বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩

এই সংখ্যার কবিঃ কবি মলয় রায়চৌধুরী


কবি মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী (জন্ম: অক্টোবর ২৯, ১৯৩৯কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সাংবাদিক, গণবুদ্ধিজীবি এবং সর্বোপরি ১৯৬০-এর দশকের হাংরি আন্দোলনহাংরিয়ালিজমতথা বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জনক এবং কারণে ১৯৬০-এর দশক থেকেই ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। গতানুগতিক চিন্তাধারা সচেতনভাবে বর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে উত্তর আধুনিকতাবাদ চর্চা এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে "প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার" কবিতার জন্যে রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেফতার কারাবরণ করেন।

মলয় রায়চৌধুরীর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সাহিত্যের সনাতন ধারার অনুশাসনের বিরুদ্ধাচারণ। বিষয়ে স্বপ্ন পত্রিকায় লিখিত প্রবন্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান উল্লেখ করেছেন, 'সাহিত্যের সনাতন অনুশাসনগুলির বিরুদ্ধে মলয় রায়চৌধুরীর বিদ্রোহ তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য' তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতের অধিক। তাঁর ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ১৫টি উপন্যাস, দুটি ডিটেকটিভ উপন্যাস, একটি ইরটিক নভেলা, ১২টি সমালোচনা গ্রন্থ, চারটি জীবনী এবং বহু অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে শয়তানের মুখ, জখম, ডুব জলে যেটুকু প্রশ্বাস,নামগন্ধ চিৎকার সমগ্র, কৌণপের লুচিমাংস, মাথা কেটে পাঠাচ্ছি যত্ন করে রেখো, বাউল-কবিতা সিরিজ ডোমনি, অ্যালেন গিন্সবার্গের হাউল ক্যাডিশ কাব্য-গ্রন্থের অনুবাদ প্রভৃতি অন্যতম। তিনি বিট মহিলা কবিদের রচনা অজস্র অনুবাদ করেছেন, পরাবাস্তব কবিদের অনুবাদ করেছেন এবং জাঁ জেনের সমস্ত কবিতা অনুবাদ করেছেন লোকনাথ ভট্টাচার্যের পর তিনি দ্বিতীয় বাঙালি যিনি জাঁ আর্তুর ্যাঁবো' নরকে এক ঋতু এবং ইল্যুমুনেশান্স অনুবাদ করেছেন বুদ্ধদেব বসুর পর প্রথম বাঙালি যিনি বোদলেয়ারের সমগ্র কবিতা অনুবাদ করেছেন  বিদেশি কবি ওকতাভিও পাজ, আরনেস্তো কার্দেনাল, অ্যালেন গিন্সবার্গ, ডেইজি অ্যালডান প্রমুখ ভারতে এসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন পেঙ্গুইন ্যাণ্ডাম হাউস থেকে তাঁকে নিয়ে 'দি হাংরিয়ালিস্টস নামে একটি গ্রন্হ প্রকাশিত হয়েছে, যা লিখেছেন মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য চৌধুরী তাঁর কবিতা নিয়ে পিএইচডি করেছেন হিডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্যানিয়েলা ক্যাপেলো এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষ্ণুচন্দ্র দে

২০০৩ সালে অনুবাদ সাহিত্যে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার  প্রত্যাখ্যান করেছেন।তিনি মনে করেন প্রতিটি পুরস্কার বহন করে পুরস্কারদাতার মূল্যবোধ।


তুফান মেল

ওনার ছন্দের আঙ্গিক হলো স্প্রেড লেগস, দেখুন পড়ে : পরির 

পাশে পরির বোন, দাঁড়িয়ে আছে কতক্ষণ। ওই যে বুড়ো 

তালিবান চারটে মেয়েকে শেকলে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে ওর পেছনে 

যাচ্ছে আধুনিক কবিতা কলকাতায় হোটেলে বিউটি পার্লার 

নেই, আরেব্বাহ্! আনন্দের খবর। আপনার টাকে নতুন টিকি 

তিনি তাঁর স্বামীর নামে আকাদেমিতে বাৎসরিক খানাপিনার 

ব্যবস্থা করেছেন। ছিঃ, এরা থিয়েটার করে! এদের জন্য 

একদলা মধু ছাড়া কিছু নেই! তোমাকে  ল্যাদনার মাঠে , পাঁচ 

বিঘায় ছেড়ে এলে আলপথ চিনে  শহর ফিরতে পারবে না 

কোনদিন, মার্কিন ভায়াগ্রা খেয়ে তালিবান জাগবে; ম্যালা 

সুন্দর   উনি যে  লুটেরা পুঁজিপতি এটা বুঝলাম অক্ষতযোনি 

সস্তায় আলকাতরা খায়! ওই মহিলা আর কোপ দেয়া খুনীদের 

মধ্যে পার্থক্য যৌনতার  সম্পর্ক রাখা 


ঘুনপোকার সিংহাসন

ওগো স্তন্যপায়ী ভাষা পিপীলিকাভূক মুখচোরা

ভূচর খেচর জলচর দাম্পত্যজীবনে তুষ্ট একশিঙা

নীলগাই বারাশিঙা চোরাকিশোরীর হাতে মূল্যবান প্রাণী

স্হলে বিচরণকারী উদবিড়াল গন্ধগোকোল বিনোদিনী

শব্দগহ্বর খেয়ে নোকরশাহির রাজ্য এনেছো এদেশে।


কেমন বৈরী

ভাবা যায়? কোনো প্রতিপক্ষ নেই!

সবকটা আধমরা হয়ে আজ শুয়ে আছে জুতোর তলায়?

কিছুই করিনি আমি

কেবল মুখেতে হাত চাপা দিয়ে চিৎকার করেছি থেকে থেকে

হাহাহা হাহাহা হাহা হাহা

পিস্তল কোমরে বাঁধা তেমনই ছিল সঙ্গোপনে

ক্ষুর বা ভোজালি বের করিনিকো

বোমাগুলো শান্তিনিকেতনি ব্যাগে চুপচাপ যেমন-কে-তেমন পড়ে আছে

আমি তো আটঘাট বেঁধে ভেবেছি বদলা নেবো নিকেশ করব একে-একে

সকলেই এত ভিতু জানতে পারিনি

একা কেউ যুঝতে পারে না বলে দল বেঁধে ঘিরে ধরেছিল

এখন ময়দান ফাঁকা

তাবৎ মাস্তান আজ গোরুর চামড়ায় তৈরি জুতোর তলায়

কিংবা পালিয়েছে পাড়া ছেড়ে কোনো জ্ঞাতির খামারে

আমি তো বিধর্মী যুবা এদের পাড়ার কেউ নই

জানালার খড়খড়ি তুলে তবু যুবতীরা আমার ভুরুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে

ছ্যাঃ এরকম জয় চাইনি কখনো

এর চেয়ে সামনে শিখণ্ডী রেখে জেতা ছিল ভালো

ভেবেছি চেংঘিজ খান যে-লাগাম ছেড়েছে মৃত্যুর কিছু পরে

তার রাশ টেনে নিয়ে চুরমার করে দেবো এইসব জাল-জুয়াচুরি

আগুন লাগিয়ে দেবো মাটিতে মিশিয়ে দেবো ধুরন্ধর গঞ্জ-শহর

কিন্তু আজ সমগ্র এলাকা দেখি পড়ে আছে পায়ের তলায়


মর মুখপুড়ি

এই বেশ ভাল হল অ্যামি, বিন্দাস জীবন ফেঁদে তাকে

গানে নাচে মাদকের জুয়ার পূণ্যে অ্যামি, কী বলব বল,

অ্যামি ওয়াইনহাউস, অ্যামি, আমি তো ছিলুম তোর

জানালার কাঁচ ভেঙেল্যাম্ব অফ গডএর দামামায়

বাজ-পড়া গিটারের ছেনাল আলোয় চকাচৌঁধ ভাম

অ্যামি, আমি তো ছিলুম, তুই দেখলি না, হের্শেল টমাসের

শিয়রে বিষের শিশি মাধুকরী লেপের নিঃশ্বাসে, অ্যামি

স্তনের গোলাপি উলকি প্রজাপতি হয়ে কাঁপছি

লাল রঙে, অ্যামি, অ্যামি ওয়াইনহাউস, মুখপুড়ি

হ্যাশের ঝাপসা নদী কোকেনে দোলানো কোমর, চোখ

ধ্যাবড়া কাজলে ঘোলা ঠিক যেন বাবার রিটাচ-করা

খুকিদের নকল গোলাপি  ঠোঁট বয়ামে ভাসাচ্ছে হাসি

সাদা-কালো, হ্যাঁ, সাদা-কালো, ব্যাক টু ব্ল্যাক, গাইছিস

বিবিসির ভিড়েল মাচানে কিংবা রকবাজ ঘেমো হুললোড়ে

আরো সব কে কী যেন ভুলে যাচ্ছি ভুলে যাচ্ছি ভুলে

ওহ হ্যাঁ, মনে পড়ল, ক্রিস্টেন পাফজনি ম্যাক কুলোজ

রাজকমল চৌধুরীঅ্যান্ড্রু উডকেসি কালভারফালগুনী রায়

সেক্স পিস্টলের সিড ভিশাসডার্বি গ্রেসঅ্যান্টন মেইডেন

শামশের আনোয়ারসমীর বসুকরুণানিধান মুখোপাধ্যায়

হেরোইন ওভারডোজ, ছ্যাঃ, ওভারডোজ কাকে বলে অ্যামি,

ওয়াইনহাউস, বল তুই, কী ভাবে জানবে কেউ নিজেকে

পাবার জন্যে, নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়বার জন্যে

য়ুকিকো ওকাকার গাইতে গাইতে ছাদ থেকে শীতেল হাওয়ায়

দুহাত মেলে ঝাঁপ দেয়া, কিংবা বেহালা হাতে সিলিঙের হুক থেকে

ঝুলে-পড়া আয়ান কার্টিস, কত নাম কত স্মৃতি, কিন্তু কারোর

মুখ মনে করা বেশ মুশকিল, তোর মুখও ভুলে যাব

দিনকতক পর, ভুলে গেছি প্রথম প্রেমিকার কচি নাভির সুগন্ধ,

শেষ নারীটির চিঠি, আত্মহত্যার হুমকি ঠাসা, হ্যাঁ, রিয়ালি,

কী জানিস, তাও তো টয়লেটের অ্যাসিডে ঝলসানো হার্ট

নরম-গরম লাশ, হাঃ, স্বর্গ-নরক নয়, ঘাসেতে মিনিট পনেরো

যিশুর হোলি গ্রেইল তুলে ধরে থ্রি চিয়ার্স বন্ধুরা শত্রুরা

ডারলিং, দেখা হবে অন্ধকার কোণে, উদাসীন খোলা মাই,

দু-ঠ্যাং ছড়িয়ে, কোন অজানা মাংস! অজানারা ছাড়া

আর কিছু জানবার জানাবার বাকি নেই অ্যামি, সি ইউ..

সি ইউসি ইউসি ইউসি ইউমিস ইউ অল


আনন্দধারা বহিছে ভূবনে

ওনার ছন্দের আঙ্গিক ছিল লঞ্চ প্যাডপড়ে দেখুন আমের

পাতাগুলো দুহাতে ছুঁয়ে দেখি মনে কি পড়ে কিছুমনেও পড়ে না –

তাড়াতাড়ি সাইড হউন। কালবৈশাখী এলো বলেকে বলোতো

তুমি?  ফোনালাপে আমরা দুজনই অংশগ্রহণ করছি কিন্তু অন্য

প্রান্তের যুবতীরা বুঝতো না। যাইহোক প্রিয়েআমার

অবন্তিকাআমাদের  সবচাইতে পুরানো স্মৃতি হলো হাগু

বিষয়কআমরা তখন অনেক ছোটোনর্দমার ধারে হাগু করতে

পারি না। ইমলিতলায়  আমাদের জন্য দুজোড়া ইট বারোয়ারি

কলতলায় বসিয়ে দিলো। বিশাল ইমলিতলা কলতলা শেষ

হইছে একটা ছোট্ট খালের পাশে , সেই খালপাড়ে মাছ ধরা

দেখতুম 

কাতল বাচা ভেটকি কতো রকমের কবি-ভাইয়া স্বপ্নের চেয়ে বাস্তব

এতো ভালো কেইবা জানতোপ্রাপ্য প্রেমের চেয়ে বেশি পাবেন

না জীবনে যতোই আপনি ভান করুন।

মাথা কেটে পাঠাচ্ছি যত্ন করে রেখো

মাথা কেটে পাঠাচ্ছিযত্ন করে রেখো

মুখ দেখে ভালোবেসে বলেছিলে, “চলুন পালাই

ভিতু বলে সাহস যোগাতে পারিনি সেই দিনতাই

নিজের মাথা কেটে পাঠালুমআজকে ভ্যালেনটাইনের দিন

ভালো করে গিফ্টপ্যাক করা আছে, “ভালোবাসি” লেখা কার্ডসহ

সব পাবে যা-যা চেয়েছিলেঘাম-লালা-অশ্রুজলফাটাফুটো ঠোঁট

তুমি ঝড় তুলেছিলেবিদ্যুৎ খেলিয়েছিলেজাহাজ ভাসিয়েছিলে

তার সব চিহ্ণ পাবে কাটা মাথাটায়চুলে শ্যাম্পু করে পাঠিয়েছি

উলঙ্গ দেখার আতঙ্কে ভুগতে হবে না

গৌড়ীয় লবণাক্ত লিঙ্গ কোনো স্কোপ আর নেই

চোখ খোলা আছেতোমাকে দেখার জন্য সব সময়আইড্রপ দিও

গিফ্টপ্যাক আলতো করে খুলোমুখ হাঁ-করাই আছে

আমার পছন্দের ননভেজসন্ধ্যায় সিঙ্গল মল্ট খাওয়াতে ভুলো না

মাথাকে কোলেতে রেখে কথা বোলোগিটার বাজিয়ে গান গেও

মাস অন্তর ফেশিয়াল করিয়ে দিওচন্দনের পাউডার মাখিও

ভোর বেলা উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে চুমু খেও ঠোঁটে

রাত হলে দুচোখের পাতা বন্ধ করে দিওজানো তো আলোতে ঘুমোতে পারি না

কানে কানে বোলো আজও উন্মাদের মতো ভালোবাসো

মাথা কেটে পাঠালুমপ্রাপ্তি জানিওমোবাইল নং কার্ডে লেখা আছে।

 




 


1 টি মন্তব্য: