অনুরাগ এর সাজানো অলিন্দে তখনও জ্যোৎস্নার গন্ধ লেগে রয়েছে। তার সুভাষে আমি বিভোর হয়ে আরাম কেদারায় বসে রাতের আকাশ দেখছি। হঠাৎ সুমনের একটা হোয়াটসআপ মেসেজ এলো। সে লিখেছে : "Wishing you a prosperous marriage anniversary my dear. Thank you for always being my wife. Take care bye." সেদিন ছিলো আমার আর সুমনের প্রথম ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি। সুমন অফিসের কাজে পুনে গেছে। ফিরতে ফিরতে আরো দিন সাতেক। প্রায় দু হাজার কিলোমিটার থেকে কিছু তথাকথিত শব্দ আমার কাছে ছুঁড়ে দিয়ে দায় সাড়ল সে। ভেবেছিলাম একটা ফোন অন্তত আসবে, কিন্তু....
ঘড়িতে দেখলাম এগারোটা উনোষাঠ। হোয়াটসআপ, ফেসবুকের দরজা ভেঙে শুভেচ্ছা বার্তার স্রোত এসে ভাসিয়ে দিলো। ব্যাস এইটুকুই। তারপর আবহাওয়া একদম শান্ত। আসলে ছকে বাঁধা স্যোশাল নেটওয়ার্কিং এর উৎসবে আমি তেমন ভাসতে জানি না। তাই তেমন কোন অনুভূতি হলো না। বরং কেউ যদি তার ছোট্ট নাও এ করে সুবিশাল পদ্মার বুকে আমাকে ভাসাত, আমি দিব্যি ভেসে থাকতাম দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। সত্যি বলতে আজকালকার এইসব সো কল্ড রিচুয়াল সম্পর্কে আমি খুব একটা সরগর নই। আমি ম্যারেজ অ্যানিভার্সারির মতো শুধু একটি বিশেষ দিনকে বুঝি না। আমি বুঝি, প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত স্বপ্নের মানুষের সাথে স্বপ্নের জগতে হারিয়ে যাওয়া। তার অনুপস্থিতিতে তার নিবিড় আবেশে ডুবে থাকা। কিন্তু এ তো গেলো আমার মনের ভাবনা। আর সে? সে কি কখনো আমার মতো ভাবে? কি জানি, এক বছরে কতোটুকুই বা চিনেছি তারে? তবে এই বদ্ধ অনুরাগ এর খাঁচায় সে যে আমাকে নিস্প্রান রানী করে রেখে দিতে চায়, তা বেশ বুঝতে পারি। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ঘোর কাটল আমার। আরাম কেদারা থেকে উঠে অলিন্দে ভর করে বললাম - কে? দেখলাম নিচে একজন ডেলিভারি বয় কিছু একটা নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকছে। নিচে গিয়ে ডেলিভারি বয় এর থেকে একটা গিফট বক্স নিয়ে ওপরে এলাম। বক্স খুলে যা দেখলাম তাতে হয়তো অনেক মেয়েই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠত। কিন্তু একটা সামান্য সাজানো কেক পাঠিয়ে সুমন কি আমাকে অবাক করতে পারলো? এর থেকে যদি সে নিজেই একটা গিফট হয়ে এসে কলিং বেল বাজাত, আমি হয়তো সত্যিই অবাক না হয়ে থাকতে পারতাম না। সুমন আমাকে অনুরাগ এর মতো ভালো বাসা দিয়েছে কিন্তু অনুরাগের পরশে ভালোবাসা দিতে পারি নি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমার মতো এখনও কিছু মেয়েরা আছে যারা ভালো বাসা নয়, ভালোবাসার কাঙাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন