শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ-এর ঝুরোগল্প

বাবা

 

অন্যদিনের চেয়ে খানিকটা আগে ঘুম থেকে উঠলো অরুনাভ আনন্দ।আজ  সকাল থেকেই ভীষণ ব্যস্ত।ওকে অনেকগুলো ব্লগ পোস্ট করতে হবে। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জুনিয়র এক্সিকিউটিভ। চাকরির পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে হৈ হুল্লোড়ে মেতে থাকাফেসবুকে সময় দেয়া ওর বেশি পছন্দ  অনেকগুলো ব্লগের নিয়মিত লেখক। আর দশজন ব্লগারের মতো ওর ধারণাব্লগে লিখলেই বুঝি সমাজ উদ্ধারদেশোদ্ধার হয়ে যাবে।  ভাবনা থেকেই  সংসারের চেয়ে ব্লগকে বেশি সময় দেয়। ওর ধারণা,সংসারকে সময় দেয়া মানে একটা পরিবারের উপকারআর ব্লগে লিখলে দেশের উপকার। ওর কাছে সবার আগে দেশ 

শুক্রবার। আজ ওর অফিস নেই।আর তাই সকালেই ফেসবুকে বসে গেছে অরুনাভ। আজ ওকে অনেকগুলো ব্লগ লিখতে হবে। সামনের রাস্তাটার কাজ গত তিন বছরেও কেন শেষ হচ্ছে না এটা নিয়েও লেখা দরকার।

অরুনাভের মা লুবনা জাহান সমাজসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।অন্যদের সমস্যা দেখতে গিয়ে নিজের সংসারে সময় দিতে পারেন না।অরুনাভের বাবা জহির হায়দার প্রায় এক বছর ধরে অসুস্থ  চাকরি আর ব্লগে লেখা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে যে বাবাকেও ঠিকমতো সময় দেয়া হয় না। তবে ফেসবুকে রোজ বাবার অসুস্থতার স্ট্যাটাস লিখতে কোন ভুল হয় না।প্রতিদিন পোস্ট দেয়।প্রচুর লাইক আসেগাদাগাদা কমেন্টস আর সুস্থতা কামনায় স্ট্যাটাস নিচের লাইন সমৃদ্ধ হতে থাকে।

অরুনাভ তখন ব্লগ লেখায় ব্যস্ত।পাশের রুমে ওর বাবা জহির হায়দার জলতেষ্টায় কাতর।পানি দাও পানি বলে কাৎরাচ্ছেন। ওর বাবাকে একজন আয়া দেখাশোনা করে। তখন আয়া মোমেনা খাতুন বাসায় ছিল না। দোকানে গেছে। লুবনা জাহান তো সেই সাত সকালেই বেরিয়েছেন। বাসায় তখন অরুনাভ ছাড়া আর কেউ নেই।ও তখন স্ট্যাটাস লেখায় এতটাই ব্যস্ত যে উঠে গিয়ে বাবাকে একগ্লাস পানি দেবে তারও ফুরসৎ নেই। ভাবলোহাতের লেখাটা শেষ করেই বাবার পাশে গিয়ে বসবে,বাবাকে নিজ হাতে পানি খাওয়াবে।

লেখাটা শেষ হতে এক ঘন্টারও বেশি লেগে গেল অরুনাভর। আয়া মোমেনা খাতুন সেই যে দোকানে গেছে ফেরার নাম নেই  এখন আর পানি চাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে না। হাতের লেখাটা শেষ করে বাবার কাছে গেল অরুনাভ।কোন কথা বলছেন না ওর বাবা জহির হায়দার। দুই চোখ বন্ধ  বাবার শিয়রে বসলো অরুনাভ।

জানো বাবাআজও তোমার সুস্থতা কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। তুমি ভাবতেও পারবে না কত লাইক এসেছেকত মানুষ  তোমার সুস্থতা কামনা করে কমেন্টস করেছে। এ্যাত্তো এ্যাত্তো লাইক। এত মানুষের দোয়ায় দেখো তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।

তুমি না পানি চেয়েছিলে?নাওএবার পানিটা খেয়ে নাওতো আমার সোনা বাবা।

বলে বাবার মুখে একটু পানি ঢেলে দিলো অরুনাভ।জহির হায়দারের মুখে পানি ঢুকলো না।ঠোঁটের কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো বালিশে।বালিশ বেয়ে বিছানায়। কিছু বোঝার বাকি থাকলো না অরুনাভর।ওর দুচোখ ভরে অশ্রুবৃষ্টি নামলো।     


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন