দাসত্বে
বেড়াতে চাই আমি সুদূর প্রান্তরে
মানুষ পাখি পশু যথায় ফেরে সুখে,
প্রাচীনা এই ধরা যেথায় দয়াময়ী
পণের লেশ ছাড়া বিলোয় সব দান সকল সন্তানে;
জীবন সুন্দর, বড়ই হালকা সে, বড়ই কম দাবি।
যেখানে ছেলেমেয়ে খেলার মাঠ পায়, সময় পায়,
পৌঁছোনোর আগে বোঝার বয়সেতে—
কোথাও, বহুদূরে গাইতে চাই গান।
কারণ বন্ধু গো জীবন ঢের বড় তার চেয়ে
হাজার যুদ্ধ যে মানুষ লড়ে যায় তৃপ্তিবিরহিত অভীপ্সায়।
জানি সে রয়ে যাবে চিরন্তন তারা
আজ যা উজ্জ্বল ধুলিতে হবে হারা
কিন্তু আমি বাঁধা তোমারই দীন গোর-এ
কৃষ্ণ জনগণ, সরল ক্রীতদাস কঠোর দাসদের।
আমি ফিরে আসব
আমি ফিরে আসব আবার; আমি ফিরে আসব
হাসতে, আর ভালবাসতে, আর অবাক চোখে দেখতে
সোনালি দুপুরে বনের আগুন জ্বলে,
তাদের নীলচে কালো ধোঁয়া আকাশের নীলায় পাঠিয়ে
আমি ফিরে আসব সেই নদীতীরে ঘুরে বেড়াতে
নুয়ে পড়া ঘাসের বাদামি ডগাগুলো যে ধুইয়ে দেয়,
আর আবার ফিরে পেতে গিরিখাদে উদ্দাম
প্রবাহিত জলস্রোতের সহস্র স্বপ্নকে।
আমি ফিরব, ফিরব, গ্রামের নাচের আসরের
বেহালা আর বাঁশির অপূর্ব প্রিয় সুর শুনতে,
যে সুর দোলা দায় জনজীবনের সুপ্ত গভীরতাকে,
আবছা স্মৃতির হারানো লিপির ইতস্তত সুর।
আমি ফিরে আসব, আবার ফিরে আসব,
মনকে ভুলিয়ে দিতে দীর্ঘ, দীর্ঘ ব্যথার বছরগুলি।
[ল্যাংস্টন হিউয়েস, গোয়েন্ডোলিন ব্রুকস, জেমস বল্ডুইন ইত্যাদি সব কবিই উনিশশো বিশ দশকের হার্লেম রেনেশঁসের প্রবক্তা ছিলেন ঠিকই, কিন্তু এঁদের সবারই জন্ম বিশ শতকে। এঁদের অনেক আগে এসেছিলেন ক্লদ ম্যাককে। ক্লদের জন্ম ১৮৯০ সালে এবং তিনি ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত জীবিত থেকে বিশের দশকের হার্লেম রেনেশঁসে এক প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁকেই এই কৃষ্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রথম প্রবক্তা বলা যেতে পারে। জামাইকার সানিভিলের এক কৃষক পরিবারের সন্তান ক্লদ আদিভূমি আফ্রিকার সংস্কৃতি নিয়ে অত্যন্ত গর্ব অনুভব করতেন। হার্লেম রেনেশঁসে মূলতঃ এই কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতিচেতনারই প্রকাশ।
ম্যাককে কিন্তু শুরুতে ইংরেজি কবিতারই শ্রদ্ধাবান পাঠক ছিলেন, এবং জন মিল্টন, অ্যালেক্সান্ডার পোপ, আর বৃটিশ রোমান্টিকরা তাঁর প্রিয় কবি ছিলেন। শিক্ষিত পরিবারের সন্তান ক্লদের দাদা স্কুলশিক্ষক ছিলেন এবং তাঁর কাছেই তাঁর কবিতার পাঠ শুরু। এক ইংরেজ প্রতিবেশী ওয়াল্টার জেকিল তাকে শোপেনহাওয়ার এবং অন্য দার্শনিকদের সঙ্গে পরিচিত করান এবং ক্লদকে জামাইকার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করেন।
সতের বছর বয়সে জামাইকার রাজধানী কিংস্টনে গিয়ে ক্লদ প্রথম বর্ণবাদের কুৎসিত স্বরূপ দেখতে পান ও সানিভিলে ফিরে আসেন। এরপর অবশ্য তিনি প্রথমে আমেরিকা ও পরে ইউরোপে কিছুদিন কাটানোর পর আমেরিকা ফিরে হার্লেম রেনেশঁসের একজন প্রধান কবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কৃষ্ণাঙ্গ সমাজ ও শ্রমিক সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্যও তিনি কাজ করেন। কবিতার জন্য তিনি অত্যন্ত সমাদৃত হলেও কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি গদ্য রচনাও করেন এবং তাঁর উপন্যাস সামাজিক বাস্তবতার জন্য উচ্চ প্রশংসিত হয়। তাঁর কবিতায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রতিবাদের কথা বললেও তাঁর লেখা বর্ণবাদ অতিক্রম করে পৃথিবীর সব উৎপীড়িত মানুষের প্রতিবাদ হয়ে উঠেছে বলে ম্যাককে একজন শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে স্বীকৃত হন।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন