আবার রাশিয়া পালিয়ে যান।আবার দেশে ফিরে এলে তাকে জেলে পাঠানো হয়।পাঁচ বছর জেলে থাকা কালীন তিনি চিঠি আকারে স্ত্রী ও বন্ধুবান্ধবদের লেখা পাঠাতে থাকেন। ১৯৪৯ সালে এক আন্তর্জাতিক কমিটি প্যারিসে তৈরি হয় হিকমতের মুক্তির জন্য। ১৯৫১ সালে তাকে শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়।এরপর টার্কিতে গনতান্ত্রিক সরকার এলে সে মুক্তি পায়। কিন্তু এক বছর পরেই আবার সে ষড়যন্ত্রের শিকার হন, তাই সে দুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় এক ঝড়ের
রাতে ছোট মোটরবোটে করে পালিয়ে যায়
আর কখনো তিনি টার্কিতে ফেরেননি, বাকি জীবন পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও রাশিয়ায় কাটিয়েছেন।]
নাজিম হিকমতের কবিতার অনুবাদ খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন- সমরেন্দ্র বিশ্বাস
অনুবাদ ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন