শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

সুবল দত্ত-র ঝুরোগল্প

ফিরে দেখা   

বেলেভিউ ক্রশরোডে ছড়ানো ছিটানো একটা বিশাল মল এনাকোর্টিস এদিকে ওদিকে লাল হলুদ ম্যাপল বসন্তবাহার গাইছে মাঝখানে খোলা আকাশের নিচে টেনিসকোর্টের মত বড় জায়গা জুড়ে দাবার ছক ফেলা দাবার বড়েগুলো স্কুলবাচ্চাদের মত দাঁড়িয়ে এককোণায় একটা দামী ক্যাফের সামনে কয়েকটা চেয়ার টেবিল রাখা একজন গোলাপী সাদা সাহেব মাঝে মাঝে বড়ে উঠিয়ে দাবার চাল চালছে আর ফিরে গিয়ে চেয়ারে বসছে হাতে পানীয় সিগার ভরদুপুর

আমার পিতৃসম বড়দা সারা নিঝুম দুপুরবেলায় এমনি একাই দাবা খেলতো,হাতে তাড়ির গেলাস বিড়ি সারাজীবন জুড়ে তাড়ি আর বিড়ি আমার উপেক্ষার বস্তু হলেও দাবা আমার রক্তে ঢুকে গেছে আমি দেখলাম দু চালেই কালো মন্ত্রী সরাসরি ওর সাদা মন্ত্রীকে মাত করতে পারে এতো সোজা ব্যাপারটা সাহেবের মাথায় ঢুকল না? আমি আর পারলাম না ভিতরে ঢুকে একবার মে আই কথাটা বলেই চালটা চেলে দিলাম দুটো চালেই মাত হতে সাহেব প্রায় জড়িয়ে ধরল ইয়েস ইউ উইন,লেটস সেলিব্রেট হাতের পানীয় উঠিয়ে বললেন, ডম পেরিগন শ্যামপেন, ইটস ভেরী লাইট ড্রিংক

-থ্যাংকস,বাট সরি ইটস লাঞ্চ টাইম এই কথা বলে আমি সেখান থেকে যাবার জন্যে ঘুরে দাঁড়াতেই উনি জাপটে ধরলেন, ইয়া অফকোর্স মি অলসো ফিলিংগ হাংরি,প্লিজ কাম এই কথা বলেই হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে গেলেন ক্যাফের ভিতর উনি জিজ্ঞেস করলেন ভেজ পছন্দ কি না,কেননা উনি নিজেই নিরামিসি অর্ডার দিলেন এভাকার্ডো দিয়ে বানানো গুয়াতেমালা আর বেক করা ব্রাসেলস আর এক প্লেট ডোলমাস ক্যাসপিয়ান ফ্রুট ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আই থিংক ইউ আর গুজ্জু,ইজইণ্ট সো? আই লাভ গুজ্জু আমি একটু হাসলাম এখানের সবাই,এমেরিকানরাও হিন্দুদেরকে গুজ্জু বলে আমি উত্তর দিলাম,আমি একজন ভারতীয়

প্লেটে সস ঢালতে ঢালতে উনি নিজের পরিচয় দিলেন নাম জুলিয়ান রোমানিয়ান স্পেনএ বড় হওয়া, পড়াশুনো স্টোইক ফিলজফি নিয়ে বর্তমানে তিনটে দেশে এইরকম মল এর মালিক এই মলটিও তাঁরই তারপর তিনি যা যা বললেন, আমার বাল্যস্মৃতি তেমনি তেমনি ফিরতে লাগলো ওনার গরীব বাবা স্পেনে রিস্টওয়াচ সেলার ছিলেন ওনাদের পাশের বাড়ির একটা বড়ক্ষেত ছিল ব্রাসেলসের মা পাশের একটা ছোটো ডোবা থেকে ম্যাকারেল মাছ ধরতেন আর জুলিয়ান কখনো ব্রাসেলস চুরি করে, কখনো চেয়ে আনতেন এইভাবে দিনগুজরান

আমি আমার প্লেট থেকে কাঁটা চামচ দিয়ে ব্রাসেলস সেদ্ধ মুখে তুলে চেবাতে লাগলাম কি অদ্ভুত মিল ওনার অতীত আর আমার ! ডিমের সাইজের ছোটো, হবহু বাঁধাকপির মত সব্জি ব্রাসেলস মনে পড়ল আমার মা রাত থাকতেই ভোরে জাগিয়ে দিত ঘুম থেকে উঠেই চলে যেতাম সব্জি দোকানির আড়তে ট্রাক থেকে বাঁধাকপি নামতো, পাইকারীরা ওপরের মোটা পাতাগুলো ছিঁড়ে কপিগুলো বিক্রির যোগ্য করে নিতো আমি সেই ফেলে দেওয়া পাতাগুলো কুড়িয়ে আনতাম রান্না হতো মা একটা ডোবার পাঁক থেকে গেঁড়ি গুগলি তুলে আনত আরো অনেক কিছু মনে পড়ছে এই আমেরিকার নামীদামী ক্যাফেতে বসে  




 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন