"আপনি যাবেন আমাদের গাঁয়ে?"
"যাবো। কিন্তু কী খাওয়াবি"
"কেন, মোটা চালের ভাত, কাঁকড়ার ঝোল আর মাচা থেকে তোলা চিচিঙ্গে ভাজা।"
"বাহ্ ! চমৎকার। আমি অমন খাবারই চাই। কতদিন খাইনি।"
সুধাময় বলাইকে কোনদিন বলেনি যে তাঁর গাঁ আর বলাইয়ের গাঁ এক। দিনমজুর বাবা স্বপ্ন দেখেছিল, ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। তাই উদয়াস্ত খেটে ছেলেকে শহরের হোস্টেলে রেখে মানুষ করেছিল। ছেলে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশেও গিয়েছিল। দেশে ফিরে কর্পোরেট দুনিয়ায় মোটা বেতনের চাকরি। অসুস্থ বাবা ছেলেকে শেষ দেখতে চেয়েছিল। জরুরি মিটিং থাকায় ছেলে আসতে পারেনি। এসেছিল মৃত্যুর পর। শ্মশানের কাজ সেরে আবার শহরে ফেরা।
ভুলে গিয়েছিল সুধাময় নিজের গ্রাম। বিস্মৃতির ঝাপসা চাদরে ম্লান হয়ে গিয়েছিল জনমজুর বাবার মুখচ্ছবি। একদিন কথা প্রসঙ্গে জানতে পারেন, পরিচারক বলাই সেই ফেলে আসা গাঁয়ের ছেলে। ফোনে খবর এসেছে মা খুব অসুস্থ। তাই দেশে যাবে। ছুটি চাই।
"যদি ছুটি না দিই?"
বলাই দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলেছিল, "মা অসুস্থ, আমি দেখতে যাবুনি! কী বলেন বাবু? যদি ছুটি না দ্যান, কাজ ছেড়ে দিব। আপনি অন্য নোক দ্যাকেন।".
সুধাময় সেদিন এমন জোর গলায় বলতে পারেনি, "মিটিং অন্য কেউ চালাক। আমি ছুটি নেব। দেশে যাব। আমার বাবা মৃত্যশয্যায়।"
সুধাময় এখন বলাইয়ের সঙ্গে তাঁর গাঁয়ের পথে। বাস থেকে নেমে ভটভটিতে নদী পার হয়। তারপর সেই চিরচেনা মাঠ মাটি ঘাস। দূরে সবুজ ধান ক্ষেত। মাথায় গামছা বেঁধে দিনমজুর বাবা অন্যের মাঠে কাজ করছে। ক্লান্ত ঘামেভেজা বাবার মুখটা কেমন বিষণ্ণ। সুধাময়ের চোখ জলে ভরে ওঠে। বড় দেরি হয়ে গেল। তিনি বলাইকে ডেকে বললেন, "বলাই, আর আমরা শহরে ফিরব না। তুই মায়ের কাছে আর আমি আমার অভিমানী বাবার গাঁয়ে আমৃত্যু থাকব। কিরে একটা ছোট্ট ঘর বানিয়ে দিবি তো !"
বলাইয়ের বিস্মিত চোখ সুধাময়ের মুখে।
আন্তরিক ধন্যবাদ, সুন্দর সংখ্যা হয়েছে। অভিনন্দন জানাই।
উত্তরমুছুন